Author Picture

কবির সামাজিক পরিচয়

মেহেদী মাহমুদ চৌধুরী

প্রায় বছর চারেক আগে শাহবাগের আজিজ মার্কেটে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার কয়েকজন বন্ধু শিল্পসাহিত্যের আড্ডা বসাত। আমিও এক সময় সে আড্ডায় নিয়মিত হয়ে পড়ি। সেখানে রিফাত চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। রিফাত চৌধুরীকে আশির দশকের একজন প্রধান কবি হিসাবে ধরা হয় বলে জানতাম। তিনি মাঝে মধ্যে সেখানে কবিতা পড়তেন। তার সঙ্গে কথার সূত্র ধরে জানতে পারলাম তিনি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। সবকটিতেই কবি হিসাবে। আমি নিয়মিত টিভি দেখতাম না, তাই তার নাটক আগে দেখা হয়ে ওঠেনি। তবু ঘটনাচক্রে একদিন একটা নাটক দেখা হয়ে গেল। দেখলাম নাটকে রিফাত চৌধুরী রাতে রিকশা চালাচ্ছেন। সম্ভবত নাটকের নায়ক বা প্রধান চরিত্র রিকশায় বসা ছিল। রিকশাটাকে পুলিশ থামাল। রিকশাচালক রিফাত চৌধুরী একটি কার্ড বের করলেন। তাতে লেখা তার পরিচয় কবি। এ লেখাটির সূত্রপাত এ কবি পরিচয়বহনকারী কার্ডটিকে নাটকে দেখা থেকেই।
নাটকে যে ঘটনাটি দেখানো হলো, অর্থাৎ রাতে রিকশা চালানো, রিকশার আরোহী, প্রধান চরিত্র, রাতের পুলিশ এবং রিকশাচালকের কবি পরিচয়পত্র বহন ইত্যাদির কোনো প্রতীকী তাৎপর্য থাকতে পারে। এ ঘটনাটিকে যে কেউ ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে দেখতে পারেন। কিন্তু যে বিষয়টি আমাকে আলোড়িত করে তা হলো কবি নামক পরিচয়পত্রের উপস্থিতি। কবি কি কোনো সামাজিক জীব? কবির কি কোনো পরিচয়পত্র থাকতে পারে যা সে সমাজের মধ্যে প্রদর্শন করতে পারে? কবির সে পরিচয়পত্রে কী বৈশিষ্ট্য থাকবে যা সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? নাটকটি দেখার কয়েকদিন পর রিফাত চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমি তাকে প্রশ্ন করি কবির কি কোনো সামাজিক পরিচয় থাকতে পারে। রিফাত চৌধুরী উত্তরও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই উত্তর আমার কাছে জরুরি ছিল না। প্রশ্নটা আসলে ছিল আমার নিজের কাছেই করা। পরে বিষয়টিকে আবর্ত করে আমার মধ্যে কিছু ধ্যানধারণার সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটে। এ লেখাটা সে ভাবনাগুলো প্রকাশের একটি প্রয়াস।

রিকশাটাকে পুলিশ থামাল। রিকশাচালক রিফাত চৌধুরী একটি কার্ড বের করলেন। তাতে লেখা তার পরিচয় কবি

এবার আমি নাটকের ঘটনাকে সরল আকারে উপস্থাপন করব। ধরা যাক কোনো নায়ক নেই, পুলিশ নেই, কবি নেই, রিকশা নেই। একজন ব্যক্তি আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে তার পরিচয়পত্র দেখাল। দেখা গেল সেখানে লেখা তার পরিচয় কবি। আমরা তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করব? এ পরিচয়পত্রের দুটি উৎস্য আমি আপাততভাবে চিহ্নিত করতে পারছি। একটি হলো কোনো ইস্যুকারী সংস্থা এটি ইস্যু করে থাকতে পারে। অথবা ব্যক্তি নিজেই এ পরিচয়পত্রটি তৈরি করে আনতে পারে- সে ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখানো আর মুখে নিজেকে কবি বলে ঘোষণা করা একই কথা। পরিচয়পত্রটি যদি কোনো সংস্থা কর্তৃক ইস্যুকৃত হয়ে থাকে তবে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, আমরা পরিচয়পত্রটি গ্রহণ করব এবং পরিচয়পত্রের সঙ্গে ব্যক্তিটিকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করব, যেমন ঘটে থাকে পাসপোর্টের ক্ষেত্রে। ছবি মিলিয়ে দেখা হয় পাসপোর্ট বহনকারী ব্যক্তিটি সত্যি সত্যিই পাসপোর্টের প্রকৃত অধিকারী কি না। কিন্তু কেউ যদি স্বনির্মিত পরিচয়পত্র নিয়ে আবির্ভূত হয় তাকে নিয়ে আমাদের বিবেচনা কেমন হবে? এখানে লক্ষ করার বিষয় যে, পরিচয়ের বিষয়টি আসলে শুধু কবি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয়। কবি, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সমাজতান্ত্রিক যে কোনো পরিচয় নিয়েই এ প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। আলোচনাটিকে তাই কবি পরিচয় বা কার্ড দেখানোর মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ রাখা ভুল হবে। কবি পরিচয় শুধু একটি প্রসঙ্গ যা আমাদের এ আলোচনাটির ক্ষেত্রে প্রস্তুতে সাহায্য করছে। তাহলে এবার প্রশ্নটিকে আরেকটু বর্ধিত করে বলা যাক। যখন কোনো ব্যক্তি নিজেকে একটি পরিচয়ে পরিচিত করে- যেমন কবি, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ইত্যাদি তখন আমরা কীভাবে সেই পরিচয়ের সঙ্গে ব্যক্তিটির সম্পর্ক তৈরি করব। কীভাবে ধরে নেব, যে পরিচয়ে ব্যক্তিটি নিজেকে প্রকাশ করছে, তিনি তাই?

পরিচয়ের বিষয়টি আসলে শুধু কবি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয়। কবি, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সমাজতান্ত্রিক যে কোনো পরিচয় নিয়েই এ প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে

প্রশ্নটির একটি সহজ প্রচলিত উত্তর আছে। তা হলো আমরা ব্যক্তির পরিচয় তার কাজের মধ্যে খুঁজে নেব। যেমন কেউ যদি কবিতা লেখে, বিজ্ঞানচর্চা-আবিষ্কার ইত্যাদি করে তবে তাকে আমরা কবি, বিজ্ঞানী ইত্যাদি বলব। কিন্তু প্রশ্নটির উত্তরটি কি আসলে এতই সহজ? আমরা কি কবিতা, বিজ্ঞান ইত্যাদিকে চিহ্নিত বা সংজ্ঞায়িত করতে সক্ষম? পাঠকদের অনেকেই হয়তো ভাববেন সংজ্ঞায়ন এমন কী কঠিন ব্যাপার। আমি বলব সত্যিই কঠিন। সংজ্ঞায়নের সমস্যা অসীমত্বের সমস্যা। যে কোনো শব্দের সংজ্ঞায়নের জন্য অপর কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হয়। সংজ্ঞায়নে ব্যবহৃত এ অপর কতগুলো শব্দও সংজ্ঞায়নের প্রয়োজন রাখে। এ দ্বিতীয় পর্যায়ের সংজ্ঞায়নে দেখা যাবে যে আরও কিছু নতুন শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নতুন করে ব্যবহৃত শব্দগুলোর জন্য তৃতীয় পর্যায়ের সংজ্ঞায়নের প্রয়োজন পড়বে। এভাবে সংজ্ঞায়নের প্রক্রিয়াটি ক্রমাগত অসীমত্বের দিকে ধাবিত হতে থাকে। যেমন বলা হলো, যা বিশেষ জ্ঞান দেয় তাই বিজ্ঞান। কিন্তু বিশেষ এবং জ্ঞান শব্দের সংজ্ঞা কী? ধরা যাক আমরা এ দুটি শব্দের কোনো সংজ্ঞা প্রদান করলাম। কিন্তু দেখা যাবে ওই সংজ্ঞাগুলোর মধ্যেও কোনো অসংজ্ঞায়িত শব্দ আছে। কাজেই আরেকটি পর্যায়ের সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন হবে এবং এভাবে বিজ্ঞান শব্দের সংজ্ঞায়নের প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে অসীম হয়ে পড়বে। হ্যাঁ সংজ্ঞায়ন হতে পারে যদি আমাদের কাছে সংজ্ঞায়নে ব্যবহৃত শব্দগুলোর সুনির্দিষ্ট অর্থ থেকে থাকে অথবা আমরা যদি সংজ্ঞায়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াটি একটি পর্যায়ে থামিয়ে দিই। পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে সংজ্ঞায়নের এ রকম উদাহরণ খুঁজে দেখার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রচলিত সংজ্ঞায়নের মধ্যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়াটি থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটিই দেখতে পাই যাকে আমি বলব আপেক্ষিক, পরিস্থিতি সাপেক্ষ, সীমিত সংজ্ঞায়ন।

এ ধরনের সংজ্ঞায়ন শুধু কোনো উদাহরণ বা কোনো ঘটনার মধ্যে অস্তিত্বশীল থাকে কিন্তু অপর কোনো উদাহরণ বা ঘটনাতে অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং আবশ্যিকভাবেই উদাহরণ বা ঘটনার বর্ণনার জন্য যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয় সে শব্দগুলোর সংজ্ঞায়ন প্রক্রিয়াকে বেশিদূর অগ্রসর হতে দেওয়া হয় না। যেমন ধরা যাক আমরা পাসপোর্টের সংজ্ঞা দিলাম এমন একটি অনুমতিপত্র হিসাবে যা এক দেশ থেকে অপর দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রদর্শন করতে হবে। এ সংজ্ঞাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দেশ বলতে বোঝাতে হবে ভৌগলিক একটি সীমারেখা, দু’দেশের মধ্যবর্তী একটি স্থান লাগবে যেমন বিমানবন্দর এবং কিছু মানুষ যাদের কাছে পাসপোর্ট নামের জিনিসটি প্রদর্শন করতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হলো আমাদের সীমারেখা, বিমানবন্দর, কিছু মানুষ ইত্যাদি শব্দের সংজ্ঞায়নকে সীমিত রেখে পাসপোর্ট প্রদর্শনের ঘটনাটি ঘটাতে হবে। এভাবেই কিছু বিষয়কে নির্দিষ্ট ধরে, কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়নের ঘটনাটি ঘটানো হচ্ছে। মেনে নিতে কষ্ট হলেও জগৎ পরিচালিত হচ্ছে এ আপেক্ষিক, পরিস্থিতি সাপেক্ষ, সীমিত সংজ্ঞায়নের মাধ্যমেই। সংজ্ঞায়নের এ সীমাবদ্ধ প্রক্রিয়া থেকে এ লেখাটির শব্দগুলোও মুক্ত নয়।

সংজ্ঞায়নের সমস্যা অসীমত্বের সমস্যা। যে কোনো শব্দের সংজ্ঞায়নের জন্য অপর কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হয়। সংজ্ঞায়নে ব্যবহৃত এ অপর কতগুলো শব্দও সংজ্ঞায়নের প্রয়োজন রাখে

এ সংজ্ঞায়নের আলোচনার সঙ্গে আমাদের কবি পরিচয়বিষয়ক আলোচনার সম্পর্ক কোথায়? সম্পর্ক এই যে আমরা যখন কবিকে এবং কবিতাকে চিহ্নিত করছি তখন মনে করছি যে কবি ও কবিতা বস্তুটি কী তা আমরা পরিপূর্ণভাবে জানি। কবি ও কবিতা সম্পর্কে আমরা যা জানি তা আসলে আপেক্ষিক, পরিস্থিতি সাপেক্ষ বিষয়। যেমন উদাহরণ স্বরূপ, অনেকের কাছে যে জিনিস খাতাভর্তি করে লাইনের পর লাইন ধরে লেখা হয় তা গল্প, আবার যা খাতার ডানে বায়ে এবং কিছু কিছু জায়গা ফাঁকা রেখে লেখা হয় তা কবিতা। মানে চোখের দেখায় যাকে কবিতা মনে হয় তা কবিতা, যাকে গল্প মনে হয় তা গল্প। অনেকে আবার পড়ে মিলিয়ে দেখতে চান তাদের জানা কবিতা-গল্পের সংজ্ঞায় তা পড়ে কিনা। এ সংজ্ঞাগুলো স্থান ও সময়ের সঙ্গে এত পাল্টায় যে নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কবি ও কবিতার যদি কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থেকে থাকে তাহলে আমাদের পক্ষে কি কবি পরিচয়পত্র বহনকারী সম্পর্কে কোনো রায় প্রদান করা সম্ভব? আলোচনার সূত্র ধরে বলতে হবে না, সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবে রায় প্রদান করছি এবং এর উদাহরণও যথেষ্ট পাওয়া যাবে। আমরা আসলে রায় প্রদান করছি আপেক্ষিক সংজ্ঞায়নের সাহায্যে। কিন্তু আপেক্ষিক সংজ্ঞায়ন কীভাবে তৈরি হতে পারে? আলোচনার এ পর্যায়ে এসে আমাদের ‘আমরা’ শব্দের একটি সংজ্ঞায়ন তৈরি করতে হবে। ‘আমরা’ বলতে কী বা কারা বোঝায়? এ প্রবন্ধে ‘আমরা’ আসলে ‘সমাজ’ শব্দেরই একটি প্রতিশব্দ। কবি এ সমাজের কাছেই তার পরিচয়পত্র পেশ করছে। বলা হয়ে থাকে যে সবাই সমাজের অন্তর্গত, কোনো মানুষই সমাজের বাইরে নয়। তাহলে কবি নিশ্চয় সমাজেরই অন্তর্গত এবং সে যখন পরিচয়পত্র পেশ করবে আমরা তাকে নিশ্চয় সমাজে প্রচলিত ধ্যানধারণার মাধ্যমে বিবেচনা করব এবং সাদরে গ্রহণ করব। কিন্তু এ সাদরে গ্রহণ করার বিষয়টি কি সব ক্ষেত্রে ঘটছে? কতজন ব্যক্তি আমাদের মধ্যে বিনা বাধায় তার পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে? অসংখ্য ব্যক্তিকে পরিচয় তৈরির জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং এ সংগ্রামের ইতিহাস দেখায় যে, এ ব্যক্তিগুলো যে ধারণাগুলো নিয়ে এসেছিল তা পূর্বে সমাজে উপস্থিত ছিল না। কিন্তু সব মানুষ যদি সমাজের অন্তর্গত হয় তাহলে এ ধারণাগুলো সমাজের বাইরে কীভাবে থাকতে পারে? আসলে সমস্যা হচ্ছে একীভূত সংজ্ঞায়নের কারণে। আগে দেখেছি যে বিজ্ঞান শব্দের সংজ্ঞায়ন ক্রমাগত অসীম হয়ে সব কিছুকে ধারণ করে ফেলছে। একই ঘটনা ঘটছে। সমাজ শব্দের সংজ্ঞায়নে। একীভূত সংজ্ঞায়নের অধীন সমাজে সংগ্রাম, বিদ্রোহের ও নতুনত্বের কোনো অস্তিত্ব নেই। সমাজের প্রকৃতরূপ যাই হোক না কেন এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় স্থান ও কালে সংঘটিত কোনো ঘটনার মাধ্যমে। তেমনি ঘটে ‘আমরা’র ক্ষেত্রেও। ‘সমাজ’ বা ‘আমরা’কে আজ যেভাবে আছে আগামীকাল হয়তো সেভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কবি ও কবিতা সম্পর্কে আমরা যা জানি তা আসলে আপেক্ষিক, পরিস্থিতি সাপেক্ষ বিষয়

তাহলে ব্যক্তি যখন কোনো নতুন ধারণা প্রকাশ করে তখন সে সমাজের বাইরে অবস্থান করে। তার মানে কি ব্যক্তি আগে থেকেই সমাজের বাইরে অবস্থান করছিল? ‘সমাজ’ বা ‘আমরা’র এ গণ্ডি কীভাবে চিহ্নিত হচ্ছে? কেমন আপেক্ষিকতার ভিত্তিতে একটি ‘সমাজ’ বা ‘আমরা’ অস্তিত্বশীল হয়ে ওঠে? এ প্রশ্নগুলোর একটি উত্তর আছে এ প্রবন্ধের মধ্যেই। যখন কোনো ব্যক্তি তার পরিচয়পত্র আমদের কাছে পেশ করে তখন সেই ব্যক্তির কাছে ‘আমাদের’ যে একটি পরিচয় আছে তা চিহ্নিত বা অস্তিত্বশীল হয়ে ওঠে। তার কাছে এ ‘আমাদের’ একটি পরিচয় (একমাত্র নাও হতে পারে) হলো আমরা তার পরিচয়পত্র মূল্যায়ন করবে। কিন্তু আবার আমরা আমাদের কাছে অস্তিত্বশীল হয়ে উঠি এ পরিচয়ে যে আমাদের কাছে সে তার পরিচয়পত্র পেশ করছে বা আমরা তাকে মূল্যায়ন করব। ব্যক্তি তার পরিচয়পত্র পেশের আগে কি কোনো ‘আমরা’ অস্তিত্বশীল থাকতে পারে? থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে। কিন্তু ‘আমরা’র অস্তিত্ব প্রকাশ পায় স্থান ও কালে সংঘটিত ঘটনাকেন্দ্রিক আপেক্ষিকতার মাধ্যমেই। এমনকি ব্যক্তি পরিচয়পত্র পেশের আগে যে ‘আমরা’ অস্তিত্বশীল ছিল তা হয়তো পরিচয়পত্র পেশের পর নতুন ‘আমরা’তে রূপান্তরিত হতে পারে। ব্যক্তির পরিচয়পত্র পেশের পর পুরাতন ‘আমরা’র অস্তিত্ব আর প্রত্যক্ষ হবে না। তাই ব্যক্তির পরিচয়পত্র পেশের ঘটনা আর যে ‘আমরা’র কাছে ব্যক্তির পরিচয়পত্র নতুন মনে হচ্ছে সে ‘আমরা’র অস্তিত্বশীল হওয়ার ঘটনা একই সময় ঘটছে।

আবার ধরা যাক যে কোনো ব্যক্তি আমাদের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করল না। তাহলে আমাদের অস্তিত্ব কীভাবে টের পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে না কারণ ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোন ‘আমাদের অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্ত আমরা যদি ব্যক্তির পক্ষ থেকে চিহ্নিত না হয়েও স্বউদ্যোগে ব্যক্তিকে বিচারে লিপ্ত হই তবে আমরা স্বউদ্যোগেই নিজেদের কাছে চিহ্নিত হব। আবার ধরা যাক বেশ কয়েকটি ‘আমরা’র অস্তিত্ব আছে যারা স্বউদ্যোগ বা ব্যক্তির উদ্যোগে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে অপর এক বা একাধিক ‘আমরা’ চিহ্নিত হতে পারে স্বউদ্যোগ এবং ব্যক্তির উদ্যোগ ছাড়াই। এ আমাদের ‘আমরা’র কাছে এ ‘আমরা’গুলোর একটি পরিচয় এই যে এটি স্বউদ্যোগ এবং ব্যক্তির উদ্যোগে চিহ্নিত ‘আমরা’র দলভুক্ত নয়। এটি একটি নিষ্ক্রিয় বা প্রতিক্রিয়াহীন ‘আমরা’।

মিডিয়া যখন কোনো ‘আমরা’ সম্পর্কে মত প্রকাশ করে তখন তা বিভিন্ন ‘আমরা’র মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ‘আমরা’গুলোর পরিচয় নতুনভাবে নির্মাণ করে

ওপরের আলোচনায় দেখছি যে একটি ‘আমরা’ বা ‘সমাজ’ কীভাবে অস্তিত্ব লাভ বা প্রকাশিত হতে পারে এবং এ অস্তিত্ব লাভ বা প্রকাশের প্রক্রিয়া এবং রূপটি হয়তো সেই ‘আমরা’ কিংবা সমাজের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে। আসলে ‘আমরা’র তৈরি হয়ে ওঠা একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সব সময় পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হচ্ছে। ‘ব্যক্তি’, ‘নিজস্ব আমরা’ এবং ‘অপর আমরা’র মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে। আমরা বা সমাজের প্রকৃত রূপ কী তা কখনোই জেনে উঠা সম্ভব হবে না। কারণ এমন প্রকৃতরূপ মিথস্ক্রিয়া নিরপেক্ষভাবে পূর্ব থেকে অস্তিত্বে অপ্রকাশিত। যা আমরা জানি তা হলো ‘ব্যক্তি’, ‘নিজস্ব আমরা’ এবং ‘অপর আমরা’র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য। এমনকি এটাও হয়তো বলা সম্ভব হবে না, যে তথ্য মৌখিক বা লিখিত আকারে উপস্থিত তা সত্যিই কোনো ‘আমরা’র প্রতিনিধিত্ব করছে কিনা। এ তথ্যগুলো উপস্থিত হয় ‘মুখপাত্র’দের মাধ্যমে। ‘ব্যক্তি’ যখন ‘আমরা’র কাছে মত প্রকাশ করে তখন সে মুখপাত্রের কাছেই তা প্রকাশ করে আবার যখন মত গ্রহণ করে তখন সে তা মুখপাত্রের কাছ থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু এ ‘মুখপাত্র’দের প্রতিনিধিত্বশীলতা সম্পর্ককে আমরা কখনোই সুনিশ্চিত হতে পারব না।
মুখপাত্র যে ঘটনাটি ঘটাতে পারে তা হলো এটি স্বউদ্যোগে একটি ‘আমরা’র অস্তিত্ব নির্মাণের চেষ্টা করতে পারে। এর একটি উদাহরণ হলো মিডিয়া। যেমন মিডিয়া বলতে পারে যে, ‘কোনো একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসী শঙ্কিত’। মিডিয়া কি এই মতামতের আগে সমগ্র দেশবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে? হয়তো নিয়েছে গুটিকয়েক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার এবং এ নমুনার ভিত্তিতে মিডিয়া সমগ্র দেশবাসী সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত প্রকাশ করছে। পাঠক নিশ্চয়ই অনুধাবন করছেন যে, এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি, নিজস্ব আমরা এবং অপর আমরার কোনো সুনির্দিষ্ট ভেদাভেদ সম্ভবপর হচ্ছে না। মিডিয়া ‘ব্যক্তি’, ‘নিজস্ব আমরা’ এবং ‘অপর আমরা’ যে কোনো গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

মিডিয়া যখন কোনো ‘আমরা’ সম্পর্কে মত প্রকাশ করে তখন তা বিভিন্ন ‘আমরা’র মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ‘আমরা’গুলোর পরিচয় নতুনভাবে নির্মাণ করে। একইভাবে মুখপাত্র হওয়ার ঘটনাটি ঘটাতে পারে কোনো ব্যক্তি, কোনো লেখক, কোনো গ্রন্থ, এমনকি এ প্রবন্ধের লেখকও। মতামত প্রদানের ঘটনাটি স্থান ও কালের অধীনে একটি নির্দিষ্ট এককের মাধ্যমে, যেমন একজন ‘ব্যক্তি’, ‘একটি গ্রন্থ’, ‘একটি প্রবন্ধে’র মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কারণ মানব শারীরিক বৈশিষ্ট্য এমন যে তার পক্ষে একটি স্থান ও কালে শুধু একটি মাত্র মতামত প্রকাশ এবং একটি মাত্র মতামত গ্রহণ সম্ভব। কোনো ‘আমরা’র পক্ষে মুখপাত্র ছাড়া মতামত প্রকাশ এবং গ্রহণ সম্ভব নয়। যদি এমন সম্ভব হয় তবে একটি ‘আমরা’ নয় একাধিক ‘আমরা’ একই স্থান ও কালে অস্তিত্বশীল হয়ে উঠবে।
এখন আমি একজন মুখপাত্র হয়ে সামাজিক পরিচয়বিষয়ক কিছু মতামত প্রকাশ করতে চাই। আমার মতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সংগ্রামের সঙ্গে সামাজিক পরিচয় নির্মাণের একটি সম্পর্ক আছে। ধরা যাক ব্যক্তি নতুন ধরনের কবিতা লিখছে বলে দাবি করছে যা সমাজে বা কোনো গোষ্ঠীতে আগে উপস্থিত ছিল না। ব্যক্তি এখানে কাজ করছে তার কবিতার মুখপাত্র হিসাবে এবং মুখপাত্র হিসাবে যদি যে সফল হয় তবে তার কবিতা সমাজে সংযোজিত হয়ে কবিতা এবং সমাজের পরিচয় নতুনভাবে নির্মাণ করবে। যদি সে সফল না হয় তবে তার কবিতা সমাজ থেকে বিয়োজিত হয়ে কবিতা এবং সমাজের পরিচয় আরেকভাবে নির্মাণ করবে। যদি বর্তমান ‘আমরা’র বা সমাজের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়াটি খুঁজে বের করা যায় তবে এ সামাজিক পরিচয় নির্মাণবিষয়ক কিছু তথ্য পূর্ব ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হতে পারে।

ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সংগ্রামের সঙ্গে সামাজিক পরিচয় নির্মাণের একটি সম্পর্ক আছে

আমরা মুখপাত্রের মাধ্যমে জানতে পারছি ব্যক্তি যে পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করতে চাচ্ছে তা কোনো সমাজ চিহ্নিত করছে কিনা অর্থাৎ সমাজের কাছে তা পরিচিত মনে হচ্ছে কি না। ব্যক্তির পরিচয় যখন মুখপাত্র সমাজের পরিচিত বলে প্রকাশ করছে তখন ব্যক্তির পরিচয় আর সমাজের বাইরে অবস্থান করে না। আলোচনার এ পর্যায়ে এসে আমরা এ লেখার শুরুতে রাখা প্রশ্নটির একটা উত্তর খুঁজে পাব। কবি সামাজিক জীব হতে পারে, ব্যক্তি কবি পরিচয়ের কার্ড সমাজে প্রদর্শন করতেই পারে, কিন্তু ব্যক্তি এ পরিচয় প্রকাশ করছে সমাজের গণ্ডি মেনেই। সমাজের এ গণ্ডিটা কেমন? কেমন পরিচয়কে সমাজ কবি হিসাবে চিহ্নিত করতে পারে? কবি ব্যক্তিটির শারীরিক রূপ সে কেমন মনে করে? সমাজের মুখপাত্র নাটক-সিনেমা সেই আকৃতিকে দৃশ্যমান করে প্রদর্শন করতে পারে। দৃশ্যমান করে তোলার পেছনে নাটক-সিনেমার যে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে তা নয়। এ রূপগুলো পূর্ব পরিচিত বলে এগুলো ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। এ জন্য সিনেমায় দেখবেন প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে নায়ক আর খলনায়কের একই রকম শারীরিকভাবে রূপ নায়ক ভালো তাই সে শারীরিকভাবে সুন্দর।

আবার খলনায়ক খারাপ তাই সে শারীরিকভাবে অসুন্দর। দর্শকের মধ্যে পূর্ব থেকেই এ রূপের ধারণা উপস্থিত বলে তারা সহজে এ রূপগুলোকে গ্রহণ করে। সিনেমা-নাটকে কাস্টিং বলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। এতে যে চরিত্রের জন্য একজন ব্যক্তিতে মনোনীত করা হবে তার শারীরিক রূপ (অভিনয়ের ব্যাপারটা তো আছেই) ওই চরিত্রের সঙ্গে মানানসই কিনা তা বিবেচনা করে দেখা হয়।
বিজ্ঞানী সম্পর্কে দর্শক বা সমাজের ধারণা কেমন? বিজ্ঞানী হলো অতি মেধাবী আর অতি মেধাবীর একটি নমুনা হলো ‘আইনস্টাইন’। লক্ষ করেছি যে ‘ব্যাক টুদি ফিউচার’ নামে যে দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্রটি আছে তাতে এ ধারণাটি ব্যবহার করা বিজ্ঞানী মানেই হবে খানিকটা আলাভোলা, সংগীতশিল্পী মানেই সংগীতের প্রতি শারীরিক ও মানসিক আচরণে নিবেদিত প্রাণ। অসাধুতা, অসততা তাদের কমই। চলচ্চিত্রে এ ধরনের রূপ সাধারণভাবে প্রকাশ করা হয় এবং দর্শক কর্তৃক তা গ্রহণযোগ্য হয়।
আমাদের বাউলদের দেখবেন গেরুয়া রঙের পোশাক পরতে, মাথায় থাকবে বিশেষভাবে বর্ধিত করা এলোমেলো চুল তবেই আমরা তাকে বাউল হিসাবে গ্রহণ করব। কোনো স্যুট-টাই পরা লোক যদি গাড়ি থেকে নেমে বাউল গান করে তবে আমরা তাকে কি সেভাবে গ্রহণ করব? একইভাবে মসজিদের ইমাম, গির্জার পাদ্রি, আমলা, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, ধনী-গরিব, ফকির-মিসকিন প্রত্যেকের একটি পোশাকীয় পরিচয়ের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তাই আমরা যখন কোনো ব্যক্তির কোনো পরিচয় যেমন- কবি, বিজ্ঞানী ইত্যাদি জানতে পারি তখন সেই পোশাকীয় সামাজিক পরিচয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো সেখানে অনুসন্ধানের চেষ্টা করি।

যখন কোনো ব্যক্তির কোনো পরিচয় যেমন- কবি, বিজ্ঞানী ইত্যাদি জানতে পারি তখন সেই পোশাকীয় সামাজিক পরিচয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো সেখানে অনুসন্ধানের চেষ্টা করি

পাঠককে আমি আবার সতর্ক করে দিতে চাই যে, আমি যা পেশ করছি তা হলো সমাজ কর্তৃক কবি, বিজ্ঞানী, বাউল ইত্যাদি পরিচয়কে মূল্যায়নের একটি পদ্ধতি। মূল্যায়ন ভিন্নভাবেও করা হতে পারে এবং তা পাঠক খুঁজে দেখার চেষ্টা করতে পারেন। এ মূল্যায়ন করতে গিয়ে যে পরিচয়গুলো নতুনভাবে নির্মিত হচ্ছে না এমনও নয়। কিন্তু এ পোশাকীয় পরিচয়ের সমস্যা কোথায়? আসলে কোনো সমস্যা নেই এবং আমি এর বিপক্ষেও নেই কিন্তু অসংগতি শুধু কোনো ব্যক্তির পোশাকীয় পরিচয়কে সমাজের বিপক্ষে বিদ্রোহ বলে মনে করার ক্ষেত্রে। যদি কোনো ব্যক্তি তার বাউল পরিচয়ের অনুসঙ্গ হিসাবে গেরুয়া পোশাক পরিধান করে তবে তাকে সমাজের বিপক্ষে বিদ্রোহ বা নতুন কিছু বলে মনে করা ভুল হবে। কারণ গেরুয়া পোশাক ইতোমধ্যেই বাউলের পোশাক হিসাবে সমাজের মধ্যে স্বীকৃত এবং ব্যক্তিটিকে সমাজ বাউল গানের পাশাপাশি ওই গেরুয়া পোশাকের জন্য বাউল হিসাবে মনে করছে। কিন্তু যদি সে বাউল নয় ভিন্ন অজানা পরিচয়, গেরুয়া নয় অন্য পোশাক নিয়ে উপস্থিত হতো তবে কি সমাজ এত সহজে তাকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দিত? এ আলোচনা আগেই করা হয়েছে তাই আমি আর পুনরাবৃত্তি করব না। আমি শুধু এ বলে উপসংহার টানতে চাই যে আমরা যদি সমাজ স্বীকৃত কবি, বাউল, বিজ্ঞানী ইত্যাদি রূপে নিজেকে পেশ করি তবে তা সমাজের বিপক্ষে কোনো বিদ্রোহ নয়। সমাজের বিপক্ষে বিদ্রোহ উন্মুখ অনেকেই যা করেন তা আসলে সমাজে প্রচলিত ধারণার অনুসরণ মাত্র- দুঃখজনক কিংবা হাস্যরকরই হোক, তা ঘটে সমাজের বিপক্ষে বিদ্রোহের নামেই। এ বিদ্রোহগুলো বৈষয়িক-অবৈষয়িক কোনো মঙ্গল-অমঙ্গল আনবে বা আনছে কিনা তা ভবিষ্যতের বা অতীতের কোনো মুখপাত্র আশাকরি জানাতে পারবেন।


রচনাকাল: মার্চ-মে ২০০৬ ঢাকা

আরো পড়তে পারেন

একাত্তরের গণহত্যা প্রতিহত করা কি সম্ভব ছিল?

২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি নরঘাতকেরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই এক রাতেই শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় তিন হাজার। এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা একতরফাভাবে….

ভাষা আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা

আগের পর্বে পড়ুন— চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল) ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও একটি সার্থক গণআন্দোলন। এই গণআন্দোলনের মূল চেতনা বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ হলো দেশপ্রেম থেকে জাত সেই অনুভূতি, যার একটি রাজনৈতিক প্রকাশ রয়েছে। আর, বাঙালি জাতিসত্তাবোধের প্রথম রাজনৈতিক প্রকাশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে দুই হাজার মাইল দূরত্বের….

চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল)

আগের পর্বে পড়ুন— বায়ান্নর ঘটনা প্রবাহ একুশের আবেগ সংহত থাকে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। আওয়ামি লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম কমিটির সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র….

error: Content is protected !!