গল্প

প্রতিদান

‘আমাকে আপনার মনে নেই। থাকার কথাও নয়। সে জন্য দোষও দেব না। এত ব্যস্ত মানুষ আপনি, আমার মত কত জনের সঙ্গেই হঠাৎ চেনা-জানা। কেনইবা মনে রাখবেন তাদের সবাইকে?’ বেশ শান্ত গলায় বললেন মিসেস অঙ্কিতা। টেবিল থেকে কি যেন একটা নিলেন তিনি। পিটপিট করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সাফরাব। একটা ইনজেকশন, একটা ছোট টেস্টটিউবের মতো ভায়াল,….

লিলিথ

শাওয়ার বন্ধ করে দিতেই পানির হালকা ঝিরঝিরে শব্দটা বন্ধ হয়ে যায়। প্রযুক্তির কল্যাণে ঝরনার শব্দ আজকাল বাসাতেই শোনা যাচ্ছে। আর এ শব্দটা অদ্ভুত সুন্দর। কেমন যেন মোলায়েম। সাদা তুলতুলে মেঘের মতো। অনেক দূর থেকে ভেসে ভেসে এসে জড়িয়ে ধরে। চোখের পাতাগুলোয় ঠান্ডা আমেজ ছড়িয়ে ঘাড় বেয়ে নামতে থাকে। আরামে চোখ বুজে আসে আমার। রিলাক্স হতে….

বন্ধনবিলাস

এ শতকের ধূলিধূসরিত ঢাকায় দাঁড়িয়ে কল্পনা করাও কঠিন। গত শতকের ঢাকা ছিল রাজহাঁসের পালকের মতো পরিচ্ছন্ন ধবধবে। একতলা-দোতলার ছাদে শীতলপাটি বিছিয়ে রাতের আকাশের দিকে চাইলে দেখা যেত নক্ষত্রদের কনফারেন্স। মেঘহীন রাতগুলোতে খুব কাছের হয়ে যেত দূরছায়া নীহারিকার পথ। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। অগণ্য তারার যে কোনো তারাকে। রাস্তার দু’ধারে জামরুল-জিউল আর বাবলার অন্ধকার ঢাকতে….

খচ্চর

কেউ কি জানত, এমন কি রুবি নিজেও, একেবারে আগস্টের ২৩ তারিখেই ঘটনা ঘটাবে? হ্যাঁ, সেদিনই ছিল প্রথম ওকে দেখার দিন। আগস্টের শেষদিকে বিকেল কিছুটা ছোট হয়ে আসে। ছোট হতে হতে মাস দুই পর বিকেল খুব সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারপর নভেম্বরের শেষদিকে বিকেল আর থাকেই না। শীত আসে। শীতকালে বিকেল কই? শুধু দুপুর, আর সন্ধ্যা। তো….

খুকুমনি

ঘটনা ও দুর্ঘটনার মিশেলই বলা যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এক বছর পূর্তির আরও দেড় মাস বাকি। আমি ১৯৬৮র ক্লাস টেন। স্কুলটা ঢাকা শহরের রাজাবাজার এলাকায়, গ্রিন রোড থেকে খুব দূরে নয়। বাসা থেকে হেঁটে আসতে সর্বোচ্চ কুড়ি মিনিট। ক্লাস নাইনে ওঠার পর হেঁটে কমই এসেছি। রিকশাভাড়া এক সিকি মানে চার আনা। আমাদের বাসাটা কলাবাগান বশিরউদ্দিন….

ভাষার ফেরিওয়ালী

মধ্য দুপুরের সূর্যের উত্তাপ মন্দ লাগছিলো না অগ্নিলার কাছে। ফেব্রুয়ারির ফাল্গুনী রোদ, গ্রীষ্মের প্রখরতার মতো অতোটা নির্দয় নয়। এ রোদ যেন খানিকটা মায়ের হাতের শীল নোড়ায় পেষা কাঁচা হলুদের মতো, এর মিষ্টতা সারা শরীরে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাখতে ইচ্ছে হয়। রাস্তা দিয়ে ব্যাগ কাঁধে এলোমেলো চুলে হাঁটতে হাঁটতে অগ্নিলা ভাবছিলো, ফেব্রুয়ারি মাসটা ওর নিজের কাছে কেন….

শেষ বিকেলের অতিথি

আজ চন্দ্রার কথা মনে পড়তেই ছল ছল চোখে অশ্রুবিন্দু ঝড়ছে। তার অভিমানের শেষ আকুতি মনের মধ্যে বারবার ধাক্কা দেয়। তার প্রস্থান শেষ পর্যন্ত এতো কঠিন হবে বুঝতে পারিনি। আগেও চন্দ্রার সাথে হয়েছে অভিমানের খুনসুটি। নিজেকে মেঘের আড়ালে ঢাকতে চেয়েছে, কিন্তু সে মানাভিমান ক্ষণিকেই ইতি ঘটে গেছে। জোছনা হয়ে সে ধরা দিয়েছে। খুব ছোট্ট বিষয় নিয়ে….

স্মৃতি এখন কী করবে

জেলখানা থেকে বেরিয়ে স্মৃতি বাসে চড়ে বসে। সঙ্গে ওর মেয়ে ফাতেমা। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনি হায়দারের সঙ্গে। শুধুই চোখ বেয়ে পানি পড়েছে। ফাতেমাও ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। আর হয়তো দেখা হবে না বাবার সঙ্গে। হায়দারের চোখও ভেজা ছিল। আজই হয়তো ওদের শেষ দেখা। হায়দার বারবার স্মৃতির হাত ধরে অনুরোধ করেছে ওকে ক্ষমা করে দিতে।….

ইন্টারভিউ

কত দিন পর দেখা হলো রূপার সঙ্গে। তা মনে করতে পারছি না। চোখে চোখ পড়তেই কিছুটা থমকে গেলাম। চিন চিন করে উঠল বুকের ভেতর। ভেতর-বাইর শুরু হলো জ্বলন-পোড়ন। কথা বলব কি-না তা বুঝে ওঠার আগেই সে এলো এগিয়ে। আমাকে বলল, সায়েম তুমি এখানে? আমার ইন্টারভিউ আজ। তোমারও কি তাই? হ্যাঁ। আমারও তাই। কেমন আছ তুমি?….

শূন্য থেকে শূন্য

আমার আসল নাম কি আমি কোনো দিনই জানলাম না। ছোটবেলায় মা বাবলু বলে ডাকত তারপর আরও অনেকে অনেক নাম দিয়েছে। নাম নিয়ে আমি অত চিন্তা করি না, আমার মতো মানুষের নাম থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি? যে লোক নিজের বাপের নামই জানে না সে নিজের নাম না জানলে তাতে কি বা আসে….

error: Content is protected !!