শ্যামল শরতে শামালোকে
~
ঘোরের মাঝে ঘোরে ঘড়ির কাঁটা
কলাভবন করিডোরের ধাঁধা
লম্বা আরো হয় না কেন হাঁটা
দু’চোখে কার চলন্ত পা বাঁধা
দীর্ঘ চালে যুবক চলে একা
যুবতী তার জ্যোৎস্না মাখে গায়
শ্যামল শরতে শামালোকে দেখা
গুঁটিপোকাও রেশম হয়ে যায়
না-বলা কথা পেরেক ঠোকে বোধে
খাঁ সাহেবের সরোদ বাজে মনে
সঙ্কোচের অবাক অবরোধে
জীবন বদলায় সঙ্গোপনে
শ্রীমঙ্গলে খুঁজে বেড়াই তোর
ছোট্ট নদী চা বাগানের ঘ্রাণে
দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ভোর
নতুন রোদ পুরোনো অভিমানে
তিতাস
~
পরিবর্তমান বিশ্বময়
রংবেরঙে নয়া আঁচড় লাগে
বদলে যাওয়া নতুন কিছু নয়
বাস্তবিক বিপাকে বৈরাগে
সোনার পাখি খোলে খাঁচার দ্বার
জানালা মেলে দেয় দু’দিকে ডানা
অলীক অনৃত অভিরতির অজাচার
হাটবাজারে দিনদাহারে কানা
আট কুঠুরি নয় দরজা আঁটা
তৃষ্ণা টানে মধুমাছির হুল
ধন্য আজ সকল বিষকাঁটা
পথের ধুলো আড়াল করে ফুল
মানুষ তার আপন বেগে চলে
গভীর স্রোতে গোপনে ক্ষয়ে যায়
মনের মাঝে তিতাস কথা বলে
বয়ে গিয়েও নদী সে রয়ে যায়
কথা
~
কৃতজ্ঞতাবোধ যদি মানুষের সেরা গুণ তবে
কুকুরেরা শ্রেষ্ঠ মানব
অন্যের অনিষ্ট করা যদি ইবলিশের প্রধান কাজ তবে
মানুষেরা শয়তান
এ কথা বলে গামছা পরে কাটা বাংলা সাবানে লুংগি ধুয়ে
পুকুরঘাটের পাশে দূর্বাঘাসের ওপর রোদে শুকোতে দিয়েছিলেন
আমাদের বাড়ির জায়গির মাস্টার
যিনি গরুর জিব খেতে পছন্দ করতেন
এবং সারা বছরে মাত্র একবার খেতে পেতেন কোরবানির ঈদে
এবং যিনি সুর করে টেনে টেনে ছোটদের নাম ধরে ডাকতেন
বছর ফুরিয়ে গেলেও তার পড়ানো শেষ হতো না
কারণ তিনি গল্প করতে ভালোবাসতেন
এবং গান গাইতে চাইতেন
যদিও তার গানের সংগ্রহ যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল না
এবং গলাটাও প্রায়ই বেগরবাঁই করত
কিন্তু তিনি খুব নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী ছিলেন
গল্প কবিতা নাটক উপন্যাস গান ছড়া সবকিছু তিনি একহাতেই লিখতে পারতেন
এবং তাও এক খাতাতেই
লাল শালু কাপড়ে বাঁধানো চ্যাপ্টামতো একটা খাতা ছিল তার
প্রাণাধিক প্রিয় সেই অমূল্য সম্পদ তিনি সর্বোচ্চ সতর্কতায় ও সর্বাধিক যত্নে সামলে রাখতেন
ছোট্ট একটা তালাবদ্ধ টিনের ট্রাংকে
বলাবাহুল্য তার প্রতিটি রচনাই ছিল শিক্ষামূলক
এবং উচ্চ দার্শনিক চিন্তায় ভরপুর
এবং তিনি নিজের রচনা পাঠপূর্বক সকলের অনুধাবনের সুবিধার্থে
এর ভাবসম্প্রসারণ ও ব্যাখ্যা করতেন
চরম স্থৈর্যে ও পরম ধৈর্যে
উল্লিখিত তিনিই একদা দ্বিপ্রহরে অবগাহনের প্রাক্কালে
মানুষ সারমেয় এবং শয়তান সংক্রান্ত
প্রাগুক্ত প্রবচন প্রব্যক্ত করেছিলেন
প্রস্তরীভূত গাম্ভীর্যে ও সীসাঢালা আত্মবিশ্বাসে
প্রায় অর্ধশত বৎসর পূর্বে
দিন যায় কথা থাকে
আয়োজন
~
দক্ষিণের উঠোনে নতুন করে বুনি ঘাস
হলুদ জবার গাছের যত্ন নিই দু’বেলা
উত্তরের নিম গাছের গোড়ায় পানি দিই ঘুম থেকে জেগে
কোণের মেহেদি গাছের কচি পাতার দিকে তাকিয়ে থাকি
কনে দেখা আলোয়
প্রিয় ছবিগুলো ধুলো মুছে ঝকঝকে করে রাখি
বই গুছোই প্রতি শুক্রবার সকালে
সেই সঙ্গে গানের অ্যালবাম আর সিনেমার ডিভিডি
ড্রেসিং টেবিলের আয়না স্বহস্তে পরিষ্কার করি
নেড়েচেড়ে দেখি অভ্যস্ত তৈজসপত্র
পর্দায় মাখি বিকেলের রোদ
মেঝের মার্বেলে খুঁজি চলে যাওয়া পদচ্ছাপ
হাঁটতে বার হয়ে সন্তর্পণে এড়িয়ে যাই বাড়ি ফেরার রাস্তা
বাজারে যাওয়া শুরু করেছি আবার পনের বছর পরে
টিপে টিপে পরখ করি মাছ
ওলটেপালটে যাচাই করি সবজি
মুদির দোকানে গিয়ে দরদাম করি বিস্তর
বই পড়া আর টেলিভিশন দেখার চাইতে বেশি সময় ব্যয় করি রান্নাঘরে
সকালের চা সন্ধের কফি নিজের হাতেই বানাই
চামচে মেপে মেপে মেশাই সুন্দরবনের মধু
ফেসবুক দেখার ফাঁকে ভেজে ফেলি
ইলিশের ডিম
রেঁধে ফেলি সিঁদলের রসুনভুনা
আলু ভর্তা করতে করতেই চুলোয় চড়িয়ে দিই চাল
প্রিয় রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসি পরিচিত জানালার পাশে
মুখস্থ ফরমায়েশ আওড়ে যাই নির্দিষ্ট খাবারের
চেনা পরিপার্শ্বে বুলোই চোখ
চুমুক দিই পানীয়ে
টেরেসে দাঁড়িয়ে হ্রদের জলে চাঁদ দেখি পানপাত্র হাতে
আচমকা বৃষ্টিতে ভিজি
দমকা বাতাস গায়ে টানি সটান দাঁড়িয়ে থেকে
তিন দিগন্তে আতশবাজির উৎসব
ভিডিও রেকর্ড করে রাখি নিউ ইয়ার’স ইভে
জ্যোৎস্নার ভেতরে মেঘের ভেসে যাওয়া দেখে কবিতা লিখি
তোমাকে ভুলবার অত আয়োজনে
তোমাকেই মনে পড়ে তবু
কালের তলোয়ার
~
ভাঙে অবসরের ঠুনকো কাঁচ
স্মৃতির হ্যারিকেনে আলোর দোলা
চিমনি জানে আগুনের কী আঁচ
একলা ঘরে মেঘলা রাত খোলা
ঘুম আসে না তিন প্রহরে তোর
যারা পালায় তারাই বুঝি বাঁচে
ইচ্ছেগুলো বিকল্পে বিভোর
ঠাঁই ধরে না নিবন্ধিত ছাঁচে
অনেক হলো দ্বিধা ও দরবার
এই জীবন নিত্য আনকোরা
মন্ত্রপুত কালের তলোয়ার
মিছেই কাটে নাজুক ডানা জোড়া