Author Picture

‘দ্য গ্রেট পিকচার’ তৈরির ইতিহাস

সুদীপ্ত সালাম

গ্যালারিতে ৩২ ইঞ্চি আকারের প্রিন্ট আলোকচিত্রকর্ম দেখে আমরা অভ্যস্ত। সে ছবিই যথেষ্ট বড় মনে হয়। আর চোখের সামনে যদি ৩২ ইঞ্চির পরিবর্তে ১০৭.৫ ফুট x ৩১.৫ ফুট আকারের ছবি হাজির হয় তখন? স্বপ্ন মনে হবে। কিন্তু এই স্বপ্নের মতো ঘটনাটি কিন্তু সত্যিই ঘটেছিল। এতো বিশাল আকারের একটি আলোকচিত্রকর্ম সত্যিই তৈরি করা হয়েছিল— একটি পিনহোল ক্যামেরার মাধ্যমে।
এটিই ছিল ক্যামেরায় তোলা সবচেয়ে বড় আলোকচিত্রকর্ম। নাম দেয়া হয়েছিল ‘দ্য গ্রেট পিকচার’। ২০০৬ সালে তোলা এই ছবিটিকে পরের বছর গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি দেয়। ছবিটির পাশাপাশি ছবিটি তুলতে যে পিনহোল ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়েছিল সেটিকেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় পিনহোল ক্যামেরা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ছবিটির আয়তন ১০৭.৫ ফুট x ৩১.৫ ফুট। জার্মানি থেকে আনা ৫৪৫ কেজি মসলিন কাপড়ের ওপর ৮০ লিটার সিলভার হ্যালাইডের পরত দেয়া হয়। ছবিটি তুলতে পিনহোল ক্যামেরা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি যুদ্ধ বিমানের হ্যাঙ্গার (যে বিশাল ঘরে যুুদ্ধ বিমান বা উড়োজাহাজ রাখা হয়) ব্যবহার করা হয়। ছবিটি তৈরি করতে ১৫০ লিটার কালো রঙের প্রয়োজন হয়। ঘরের পিনহোল (৬ মিলিমিটার ব্যাসের একটি ছিদ্র) থেকে ৮০ ফুট দূরে এই বিশাল ফিল্মটিকে স্থাপন করা হয়। পিনহোলের ছিদ্রটি করা হয় মেঝে থেকে ১৫ ফুট উপরে। পিনহোলে কোনো লেন্স ব্যবহার করা হয়নি।

প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে এক্সপোজ করা হয়। এক্সপোজ করার পর পাওয়া নেগেটিভটিকে মোট ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবী মিলে ৫ ঘণ্টা ডেভেলপ করেন। যে ট্রেটিতে এটি ডেভেলপ করা হয় তা ছিল একটি অলিম্পিক সুইমিং পুলের সমান। ডেভেলপ করতে ২ হাজার ৩০০ লিটার ডেভেলপার এবং ৪ হাজার ৫০০ লিটার ফিক্সার লেগেছে। ‘দ্য লেজেন্সি প্রোজেক্ট’-এর অংশ হিসেবে এই বিশাল সাদা-কালো ছবিটি তৈরি করা হয়। হঠাৎ দেখলে বিমূর্ত চিত্রকর্ম মনে হলেও এটি আসলে মেরিন কর্পস এয়ার স্টেশনের সাদা-কালো নেগেটিভ প্রিন্ট।
১৬৫ বছরের ফিল্ম ফটোগ্রাফির সমাপ্তিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। ছবিটি তৈরির পেছনে কাজ করেছেন জেরি বার্চফিল্ড, মার্ক চেম্বারলেইন, জাক্স গার্নিয়ার, রব জনসন, ডগলাস ম্যাককালো ও কেটোন স্পাডা। এই ছয় আলোকচিত্রশিল্পীকে সাহায্য করেছেন প্রায় ৪০০ সহকারী। দেশ-বিদেশি ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!