Author Picture

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

তরুন ইউসুফ

হারানো বিজ্ঞপ্তি

ধরা যাক কোন একদিন হারিয়ে গেছি
শহরময় ছড়িয়ে গেছে
কালো অক্ষরের শাদা শাদা লিফলেটে-

একটি হারানো বিজ্ঞপ্তিঃ

“নাম তরুন ইউসুফ, খর্বাকায়, গায়ের রঙ শ্যামলা,
মনের রঙ কালিমাখানো
ঠিকানাঃ পৃথিবী, হুট করে হারিয়ে গেছে।
কোন সহৃদয় ব্যাক্তি খূঁজে পেলে
উপযুক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন”

লিফলেট পড়ে খোঁজখবর নিয়ে
অনেকেই জানতে পারে
লোকটা বেশ সুখীই ছিল
তার তেমন কোন দুঃখ ছিল না
অথচ সে হারিয়ে গ্যালো!

ইদানিং দুঃখী মানুষের চেয়ে সুখী মানুষের
হারিয়ে যাবার হার নাকি বেড়ে গেছে!

 

সমুদ্র

সমুদ্রে যাচ্ছ জেনে
আমার জন্য একটুকরো
সমুদ্র আনতে বলেছিলাম

(তোমার সামনে সমুদ্র
পেছনে রোদ
বাতাসে নোনা গন্ধ)

তুমি নিয়ে আসলে
মুঠোভরা শূন্যতা
দেখালে তোমার চোখ
বললে, দ্যাখো দুটো সমুদ্র
নোনতা ও গভীরতা সবই আছে

এরপর যতবার সমুদ্রে যাই
তোমার চোখ দেখতে পাই।

 

ভায়া কুষ্টিয়া

যাওয়ার আগে মনে হয় না যাই
না যেতে যেতে
তোমার কাছে থেকে যাই।
যখন যাওয়া না যাওয়ার
এইরূপ দ্বিধা
তখন কুষ্টিয়া যাওয়া ভালো
ওখানে অন্তত কিঞ্চিৎ রবীন্দ্রনাথ
অথবা লালনকে পাওয়া যেতে পারে
সুতরাং কুষ্টিয়া যাওয়া যাক।
ওপথ অতটা অচেনা নয়
তারপরও পথের ভয়
অজানা আশঙ্কা
আসলে এসব বাহানা
মূলকথা তোমার নামে
পায়ে গজিয়েছে শিকড়
বেরোবার নাম করলেই
জড়িয়ে যায় পা।
পথ তো উদার
বের হলেই
নিজেই নিয়ে যায় গন্তব্যে
সুতরাং কুষ্টিয়া যাওয়া যাক।
অত:পর তোমার কাছে না গিয়ে
কুষ্টিয়া এলাম
কুষ্টিয়া এসে
ঘুরেফিরে দেখি
আসলে আমার গন্তব্য তুমি।

 

বাঘ ও রাষ্ট্র

বাঘকে হরিন ভেবে ভুল করি
যেমন রাষ্ট্রকে ভাবি নিরাপদ
ডোরাকাটা থাকলেই বাঘ হরিণ নয়
রাষ্ট্র থাকলেই মানুষ নিরাপদ নয়
তারপরও রাষ্ট্রের নামে স্লোগান দেই
প্রজন্মের হাতে তুলে দেই পতাকা
কলেমার মত জাতীয় সংগীত জপে
তাকে বলি দেশটা তোমার পূর্বপুরুষের ভিটা
আলো বাতাসের মত
স্বাভাবিক সরল অধিকার

আমি জানি-তাকে মিথ্যা বলছি
সে জানে কি?

 

শীত ও দুঃখের কম্বল

শীতকাল
বাবুকে কোলে নিলে
শীত লাগে না

দুঃখও শীতের মত
ঠান্ডা
জড়সড়

শীত ও দুঃখে
বাবুকে কোলে নেই
ওম লাগে, আরাম লাগে

বয়স বাড়লে
কম্বল মলিন হয়
ছিড়ে যায়
বয়স বাড়লে
বাবু বড় হয়
তখন আর
কোলে নেয়া যায় না

অথচ শীত ও দুঃখ
দুটোই থাকে

বাবুকে বলি
বড় হয়ে গেলে
শীতের জন্য
একটা লেপ বানিয়ে দিস
আর দুঃখ পেলে
একটু জড়িয়ে ধরিস

আরো পড়তে পারেন

সুলতানা নাছিরা হীরার একগুচ্ছ কবিতা

বিরুদ্ধ সময় একেকটা দিন কী বীভৎস হয়েই না আসে! বীভৎস সময়, বীভৎস মন, বীভৎস মানুষ, বীভৎস সভ্যতা! মধ্যাহ্নের প্রাখর্যকে কম্পমান পর্দা বানিয়ে ভয়ার্ত রাজহাঁসের মতো চিৎকার করতে করতে ছুটে গেল একটা অ্যাম্বুলেন্স। এই গাড়িটার ভেতর আপাতত আশ্রয় পেলে বেঁচে যেতাম। ভীষণ বিরুদ্ধ সময়! এই বিরুদ্ধতার কথা জানে ঘরের চার দেয়াল, শূন্য বারান্দা, জীর্ণ দেয়াল ঘড়ি,….

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

ঋতু রমনী অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী চেনা পাতা ও পাখি থেকে অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে। কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর, কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার। এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর, এই খানে পথে….

error: Content is protected !!