Author Picture

যত বড় বিজ্ঞানী তত বড় জিভ!

সুদীপ্ত সালাম

ছবিটি বিশ্ববরেণ্য পদার্থবিদ অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বলেই এতো বিখ্যাত। আপনার-আমার হলে কিবোর্ডের শিফ্ট বোতাম চেপে ডিলেট করে দেওয়া হতো। তার মানে ছবি সবসময় তার যোগ্যতার জন্যই খ্যাতি পায়—তা নয়। ছবিটির সঙ্গে কতটা প্রভাবশালী ব্যক্তির স্মৃতি জড়িয়ে আছে অনেক ক্ষেত্রে তার ওপরও ছবির টিকে থাকা নির্ভর করে।
ছবিটি অনেকেই দেখেছি, আইনস্টাইনের জিভ বের করা অদ্ভুত ছবি। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ছবির একটি এটি। এই ছবি নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে আজো উৎসাহের কমতি নেই। শস্যের মাঠে, দেয়ালচিত্রে, পোশাকে, ঘর সজ্জার নানা সামগ্রীতে—সবখানে এই আলোকচিত্রের পুনরুৎপাদন করা হয়েছে, এখনো তা অব্যাহত আছে। ফলে আইনস্টাইন হয়ে উঠেছেন একজন পপ আইকন। পপ আর্টে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে মহান এই বিজ্ঞানীর জিভের ছবি।

আইনস্টাইন স্বাক্ষরিত বিখ্যাত সেই ছবি। ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী আর্থার সাস।

একজন মহান পদার্থবিদ কেন ক্যামেরার দিকে এমন হাস্যকর পোজ দিলেন? নাহ, এই ছবির পেছনে কোন আনন্দের ঘটনা নেই। বরং বিরক্ত হয়েই আইনস্টাইন এমন পোজ দিয়েছিলেন। বিরক্ত হয়ে কেউ এমন পোজ দিতে পারেন! আইনস্টাইন বলে কথা। তিনি তো বহুবার অসম্ভবকে সম্ভব বলে প্রমাণ করেছেন। কেন বিরক্ত হয়েছিলেন আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রবক্তা?
দিনটি ছিল ১৪ মার্চ, ১৯৫১। আইনস্টাইনের জন্মদিন। সেসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে গবেষণা করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আইনস্টাইন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গবেষণা-কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন সাংবাদিকেরা। জন্মদিন উপলক্ষে কেউ চান নোবেলজয়ীর মন্তব্য, কেউ চান কিছু ছবি। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে আইনস্টাইন বাইরে এসে যখন দেখেন সাংবাদিক আর সাংবাদিক—তিনি ভীষণ বিরক্ত হন। তাদের পাশকাটাতে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়েন। ফটোসাংবাদিকেরা ছবি তোলার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। আইনস্টাইন মুখও লুকাতে পারছেন না, তার একপাশে গবেষণাকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক অ্যাডোলটি এবং তার স্ত্রী মেরি। আইনস্টাইন ধমকের সুরে সাংবাদিকদের বললেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে! থামুন!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! বরং কে যেন বলেই বসলেন, ‘একটু হাসুন না জনাব!’ এই কথা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল আইনস্টাইনের, তিনি বাচ্চাদের মতো জিভ বের করে ভ্যাংচি কাটলেন। ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারনাশনাল (ইউপিআই)-এর ফটোসাংবাদিক আর্থার সাস এক মুহূর্তও দেরি করেননি ছবিটি তুলতে। ব্যাস! হয়ে গেলে বিশ্বের প্রভাবশালীর ছবির একটি।

সেসময় আইনস্টাইন বলতে সবার চোখের সামনে রাশভারী বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিই ভেসে ওঠতো। কিন্তু এই ছবিটি সেই প্রতিকৃতি ভেঙে খানখান করে দিল। কাটখোট্টা বিজ্ঞানীর মধ্যেও যে একটি শিশু রয়েছে তা এই ছবিটি প্রমাণ করে। সম্ভবত এজন্যই ছবিটি এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দ্য গার্ডিয়ান বলেছিল, ‘সম্ভবত এটিই বিংশ শতাব্দীর কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তির সবেচেয়ে পরিচিত সংবাদচিত্র।’
ছবিটি ছাপা হওয়ার পর আইনস্টান কিন্তু খুশিই হয়েছিলেন। তিনি শুভেচ্ছা কার্ড তৈরি করতে ইউপিআই-এর কাছ থেকে ছবিটির নয়টি প্রিন্ট কপি চেয়ে নিয়েছিলেন। তার স্বাক্ষরিত এমন এক কপি ছবি ২০১৭ সালে নিলামে উঠেছিল। যা শেষে ১ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়।

 

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!