গল্প

ভীরু প্রেম

কি ভেবে পাঠালে চিঠিখানি, কি কথা ছিল যে মনে। তুমি সে কি লিখে গেলে, আমি বসে বসে পড়ি নিয়ে কম্পিত হৃদয়খানি, তুমি আছো দূর ভুবনে। আমি তখন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসাবে চাকরি শুরু করেছি। রঙিন খামে একটা চিঠি পেলাম। খামের উপরে মেয়েলি হাতে আমার নাম-ঠিকানা লেখা। খামের ভিতরে আরেকটি রঙিন কাগজের চিঠি, সাথে গোলাপ ফুলের….

নিঃসঙ্গ নারী

অনিন্দ্য সুন্দরী তরুণী আজিজা। সামান্য কালো বিড়ালকেও ভয় পাওয়ার মত সরল তার মন। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারায় শেখ সাইদের সামনে ঠায় বসে আছে সে। শেখ সাইদের গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ চোখ দুটো কেমন যেন বন্যভাবে তাকিয়ে আছে আজিজার দিকে। মেয়েটি এক অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে উদগ্রীব হয়ে আছে, যে যন্ত্রণা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। এদিকে শেখ সাইদের কক্ষে….

রোমান্টিক প্রেম

‘আমি যার বরষার আনন্দ-কেকা নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনী-লেখা সে রহে কোথায়, হায়!’ উনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়াতে একাকী লাঞ্চ করছিলাম। পাশের টেবিল থেকে মেয়েটি উঠে এসে আমার টেবিলের একটি চেয়ার টেনে বসে পড়লো। বললো, ‘ধন্যবাদ, আমি আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।’ ‘আমি কি তোমাকে চিনি?’ ‘এক কালে চিনতেন। এখন হয়তো ভুলে গেছেন। তিন বছর আগে আমি আপনার অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাসের ছাত্রী….

হঠাৎ দেখা

মেয়েটি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি, পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল, মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি, হাতে একটি বোঁচকা। ইচ্ছে করেই এই বেশ ধরেছি, পাকিস্তানী আর্মির নজরে পড়ার সম্ভবনা কম। বাসে উঠছিলাম। মেয়েটি সামনের সিটে বসে মা-বাবার সাথে কথা বলছিলো। মেয়েটি আমার পূর্বপরিচিতা। ওর মা-বাবার সাথে এককালে অল্পসল্প পরিচয় ছিল। মাঝে তিন বছর দেখা….

এক রূপসী মেয়ের সুখদুঃখ

‘চোখ যে ওদের ছুটে চলে গো… ধনের বাটে, মানের বাটে, রূপের হাটে গো।’ মেয়েটি গ্রিক দেবী এফ্রোডাইটের মতোই রূপসী। দুধে-আলতায় মেশানো গায়ের রং, মাথায় ঢেউ খেলানো সোনালী চুল, হাতে বই আর খাতা। ঘাড় নাড়িয়ে, কানের দুল দুলিয়ে হেসে হেসে কথা বলছিলো। মেয়েটির স্বামী পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই, একবার আমার দিকে একবার স্ত্রীর….

যাত্রা শুভ হোক, মাননীয় রাষ্ট্রপতি

কারিবীয় অঞ্চলের এক নির্বাসিত রাষ্ট্রপতির চিকিৎসার্থে ছদ্দবেশে জেনেভায় আগমন এবং সেখানে তাঁর দারিদ্র্য জর্জরিত জীবনে স্বদেশী অভিবাসী অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে পরিচয় এক জটিল সম্পর্কে রূপ নেয়…। মার্কেসের জাদুবাস্তবতার বাইরে ভিন্নধর্মী গল্পটি মনে করিয়ে দেয়, লেখালেখির বাইরে দীর্ঘ সময় তাঁর সাংবাদিকতায় কেটেছে, লিখেছেন রাজনৈতিক অনুসন্ধানমূলক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন প্রতিবেদন। পাঠকদের জন্য ‘যাত্রা শুভ হোক, মাননীয় রাষ্ট্রপতি’….

ঔরসজাত

আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় লীনার ফ্লাইট। কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে লীনা ইংল্যান্ড যাচ্ছে। সাদিকে দুপুরে ঘুম দিতে যেয়ে লীনার চোখ বেয়ে জল গালে গড়াচ্ছে। শুধু বারবার মনে হচ্ছে, মোট চার বছরে যদি শেষ করতেও পারি, তারপরও তো একবছর এর আগে আসতে পারব না। শাহেদ পাশে শুয়ে লীনার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, সাদির কোন অযত্ন….

করোনাকালের গল্প

মহামারিতে একটি বিয়ে এক মাস আগে, হ্যাঁ ঠিক এক মাস আগে সে কতো খুশী ছিল। সময় আর কাটছে না। আমির, যার সাথে তার বিয়ের কথা পাকাপাকি ছিল তার দুবাই থেকে আসার কথা। ২৩ তারিখে তাদের বিয়ে হবে। শেষমেশ ১৫ তারিখ এসে গেল, সেই দিন আমিরের ফ্লাইট লাহোরে আসার কথা। লালা আর তার কয়েকজন বন্ধু তাকে….

প্রদীপের গল্প

আজাদ খেজুরের খোঁজে একবার আমি বাগদাদে গিয়েছিলাম। লোকেরা তখন এক দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে বলাবলি করছিল। ঈশ্বর জানেন, তা ছিল অনাবৃষ্টি, ক্ষুধা এবং মৃত্যুর একটি বছর (প্রার্থনা করি, প্রভু আমাদের সকলকে বাঁচিয়ে রাখুন)। কঠিন সে দুর্ভিক্ষ বজ্রের মত মরক্কোর প্রাচীনতম শহর; কায়রূয়ান, ফেস, গাফসা, সিজিলমসা ও মাহদিয়ার কোন একটিতে নেমে এসেছিল। ভয়ানক সে দুর্ভিক্ষে ক্রমশ সমস্ত খাদ্য….

হারানো দিনের সমুদ্র

মার্কেস এই বঙ্গদেশে কখনো এসেছিলেন কিনা জানা নেই, তবে কারিবীয় সাগর পাড়ে বসে তিনি বঙ্গোপসাগরের কথা ভেবেছেন। ‘হারানো দিনের সমুদ্র’ উপাখ্যানে কারিবীয় সাগরের পরিবেশ বিপর্যয়কালে আলো ঝলমল বঙ্গোপসাগরের রোদেলা দুপুরের কথা স্মরণ করেছেন তিনি। গল্পের শেষে খানিকটা যাদু বাস্তবতারও দেখা মেলে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে, সাগরটা কেমন ফুঁসে উঠল। সাগরের ঢেউ শহরে ভারী আবর্জনা বয়ে….

error: Content is protected !!