Author Picture

টেসলার অপছন্দের ছবি

সুদীপ্ত সালাম

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর, রেডিও, এক্স-রে, নিয়ন সাইন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে আজীবন কাজ করেছেন টেসলা। তার অন্যতম বড় আবিষ্কার এসি (অল্টারনেটিং কারেন্ট) বিদ্যুৎ। আজ প্রায় গোটা পৃথিবীতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে টেসলার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

এমন একজন তারকা বিজ্ঞানীর ছবি তোলার ভার পড়ে আলোকচিত্রী ডিকেনসন ভি অ্যালির ওপর। অ্যালি তখন কাজ করতেন সেসময়ের মস্ত বড় সাময়িকী ‘সেঞ্চুরি ম্যাগাজিন’-এ। ম্যাগাজিনের জন্য টেসলার ছবি তুলতে ১৮৯৯ সনের ডিসেম্বরে তিনি যান টেসলার কলোরাডোর গবেষণাগারে। অ্যালি ভাবলেন, এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর ছবি যেনতেন ভাবে নিলে হবে না। এমন কিছু করতে হবে যাতে টেসলার ছবিও টেসলার কীর্তির মতোই স্মরণীয় হয়ে থাকে। টেসলা বিদ্যুৎ নিয়ে খেলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে তার বসবাস। বিদ্যুতের সঙ্গে তার যে জীবনযাপন তা যদি ছবিতে ফুটিয়ে তোলা যায়, তাহলে বেশ হয়! নিজের ভাবনা অনুযায়ী ছবি তুললেন। অ্যালি তার ম্যাগাজিনের জন্য টেসলার মোট ৬৪টি ছবি তোলেন। যার মধ্যে একটি ছবি সত্যিই চিরস্মরণীয় হয়ে রইলো। সাদাকালো ছবিটিতে দেখা যায়, টেসলা গবেষাণাগারের এক কোণে চেয়ারে বসে কাজ করছেন আর তার মাথার ওপরে চমকে উঠেছে লাখ লাখ ওয়াটের বিদ্যুৎ। এতো এতো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তাতে টেসলার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! টেসলার তৈরি করা বৃহদাকারের ট্রান্সমিটার থেকে উছলে পড়ছে সে বিদ্যুৎ। বিষয়টা কতটা ভয়াবহ তা নৃত্যরত বিদ্যুতের দৈর্ঘ্য কত তা জেনে অনুমান করা যায়, প্রায় সাত মিটার!

আলোকচিত্রী ডিকেনসন ভি অ্যালির ‘ডাবল এক্সপোজার’ পদ্ধতিতে তোলা টেসলার ছবি

ছবিটি সেসময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমন ছবি ওই সময়ে ভীষণ দুর্লভ। মানুষ এই বিস্ময়কর ছবি দেখে রীতিমতো হতবাক, কিভাবে সম্ভব! আসলেই সম্ভব ছিল না। লাখ লাখ ওয়াটের বিদ্যুতের নিচে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা টেসলার মতো বিদ্যুৎপ্রেমীর জন্যও অসম্ভব ছিল। পরে জানা যায়, ছবিটিতে চাতুরী আছে। আলোকচিত্রী ডিকেনসন ভি অ্যালি ‘ডাবল এক্সপোজার’ পদ্ধতিতে ছবিটি তৈরি করেছিলেন। অর্থাৎ একই স্থানে দুটি ছবি তোলা হয়। পরে দুটো ছবিকে জোড়া দিয়ে তৈরি করা মূল ছবিটি। একটি ছবি তোলা হয়েছিল সব বাতি বন্ধ করে—শুধু বিদ্যুতের। পরে বিদ্যুৎ বন্ধ করে নেয়া হয়েছিল টেসলার বসে থাকা ছবি।

এই পুরো ফন্দিটি যে গোপন রাখা হয়েছিল তাও নয়। বলেকয়েই সব করা।

ছবিটি এখনো দর্শকদের আগ্রহকে উসকে দেয়। ঊনিশ শতকের শেষপ্রান্তে বসে একজন আলোকচাত্রী সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে এমন অভূতপূর্ব একটি আলোকচিত্র তৈরি করেছিলেন তা ভেবে অবাক হতে হয়। তবে ছবিটি ছাপা হওয়ার পর টেসলা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তিনি কাজটি পছন্দ করেননি। তিনি তার ‘কলোরোডা স্প্রিংস নোট’ বইয়ে বলেছেন, ‘এভাবে ছবি তোলা আমার পছন্দ হয়নি, কিন্তু দেখলাম ছবিটির প্রতি অনেকের আগ্রহ আছে। আমার ছবি তোলার সময় বিদ্যুৎ চলাচল বন্ধ ছিল, যদিও অনেকে ভাবেন আমি বিদ্যুতের নিচে বসে আছি।’

আরো পড়তে পারেন

একাত্তরের গণহত্যা প্রতিহত করা কি সম্ভব ছিল?

২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি নরঘাতকেরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই এক রাতেই শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় তিন হাজার। এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা একতরফাভাবে….

ভাষা আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা

আগের পর্বে পড়ুন— চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল) ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও একটি সার্থক গণআন্দোলন। এই গণআন্দোলনের মূল চেতনা বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ হলো দেশপ্রেম থেকে জাত সেই অনুভূতি, যার একটি রাজনৈতিক প্রকাশ রয়েছে। আর, বাঙালি জাতিসত্তাবোধের প্রথম রাজনৈতিক প্রকাশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে দুই হাজার মাইল দূরত্বের….

চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল)

আগের পর্বে পড়ুন— বায়ান্নর ঘটনা প্রবাহ একুশের আবেগ সংহত থাকে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। আওয়ামি লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম কমিটির সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র….

error: Content is protected !!