কোনো আলোকচিত্রকেই আপনি নাকচ করে দিতে পারেন না। অত্যন্ত দুর্বল ছবিও ইতিহাস লিখতে, কোনো এক সময়ের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে বুঝতে কাজে লেগে যেতে পারে। বিশ্ব-ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবিরগুলোর মধ্যে ‘সোন্ডারকমান্ডো ফটোগ্রাফস’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনী বন্দিদের গণহারে হত্যা করতে যে গ্যাস চেম্বারের ব্যবহার করতো তা প্রথম প্রমাণিত হয় গোপনে তোলা ৪টি আলোকচিত্রের মাধ্যমে। এই ছবিগুলোই ‘সোন্ডারকমান্ডো ফটোগ্রাফস’ নামে পরিচিত। কারিগরি দিক থেকে ছবিগুলো অত্যন্ত দুর্বল। দুর্বল হওয়ার কারণ, আলোকচিত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ছবিগুলো তুলেছিলেন।
ছবিগুলো ১৯৪৪ সালে পোল্যান্ডে স্থাপিত কুখ্যাত অশউইৎজ ক্যাম্প থেকে তোলা। একটি থেকে আরেকটি ছবির সময়ের ব্যবধান ১৫ থেকে ৩০ মিনিট। দুটি ছবি গ্যাস চেম্বারের ভেতর থেকে জানালা বা দরজা দিয়ে তোলা। ছবি দুটোতে দেখা যাচ্ছে, অসংখ্য লাশ পোড়ানো হচ্ছে। আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গ্যাস চ্যাম্বারের সামনে একদল নগ্ন নারী দাঁড়িয়ে আছেন। আরেকটি— গাছের মগডালের ছবি। আলোকচিত্রীর নাম অ্যালেক্স। তিনি ছিলেন একজন গ্রিক ইহুদি বন্দি। অনেকের ধারনা, ইনিই গ্রিক নৌসেনা অলবার্তো এরেরা। আলোকচিত্রী সম্পর্কে আর তেমন কিছু জানা যায়নি। ছবিগুলো ওয়াইড লেন্স দিয়ে তোলা। ধারণা করা হয় লাইকা ক্যামেরা।
সোন্ডারকমান্ডো হলো নাৎসিদের গঠিত একটি দল। বন্দিদের দিয়ে গঠিত দলের সদস্যদের দিয়ে লাশ পোড়ানোসহ বিভিন্ন কাজ করানো হতো। ছবিগুলোর আলোকচিত্রী অ্যালেক্স এমনই একটি দলে কাজ করতেন। আলোকচিত্রীর সমসাময়িক আরেক সোন্ডারকমান্ডো সদস্য ফাজনজিলবার্গ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাৎসি বাহিনীর ক্যান্টিনে কাজ করতেন হেলেনা দন্তন। তিনিই ছবির ফিল্মটি টুথপেস্টের টিউবে ভরে ক্যাম্পের বাইরে পাচার করে দেন। তারপর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ছবিগুলো। ভয়াবহতাকে ফোকাস করতে ছবিগুলো ক্রপ করা হয়েছিল।