Author Picture

হুমায়ূন আহমেদের গণিতবিদ ও গণিতের উপন্যাস

মেহেদী মাহমুদ চৌধুরী

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কথা সাহিত্যিকদের একজন। বর্তমানে যারা লেখালিখি করছেন তাদের অনেকেই হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। হুমায়ূন আহমেদ ও তার সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে মাঝে-মধ্যে এদিক সেদিক নানা ধরনের লেখা দেখা যায়। সম্প্রতি আমার বন্ধুস্থানীয় মোহাম্মদ আজম ‘হুমায়ূন আহমেদঃ পাঠ পদ্ধতি ও তাৎপর্য’ নামক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ লিখেছেন। বইটিতে উল্লেখ করা ছাড়াও আজম তার নানা বক্তৃতাতে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে হুমায়ূনের ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও সত্যিকারের অ্যাকাডেমিক পাঠ হয়নি বলে মতামত জানিয়েছেন। আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য হুমায়ূনের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করা হলেও যাকে সাহিত্যের অ্যাকাডেমিক পাঠ বলে তার কাতারে পড়বে কিনা জানিনা। এ ব্যাপারে অস্বস্তি নিয়েই এই লেখাটার সূত্রপাত।
লেখার শিরোনাম বলছে আমি হুমায়ূনের গণিতবিদদের নিয়ে কিছু আলোচনা ফাঁদবো। হুমায়ূনের লেখা নিয়ে এরকম বিস্তারিত আলোচনা আমি জরুরি মনে করি। বাংলাদেশে সাহিত্যের বোদ্ধাগোষ্ঠি যারা আছেন তাদের মধ্যে হুমায়ুনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা বহুদিন থেকেই লক্ষ্য করা যায়। এর জন্য হুমায়ূনের অতিরিক্ত ও দুর্বল লেখার সংখ্যাও কিছুটা দায়ী। কিন্তু আজম সঠিকভাবেই উল্লেখ করেছেন যে হুমায়ূনের ভালো লেখার সংখ্যাও কম নয়। বর্তমান কথাসাহিত্যিক যারা লিখছেন তাদের কেউ হুমায়ূনকে মানের দিক থেকে অতিক্রম করতে পারেননি। হুমায়ূনকে গুরুত্বের সাথে পাঠ করলে বাংলা কথাসাহিত্য লাভবান হবে বলেই আমার মত।
হুমায়ূন বেশকিছু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-ধর্মী উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন। বলা যায় যে হুমায়ূন আহমেদ ও তার ছোট ভাই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা কথাসাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-ধর্মী রচনার পথিকৃৎ। এর আগে অন্য কেউ কেউ হয়তো লিখেছেন তবে এই দু’জনের শক্তিমত্তা তাদের লেখাতে নেই। শিল্পমানের দিক থেকে আমার কাছে হুমায়ূনের লেখাকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়েছে। তাই হুমায়ূনের গণিতবিদ ও গণিত বেশী পরিমাণে আছে এমন উপন্যাস নিয়েই এই প্রবন্ধ, যদিও এরকম হয়তো জাফর ইকবালের লেখা নিয়েও হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনি হলেই যে গণিতের ছড়াছড়ি থাকবে এমন নয়। হুমায়ূনের ক্ষেত্রেও তা সত্য। তাই আমি নিচে একটি তালিকা করছি শুধু মাত্র বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ভিত্তিক উপন্যাসকে বিবেচনায় নিয়ে


বইয়ের নামঃ প্রধান চরিত্রে গণিতবিদ

তোমাদের জন্য ভালোবাসা
আছে
তারা তিন জন
প্রশ্ন সাপেক্ষে আছে
অন্যভূবন
নেই (মিসির আলি সিরিজ)
ইরিনা
নেই
অনন্ত নক্ষত্রবীথি
নেই
কূহক
নেই
ফিহা সমীকরণ
আছে
শূন্য
আছে
নি
আছে
ওমেগা পয়েন্ট
নেই
ইমা
নেই
দ্বিতীয় মানব
নেই


উপরের এই তালিকা দেখায় যে হুমায়ূনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও গণিতবিদের উপস্থিতি সে লেখাগুলোতে তত বেশী নেই, অন্তত বলা যায় কাহিনির নায়ক বা প্রধান চরিত্রে। তবে হুমায়ূনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-ধর্মী লেখা ছাড়াও এদিক সেদিকে নানাভাবে গণিতের প্রসঙ্গ এসেছে। এর বাইরে হুমায়ূন কয়েকটি গল্পও লিখেছেন গণিতবিদ নিয়ে। এই প্রবন্ধে তার বিস্তারিত আলোচনার লক্ষ্য নেই, তবু সেগুলোতেও (মোটামুটি উপন্যাসগুলোতে) গণিতবিদের যে চরিত্র দেখা যায় তাই আছে।

হুমায়ূনের রচনায় গণিত নিয়ে আগে তেমন কোন লেখা দেখিনি। আজমের বইতে এ নিয়ে এক ক্ষুদ্র প্যারাগ্রাফ আছে। বিজ্ঞানবর্তিকা নামক এক অনলাইন প্লাটফর্মে ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ নিয়ে একটা লেখা দেখেছি। ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-ধর্মী লেখা। বিজ্ঞানবর্তিকার সূত্র ধরে জানা যাচ্ছে লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৭২ সালে।
হুমায়ূন আহমেদের বেশীর ভাগ উপন্যাস তুলনামূলক ভাবে ক্ষুদ্র আকৃতির। তাই লেখাগুলো আদৌ উপন্যাস পর্যায়ে পড়ে কিনা প্রশ্ন থাকতে পারে। যে লেখাগুলোকে আমরা প্রচলিতভাবে উপন্যাস বলে থাকি তাতে ঘটনা, চরিত্র ও প্রেক্ষাপটের বিস্তারিত বিবরণ থাকে। হুমায়ূনের লেখাগুলোতে অনেক সময় তা ঘটেও ঘটেনি। আবার লেখাগুলো বিস্তার এমন যে সেগুলোকে ঠিক গল্পও বলা যায় না। তাই হুমায়ুনের উপন্যাসের অনেকগুলো গল্প ও উপন্যাসের মাঝামাঝি এক ফর্ম। হুমায়ুন আজাদ এক সময় এই উপন্যাসগুলোকে ব্যঙ্গার্থে অপন্যাস বলে অভিহিত করেছিলেন। আমি এই ফর্মকে ব্যঙ্গ না করে বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলে অভিহিত করতে চাই। মোহাম্মদ আজমের কাছ থেকে ভাষা ধার করে বলতে পারি এই ফর্মকে হুমায়ূন একান্তই নিজের করে নিতে পেরেছিলেন যার কারণে আমাদের এধরণের ফর্মের লেখাকে হুমায়ূনীয় বলে মনে হয়। প্রসঙ্গত বলা যায় ‘পৃথিবীর পথে’ জাতীয় শব্দবন্ধ আমাদের কাছে পুরোপুরিই জীবনানন্দীয়, কারণ জীবনানন্দ তুলনায় কেউ এরকমের শব্দবন্ধের অধিক সার্থক ব্যবহার ও প্রচলন করে দেখাতে পারেননি। অথচ এরকম শব্দবন্ধ তার সমসাময়িক বিষ্ণু দে’র কবিতাতেও আছে।

ছোট আকারে উপন্যাস হুমায়ূনের শক্তিমত্তার জায়গা মেনে নিয়েও আমরা দেখবো লেখক হিসাবে তার যে সীমাবদ্ধতাও সেই একই জায়গাতে। এই প্রসঙ্গে আমার ব্যাখ্যা আলোচনার ধারাবাহিকতাতেই আসবে।
হুমায়ুনের প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ দিয়ে এই আলোচনা শুরু করবো। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রে আছেন এক গণিতবিদ ফিহা, যাকে বলা হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। এছাড়া একজন গুরুত্বপূর্ণ গণিতবিদ হিসাবে আছেন স্রুরা। উপন্যাসটি আবর্তিত হয়েছে চতুর্মাত্রার সময় সমীকরণের সমাধানকে আবর্তিত করে, যে সমীকরণের সমাধান ছাড়া পৃথিবীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’তে এমন এক ভবিষ্যতের কল্পনা করা হয়েছে যেখানে গণিতবিদরা সেলিব্রেটি তুল্য মর্যাদার অধিকারী। পৃথিবী এমন এক সময়ে অস্তিত্বের সংকটে। পৃথিবী টিকে থাকবে কিনা সন্দেহ। তাকে বাঁচানোর ভার পড়েছে বিজ্ঞানীদের ওপরে। সংকটের কারণ বহু আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এন্ড্রমিডা নক্ষত্রপুঞ্জের পাশে টাইফা নামক এক ছোট গ্রহ যা মাত্র এক বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছে। টাইফা গ্রহের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবার পরে তাদের অভূতপূর্ব গণিত সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে। জানা যায় যে টাইফা গ্রহের গণিতে সময় ও বস্তু বলে কিছু নেই, যা পৃথিবীর মানুষের ধারণার বাইরে। পৃথিবী অস্তিত্বের সংকটে পড়লো যখন হঠাৎ টাইফা গ্রহ কোন কারণ ছাড়াই মহাশূন্যে উধাও হয়ে যায়। দেখা গেলো যে টাইফা গ্রহ থেকে শুরু করে বৃত্তাকারে অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রও উধাও হয়ে যাচ্ছে, আর পৃথিবী পড়েছে ঐ বৃত্তের গতিপথে। ঘটনাক্রমে জানা যায় যে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য ত্রিমাত্রিক জগত থেকে চতুর্মাত্রায় রূপান্তরিত করতে হবে। এর জন্য যে গাণিতিক সমীকরণ প্রয়োজন পড়ে তা আসে ফিহার দেখানো পথ ধরেই।

এবার দেখা যাক এই ফিহার চরিত্র ও আচরণ কেমন। আপাতত দৃষ্টিতে সে উদাসীন। পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য ফিহার অবদান রাখা জরুরী, কিন্তু সেখানে তার কোন তাড়া দেখা যায় না। উপন্যাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা লী নামের এক অল্প বয়সী মেয়ের সাথে তার ট্রেনে দেখা। সেখানে লী তাকে পাঁচ হাজার বছর আগের একটা বইয়ের কথা বলে, যেখানে ফিহা ও পৃথিবী যে সংকটে পড়েছে তার কথাও বলা আছে। ফিহা যদিও মনে মনে পৃথিবীকে কিভাবে রক্ষা করা যায় ভাবছে, তবুও এই বইয়ের কথা হেসে উড়িয়ে দেয়। যেখানে এই বইয়ের সূত্র ধরেই পরে পৃথিবীকে রক্ষা করা হয়। আচরণগত এরকম উদাসীনতা হুমায়ূনের গণিতবিদদের বৈশিষ্ট্য যা অন্য লেখাগুলোতেও আছে। এমনকি কাহিনির শেষ দিকে ফিহা’কে আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করতে হয়। সে ঘটনার সময়েও দেখা যায় ফিহা উদাসীন।

হুমায়ূনের গণিতবিদদের এই মানসিক দশা গণিতবিদদের গণিত সাধনার ইতিহাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। গণিতের ইতিহাসে প্রচুর প্রতিভাবান গণিতবিদদের দেখা পাওয়া গেলেও তাদেরকে গণিতের জন্য যথেষ্ট খাটা খাটুনি করতে দেখা যায়। দেখা যায় নানা মানসিক টানাপড়েনের মুখোমুখি হতে। এমনকি এভারিস্ত গালোয়া’কেও (যিনি মাত্র বিশ বছর বয়সে ডুয়েলে মারা যান) দেখা যায় নিজের কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকতে। দেকার্তে, যিনি বিখ্যাত শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা জন্য, তার লেখা ও কাজের মধ্যেও নিজের সম্পর্কে উদাসীনতা টের পাওয়া যায় না

‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’তে কয়েকজন গণিতবিদ পার্শ্ব চরিত্র আছে। ফিহা যেখানে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে উদাসীন সেখানে এই পার্শ্ব চরিত্ররা অতিমাত্রায় সিরিয়াস, যা অনেকটা ফিহা’র উদাসীনতার বিপরীত। এরকম একজন গণিতবিদ স্রুরা, যে ফিহা’র দেখানো পথে সময় সমীকরণের সমাধান বের করে। আমরা দেখবো যে উদাসীন মূল চরিত্র ও সিরিয়াস পার্শ্ব চরিত্র হুমায়ুনের গণিত ভিত্তিক লেখার এক মূল বৈশিষ্ট্য যা অন্যান্য লেখাগুলোতেও আছে। এছাড়া দেখা যায় মূল চরিত্র পার্শ্ব চরিত্রের জীবনকে প্রভাবিত করার কোন সচেতন চেষ্টা করে না। তবুও পার্শ্ব চরিত্রের জীবন মূল চরিত্রকে নিয়েই আবর্তিত হয়।
হুমায়ূনের লেখার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তার বিজ্ঞানী বা গণিতবিদরা মারাত্মক রকমের প্রতিভাবান হয়ে জন্ম নেন বা ঘটনাচক্রে হয়ে ওঠেন। এজন্য তাদের নিজে থেকে তেমন কিছু করতে হয় না অথবা সে প্রক্রিয়ার বর্ণনার গভীরতা থাকে না। কিন্তু দেখা যায় প্রধান চরিত্র নিজে থেকে তেমন কোন তাড়নাও অনুভব করেন না। প্রধান চরিত্রের এরকম বৈশিষ্ট্য তার অন্যান্য লেখাতেও দেখা যায়। যেমন ‘মধ্যাহ্ন’ উপন্যাসে হরিচরণ শশাঙ্ক পালের জমিদারি কিনে নেন। কিন্তু জমিদারি কেনার সম্পদের জন্য যে রকম কাজ কর্ম করতে হয়, সে রকম কিছুই তাকে করতে দেখা যায় না। হুমায়ূনের গণিতবিদদের এই মানসিক দশা গণিতবিদদের গণিত সাধনার ইতিহাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। গণিতের ইতিহাসে প্রচুর প্রতিভাবান গণিতবিদদের দেখা পাওয়া গেলেও তাদেরকে গণিতের জন্য যথেষ্ট খাটা খাটুনি করতে দেখা যায়। দেখা যায় নানা মানসিক টানাপড়েনের মুখোমুখি হতে। এমনকি এভারিস্ত গালোয়া’কেও (যিনি মাত্র বিশ বছর বয়সে ডুয়েলে মারা যান) দেখা যায় নিজের কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকতে। দেকার্তে, যিনি বিখ্যাত শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা জন্য, তার লেখা ও কাজের মধ্যেও নিজের সম্পর্কে উদাসীনতা টের পাওয়া যায় না।

হুমায়ূনের গণিতবিদদের যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করলাম তা আমি নেতিবাচক অর্থে নেবো না। এই চরিত্র হুমায়ুনের নির্মাণ ও তা ঠিক-বেঠিক যাই হোক যথেষ্ট আকর্ষণীয়। কিন্তু সমস্যা এই যে তিনি মোটামুটি একই ফর্মুলা বারবার ব্যবহার করে তা ক্লিশে করে ফেলেছেন। একজন লেখকের নিজের কাজের ও ভঙ্গির পুনরাবৃত্তি থাকবেই কিন্তু হুমায়ুনের ক্ষেত্রে তা একটু বেশী মাত্রাতেই ঘটেছে বলে আমার মত।

হুমায়ূনের শক্তিমত্তার জায়গা বিস্ময়কর জগত তৈরি করার ক্ষমতা। সেই জগত কিছুটা হাইকুর মত খণ্ড খণ্ড ভাষা ব্যবহারে তৈরি। সে জগতে তেমন ডিটেইল না থাকলেও মন ও মায়া কাড়ে। কাহিনি শেষে পাঠকের মনে হাহাকার তৈরি হয়। বেশীর ভাগ সময়েই কাহিনির শেষে প্রধান চরিত্রের বিনাশ বা মৃত্যু হয়। মনে হয় যে ওই দুঃখজনক পরিণতি নায়ক সহজেই এড়াতে পারতো। কিন্তু উদাসীন নায়ককে সেই পরিণতি এড়াতে চেষ্টা করতে দেখা যায় না। কাহিনি নায়কদের এই আচরণ অযৌক্তিক মনে হলেও আমার কাছে এই অযুক্তি সমস্যার মনে হয় না। কিন্তু আগেই বলেছি যে হুমায়ুন তার লেখাতে এই বাধাধরা ফর্মুলা বার বার ব্যবহারে ক্লিশে করে ফেলেছেন। হুমায়ূন অত্যন্ত দক্ষ পাঠকের মনে এই পদ্ধতিতে হাহাকার তৈরি করতে। মানুষের জীবনের সমাপ্তি আসে মৃত্যুর মতো এক বিয়োগান্ত ঘটনার মাধ্যমে। হুমায়ূন কাহিনির আবেগময় পরিসমাপ্তি আনতে মৃত্যুর ঘটনাকে সুনিপুণভাবে ব্যবহার করেছেন। যেমন আছে ‘নন্দিত নরকে’ বা ‘আমার আছে জল’-এর সমাপ্তিতে। বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনিতেও মৃত্যুকে হুমায়ূন দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছেন আবেগময় পরিসমাপ্তির জন্য।

হুমায়ূন তার লেখাতে ছোট ছোট নাম ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। যেমন ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’তে আছে ফিহা, লী, স্রুরা। এই নামগুলোর ব্যবহার আমার মনে হয় লেখাগুলোকে সহজপাঠ্য করে তোলে। হুমায়ূনের আরেক বৈশিষ্ট্য সহজ উদাহরণ ব্যবহার। যেমন ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’তে পানির একটি উদাহরণ ব্যবহার করে বলা হচ্ছে পানির অণুতে অণুতে কোন পার্থক্য নেই কিন্তু সব মিলিয়েই তৈরি হয় পানি। পানির জায়গায় হুমায়ুন অন্য কোন বস্তুর উদাহরণ দিতে পারতো, কারণ অণুতে অণুতে পার্থক্য না থাকাটা অন্যান্য পদার্থের জন্যও সত্য। যেমন লোহা, তামা ইত্যাদি। কিন্তু হুমায়ুন পানিকে ব্যবহার করলেন বোঝানোকে সহজ করার বা বোঝানো হয়েছে এমন ভাব প্রকাশ করার জন্য। পাঠক নিজে কিছু না বুঝলেও কাহিনির পরের অংশে যেতে কষ্ট হয় না।

এতক্ষণ আমি ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’র প্রসঙ্গে হুমায়ূনের লেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আলোচনার কারণ হুমায়ূনের লেখাতে আমরা যে বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাই তার সবই মোটামুটি ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’তে এসেছে। তবু এই লেখাটিকে আমি হুমায়ূনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনির তালিকায় স্থান দেবো না। এমনকি তা আমার কাছে প্রথম তিনের মধ্যেও থাকবে না। আমার কাছে তার সেরা বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনি ‘তারা তিনজন’ যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।

‘তারা তিনজন’র কাহিনি আবর্তিত হয়েছে মাকড়সার মতো দেখতে তিন প্রাণীকে ঘিরে। তাদের নামও ছোট ছোট – লী, অয়ু ও নীম। তাদের আবাস একজন প্রাণহীন নির্জন মরুময় উষর গ্রহে। এই তিনজন ছাড়া সে গ্রহে আর কেউ নেই। সে গ্রহে আরো আছে দৈত্যাকৃতি মসৃণ আকাশ ছোঁয়া কিছু ঘর। সেগুলোকে কেন তৈরি করেছে কেউ জানে না। পরে জানা যায় যে এই ঘরগুলোকে যারা তৈরি করেছে পৃথিবীর মানুষ তার নাম দিয়েছে নিওলিথি সভ্যতা। নিওলিথি সভ্যতার এই ঘরগুলো বাতাসের ধাক্কায় এক অপার্থিব মায়াময় সুর তৈরি করে।
এই তিন প্রাণীর চিন্তা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। তাদের মা বেঁচে থাকার সময় তাদেরকে চিন্তা করা শিখিয়েছিলো। খাদ্য গ্রহণের জন্য তাদের কোন কিছু করতে হয় না, কারণ তারা বাতাস থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করতে পারে।
এই তিনজনকে আমি গণিতবিদের কাতারে ফেলছি, কারণ তারা তাত্ত্বিকভাবে শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমে সমস্যার উত্তর খুঁজে বের করতে পারে। তাদেরকে মায়ের কাছ থেকে অংক করা শিখতে দেখা যায়। কাহিনির এক পর্যায়ে তারা ত্রিমাত্রিক বস্তু ব্যবহার করে একটি চতুর্মাত্রিক গাণিতিক বস্তু তৈরি করে।
পৃথিবীর অনুসন্ধানী মহাকাশযান একসময় গ্রহটিতে এসে নামে। তিনটি প্রাণী নিজে থেকেই মহাকাশযানে উঠে বসে। পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারে যে এই প্রাণীগুলো অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চাইলে অনায়াসে মহাকাশযানের ক্ষতি করতে পারবে। পরে মানুষ গ্রহটিতে নিওলিথি সভ্যতার বিশাল ঘরগুলোর উপস্থিতি আছে জানতে পারে। এই ঘটনা মানুষকে ভীত করে তোলে, কারণ মিল্কি ওয়ে জুড়ে আরো নয়টি গ্রহে নিওলিথি সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিলো। এর মধ্যে দুটিতে এই গ্রহের তিনটি প্রাণীর মতোই কুৎসিত (মানুষের চোখে) দর্শনের অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু সেই মহাকাশ যানগুলো অজানা কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। তাই বিপদের আশংকা থেকে মহাকাশ যানের ক্যাপ্টেন প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। শক্তিশালী ওমিক্রন রশ্মির সাহায্যে প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলা হয়। মৃত্যুর আগে নীম জানায় যে সে নিওলিথি সভ্যতার রহস্য ভেদ করেছে ও তা মানুষকে জানিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আরো কিছু বলার আগেই ওমিক্রন রশ্মির তীব্রতায় নীমের সিলিকন শরীর ধ্বংস হয়ে যায়। অজানা থেকে যায় নিওলিথি সভ্যতার রহস্য।

হুমায়ূন আহমেদ তার অন্যান্য লেখাগুলোর মতোই মৃত্যুকে ব্যবহার করে এক বেদনাময় সমাপ্তি টেনেছেন। তার সাথে যুক্ত করেছেন অজানার রহস্য ভেদের পরেও সে রহস্য অজানা থেকে যাবার বেদনা। হুমায়ূনের লেখার যে বৈশিষ্ট্য আগে উল্লেখ করেছি তা এখানেও আছে। তারা তিন জনের প্রাণীগুলো মানুষ তাদের হত্যা করতে চাচ্ছে টের পাওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা নেয় নি। তাদের মধ্যে আত্মরক্ষার কোন সচেতন চেষ্টাও দেখা যায়না, যা অতি বুদ্ধিমান প্রাণীর করার কথা। এই অপূর্ণতা হুমায়ুন পুষিয়ে দিয়েছেন আশ্চর্য এক জগত তৈরির মাধ্যমে। যে জগতে উষর গ্রহ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ ছোঁয়া সবুজাভ রঙের নিওলিথি সভ্যতার ছয়টি ঘর। যে ঘরগুলো থেকে অপূর্ব বিষাদ মাখা সূর হু হু প্রান্তরে ভেসে বেড়ায়। যে ঘরগুলোর সঙ্গে মাকড়সার মতো এই প্রাণীদের কোন এক সম্পর্ক আছে, কিন্তু তা জানার সুযোগ আর হয়ে উঠবে না।

হুমায়ুন এই কাল্পনিক জগতের অপার্থিব দৃশ্যের সাথে যোগ করেছেন অপ্রাপ্তিকে, যা পাঠকের মন আর্দ্র করে তোলে। আমার কাছে হুমায়ুনের এই অর্জনের তুলনায় বুদ্ধিমান প্রাণীগুলো উদাসীন অযৌক্তিক আচরণ করায় ক্ষতি তেমন বেশী হয়েছে মনে হয়না। কাজুও ইশিগুরোর ‘লেভার লেট মি গো’ উপন্যাসেও মূল পাত্র-পাত্রিকে কিছুটা অযৌক্তিক আচরণ করতে দেখা যায়। উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলো ক্লোন করে তৈরি করা মানুষ, যাদের তৈরি করা হয়েছে রোগীদের শরীরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য। এই ক্লোন করা মানুষগুলো তা জানে, এবং তারা সেই পরিণতিকে বিনা প্রতিবাদে মেনেও নেয়। অনেক পাঠক প্রশ্ন করেছিলো যে এরা পালিয়ে যায় না কেন? এমন না যে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে? কাজুও ইশিগুরো এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যে, পালিয়ে যাবার বা বিদ্রোহ করার কাহিনি অনেক আছে। তিনি চেয়েছেন পালিয়ে না গেলে ঘটনা কেমন ভাবে লেখা যায় তা দেখতে। এছাড়া বেশীর ভাগ মানুষকেই দেখা যায় পালিয়ে না গিয়ে জীবনকে তার অপূর্ণতা নিয়েই পালন করে যেতে। কাজুও ইশিগুরো পালিয়ে যাওয়াকে বিবেচনায় না নেবার মাধ্যমে রচনা করেছেন এক অপূর্ব আখ্যান- যার শেষও হয় পাঠকের মনে হাহাকার জাগিয়ে। কিন্তু হুমায়ুনের সাথে বড় পার্থক্য হলো কাজুও ইশিগুরো তার উপন্যাসের মন খারাপ করা পরিণতি এনেছিলেন পরিকল্পিত লেখার মাধ্যমে। তার উপন্যাস ঘটনাচক্রে যত রহস্যের জন্ম দিয়েছে সব উত্তর শেষমেশ দিয়ে গেছেন। হুমায়ুন এদিক থেকে ভিন্ন। তার লেখা রহস্যের জন্ম দিলেও তার উত্তর তিনি দেবার সেভাবে চেষ্টা করেন না। এদিক থেকে হুমায়ূনের মধ্যে কিছুটা হারুকি মুরাকামিয় বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যদিও মুরাকামির লেখাতে অনেক বেশী ডিটেইলের দেখা পাওয়া যায় যা হুমায়ুনের লেখাতে নেই। মুরাকামির চরিত্রের গভীরতা ও ব্যপ্তিও অনেক বেশী। ফেসবুকে একজনের পোষ্টে মুরাকামির সাথে হুমায়ূনের মিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। এ নিয়ে ফেসবুকীয় আলোচনা করার পাশাপাশি বিস্তারিত করে প্রবন্ধ লিখলে হুমায়ূন চর্চায় তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

কাজুও ইশিগুরোর ‘লেভার লেট মি গো’ উপন্যাসেও মূল পাত্র-পাত্রিকে কিছুটা অযৌক্তিক আচরণ করতে দেখা যায়। উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলো ক্লোন করে তৈরি করা মানুষ, যাদের তৈরি করা হয়েছে রোগীদের শরীরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য। এই ক্লোন করা মানুষগুলো তা জানে, এবং তারা সেই পরিণতিকে বিনা প্রতিবাদে মেনেও নেয়। অনেক পাঠক প্রশ্ন করেছিলো যে এরা পালিয়ে যায় না কেন? এমন না যে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে? কাজুও ইশিগুরো এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যে, পালিয়ে যাবার বা বিদ্রোহ করার কাহিনি অনেক আছে

‘তারা তিনজন’ গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারণে। হুমায়ূনের বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনির নায়ক বা গণিতবিদদের দেখা যায় এক কিশোরী-তরুণীর সংস্পর্শে আসতে, যারাও মোটামুটি অযৌক্তিক আচরণ করেন। এর মাধ্যমে হুমায়ূন কাহিনিতে রোমান্টিক এক আবহ তৈরি করেন। নায়ককে দেখা যায় সেই কিশোরী-তরুণীর জন্য কোন স্বভাব বিরুদ্ধ কাজ করতে, যা কোন এক বিয়োগান্ত পরিণতির মাধ্যমে কাহিনি শেষে পাঠকের মন আর্দ্র করে তোলে। ‘তারা তিনজন’ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হুমায়ূন এই বারবার ব্যবহার করা পদ্ধতির ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন। এখানে কোন কিশোরী-তরুণীর দেখা পাওয়া যায় না। পাঠকের মন তিনি এই আখ্যানে আর্দ্র করে তুলতে পেরেছেন প্রথাগত রোমান্টিকতার পথ না মাড়িয়েই।

হুমায়ূনের ‘শূন্য’কে আমার কাছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা মনে হয়েছে। এবারের প্রেক্ষাপট কোন সুদূর ভবিষ্যৎ বা অজানা কোন গ্রহ নয়, বরং বাংলাদেশেরই একটি গ্রাম বা মফস্বল। কাহিনির নায়ক এক স্কুল মাস্টার মনসুর সাহেব যিনি অংক পড়ান। হুমায়ূনের অন্যান্য লেখার নায়কদের মতোই তিনি উদাসীন ও আত্মভোলা টাইপের মানুষ। এক গুদাম ঘরের উপরে তিনি একাকী বাস করেন। দেখা যায় যে তিনি এক জটিল অংক করতে চাচ্ছেন যা শূন্যের রহস্য ভেদ করবে। যদিও তাকে এ নিয়ে তেমন কোন শ্রম দিতে দেখা যায় না। এক সময় শূন্যের জগত থেকে যুবক বয়ষী কেউ তার সঙ্গী হয়, কাহিনিতে যার নাম দেয়া হয় ফিবোনাক্কি। ফিবোনাক্কির প্রকৃত উদ্দেশ্য শূন্য নিয়ে মনসুরের গাণিতিক কাজ নষ্ট করে ফেলা যা মনসুর টের পান একেবারে শেষের দিকে। তার আগ পর্যন্ত তিনি ফিবোনাক্কিকে নিজের মনের কল্পনা ভেবেছিলেন। ফিবোনাক্কির সাথে মনসুরের গণিত নিয়ে কিছু কথোপকথন হয়।
ফিবোনাক্কি এদিকে মনসুরকে বাইরের মানুষের কাছে পাগল হিসাবে দেখানোর জন্য দোকান থেকে কেনা তার দিস্তা দিস্তা কাগজ নষ্ট করে ফেলে কাগজের নৌকা বানিয়ে। কাহিনির শেষ দিকে যখন মনসুর মৃত্যুর মুখোমুখি তখন স্কুলের হেড মাস্টার এই নৌকাগুলোকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তার সব রাগ গিয়ে পড়ে ফিবোনাক্কির পরিকল্পনা মতো মনসুরের কাগজগুলোর উপর। তিনি সব কাগজ পুড়িয়ে ফেলার হুকুম দেন। এভাবে নষ্ট হয়ে যায় শূন্য নিয়ে মনসুরের গাণিতিক কাজ।

ফিবোনাক্কির উদ্দেশ্য মনসুরের কাজ নষ্ট করে ফেলা হলেও সে অশুভর প্রতিনিধিত্ব করে না। ফিবোনাক্কি মনসুরকে জানায় যে তাকে শূন্যের জগত থেকে পাঠানো হয়েছে যাতে সে জগতের রহস্য ভেদ করতে না পারে। যাতে সে জগতটা সুরক্ষিত থাকে। ফিবোনাক্কি জানায় যে সে মনসুরের মস্তিষ্কের স্মৃতিকোঠা থেকে কোন হারানো সুখ স্মৃতি বের করে এনে দিতে পারে, মৃত্যুটাকে আনন্দময় করার জন্য। মনসুর কিছু বলার আগেই তার কিশোরী বধূ নিয়ে একটা স্মৃতি মনে ভেসে উঠে যে অনেক আগেই মারা গেছে। সেই স্মৃতি সুখস্মৃতি ছিলোনা, কারণ কিশোরী বধূর বৃষ্টিতে ভেজার ডাক তিনি উপেক্ষা করেছিলেন। ফিবোনাক্কি সেই স্মৃতিকে পালটে দেয়। কিশোরী বধূর সাথে বৃষ্টিতে ভেজার সুখস্মৃতি নিয়ে মৃত্যু ঘটে মনসুরের।
শূন্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রধান চরিত্রের গণিত নিয়ে মোটামুটি দীর্ঘ কথোপকথন। এরকম আছে তার ফিহা সমীকরণ-এ, যা নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। এই কথোপকথনের ভঙ্গি পুরোপুরিই হুমায়ূনীয়। একজন মহা প্রতিভাবান গণিতবিদ, যিনি শূন্য নিয়ে ভাবছেন তার ভাবনাতে, যে ডিটেইল থাকার কথা তা সেখানে নেই। এমনকি ফিবোনাক্কির সাথে কথোপকথনের এক পর্যায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রকে শূন্যের সাথে তুলনা করা হয় যা গাণিতিক ভাবেও সঠিক নয়। তত্ত্ব ও তথ্যকে লেখায় আনার আগে খানিকটা খতিয়ে দেখা উচিত, যা হুমায়ূন মাঝে মাঝে করেন নি। যেমন ‘হিমু ও হার্ভাড পিএইচডি বল্টু ভাই’তে আছে গণিতবিদ অ্যালেন টুরিং গুলি করে নিজের মাথা উড়িয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন কিন্তু আসলে অ্যালেন টুরিং আত্মহত্যা করেছিলেন সায়ানাইড বিষ পানে। বলছেন যে পৃথিবীর সেরা অংকবিদদের নাকি মাথায় জট লেগে পাগল হয়ে যান। না হলে তারা আত্মহত্যা করেন। হুমায়ূনের ভাষা ভঙ্গি ব্যবহার করে বলা যায় এগুলো ‘মহা ভুল’ তথ্য। ‘মধ্যাহ্নে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন মহারানী এলিজাবেথকে জার্মান বোমা থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে সময় এলিজাবেথ ব্রিটেনের রানী ছিলেন না, বরং ছিলেন সিংহাসনের প্রথম উত্তরাধিকারী। তিনি রানী হিসাবে অভিষিক্ত হন বিশ্বযুদ্ধের ৮ বছর পরে ১৯৫৩ সালে। হুমায়ূন কোনো গণিতের বই বা ইতিহাস লিখছেন না মেনেও এরকম বিচ্যুতি মেনে নেয়া অস্বস্তিকর।
তবু হুমায়ূন এই কাহিনিতে তার সব মহিমাতেও উদ্ভাসিত। ‘শূন্য’ মোটামুটি লেখা হয়েছে নিখুঁত ভাবে। হুমায়ূনের গ্রাম বা মফস্বল ঠিক আমাদের চেনা জানার মতো নয়। সেখানে জনবসতি অনেক কম। মানুষগুলো কেমন দূরে দূরে বাস করে, তবুও সে জনপদকে পাঠকের আপন চেনা জানা লাগে। হুমায়ূনের চরিত্রগুলোর কথোপকথনের ভঙ্গি আমাদের পরিচিত ভঙ্গি নয়। তবু তা কানে ঠেকে না বরং খুব স্বাভাবিক মনে হয়। যেমন কাহিনির এক পর্যায়ে এক কাগজ বিক্রেতাকে মনসুরের সাথে রসিকতা করতে দেখা যায়। মনসুর এক সময়ে তার প্রতিউত্তরও দেন। কিন্তু বাস্তব জগতে এরকমভাবে কেউ কথা বলে না। তবু তা পাঠকের কাছে স্বাভাবিক ঠেকে। শূন্যের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনি মোটামুটি সুগঠিত ভাবেই এগিয়েছে। হুমায়ূন আলো আঁধারীর মাঝামাঝি জগত তৈরি করতে দক্ষ। শূন্যতে তা পূর্ণমাত্রায় আছে। আছে দুর্দান্ত কাব্যিক প্রকাশ। একটি জায়গায় তার প্রকাশের ভঙ্গি হারুকি মুরাকামির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যা নিচে দেয়া হলোঃ
“মনসুর সাহেব ঘরে ফিরে এলেন। হারিকেন নিভিয়ে বিছানায় গেলেন। ভয়াবহ ক্লান্তি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। আকাশে মরা চাঁদ, সেই আলো এসে পড়েছে তাঁর বিছানার একপাশে।
শূন্য জগতে কি চন্দ্রালোক আছে? সেই জগতে কি জোছনার ফুল ফোটে? পাখি গান গায়?”

উপরের প্রথম প্যারা থেকে পরের প্যারাতে ট্রানন্সিশন হুমায়ূনের কথাশিল্পে পরম উৎকর্ষতার প্রমাণ দেখায়। কিন্তু হুমায়ূন এরকম খুব বেশী করেন নি। তার লেখায় কাব্যিকতা থাকলেও তিনি তার এই সক্ষমতা কমই ব্যবহার করেছেন।
এবারে যে উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ‘নি’। মোহাম্মদ আজমের মতে ‘নি’ হুমায়ূনের সেরা লেখাগুলোর একটি। আমার মনে আছে যে আজম একথা আমাদের ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আড্ডাকালীন সময়গুলোতেও বলেছিলো। আমার কাছে মনে হয়েছে যে ‘নি’ আর ‘শূন্য’ খুব কাছাকাছি ধরনের লেখা। ঘটনা ঘটছে সেই একই রকমের গ্রাম/মফস্বলের পটভূমিতে। ‘নি’র মূল নায়কও স্কুলের মাস্টার। তিনি বাস করেন একাকী নির্জনে এক নদীতীরে। জন্মসূত্রেই অমিত প্রতিভাবান কিন্তু উদাসীন। এখানেও শেষ ঘটে নায়কের মৃত্যুতে, ঘটে সেই মৃত্যুর সময় রোমান্টিক হাহাকার পূর্ণ আবহ তৈরিতে এক কিশোরীকে ব্যবহারে। ‘নি’র নায়কও গণিতে দক্ষ, যদিও তার মূল প্রতিভা কল্পনার জগতকে বাস্তবে রূপ দেয়া। এরকম যারা পারে তাদের বলা হয় নি, যা দিয়ে উপন্যাসের নামকরণ।

‘নি’ ও ‘শূন্য’ পাশাপাশি পড়ার সময় মনে হয়েছে যে হুমায়ূন ‘শূন্য’ লেখার সময়েই ‘নি’তে ব্যবহার করা ঘটনাগুলোর কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু একই উপন্যাসে তাকে একত্রিত না করে দু’টি লেখা লিখেছিলেন। যার কারণে দুই উপন্যাসের বিষয়গত পুনরাবৃত্তি। হুমায়ূনের লেখাতে এরকম বারবারই দেখা যায় যা আমার মতে লেখক হিসাবে তার সীমাবদ্ধতা দেখায়। হুমায়ূনের কাহিনিতে আমি পূর্বে লিখেছিলাম,পার্শ্ব চরিত্রগুলোর আচার আচরণ মূল নায়ককে ঘিরে আবর্তিত হয়। ‘নি’তে তা খুব বেশী মাত্রায় আছে। আমার বন্ধু কথাসাহিত্যিক মাসউদুল হক একটি আলোচনাতে লিখেছিলো, বড় লেখকদের লেখাতে দেখা যায় এমন পার্শ্ব চরিত্র, যাদের নিয়ে ঘটনার পরিপূর্ণ বিকাশ হতে পারে বা তাদের নিয়েই আলাদা উপন্যাস হতে পারে। ‘নি’তে বেশকিছু পার্শ্ব চরিত্র থাকলেও তারা বিকাশের সুযোগ পায়নি। মূল চরিত্রের অস্তিত্বই তাদের অস্তিত্বের নিয়ামক।

আমি যে লেখাটা নিয়ে সবশেষে আলোচনা করবো তা হলো ‘ফিহা সমীকরণ’। বইটিতে শূন্যের মতোই গাণিতিক সমীকরণ নিয়ে সরাসরি কথোপকথন লক্ষ্য করা যায়। কাহিনির নায়ক ফিহা একজন বিজ্ঞানী যে সময় সমীকরণের সমাধানের চেষ্টা করে অতীতে ফিরে যাবার জন্য। ফিহা যে ভবিষ্যতে আছে সেখানে মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক দিকে আছে সাধারণ মানুষ আর অপরদিকে আছে মেন্টালিস্ট। মেন্টালিস্টরা মানুষের মন ও যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু কোনো সৃজনশীল কাজ করতে পারে না। এই মেন্টালিস্টদের সৃষ্টি হয়েছে অতীতে এক জেনেটিক এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে। ফিহা’র উদ্দেশ্য সময় সমীকরণ সমাধান করে অতীতে গিয়ে সে এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করা।
‘ফিহা সমীকরণ’ সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো যে তা একটি দুর্দান্ত উপন্যাস হতে পারতো। আমি পূর্বে বলেছিলাম যে হুমায়ূন ছোট আকারে উপন্যাসে শক্তিশালী হলেও সেটা তার দুর্বলতারও জায়গা। কাহিনির দাবী অনুযায়ী বড় না করে হুমায়ূন নিজের মতো ছোট করে ‘ফিহা সমীকরণ’ শেষ করেছেন। উপন্যাসটি অনেকটা রহস্য উপন্যাসের মতো করে শুরু। কিন্তু হুমায়ূন সে দিকে না গিয়ে ব্যবহার করেছেন তার পরিচিত পদ্ধতি যাতে আছে একজন তরুণী, প্রধান নায়ক ফিহার সাথে তার অযৌক্তিক পরিণয় ও শেষমেশ রোমান্টিক আবহ তৈরির মাধ্যমে ফিহার মৃত্যু। ফিহাকে মেন্টালিস্টের সম্পর্কে এক পুলিশের সাথে কথা বলতে দেখা যায়, মেন্টালিস্টদের নিয়ে বইয়ের খোঁজ করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ফিহা মেন্টালিস্টদের নিষিদ্ধ ভূগর্ভস্থ নগরে যাবার সুযোগ পায়। কিন্তু সে নগরের কোন বর্ণনা দেয়া হয় না। মেন্টালিস্টদের এক ধর্মগ্রন্থের মতো বই ফিহা পড়ার সুযোগ পায় যাতে তার নাম উল্লেখ আছে। কিন্তু ফিহাকে সে ক্লু ব্যবহার করতে দেখা যায় একেবারে শেষের দিকে। হুমায়ূনের অন্যান্য গণিতবিদদের মতো ফিহার মধ্যেও লক্ষণীয় জন্মসূত্রে অমিত প্রতিভার সাথে উদাসীনতার সমন্বয়।

হুমায়ূন তার তত্ত্ব ও তথ্য নিয়ে সতর্ক না থাকলেও লেখাগুলোতে প্রচুর তত্ত্ব, তথ্য, জ্ঞান ও শিল্প জগতের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নাম ব্যবহার করে গেছেন। হুমায়ূন প্রচুর পড়তেন ও লেখাতে তিনি কৌশলে তা পাঠকে জানিয়ে দিতে পারতেন। বলা যায় প্রিয় লেখকদের প্রতি ঋণ তিনি বারবার স্বীকার করেছেন তাদের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে

উপরের আলোচনাতে আমরা হুমায়ূনের যে লেখাগুলোতে গণিতবিদ এসেছে সেগুলো নিয়ে মোটামুটি দীর্ঘ আলোচনা করেছি। অন্যান্য লেখাগুলোতেও মাঝে মাঝে গণিতে প্রতিভাশালীদের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু অহেতুক পুনরাবৃত্তি পরিহারের জন্য সে আলোচনাতে আর যাচ্ছি না। হুমায়ূনের তৈরি চরিত্র মিসির আলিকেও মাঝে মাঝে গাণিতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে দেখা যায়। যা নিয়েও আমি এখানে আলোচনা করবো না।
হুমায়ূনের গণিতবিদ নিয়ে আমার মূল্যায়ন হলো তারা তার অন্যান্য কাহিনির নায়কদের থেকে তেমন ভিন্ন নন। হুমায়ূন প্রতিভা ও উদাসীনতার সমন্বয়ে একটি চরিত্র নির্মাণ করেছেন। এই চরিত্রটিকে তিনি ঘুরে ফিরে বারবার ব্যবহার করেছেন। এর সাথে যুক্ত করেছেন এক চপল কিশোরী-তরুণীকে। এদেরকেই তিনি বারবার এনেছেন শুধুমাত্র পটভূমির খানিকটা ওলট পালট ঘটিয়ে। যে বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনি তিনি লিখেছিলেন তাতে মোটা দাগে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। পুনরাবৃত্তি যে অন্যান্য লেখকদের থাকে না তা নয়। যেমন মানিক বঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ও ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ দু’ক্ষেত্রেই আছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক, এবং শেষের দিকে এসেছে পালিয়ে যাবার কথা। পদ্মা নদীর মাঝিতে পালিয়ে যাওয়া ঘটে যা পুতুল নাচের ইতিকথাতে ঘটে না। হুমায়ূন অনেক বেশী লিখেছিলেন বলেই হয়তো পুনরাবৃত্তির পরিমাণও বেশী। মানিকের ডিটেইলিং ও মনের গভীরে যাবার জন্য যে পরিশ্রম তা হুমায়ূনের নেই।

হুমায়ূনের সমস্ত দুর্বলতা মেনে নিয়েও তার লেখার উৎকর্ষ অস্বীকার করার উপায় নেই। তার বৈজ্ঞানিক কাহিনিগুলো আকর্ষণীয়, মায়াভরা। তার গণিতবিদরা মানবিক। তারা দূরের হলেও আবার কাছেরও হয়ে ওঠেন। তাদের ব্যর্থতা বেদনা পাঠকেও ব্যথিত করে। একজন লেখকের এরকম অর্জন ইর্ষনীয়।

হুমায়ূন তার তত্ত্ব ও তথ্য নিয়ে সতর্ক না থাকলেও লেখাগুলোতে প্রচুর তত্ত্ব, তথ্য, জ্ঞান ও শিল্প জগতের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নাম ব্যবহার করে গেছেন। হুমায়ূন প্রচুর পড়তেন ও লেখাতে তিনি কৌশলে তা পাঠকে জানিয়ে দিতে পারতেন। বলা যায় প্রিয় লেখকদের প্রতি ঋণ তিনি বারবার স্বীকার করেছেন তাদের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে। তার সে পাঠে বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস সবই আছে। বাংলাদেশে ফিবোনাক্কি সিকোয়েন্স নামক গাণিতিক ধারণার পরিচিতি মনে হয় হুমায়ূনের লেখার সূত্রেই এসেছে। অনেকে এক সময় বলতেন যে হুমায়ূনের লেখাতে শিক্ষণীয় কিছু নেই। শিক্ষণীয় প্রচুর আছে, হুমায়ুন তার অনেক সূত্র রেখে গেছেন, পাঠককে তা শুধু খুঁজে দেখতে হবে। হুমায়ূনের তুলনায় অন্য লেখকদের লেখাতেই বরং শিক্ষণীয় কম। এমনকি হুমায়ূনের গণিতবিদরা উদাসীন খামখেয়ালীপূর্ণ হলেও নীতিবিরুদ্ধ কাজ করেন না। তাই পরোক্ষভাবে হুমায়ূন নৈতিকতার শিক্ষাও দিয়ে গেছেন।

জনপ্রিয়তার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখকও, বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনিতে তার তুলনা (আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে) বাংলা ভাষায় নেই। প্রত্যাশা করি যে আমার এই লেখা, অন্যদের হুমায়ূন সম্পর্কে লিখতে অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমে হয়তো আজমের উল্লেখিত সেই অ্যাকাডেমিক পাঠের অভাবও কিছুটা মিটবে।

আরো পড়তে পারেন

একাত্তরের গণহত্যা প্রতিহত করা কি সম্ভব ছিল?

২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি নরঘাতকেরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই এক রাতেই শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় তিন হাজার। এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা একতরফাভাবে….

ভাষা আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা

আগের পর্বে পড়ুন— চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল) ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও একটি সার্থক গণআন্দোলন। এই গণআন্দোলনের মূল চেতনা বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ হলো দেশপ্রেম থেকে জাত সেই অনুভূতি, যার একটি রাজনৈতিক প্রকাশ রয়েছে। আর, বাঙালি জাতিসত্তাবোধের প্রথম রাজনৈতিক প্রকাশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে দুই হাজার মাইল দূরত্বের….

চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল)

আগের পর্বে পড়ুন— বায়ান্নর ঘটনা প্রবাহ একুশের আবেগ সংহত থাকে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। আওয়ামি লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম কমিটির সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র….

error: Content is protected !!