Author Picture

বিশ্বযুদ্ধে চুমুর ছবি, বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

সুদীপ্ত সালাম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম স্কয়ারের একটি আলোকচিত্র ব্যাপক আলোচিত হয়। ছবিতে দেখা যায় একজন নাবিক এক নারীকে চুমু দিচ্ছেন। ইতিহাসে ছবিটি ‘ভি-জে ডে কিস ইন টাইম স্কয়ার’ নামে পরিচিত। ভি-জে ডে মানে ‘ভিক্টরি ওভার জাপান ডে’। যাইহোক, আজ পর্যন্ত শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কে চুমু দিচ্ছেন, কাকে চুমু দেয়া হচ্ছে। ছবিতে থাকা দুজনের মুখ অস্পষ্ট। মুহূর্তটি যিনি ক্যামেরাবন্দি করেছেন সেই বিখ্যাত ফটোসাংবাদিক আলফ্রেড আইজেনস্ট্যাডও ছবির এই দুজনের পরিচয় খুঁজে পাননি। তিনি ছবিটি তুলেছিলেন ১৯৪৫ সালে ১৪ আগস্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় পরের মাসের ২ তারিখে। ছবিটি ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর চারদিকে সাড়া পড়ে। আর তখন থেকেই প্রশ্ন ওঠে ছবির এই যুগল কারা।
আইজেনস্ট্যাড ওইদিন ছবির খোঁজে টাইম স্কয়ারে ঘুরছিলেন। তখনই তার চোখ পরে চুমু খাওয়ার দৃশ্যে। কয়েক সেকেন্ডে তিনি চারটি ছবি তুলে ফেলেন। কিন্তু তারমধ্যে একটি ছবিই টেকে। সেই ছবিটিই পরবর্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত ছবি হিসেবে রয়ে যায়।
১৯৮০ সালে আলোকচিত্রী আইজেনস্ট্যাডকে এডিথ শেইন নামের এক নারী জানান, তিনিই ছবির নারী। তখন লাইফ ম্যাগাজিন ছবিটি আবার ছাপে এবং ছবির নাবিককে যথাযথ প্রমাণসহ যোগাযোগ করতে বলে। শত শত দাবিদার দাঁড়িয়ে যান। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১১ জনের দাবি ছিল যৌক্তিক। কিন্তু জর্জ ম্যান্ডোনসার দাবি ছিল সবচেয়ে জোরালো। কিন্তু লাইফ তবু্ও তাকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় তিনি ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অনেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে ম্যান্ডোনসার পক্ষে মত দিয়েছেন। শেইনের পর গ্রেটা ফ্রিডম্যান নামের আরেক নারীও একই দাবি করেন। দুই দাবিদারের মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেটা এগিয়ে আছেন।

লাইফ ম্যাগাজিনের তারকা ফটোসাংবাদিক আলফ্রেড আইজেনস্ট্যাড

ম্যান্ডোনসা পঁচানব্বই বছর বয়সে ২০১৯ সালে মারা যান। শেইনের মৃত্যু হয় ২০১০ সালে এবং ফ্রিডম্যান ২০১৬ সালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ আলোকচিত্রের একটি হিসেবে এই ছবিটিকেও নির্বাচন করেছে ‘টাইম’ ম্যাগাজিন। আজও ছবিটি নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি, নতুন আলোচনা ছবিটিকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে তা নিয়ে। অনেকে মনে করেন, এটি যৌন হয়রানির প্রতিচ্ছবি।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!