বিরুদ্ধ সময়
একেকটা দিন কী বীভৎস
হয়েই না আসে!
বীভৎস সময়, বীভৎস মন, বীভৎস মানুষ, বীভৎস সভ্যতা!
মধ্যাহ্নের প্রাখর্যকে কম্পমান পর্দা বানিয়ে
ভয়ার্ত রাজহাঁসের মতো
চিৎকার করতে করতে
ছুটে গেল একটা অ্যাম্বুলেন্স।
এই গাড়িটার ভেতর আপাতত আশ্রয় পেলে বেঁচে যেতাম।
ভীষণ বিরুদ্ধ সময়!
এই বিরুদ্ধতার কথা জানে
ঘরের চার দেয়াল, শূন্য বারান্দা,
জীর্ণ দেয়াল ঘড়ি,
ক্ষয়িষ্ণু স্বপ্ন সম্ভব!
আর ভীষণ কদর্য ,গা গুলিয়ে আসার মতো
একটা লেজকাটা টিকটিকি,
আমাকে চোখ পাকিয়ে ভয় দেখায়,
দানবের মতো তার তারস্বরে চিৎকার
মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে
খানখান হয়ে যায়।
এ কোন বিরুদ্ধতার শিকার আমি!
বিরুদ্ধতা নেকড়ের মতো চিবিয়ে
খাচ্ছে আমার হাড়,
অস্থি-মজ্জায় বসে যাচ্ছে তার দাঁত!
ঘুমহীন নিদ্রাহীন আমি
প্রার্থণায় নতজানু
স্রষ্টা আমাকে শক্তি দাও,
শক্তি দাও, শক্তি দাও।
অশুভ সময়ের বিরুদ্ধে
লড়বার শক্তি দাও।
আর্তনাদ
জানালার শার্সি তুলে
প্রতিদিন শস্য দানা ছড়িয়ে দিতো
যে বেণী দোলানো কিশোরীটি,
গতকাল বোমার আঘাতে
গলে গেছে তার কোমল ত্বক।
মরে গেছে তার মতো আরো
তিনশ’ পাঁচটি শিশু,
দুমড়ে-মুচড়ে গেছে তাদের বাড়ি, ঘর, শহর।
ভাঙ্গা শার্সির নীচে
একাকী ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে
নিঃসঙ্গ পায়রা।
কোথায় যাবে সে? শান্তির বারতা নিয়ে..
সিরিয়া? সাইবেরিয়া?
ফিলিস্তিন? গাজা উপত্যকা?
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে আছে
মহাবিশ্ব!
রিফিউজির শূন্য থালা কেঁপে উঠে
বিকট ট্যাংকের শব্দে!
এই কি তবে মানবের সভ্যতা?
আগ্ৰাসীবাদ কেড়ে নিতে চায়
একটি জাতির ভূ-খন্ড।
ভাঙা শার্সিতে এখনো
রঙিন ফিতেটি ঝুলছে,
নিঃসঙ্গ পায়রার একাকী আর্তনাদ!
সভ্য মানুষ কি তা শুনবে?
কর্পোরেট
সম্পর্কগুলো টুপটাপ ঝরে পড়ে,
শব্দ হয় না,
শিশিরের শব্দ তবু কান পাতলে শোনা যায়, ভাঙনের শব্দ কে কবে শুনেছে!
স্লিম ফিট পোশাকের মতো
মানুষগুলো ও বেশ স্লিম হয়ে উঠেছে,
খুব কসরত করে স্লিম উঁচু চেয়ার গুলোতে উঠে বসে,
কাগজের অভাবে টিসূ্ পেপারেই চলে ভালোবাসার আদান-প্রদান ।
এখানে স্থূলতা বারণ,
মেপে মেপে কথা, মুখে বাণিজ্যিক হাসি,
মনের চারপাশে কংক্রিটের দেয়াল।
দেয়ালে শ্যাওলা জন্মে,
নিয়ন বাতির আলো নিভে গেলে
একলা মন আর্দ্র হয়,
সম্পর্কের শেকড় খুঁজে।
দেয়ালে র পাশে ব্যাখ্যাহীন মায়াগুলো
ব্যাখ্যাতীত হয়ে উঠে।
দিনের আলোয় স্লিম ফিট পোশাক পরে কর্পোরেট মানুষগুলো ,
আবার কর্পোরেট জগতের সাথে মিশে যায়
একা
শূন্যতায় ভর করে, পায়ে হেঁটে হেঁটে
অবশেষে এক অসীম শূন্যতায় পৌঁছালো সে
ভীষণ কোলাহল
চারিদিক আলোকিত ।
ভিক্টোরিয়ান যুগের আসবাব
ফরাসি সৌরভে আমোদিত।
সবাই কোলাহলে মত্ত।
একটা মরোক্কান কাপে
ক্যামোমাইল চায়ে
চুমুক দিতে দিতে
সে বসলো, মুখোমুখি
সামনে অন্তহীন শূন্যতা
চারপাশে কেউ নেই।
অভিমান
বিষণ্ণ দীর্ঘশ্বাসে ঢেকে আছে স্বপ্নের শহর।
অব্যক্ত !
কিংবা মৃত কথার কঙ্কাল
খুঁজে ফেরে কৌমুদী প্রহর,
প্রহর আসে না।
দীর্ঘ কোজাগরী রাত
জোছনা ভাসে না।
রাতের সাথে আড়ি
জোছনা ভাসে না।
ফোয়ারা…
ঢালে না।
রাত্রি অবগাহন করে না।
জোছনা ভাসে না,
রাত্রি ও বাসে না।
দীর্ঘ অমানিশা
লীন হয়ে থাকে
জোছনা-রাত্রির কল্পিত প্রহর।
নগ্নিকা
বিশাল হল রুম
শিল্পীর একক চিত্র প্রদর্শনী
দেয়ালে দেয়ালে
নিখুঁত চিত্রকর্ম।
শিল্প -সাহিত্যে বোদ্ধা ব্যক্তিদের আনাগোনা,
বিমুর্ত-অবিমূর্ত,
উচ্চমার্গীয় কথোপকথন।
হঠাৎ একটি ছবি সবাইকে স্তম্ভিত করে দেয়
যেন মহাকাল থমকে গেছে!
‘নগ্নিকা’- স্নান ঘরে বিবসনা রমণী,
পীনোন্নত পয়োধর,
আশ্চর্য দেহের খাঁজ এদিকটাতে,
সবাই অতিমাত্রায় সচকিত!
হঠাৎ সবাই সমালোচক!
কিন্তু নগ্নিকা’র অশ্রু সজল চোখ,
বিষন্ন মুখ কারো চোখে পড়ে না।
বিশাল হল রুমের এক কোণে বসে,
শিল্পী মিটি মিটি হাসে
স্নান ঘরে থাকেনাতো কেউ
কত রমণী লুকিয়ে অশ্রু ফেলে,
বুক হালকা করে,
কেউ কি খোঁজ রাখে?
তাদের সকল কান্না
শ্যাম্পু -সাবান- শাওয়ার জলে
অবশেষে নর্দমায় গিয়ে মেশে।