Author Picture

আলোকচিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড (দুই)

সুদীপ্ত সালাম

মানব-ইতিহাসের বর্বরোচিত ঘটনার দিন ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব-ইতিহাসে এই ঘটনার তুলনা হয় না। ঘটনাটি ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা বা ৯/১১ নামে পরিচিত। এই দিন সকালে জঙ্গিরা যুক্তরাষ্ট্রের উপর সিরিজ হামলা চালায়। যাত্রীবাহী চারটি বিমান উড়িয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিধ্বস্ত করা হয়। বড় অাঘাতটি হানা হয় নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে। সিরিজ আক্রমণে ২ হাজার ৯৯৭ জন নিহত এবং ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
শুরু থেকেই টুইন টাওয়ারের হামলার ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করছেন আলোকচিত্রী স্টিভ সায়মন। ধ্বংসস্তূপ নিয়ে প্রায় তিন মাস কাজ করেন তিনি। তবে ধ্বংসস্তূপ তার কাজের কেন্দ্রবিন্দু ছিল না। ধ্বংসস্তূপকে ঘিরে নিহত-আহতদের স্বজন এবং সমব্যথীদের যন্ত্রণা, আত্মশক্তি ও অনুপ্রেরণাকে তিনি ফ্রেমবন্দি করেছিলেন।


সায়মন ভাবলেন, ছবিগুলো দিয়ে একটি বই করবেন। বইয়ের একটি ডামিও তৈরি করলেন। কিন্তু মাসের পর মাস চলে যায় কোনো প্রকাশক রাজি হয় না। তখন তিনি ভাবলেন, সুজান সনটাগকে দিয়ে বইয়ের একটি ভূমিকা লেখাতে পারলে ভালো হয়। সুজান সনটাগ ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী শিল্প সমালোচক, দার্শনিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। বিখ্যাত ‘অন ফটোগ্রাফি’র রচয়িতা। সায়মনের বিশ্বাস, যদি সনটাগ ভূমিকা লিখে দেন তাহলে বইটির জন্য প্রকাশক পাওয়া সহজ হবে। রাল্ফ গার্সিয়া নামের একজনের মাধ্যমে বইয়ের ডামির একটি কপি পাঠানো হলো সনটাগের কাছে। তারপর সনটাগের সহকারী সায়মনকে ফোন করে জানান, বইটি দেখতে সনটাগের কয়েক মাস লেগে যাবে। কেননা সনটাগের কাছে বছরে এমন প্রায় দেড় শ অনুরোধ আসে। সায়মন অপেক্ষা করতে শুরু করলেন।
মাসের পর মাস চলে যায়—কোনো খবর নেই। কেউ সায়মনকে আর কিছু জানায় না। তবে একদিন এন্ডি লিভিন নামের এক আলোকচিত্রী ফোন করেন। তিনি জানালেন, সায়মনের ছবিগুলো তিনি দেখেছেন এবং তার ভীষণ ভালো লেগেছে। লিভিনের হাতে কিভাবে সায়মনের ছবি গেলো? এই প্রশ্নের উত্তরে লিভিন জানান, তিনি বইয়ের ডামিটি একজনের কাছ থেকে চার ডলারে কিনেছেন। যিনি লিভিনের কাছে ডামি বইটি বিক্রি করেছেন তিনি কিনেছিলেন আরেকজনের কাছে থেকে। আর সেই আরেকজন ডামিটি পেয়েছেন সুজান সনটাগের ফেলে দেয়া আবর্জনা থেকে!
সায়মনের ভীষণ মন খারাপ হলো। তবে তার মন ভালো করে দিলেন লিভিনই। লিভিন জানালেন, তার বন্ধু বারবারা বরস ৯/১১ হামলার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিখ্যাত লাইফ ম্যাগাজিনের হয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ করতে যাচ্ছেন। সায়মন রাজি থাকলে সেই বইয়ে সায়মনের ছবি যেতে পারে। সায়মন একপায়ে রাজি!
অবশেষে ‘দ্য আমেরিকান স্পিরিট’ শিরোনামের সেই বইটির আট পাতা জুড়ে সায়মনের মন ছুঁয়ে যাওয়া বেশকিছু ছবি ছাপা হলো। সম্মানী হিসেবে পেলেন ৮ হাজার মার্কিন ডলার। এরই ধারাবাহিকতায় সেই ডামি বইটি কানাডার একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়, ‘এমটি স্কাই: দ্য পিলগ্রিমেজ টু গ্রাউন্ড জিরো’ শিরোনামে। শুধু তাই নয়, সায়মনের তোলা গ্রাউন্ড জিরোর ছবিগুলো থেকে বেশকিছু প্রিন্ট কপি কিনে নেয় নাইন/ ইলাভেন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্টিভ সায়মনকে।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!