Author Picture

আলোকচিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড (পাঁচ)

সুদীপ্ত সালাম

আলোকচিত্রীদের কাছে রবার্ট কাপা দেবতাতূল্য। যুগ যুগ ধরে তার তোলা ছবি আলোকচিত্রীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে আসছে। রণক্ষেত্রে ছবি তোলার ব্যাপারে তিনি ছিলেন দুঃসাহসিক ও সিদ্ধহস্ত। তাই তো তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রধান যুদ্ধ ও অভিযানের আলোচিত্রী হিসেবে গণ্য। তার জীবন অবলম্বনে সিনেমা ও বই হয়েছে। তার নামে করা হয়েছে কনটেম্পোরারি ফটোগ্রাফি সেন্টার, প্রবর্তিত হয়েছে পুরস্কার। তিনি মার্কিন আলোচিত্রী ঠিকই, কিন্তু তার জন্ম হাঙ্গেরিতে—১৯১৩ সালে।
যুদ্ধের ছবির জন্য বিখ্যাত এই আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধের ভুয়া ছবি তৈরির অভিযোগ রয়েছে। তার বিশ্বখ্যাত ছবি, ‘দ্য ফলিং সোলজার’। কাপার দাবি, স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৯৩৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি ছবিটি তুলেছিলেন। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান আইবেরিয়ান ফেডারেশন অব লিবারটেরিয়ান ইউথ (এফআইজেএল)-এর এক যোদ্ধার মাথায় গুলি লেগেছে—নিজের রাইফেলটিসহ সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। যোদ্ধার নাম ফেদেরিকো বোরেল গার্সিয়া। বোরেলের ভাই ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।
নিঃসন্দেহে খুবই দুর্লভ ‘ডিসেসিভ’ মুহূর্ত। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুললো এই ছবি। ছবিটি বিশ্বের মহান ছবিগুলোর সারিতে জায়গা করে নিলো। ছবিটি অবলম্বনে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে তৈরি করা হয়েছে ২৫ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য।

রবার্ট কাপার বিশ্বখ্যাত ও বিতর্কিত ‘দ্য ফলিং সোলজার’

কিন্তু সত্তরের দশক থেকে ছবিটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়। এমন মুহূর্ত যে একজন আলোকচিত্রী ধারণ করতে পারেন এই সত্যটা সেসময় হজম করা কঠিন ছিল বলেই হয়তো প্রশ্নটি ওঠে। প্রধান আপত্তিটি হলো, বলা হচ্ছে ছবিটি স্পেনের সেরো মুরিয়ানো এলাকা থেকে তোলা। অনেকের মতে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে যে এলাকা দেখা যাচ্ছে তা সেরা মুরিয়ানো নয়। স্পেনিশ গবেষক হোসে ম্যানুয়েল সাসপ্যারাগুই তার ‘শ্যাডোস অব ফটোগ্রাফি’ (২০০৯) গ্রন্থে দাবি করেন, ছবিটি সেরা মুরিয়ানো থেকে তোলা নয়, বরং সেখান থেকে ৩৫ মাইল দূরের অন্য একটি জায়গায় তোলা—যা যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে। সাসপ্যারাগুই মনে করেন, ছবিটি সাজানো। ম্যানহাটনের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অব ফটোগ্রাফি রবার্ট কাপার ছবিগুলো সংরক্ষণ করে থাকে। তারাও মনে করে, সাসপ্যারাগুইর কয়েকটি দাবিই যৌক্তিক। তবে তারা এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যেতে রাজি নয়। সেন্টারের পরিচালক উইলিস ই হার্টশর্ন জানিয়েছেন, এই বিতর্ক আরো গবেষণার দাবি রাখে। ‘দ্য শ্যাডো অব দ্য আইসবার্গ’ তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়, ছবিটি সাজানো এবং ছবির ব্যক্তি ফেদেরিকো বোরেল গার্সিয়া নন। আরেকটি দাবি হলো, বোরেল কাপার ছবির জন্য পোজ দিতে গিয়েই নিহত হন।
আজ পর্যন্ত এই বিতর্কের অবসান হয়নি। হবে বলেও মনে হয় না। রবার্ট কাপার ক্যামেরা সভ্যতাকে যা দিয়েছে তা অপরিসীম। একটি ছবির সূত্র ধরে তাকে হুট করেই অসৎ বলে দেয়া যায় না। আবার তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দেয়া হচ্ছে না। হয়তো তার নাম যতদিন থাকবে—নামের সঙ্গে এই অভিযোগটিও থেকে যাবে।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!