পথ চলা
স্টেশনের ধুলোবতী পাগলের
মাথার মতন এই ধুলোময়
গোলকের জালে আছে
যে যার তাপে।
এখন আমার একমাত্র
সঙ্গী নৈ:শব্দ,
আমার সাথে কথা বলে,
স্টেশন, লোকালয়;
রেলগেট পেরিয়ে তির্যক
বালিকাদের চোখে—
মেঘলা মহুয়া—
আগুন আগুন— কৃষ্ণচূড়ায়;
কষ্ট পেলে আমাকে ভোলায়, বলে
এবার তাহলে ‘একলা একলা পথ চলা।’
দক্ষিণের বিনম্র ঝাঁঝালো বাতাস
জালের মতো টেনে টেনে আনছে মেঘ।
সারাদিন প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম,
বাতাসও বন্ধ; তাপে তাপে জলকণা— জলীয়বাষ্প
প্রসারিত— দীর্ঘ— দীর্ঘশ্বাস—
সীমাহীন, অসীম ।
সিঁড়িপথে মাকড়সা
বুনছে জাল,
বুনে যাচ্ছে ক্রমশ—
মেঘে মেঘে— বৃষ্টির সম্ভাবনায়—
আটকে পড়া পতঙ্গে— আহার্য;
আহা, জীবন-যাপন ।
আমি তো কোনদিন
বন্ধুত্বের দাবী রাখিনি,
শুধু রাত্রির কাছে চেয়েছিলাম—
একটা সুন্দর ঘুম
আর অতিথি পাখিদের কাছে
একটা রঙীন স্বপ্ন;
তবু কেন উচ্ছাসের নদী
শুধু একটানা বয়ে যায়
দু-পাড়ের ছায়াছবি
স্থির-নির্বাক হয়ে যায় ?
আর আমি, এখনও ঘড়ির কাঁটার লেজ ধরে,
প্রাণহীন চর হয়ে পড়ে আছি
কারও অপেক্ষায়।
একটি নিষ্কাম প্রেমের কাহিনী
জমাট হৃদয় নিয়ে এসেছি আমি,
সেই যে শ্যামলিনী,
যার ছিল অগণন স্বপ্নদিন
তার জন্য এনেছি
গভীরতম কাব্য আমার!
ভালবাসায় নত হয়ে।
শ্যামল রমনী সে এক,
ছুঁয়ে আছে আমায়
গভীর প্রণয়াবেগে।
কখনো সখনো—
একটা নিঃসঙ্গ দোয়েলের
ভোরে জোড়া শালিকের
গান গাইতে গাইতে
ভালোবাসার গায়ে
আদরের চিমঠি কাটি।
কুয়াশার ওড়নায়
জলজ বুক ঢেকে রাখা
উর্বশী শ্যামলা বালিকাকে
কোলে নিয়ে
সম্বোধনের আড়াই অক্ষরে
প্রেমিকার নাম নিয়ে,
ভুল বানানের প্রেমপত্র লিখি।
এইসব অগুনতি স্বপ্নদিনের
গ্রন্থমালা আমার
এনেছি তোমার জন্যে,
মাছরাঙা রোদে ভিজে
রোজ কবিতার অসুখে ভুগি।
ভালবাসায় নত হয়ে।
শ্যামল রমনী সে এক,
ছুঁয়ে আছে আমায়
গভীর প্রণয়াবেগে।
আনকোরা প্রেমিক
মধ্য ঊণিশের সেই
প্রথম প্রেমটা আমার,
অনুপাতের অংকে
পয়মন্ত ধ্রুবকের শামিল।
তাই আজও আমি মতিঝিলে।
বুকের বোতাম খুলে
দাঁড়িয়ে থাকা কোন বখাটে বিকেলে,
তাকে অলিন্দের করিডোরে
সমীকরণ করে…
এখনো অংক কষে—
দুইটা চপল চলকের চঞ্চলতা।
আবার কখনো—
পান্থনিবাসের বেলোয়ার
জানালায় উঁকি দিয়ে।
কেঁদে বুক ভাসায়
আমার প্লেটোনিক প্রেম।
আমারও আর অন্তমিলে;
ফ্যাকাসে চাঁদের আদরে
লেখা নীল কবিতায়,
ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াবার আগেই
যাওয়া হয় না,
সেই সউত্তর দশকের
আনকোরা প্রেমিকের মতো।
ঘুঘুরঙা ধুসর বালু জলেরা
যেমন মাখে জোয়ার এলে,
এবং মহাকালের পাণ্ডুর শিখায়
কানায় কানায় পূর্ণ
এক শিঙ্গার চেয়েও
বলতে পারি সাহসে ভর করে
ভালবাসি, ভালবাসি…
নির্মম মায়াবী তুমি
এলোমেলো তুলির টানে
নিষ্ঠুর চাহিদার মতো নির্মম মায়াবী।
কুয়াশায় ভেসে আসা স্বপ্নের ঘোরে
তবু তো ভোর জেগেছে অনেক পরে !
কত এলোমেলো গন্তব্য
ঝড়ো হাওয়ায়
তবু হারিয়ে যাওয়ার অজস্র ঠিকানা৷
এই শেষ চলা—
কখনও আর ফিরব না ৷
অসতর্ক মুহুর্তে কোনো
হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা।
যে ঠিকানা সুপার কম্পুটারের
রোবোটিক হার্ড ড্রাইভেও নেই।
মস্তিস্কের নিওরনে খুঁজেছি…
মুক্ত খোঁজার মত।
বালি দ্বীপে বা ভারাদেরোর মত
কোন শুস্ক রিসোর্টে!
কিংবা মাটিন্জার বাদুর ঝোলা ভুতুড়ে গুহায়!
ভীড় করে থাকা সাদা, বাদামী
পর্যটকেত মত।
নির্মম মায়াবী!
অনেক খুঁজেছি তোমায়
নিষ্ঠুর চাহিদার মত।
না বোঝা অনুভূতি
রাত্রি, খালের জলে
বরফ-মেটানো ছোট ঢেউ,
সেই একটি
ফুলের দোকান,
রাজপথ, সেই আলো
যদি তুমি বেঁচে থাকো
আরও এক সিকি
শতাব্দীতে।
রাত্রি, রাজপথ,
একটি ওষুধের দোকান
একটি অর্থহীন
মিটমিটে বাতি।
ঝরে দিও নোংরা পাড়া।
আর ঝরাও অমৃত ধারা।
অমৃত ঝরে আবার—
পাহার গিরি, পুষ্পের তরে।
কিছুটা ঝরে আবার—
পথের ধারে।
বর্ষণ ঝরার মত
ঝরে যেন পাপ,
বৃষ্টির কাছে আমার
একটি চাওয়া,
তোমার ঝরা বর্ষণ—
মুছে গিয়ে হয় যেন—
খাঁটি নিষ্পাপ।
একটি সুরময় কণ্ঠে
মৃদু গান
আমাকে শোনাল সে
রাত্তিরের গান।
তুমি তো বাষ্প কুরাও,
ডোবা, পুকুর, বিল, ঝিল,
সাগরের নোনা পানি।
আমরা কোনো
এক সত্তাকে
অনুভব করি যে
পাখি ভালোবাসে,
পশু ভালোবাসে,
পিপীলিকাকেও
যত্নের স্পর্শ দেয়।
তাই, আমিও
পিছু নেব তোমার।
ছায়া সজ্ঞী হয়ে,
ভেতরের
কঙ্কাল হয়ে,
এক না বলা
অনুভূতির শিড়শিড়ে
কাঁপুনী নিয়ে।