Author Picture

সম্পর্কের ভেতর বাহির

আকেল হায়দার

জীবনযাপন ও সংসার ধর্মের নিমিত্তে প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে অবগাহন করি। আত্মীয়তা, সামাজিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবিকার প্রয়োজনে নানা মানুষের সাথে নানা সম্পর্কের ভেতর আমাদের পথ চলা। এটা খুবই স্পষ্ট যে, যখন একটা সম্পর্ক সুন্দর থাকে তখন এর পেছনে অনেকগুলো বিষয় অন্তনিহিত থাকে। আবার একটা সম্পর্ক যখন তিক্ত বা বিভক্ত হয়ে যায় এর পেছনেও থাকে অনেকগুলো জানা অজানা কারণ থাকে। সম্পর্ক সে যাই হোকনা কেন দিন শেষে আমরা সবাই চাই একটা সুন্দর বন্ধন একটা সুন্দর জীবন। আদ্যোপান্ত সম্পর্কের অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিষয়ের উপযোগিতা নিয়ে এই আয়োজন।

চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা থেকে জানা যায় মা বাবা, ভাইবোন, সন্তানসন্ততি, জীবনসঙ্গী, আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের বর্ধিত সদস্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের সাথে আমাদের যে সম্পর্কই থাকুকনা কেন এ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট সম্পর্কটি যখন সুন্দর ও সাবলীল থাকে এর পেছনে বেশ কিছু বিষয় ও অনুষঙ্গ জড়িত থাকে। আমরা যে কোন কিছু নিয়ে ভাবতে পারি কল্পনা করতে পারি কিন্তু সেটা যদি প্রকাশ না করি তাহলে অন্যজন কিভাবে জানবে! অবিচ্ছেদ্য ও নিয়মিত যোগাযোগ একটি সুন্দর সম্পর্কের অন্যতম মাধ্যম। তাই আমাদের মাঝে যদি এই জিনিসটি না থেকে থাকে তবে সবার উচিত সম্পর্কে সুদৃঢ় ও সাবলীল রাখার জন্য এর চর্চা অব্যাহত রাখা। এতে সম্পর্কের ঔদার্য ও সমৃদ্ধি প্রকাশ পায়। আমরা একটি নির্দিষ্ট পন্থায় উপলব্দি করতে পারি বা চিন্তা করতে পারি। একে অপরকে অনেকটা স্বচ্ছভাবে জানতে বা বুঝতে পারি! কোনরকম সন্দেহ ব্যতীত যোগাযোগ একটি সুন্দর সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদি এটা আমাদের মূলশক্তি না হয়ে থাকে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মাঝে এই বিশ্বাস গড়ে না উঠছে ততক্ষন পর্যন্ত এর অনুশীলন অব্যাহত রাখা অত্যাবশ্যকীয়। নিচের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা আলোচনা করা হলো এগুলো লক্ষ্য করলে সম্পর্কের খুঁটিনাটি দিকগুলো আরো স্পষ্ট প্রতীয়মান হবে।

সততা ও বিশ্বস্ততাঃ
সততা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্ক সুন্দর রাখার পূর্বশর্ত। তবে প্রিয়জনের সাথে সৎ থাকার অর্থ এই নয় পরস্পরের সব কথা একে অপরের সাথে শেয়ার করতে হবে বা অবহিত করতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই আমাদের সব স্বপ্নের কথা সবার অন্যের সাথে শেয়ার করিনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি কি করলাম তা বলে বেড়াইনা। কখন ওয়াশরুমে গেলাম, কখন খেলাম, কখন ঘুমালাম, কাকে কখন ভালো লাগলো এসব কথা বলতে যাইনা। এর অর্থ এই নয় আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সম্বন্ধে ভালভাবে জানবোনা বা জানার আগ্রহ দেখাবোনা। আমরা নিশ্চয়ই জানবো তবে ঠিক ততটুকু যততুকু একান্ত প্রয়োজন-যেটুকু না জানলেই নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যদি সম্পর্কে এমন কোন বিষয় থাকে যা অন্যের উপর নেতিবাচক মনোভাব বা চিন্তার উদ্রেক সৃষ্টি করবে তবে সে বিষয়ে আমাদের অবশ্যই মনযোগী হতে হবে। আমরা কি ভাবছি, কি চিন্তা করছি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কি কি ঘটছে সেসব বিষয়ে স্বচ্ছ থাকতে হবে। পরস্পরের মধ্যে আস্থা বিনির্মাণে এটা সর্বপ্রথম ধাপ।

আমাদের জীবনে অনেক সংখ্যক মানুষ নেই যাদের আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি। তাই যাদের সাথে আমাদের ওঠাবসা, চলাফেরা ও জীবন যাপন তাদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়টাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের বাচ্চারা যে সবসময় বিশ্বাসযোগ্য তাও কিন্তু নয়! তারা যা বলবে যা চাইবে তা সব কিছু আমাদের মেনে নিতে এটাও সমীচীন হবেনা। আস্থার অর্থ কি এবং সুসম্পর্ক কি! কিভাবে সুসম্পর্ক বিকশিত করা যায় সে বিষয়ে তাদের বোঝাতে হবে। যখন সততা ও বিশ্বাসের সংকট দেখা দেয় তখন আমরা বাচ্চাদের একটা নির্দিষ্ট আচরন করতে বাধ্য করি। প্রকৃতপক্ষে এতে সফল হওয়ার আদৌ সম্ভাবনা নেই বরং সুন্দর ও বাস্তব উদাহারনের মাধ্যমে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

শিশুরা স্বভাবগতভাবেই বিদ্রোহী। তাই আমরা যদি তাদের কোন ব্যবহারে বিরুদ্ধাচারণ করি তাহলে তারা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হবে। সেটা পুনরায় করার চেষ্টা করবে। পিতামাতা এবং সন্তানের মধ্যে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা তখনই পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে যখন তাদের কথা বার্তা, আচার আচরণ ও ব্যবহার পিতামাতার কাছে সাবলীল ও গ্রহনযোগ্য হয়। যখন বাবা মা সন্তানের বিষয়গুলো সহজ ও নমনীয়ভাবে দেখেন এবং সন্তান বুঝতে পারে যে অভিভাবকেরা এটা নিয়ে কোন ঝামেলা করছেনা তখন তারা সহজেই তাদের ভুলগুলোর কথা বাবা মার কাছে শেয়ার করে। এটা অবশ্যই পিতামাতার কর্তব্য সন্তানকে এই মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করা।

আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে প্রিয়জনেরা আমাদের সাথে কোন প্রতারণা করছে কিনা কিংবা অসম্মানজনক কোন আচরণ করছে কিনা। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এটা একটা অসুন্দর সম্পর্ক বা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। আমরা তাদের উপর নিশ্চয়ই আস্থা রাখবো তবে সাথে সাথে কোন কিছু অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু দেখলে সেদিকেও খেয়াল রাখবো। বাস্তবতা হল-এখানে আস্থার বিকল্প নেই। সহজ ভাষায় সম্পর্কে ভাঙন কিংবা চালিয়ে নেয়ার জন্য এটা অদ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শেষ পর্যন্ত উত্তম দিক হলো যে কোন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যথাযথ বোঝাপড়া ও উপলব্দিমূলক মনোভাব থাকতে হবে। এটি সৎ ও বিশ্বাসযোগ্যতার একটি যোগসূত্র। আমরা কি ঠিক আছি না ভুল করছি তা যদি বুঝতে না পারি তবে উভয় পক্ষের মধ্যে সাবলীল মনোভাব অক্ষুন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস সম্ভাব্যভাবে একটি সম্পর্ককে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

গ্রহণযোগ্যতা ও দায়িত্বশীলতাঃ
সুন্দর সম্পর্ক সেটাই যেখানে সবকিছু সহজে গ্রহণযোগ্যতা পায়। প্রিয়জনরা কি ভাবছে বা কি চাইছে তা আমাদের বুঝতে হবে। তবে তার অর্থ এই নয়, অন্ধের মতো সবকিছু সাপোর্ট করতে হবে বা মেনে নিতে হবে। বরং সুষম উপলব্ধির মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদেরকে কোন রকম বাধ্য না করে কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যে না যেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ধীর স্থিরভাবে সৃষ্ট বা উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝাতে হবে। যখন আমরা নিজেদের মানসিক বিকাশ ও উন্নয়ন নিয়ে ভাবি বা কাজ করি তখন এটা আপনাআপনি ঘটবে। সেক্ষেত্রে নিজেদের ও সব বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। যদি উভয় পক্ষ পরস্পরকে সমানভাবে উপলব্দি করে যে তারা একই ভুল করছে তাহলে তাদের মানসিক বিকাশ ও সম্পর্ক উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় এক সময় আমরা সবাই শিশু ছিলাম- অতএব আমাদের সন্তানেরা যদি এমন কোন আচরন করে বা এমন কিছু ভাবে যেটা হওয়া উচিত নয় অথবা অনৈতিক সে অবস্থায় তাদের ঐ কাজ বা আচরণের ভালো মন্দ নিয়ে বোঝাতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির ক্ষতিকর দিকগুলো জানাতে হবে।

যে কাজটি তারা করছে বা যে ব্যবহার তারা করছে তা ঠিক হচ্ছেনা। এর মাধ্যমে পজেটিভ রেজাল্ট আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমরা সবসময় সবকিছু ভেবেচিন্তে করিনা। তাই এটা ভাবাও ঠিক হবেনা যে সন্তানেরা যা করবে তা সবসময় সঠিক হবে। যদি আমরা কপট আচরণ করি বা ভুল করি তাহলে বুঝতে পারার পর আমাদের তা সংশোধন করে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।সামগ্রিকভাবে এই নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয় যা আমাদের প্রিয়জনদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। যদিও অনেকে এটা অপছন্দ করে ও এটাকে নিয়ন্ত্রণ হিসেবে দেখে। তবুও সুন্দর সম্পর্ক ও সাবলীল জীবনের স্বার্থে এটাকে সবার মেনে নেয়া উচিত। বৃহত্তর সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবনের স্বার্থে এই শিক্ষা ও উপলব্দি গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।

হিউমার ও ইতিবাচক মনোভাবঃ
সম্পর্ককে উচ্ছল ও প্রাণবন্ত রাখতে হলে হিউমার খুব জরুরী। মজার, হাস্যরসাত্মাক কথা, নিষিদ্ধ এমনকি অট্টহাসিময় কথাও অনেক সময় কঠিন মুহূর্তকে নমনীয় করে তোলে। যদি আমরা এটা করি তাহলে ঐ মুহূর্তে কথিত অনেক সিরিয়াস বিষয়ও জটিল হয়ে ওঠা থেকে পরিত্রাণ পাবে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে হাসি মেডিটেশানেরই আরেকটি ভিন্ন রুপ। অতীতে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে যারা মেডিটেশান করেন তারা এবং যারা সবসময় হাসিখুশি থাকেন তাদের মধ্যে ব্রেইন একই ভাবে কাজ করছে। অর্থাৎ তাদের উভয়য়েরই ব্রেইনের ফ্রিকোয়েন্সি বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ। এটি স্পষ্ট যে মেডিটেশান কেবল উচ্ছলতা বৃদ্ধি করেনা এটা এমন একটি শারিরিক ও মানসিক চর্চা যা দ্বারা দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা, অনিদ্রা এগুলোকে খুব সহজে আয়ত্ব করতে সাহায্য করে। অতএব চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যেও প্রাণোচ্ছল থাকা শারিরিক, মানসিক, ইমোশনাল ও আধ্যাত্মিকভাবে সবার জন্য উপকারী ও প্রয়োজনীয়।

উদাহারন স্বরূপ বলা যেতে পারে জীবনের আমরা কতবার মানসিকভাবে বিপন্ন বা বিরুপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। তখন কেউ এসে সান্তনার বানী শুনিয়েছে আবার কেউবা এসে আমাদের কৌতুক বা হাসির কোন কথা বলে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেছে। তারপর তাৎক্ষনিকভাবে হয়তো সে মানুষটি ভালো অনুভব করেছে এবং কার্যকরভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং সাময়িক সেই কঠিন অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে। একটি সুন্দর সম্পর্কে অনেকগুলো আনন্দের বিষয় আপনাআপনি চলে আসে। যা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে পজেটিভ মানসিকতা অর্জনের মাধ্যমে করা যায়। আমি একটি গ্লাসকে অর্ধেক পূর্ণ বা অর্ধেক খালি হিসেবে দেখতে চাইনা। জল ভর্তি, কফি বা চা ভর্তি, বাতাস ভর্তি, জুস ভর্তি অথবা যা-ই হোকনা কেন পরিপূর্ণ হিসেবেই দেখতে চাই। কিন্তু কখনো কখনো এটা ভালো দিক ও মন্দ দিক দুটোর সমন্বয়ে ঘটে থাকে। এটাই জীবনের সমগ্রিক ও বাস্তব রুপ। সংক্ষেপে সুস্থ সম্পর্কের মানুষরা একে অপরের সাথে হাসিখুশি ও প্রানবন্ত থাকে। কেননা এটা তাদের যে কোন কঠিন ও কঠোর পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে ও যেকোন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে অনেক সমস্যারই সুন্দর সমাধান করা সম্ভব।

বাস্তবিক প্রত্যাশা ও ক্ষমাঃ
এই দুটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ যদিও এসব সর্বদা স্বীকৃত নয়। যদি আমাদের সঙ্গীর অবাস্তব কোন প্রত্যাশা থেকে থাকে আর সেটাকে আমরা ঘর্ষণ, অসম্মান, চর্বণ, বিভাজন ও দ্বন্দ্বের পর্যায়ে নিয়ে যাই তাহলে একটা ভারসাম্যহীন সম্পর্ক দেখা দিবে। যদি আমরা ক্ষমার অনুশীলন না করি ও ক্রমাগত বিরক্তি ভাব প্রকাশ করি তাহলে তার বহিপ্রকাশ একদিন এমনভাবে হবে যা কদাকার রুপ ধারন করবে। এ রকম ঘটনা অনেক ভালো সম্পর্কের মাঝেও দেখা যায়। আমরা অনেক সময় এমন ভুল করি যেখানে ক্ষমা সুন্দর মনোভাব দেখানো প্রয়োজন। কেউ যদি সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে ক্ষমার পরিবর্তে নিয়মিত কোন্দল ও জটিলতার সৃষ্টি করে তাহলে জীবন দিন দিন কঠিন ও বিষাদময় হয়ে উঠবে। তাই সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে আমাদের প্রত্যেকেরই ক্ষমাশীল ও সহনশীল হতে হবে।

পিতামাতা বা জীবনসঙ্গীর ক্ষেত্রেও প্রিয়জনের কাছে কিছু প্রত্যাশা থাকে। জীবদ্দশায় যা কখনো পূরণ হয় আবার কখনো হয়না। চালচলন বা বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সবসময় ঘটেনা। ছেলে বা মেয়ে যে লিঙ্গেরই হোক না কেন! যতই চাপ প্রয়োগ করা হউক না কেন! তবে কিছু কিছু পরিপক্কতা আছে যা অর্জন ও বিকাশের জন্য সময়ের বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। যদি এসব পরিবর্তন আমরা অবাস্তব সময়ের মধ্যে প্রত্যাশা করি তাহলে তা গ্রহন করার পরিবর্তে আমাদের প্রিয়জনদের মাঝে অহেতুক যন্ত্রণার সৃষ্টি হতে পারে। এই উক্তিটি এখানে খুব প্রযোজ্য- আপনার যুদ্ধ পরিচালনা করুন বুদ্ধিমত্তার সাথে। যদি আমরা অবাস্তবতার মধ্যে কোন কিছুর পরিবর্তন বা সংযোজনের চেষ্টা করি তাহলে সেখানে মঙ্গলের পরিবর্তে অশান্তির সৃষ্টি হবে বেশি।

এটা পিতামাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ককেও জর্জরিত করতে পারে। শিশুদের সাথে শিশুদের সম্পর্ক। স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক। বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্ক। প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার সম্পর্ক। আমরা যতটুকু প্রত্যাশা করি ততটুকু না পেলেও ঐ সময়ে তাদের মধ্যে যতটুকু আছে তততুকু আমাদের গ্রহন করা উচিত এবং বয়সের সাথে সাথে সেই মানসিক বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত কারো বেপরোয়া আচরণকে কখনো ক্ষমার নামে ক্রমাগতভাবে প্রশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকা। নিয়ন্ত্রণ ও মেনে নেয়া দুটোই হতে পারে তবে অবশ্যই নিদ্রিস্ত সীমারেখার মধ্যে। কোন মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। আমরা কেউই একশো ভাগ নিখুঁত নই। তাই অন্য কারোর সব আচরণ ও যে সবসময় সঠিক হবে তা ভাবা উচিত হবেনা।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসাঃ
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। কিন্তু তবুও অনেক সম্পর্কে এর উপস্থিতি দেখা যায়না। যদি আমরা ঘরের দৈনন্দিন কাজগুলো নিয়ে আলোচনা না করি বা করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করি, সমস্যাগুলো সমাধান না করি তাহলে প্রিয়জনকে কতটুকু শ্রদ্ধা ও সম্মান করি তার প্রকৃত স্বরূপ অপ্রকাশিত থেকে যাবে। এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসাও আড়ালে হয়ে যায়। জীবনকে কখনো কখনো খুব গুরুত্ব সহকারে দেখতে হয় কেননা দাম্পত্য জীবনের দৈনন্দিন খুনসুটিতে আমরা অনেক সময় সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা ভুলে যাই। সোনালী দিনে রেখে আসা স্মৃতিদের ভুলে যাই। নির্জনে একটু থামতে ভুলে যাই। ভুলে যাই গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণের কথা। ভুলে যাই শ্রদ্ধাবোধ ও শান্তির কথা। ঠিক একই ঘটনা প্রেমের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। তাই আমাদের উচিত মাঝে মাঝে প্রিয়জনের সাথে একান্তে কিছু সময় কাটানো যাতে আমরা কথাবার্তায় ও আচরনে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারি। একে অপরকে বুঝতে পারি। মনের ভেতর চেপে রাখা অভিমানী কথাগুলো বুঝতে পারি। যদি আমরা এটা করতে পারি তাহলে একে অপরের অনুভূতি, উপলব্দি ও ভাবনার কথাগুলো জানতে পারবো। এটা দুজনকে জানার ও বোঝার জন্য খুব সহজ ও মৌলিক একটা দিক।

প্রেম ও শ্রদ্ধা বিভিন্নভাবে চিত্রিত হতে পারে। এটা শুধু বলার বিষয় নয়, প্রকাশেরও বিষয় বটে। আপনি আপনার প্রিয়জনকে অনেক পছন্দ করেন এবং ভালবাসেন এটাই সবকিছু নয়। আপনার কথায়, আচরণে ও ব্যবহারে সে ভালোবাসা ও ভালোলাগার প্রকাশ থাকতে হবে। তা না হলে সে কিভাবে জানবে তার জন্য আপনার হৃদয় মন্দিরে রাখা এতো ভালোবাসার কথা। মনে রাখবেন- শুধু ভালোবাসা প্রত্যাশা করলে হবেনা আপনাকেও শর্তহীনভাবে ভালোবাসা অর্পণ করতে হবে।

দাম্পত্য কিংবা প্রেম যাই হোকনা কেন এটা একটা যৌথখামারের মতো। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, যত্ন, পরিচর্যা, মমতা ও ভালোবাসার মাধ্যমেই কেবল এর সুফল পাওয়া সম্ভব। বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের ঘেরাটোপে বাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে নির্মল নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেদের সতেজ ও প্রানবন্ত করে তুলতে পারি। অতএব আমরা ক্ষিপ্ত বা শান্ত যেই পরিস্থিতিতে থাকিনা কেন আমাদের সঙ্গী বা সঙ্গীনিকে ভালোবাসব ও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো।

একটা মজার টিপস আছে সবার জন্য আর তা হলো-সময় সুযোগ ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে বিশ সেকেণ্ডের জন্য আপনার প্রিয় মানুষটাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরুন। আদরের তুলিতে তাকে অলংকৃত করুন। আবেগের নদীতে ভাসিয়ে দিন অনুভূতির ভেলা। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটা বিষয়। এতে ভালোবাসার হরমোন অক্সিটোসিন নিঃসরিত হয়। আর অক্সিটোসিনে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং রোমাঞ্চের তীব্রতা বাড়ে। সুতরাং তুরুপের তাস আপনারই হাতে!

সুত্র: https://www.elephantjournal.com/2014/07/5-hallmarks-of-a-healthy-relationship/

আরো পড়তে পারেন

একাত্তরের গণহত্যা প্রতিহত করা কি সম্ভব ছিল?

২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি নরঘাতকেরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই এক রাতেই শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় তিন হাজার। এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা একতরফাভাবে….

ভাষা আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা

আগের পর্বে পড়ুন— চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল) ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও একটি সার্থক গণআন্দোলন। এই গণআন্দোলনের মূল চেতনা বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ হলো দেশপ্রেম থেকে জাত সেই অনুভূতি, যার একটি রাজনৈতিক প্রকাশ রয়েছে। আর, বাঙালি জাতিসত্তাবোধের প্রথম রাজনৈতিক প্রকাশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে দুই হাজার মাইল দূরত্বের….

চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল)

আগের পর্বে পড়ুন— বায়ান্নর ঘটনা প্রবাহ একুশের আবেগ সংহত থাকে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। আওয়ামি লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম কমিটির সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র….

error: Content is protected !!