Author Picture

ব্যক্তিগত অবহেলা

তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

ক.
তারপর তুমি চলে যাবে ময়মনসিংহ
আমি যাব জামালপুর
পথের ধুলো পথ পেরিয়ে যাবে
পাখিদের ফেরা হবে না বাড়ি
নদী যেন স্রোত তুলে ভাঙবে না ঢেউ
আমাদের প্রাপ্তি বলে কিছুই যখন থাকবে না
তখন মৃত্যুই হবে শেষ সমাধান, শেষ প্রাপ্তি।
মাটির সাথে মিশে যাবার আনন্দের কথা
লিখে যাব শুকনো কলাপাতায়
তোমার কথা আমি আর বলব কাকে?

যখন সিলিং এ ঝুলবে তোমার লাশ
আমি তখন মৃত্যুর মতো একা…

 

খ.
এমন একটি দুপুর টুকরো টুকরো মেঘ
ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তোমার বাড়ি
ঠিক সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামবে;
তোমার অসুস্থ শরীরের পাশে
তোমার একাকীত্ব আমাকে মনে করবে।
যেখানে গাছের ছায়া
সবুজের হাসি
খোলা প্রান্তর মাঠ
মাটির গন্ধেভরা ফসলের বুক,
যেখানে তোমার চোখে যুবকের প্রেম,
যুবতির হাসি।
যেখানে আকাশের নীল, সাদা সাদা মেঘ
তোমার শরীর ছুঁয়ে ভালোবসে যায়।
আমার ক্লান্ত দুটি চোখ
তোমার চোখের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে।

ঠিক এমন একটি দুপুর
মেঘ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তোমার বাড়ি…

 

গ.
‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ
একা দাঁড়িয়ে একটা হরিণ,
পালিয়ে যাবে কোথায়?’

তোমার এমন প্রশ্নে
আমি চুপচাপ বসে থাকি, কোন উত্তর দিই না।
হাতের তালু দেখি, পাগলের মতো হাসতে থাকি।
হাসতে হাসতে বলি,
ধরো, জলের কুমির হচ্ছে অজুহাত
আর ডাঙার বাঘ হচ্ছে অবহেলা
একা দাঁড়িয়ে থাকা সেই হরিণ হচ্ছে ভালোবাসা।
ধরো, তোমার সহস্র অজুহাত আর অবহেলার সামনে
একা দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার নিরীহ ভালোবাসা…

এখন আমি পালিয়ে যাব কোথায়?

 

ঘ.
একদিন তুমি আমাকে জলে ডুবতে দেখবে
মাছের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ডাঙায় উঠতে দেখে
তুমি আমাকে মাছ ভেবে রান্নাঘরে নিয়ে যাবে
কেটেকুটে মশলা লাগিয়ে
গরম তেলে ছেড়ে দিবে
কড়াইয়ের ভেতর আমাকে উল্টাতে উল্টাতে
মাছের মতো ভাজতে থাকবে
ভাজতে ভাজতে হঠাৎ মনে পড়ে যাবে আমাকে
জলে ডুবে যাওয়া সেই আমাকে
খুঁজতে বেরিয়ে পড়বে তুমি
কোথাও খুঁজে না পেয়ে রান্নাঘরে ফিরে এসে দেখবে
তোমার কড়াইয়ের গরম তেলে
ছটফট করা আমি বারো ভাজা হয়ে গেছি।

আরো পড়তে পারেন

চৌধুরী রওশন ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

দ্বিধা দ্বিধার পাথারে পড়ে থাকি আজীবন, যেদিকে তাকাই থইথই দ্বিধারাশি। কূলহারা দরিয়ায় দ্বিধার চুম্বন কোন পার হতে কোন পারে লয় ভাসি? কত কী দেখিতে পাই, দেখি না কতই, দেখা-না-দেখার দ্বিধা-বুদবুদ এসে, মনের অতলে ভীড় করে সে স্বতই; কেবলি সংশয়ে দ্বিধা-স্রোতে যাই ভেসে। হবে কি হবে না, কিছু দেবে কি না দেবে, লাভ না কি ক্ষতি,….

সুলতানা নাছিরা হীরার একগুচ্ছ কবিতা

বিরুদ্ধ সময় একেকটা দিন কী বীভৎস হয়েই না আসে! বীভৎস সময়, বীভৎস মন, বীভৎস মানুষ, বীভৎস সভ্যতা! মধ্যাহ্নের প্রাখর্যকে কম্পমান পর্দা বানিয়ে ভয়ার্ত রাজহাঁসের মতো চিৎকার করতে করতে ছুটে গেল একটা অ্যাম্বুলেন্স। এই গাড়িটার ভেতর আপাতত আশ্রয় পেলে বেঁচে যেতাম। ভীষণ বিরুদ্ধ সময়! এই বিরুদ্ধতার কথা জানে ঘরের চার দেয়াল, শূন্য বারান্দা, জীর্ণ দেয়াল ঘড়ি,….

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

error: Content is protected !!