Author Picture

শায়লা সুলতানার একগুচ্ছ কবিতা

শায়লা সুলতানা

একুশ শতকের প্রেম

তুমি বসন্ত হলে
আমি স্নিগ্ধ হবো,
তুমি মেঘ হলে
আমি ময়ূর হবো,
হাওয়ায় হাওয়ায় সুখ ছড়াবো
পামমূকের আকাশে ভোর জাগাবো
ঘুম ঘুম চোখে শুনবো অচেনা সুরের
নিয়ান্ডারথাল।
ভয়গুলো সব এপিটাফে রেখে
হেটে যাবো মেটাভার্সের পথে তুমি-আমি
অদম্য চোখের ইশারায় যদি খুনি হও আমার
সলজ্জে অমাবস্যার ঘোমটা টেনে নিবে আকাশ,
মহাকাশে তারাদের হৈচৈ থেমে যাবে
কৈলাশের বুকে বুঝি তখন লুকাবে শশী।
পোড়া দর্পণে
প্রেমের ক্ষত লেগে থাকা ক্যালিগ্রাফি মৌন অভিমানের মতো
বিবর্ণ করে দেয় নীল ও আধাঁরের পারস্পরিক বিনিময় কিংবা লেনাদেনা,
দৃষ্টির দাম্ভিকতায় তোমাকে করে তোলে অপরিচিত
চলে দূর্বাঘাসের তলপেটে কোন বিশ্বাসের পোস্টমর্টেম
দিনের পর দিন আমাদের সম্পর্কের বক্র পথে
দেখা হয় হলদে ঘাসের বুকে শুষ্ক হতে থাকা কুয়াশা টলমল
এভাবে, পথের পর পথ চলে বিশ্বাসের কারচুপির প্রটোকল নিয়ে।
তাই ধীরেধীরে ক্ষীণ হয় অবিনাশী কাব্যের গ্যালারি।
পাড়ার সন্ধ্যাটা যেন অস্রহীন অপরাধী
ভয় ও ভবিষ্যতের মাঝখানে কোন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে।
যেখানে বাতাস বিশ্বাস হারিয়ে চূর্ণ হয়
বিবর্ণ হয় প্রিয় মুখের মতো,
তোমার চিরচেনা পথে ককেসিয় ইতিহাস থেমে যায়
হারিয়ে যাওয়া সুখগুলো যেন মরুদ্যানের বিলাসিতা এখন
শুধু তোমাকে হারাই বারবার সেই ভীড়ে
যেখানে পথ হঠাৎ করেই বদলায় দৃশ্যপট
যেখানে ম্রিয়মাণ কালের চলে অববাহিকা।

 

অভিশপ্ত প্রেমের পরপারে

গোলাপের কফিনে রেখেছো যে ভালোবাসা
সেখানে সৌরভ নেই
হাজারো ফুলের ভীড়ে কোথাও নেই সুঘ্রাণ
ঠিক যেন প্রবাহিত হচ্ছে এক আগুন নদী
দগ্ধ করে দেয় সে জল
যে জলে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ফুলকির মতো ছড়িয়ে পরে।
যেখানে স্বপ্নের মতো ধাপগুলি আকাশে উঠে গেছে
নিরুদ্দেশ হচ্ছে দিগন্ত গন্তব্যের অনুসন্ধার করে,
সেখানে কৌমার্য ভেঙে অনেক মালা বদল হয়
বেচেঁ থাকার উপঢৌকন বলতে শুধু প্রেমের চর্চা করে।
যদি আকাশের তারাগুলি চুপচাপ শোনে
প্রেম নিবেদনের সেইসব কথা
ভূমিকা ও উপসংহারের উপস্থিতি
যৌবনের মহাসঙ্গীতে সারেগামাপার মতো
অথবা মনে হবে সব কিছু
কবজে লিখা স্নায়ুর সমস্ত বন্দী আরতি।
ঠিক দূরপাল্লার মতো আমাদের অনুভূতি সাই-সাই করে ছোটে
বুঝে নেও এই দুরত্বের মতোই
সময়ের অবাঞ্চিত মুহূর্ত গুলো খারিজ করে দেয় আমাদের বিষন্নতা।
ঠিক আবার এমন কিছুর আবেদন
তোমাকে কাছে পাওয়ার দূর্লভ মূহুর্ত
প্রত্যাখ্যান হলে বদলে যাবে তখন ভারতবর্ষের ইতিহাস
রুপান্তরিত হবে স্বাধীনতার সংঙা
চোখের ইশারায় ক্ষোভগুলো মোমবাতির মতো গলিয়ে দিবে অমর প্রেমের অস্তিত্ব,
চোখেমুখে এঁটে দেয়া সীমানার ওপারে
অতিক্রম করতে পারেনা তখন আমার সমস্ত অনুভূতি,
হোচটখেয়ে টুকরো হওয়া আবেগগুলো দর্পণের মতো চূর্ণ হলে
সেদিন বিশ্বাসের রংজলা ময়দানে কপোত না উড়িয়ে
আকাশে পাঠাবো অভিসপ্ত এক প্রেমের ইতিহাস।

 

প্রেম ও প্রার্থনা

এই মাঠে শালিকের পিপাসা দেখেছি
নবান্নের ছেড়া আচলে নববধূর সিক্ত হাসি
ঠোঁটে আলতা রংটা যেন ধানের সুঘ্রান
কৃষকের বুকে বেড়ে উঠে প্রজন্ম পরম্পরায়
তবুও মাঝে মাঝে শ্মশানের জ্বালাপোড়ার ক্ষত বয়ে বেড়ায় মাঠের পরে মাঠ
নীলোৎপল হয়ে প্রেম ও সাহস দাড়িয়ে থাকে দূরে
তার হাতে যেন কিছু অবিশ্বাসের পদ্ধফুল
হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লোভনীয় বিশ্বাসের দ্বারে
পৃথিবীটাকে সে আলিঙ্গন করে রোজ।

যেনো, প্রেম এখানে নির্বাসিত
কোন পরিব্রাজকের সুগন্ধা পটভূমি
অলৌকিক সেই প্রেম, যার মোহমায়ায় থমকে যায় নবান্ন
যেখানে গোলাভরা থাকে শুধু রিক্ততা ও অবিশ্বাস।
প্রদীপের আলোর প্রদর্শনীর শেষে
তাকে খুজে পাই বিলাসবহুল জোছনায়
থমথমে ভিত রাত শুধু জানে
ঐ চোখের খাজকাটায় আটকে গেছে কত জীবন
কত পথ, কত স্বপ্ন,সব অজানা।

 

মুহিব্বি সিরিজ -১

মুহিব্বি,
অসমাপ্ত এক সম্পর্ক
স্বরলিপির আকারমাত্রিক ছন্দে তোমায় খুজি
নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে, শান্ত হয়ে তখন ঘুমায় এ পৃথিবী
শুধু রাতের অপেক্ষায় থাকা এক নিশ্চিত ভোর
আধাঁরের মহাকাশ পাড়ি দিয়ে
অক্লান্তভাবে পার করছে তোমার গল্পের দ্রাঘিমায়।
মুহিব্বি,
এখানে চিতা জ্বলে বিষাদের অবিরত
সারগাম-কাওয়ালি-কাফি আর গজলে
খরস্রোতা নদীর জলে
অলৌকিক তুমি
হৃদয়-তীরে, এখানে অজান্তেই তোমার চেতনা ঢেঊয়ের মতো
আছরে পরে
তুমি ধন্য করো।
মুহিব্বি,
অপেক্ষার দায় এড়িয়ে
এখন
ইশ্বর খুজি
তুমি এগিয়ে এলে
চোখগুলো ক্রমশ বন্দী হয়ে যায়
তোমার নান্দনিকতা দেখে।
মুহিব্বি,
অমরত্বের নীল রুবি ও
মখমলের মাঝে হারিয়ে ফেলি বারবার
কোন আতরওয়ালার পিছুপিছু ছুটে চলা
বাতাসে প্রেমের আর্তনাদ শুনি
এবং মুহিব্বি

আমাদের পথ প্রসারিত হয়
বিলীন হওয়া হৃদয়ের অমরত্ব নিয়ে
অনুভূতির চতুষ্কোন ছাড়িয়ে আমাদের অস্তিত্ব ছুটে
অজানা গন্তব্যে।

আরো পড়তে পারেন

বিপিন বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা

শূন্যতায় বাজে প্রণবধ্বনি শূন্যতায় বাজে প্রণবধ্বনি আড়ালে যার মহাজাগতিক রশ্মির চারণভূমি প্রতিবন্ধকতাকে পাশকাটিয়ে নিমগ্ন বিশ্বের স্বরূপ দেখি ধ্যানের স্তরে। মায়ার কায়া ঝেড়ে ফেলে সত্যকে চিনি আপন করে জ্যোতির্ময় জেগে আছে দীপ্ত শিখার আপন জলে । মূল্যবোধের সলতে টাকে মারতে চাই না দিন-দুপুরে অন্ধকারে আলোক রেখা সদাই খোঁজি হৃদ মাঝারে।   জীবনের ধর্ম এই জীবন মা….

চৌধুরী রওশন ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

দ্বিধা দ্বিধার পাথারে পড়ে থাকি আজীবন, যেদিকে তাকাই থইথই দ্বিধারাশি। কূলহারা দরিয়ায় দ্বিধার চুম্বন কোন পার হতে কোন পারে লয় ভাসি? কত কী দেখিতে পাই, দেখি না কতই, দেখা-না-দেখার দ্বিধা-বুদবুদ এসে, মনের অতলে ভীড় করে সে স্বতই; কেবলি সংশয়ে দ্বিধা-স্রোতে যাই ভেসে। হবে কি হবে না, কিছু দেবে কি না দেবে, লাভ না কি ক্ষতি,….

সুলতানা নাছিরা হীরার একগুচ্ছ কবিতা

বিরুদ্ধ সময় একেকটা দিন কী বীভৎস হয়েই না আসে! বীভৎস সময়, বীভৎস মন, বীভৎস মানুষ, বীভৎস সভ্যতা! মধ্যাহ্নের প্রাখর্যকে কম্পমান পর্দা বানিয়ে ভয়ার্ত রাজহাঁসের মতো চিৎকার করতে করতে ছুটে গেল একটা অ্যাম্বুলেন্স। এই গাড়িটার ভেতর আপাতত আশ্রয় পেলে বেঁচে যেতাম। ভীষণ বিরুদ্ধ সময়! এই বিরুদ্ধতার কথা জানে ঘরের চার দেয়াল, শূন্য বারান্দা, জীর্ণ দেয়াল ঘড়ি,….

error: Content is protected !!