Author Picture

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

সাযযাদ আনসারী

ঋতু রমনী

অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী
চেনা পাতা ও পাখি থেকে
অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে।

কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর
কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর,
কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার
কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার।

এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর
এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর,
এই খানে পথে পথে ভুল ফুল ফোটে
এই খানে সেই ঋতু ভাঙা পথে ছোটে।

কিছুই হলোনা বলা অবশেষে তারে
তবু সে আমার মনের কোণে
সুফলা মেঘের ফাঁকে চাঁদের মত ওঠে।

 

হাসির গুপ্তধন

কুয়ো তলায় পাথর কুচির বন
দেখেও যেনো দেখে না লোকজন।

হঠাৎ কেমন সাপের শব্দ শুনি
তখন ভয় দেখেছি, মৃত্যু দেখিনি।

ঘাসের খেলায় স্বচ্ছ সবুজ বন
লুকিয়ে ছিলো হাসির গুপ্তধন।

মন কেড়ে যে নিলো মনের ধারে
ওই নদীতে ডুববো বারে বারে।

 

মানুষ হয়ে

একলা বৃক্ষ, নির্জনে আছো জেগে
আকাশ ভরেছে রূপোলী মেঘে মেঘে।

চারিদিকে বয়ে চলে প্রাণের বায়ু
মানুষেরই মত—শিউলীরও সামান্য পরমায়ু।

জলে জলে নেই মুহুর্তের টুকরো কাটাকাটি
একটিই জীবন তবু কেন রক্তাক্ত পথ হাটি?

পারুমিতা-সালেহা, জালাল-পরিতোষ—
খুলে ফেলো সব কাকের ময়ুর মুখোশ

তোমাদের ঘর  থেকে ঘর কেন এত দুরে!
দেখাতো হয়ই— সকাল বিকেল দুপুরে দুপুরে।

অবিশ্বাসের ফাঁদ ভেঙে—
বিশ্বাসের দরজা খুলে—
মানুষের বাগান গেয়ে, চল ফিরে আসি
সত্যিই, মানুষ হয়ে, মানুষের হৃদয় জুড়ে।

এখনো ছায়ার বৃক্ষ নির্জনে আছে জেগে।

 

প্রেম শিখেছি

প্রথম যেদিন প্রেম লিখেছি
অষ্টপ্রহর মেঘ ডেকেছে
ময়ূর কেমন ভুল নেচেছেস
বৃষ্টি সেদিন আর আসেনি।

রক্ত রেখায় নাম এঁকেছি
রক্তবীজের প্রাণ নিয়েছি
সেদিন আমি প্রেম শিখেছি
তার পরে আর হার মানিনি।

 

আর দেখা হলো না

তোমাকে অনেক সহ্য করেছি আমি।
তুমিও আমাকে।
শৈশবের সিঁড়ি পাড় হতে হতে এখন
গোধুলির শেষ সীমানায়।

সময়ের শব্দ শুনে শুনে এখনও
জীবনের গভীর গন্ধ ভালোবাসি।

ঘন পাতা ও পাখি আমার খুব প্রিয় ছিলো
তুমি দুষ্টুমি ছুঁড়ে আমার আঙিনার সব পাখি
উড়িয়ে দিতে। আমার ঘুড়ির সূতা ছিড়ে পালাতে,
পড়ার টেবিলটা করে দিতে এলো মেলো।

আমিও খুনসুটি খেলতে খেলতে প্রতিজ্ঞা
ভেঙে গেছি ক্রমাগত।

একদিন আকাশভরা তারার সন্ধ্যায়
গাছে গাছে রোদ্রের রঙ মুছে গেছে যখন
একটি পাখিও জেগে নেই  কোথাও,
তখন  দ্বীধাদগ্ধ দীর্ঘ পুঞ্জীভূত একটি শব্দ
বলে ফেলেছিলাম, তোমার হাত ছুঁয়ে।

সেদিনই শীতের শান্ত নদী হয়ে গেলে তুমি।
ঝিনাইয়ের জলে তরঙ্গ থেমে গেলো,
চারিদিকে জ্বলে উঠলো রক্তরাঙা চোখ।

তারপর আর দেখা হলো না আমাদের।

আরো পড়তে পারেন

বিপিন বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা

শূন্যতায় বাজে প্রণবধ্বনি শূন্যতায় বাজে প্রণবধ্বনি আড়ালে যার মহাজাগতিক রশ্মির চারণভূমি প্রতিবন্ধকতাকে পাশকাটিয়ে নিমগ্ন বিশ্বের স্বরূপ দেখি ধ্যানের স্তরে। মায়ার কায়া ঝেড়ে ফেলে সত্যকে চিনি আপন করে জ্যোতির্ময় জেগে আছে দীপ্ত শিখার আপন জলে । মূল্যবোধের সলতে টাকে মারতে চাই না দিন-দুপুরে অন্ধকারে আলোক রেখা সদাই খোঁজি হৃদ মাঝারে।   জীবনের ধর্ম এই জীবন মা….

চৌধুরী রওশন ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

দ্বিধা দ্বিধার পাথারে পড়ে থাকি আজীবন, যেদিকে তাকাই থইথই দ্বিধারাশি। কূলহারা দরিয়ায় দ্বিধার চুম্বন কোন পার হতে কোন পারে লয় ভাসি? কত কী দেখিতে পাই, দেখি না কতই, দেখা-না-দেখার দ্বিধা-বুদবুদ এসে, মনের অতলে ভীড় করে সে স্বতই; কেবলি সংশয়ে দ্বিধা-স্রোতে যাই ভেসে। হবে কি হবে না, কিছু দেবে কি না দেবে, লাভ না কি ক্ষতি,….

সুলতানা নাছিরা হীরার একগুচ্ছ কবিতা

বিরুদ্ধ সময় একেকটা দিন কী বীভৎস হয়েই না আসে! বীভৎস সময়, বীভৎস মন, বীভৎস মানুষ, বীভৎস সভ্যতা! মধ্যাহ্নের প্রাখর্যকে কম্পমান পর্দা বানিয়ে ভয়ার্ত রাজহাঁসের মতো চিৎকার করতে করতে ছুটে গেল একটা অ্যাম্বুলেন্স। এই গাড়িটার ভেতর আপাতত আশ্রয় পেলে বেঁচে যেতাম। ভীষণ বিরুদ্ধ সময়! এই বিরুদ্ধতার কথা জানে ঘরের চার দেয়াল, শূন্য বারান্দা, জীর্ণ দেয়াল ঘড়ি,….

error: Content is protected !!