Author Picture

নূরনবী সোহাগ এর একগুচ্ছ কবিতা

নূরনবী সোহাগ

লোভ
.
আগে খেতে পারলে দু’টাকা। বাবার এমন ঘোষণায় আমরা ভাইবোনরা প্রতিযোগী হয়ে উঠতাম। ‘করলা–ডাল’ চটকে দ্রুত খাওয়ার পাল্লা। বাবা অবশ্য কাউকে নিরাশ করতেন না। খাওয়া শেষে সকলের হাতে দু’টাকা দিতেন। প্রাপ্ত দু’টাকার নোট জমিয়ে রাখতাম ‘অর্জন’ ভেবে। আমার সন্তানদের খাওয়াতে ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্সের লোভ দেখাই। ওরাও দ্রুত খায়। ওরাও হয়তো ‘অর্জন’ ভেবে পয়েন্ট জমিয়ে রাখে। ভবিষ্যতের বাবা’রা হয়তো অন্যকিছুর লোভ দেখাবে।

যেমন করে সভ্যতাকে লোভ দেখায় আধুনিকতা !

দূরত্ব
.
নত হতে হতে ধৈর্যকে বিশ্বাস করে নিয়েছি।
পৃথিবীও চক্রাকার ঘুরে– এক সময় পুরনো কেন্দ্রে আসে
কিন্তু অপরিচিত ব্যাসার্ধের দূরত্বে; নিজেকে কেন্দ্র ভাবতে পারিনা একদম
কেননা ছায়াহীন অন্ধকারে– তোমার অস্তিত্ব টের পাই যোজন যোজন দূরে

দাগ
.
সময়ের নিষেধাজ্ঞা ডিঙিয়ে একটি পরিপূর্ণ বিকেলের কাছে এসে দাঁড়াই।
নদীটির শিকড় শুকিয়ে গেছে অনেকটা। জলের খামখেয়ালীপনায়।
একটি গুমোটভাব স্থির দৃষ্টি রেখেছে। আমি ও নদী মুখোমুখি।

বিনা বাক্যে একটি নিশ্চুপ কষ্ট ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার হৃদয়ের লাবণ্য!

কোনো কোনো প্রেমিকা– নিজস্ব অবশিষ্ট স্মৃতি নিশ্চুপে মুছে ফেলতে থাকে পৃথিবীর গা থেকে

নস্টালজিয়া
.
কেউ একজন সূর্যাস্তকালীন খয়েরি আকাশ দেখিয়ে বলেছিল–
পৃথিবীকে ভালোবাসতে এই একটি উপলক্ষই যথেষ্ট; বেঁচে থাকতেও।
আজকাল অনিচ্ছাকৃতভাবে খয়েরি আকাশের দিকে চোখ পড়লে; ভেবে নিই–
এই একটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কেউ হয়তো পৃথিবীকে ভালোবেসে আসছে।
কেউ হয়তো বেঁচে আছে চমৎকারভাবে।

নারীতত্ত্ব
.
যোনীর সম্ভাব্য লোভ খুলে রাখলে
ক্ষুধা বলতে কেবল– মধ্যাহ্ন বুঝতো
বাকিটা সময় ঝরা পালকের মত; নির্জীব
স্তনের উষ্ণতায় সমান্তরাল তুষারপাত হলে
শুভ্রতা খুঁড়ে, কেউ ডুব দিতো কি?
নিষ্ক্রিয় ঠোঁট তবে পুনরায় মমি হতো–
অন্ধকারগুলো বেকার শুয়ে থাকতো
…পুরুষের পাশাপাশি।

আরো পড়তে পারেন

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

ঋতু রমনী অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী চেনা পাতা ও পাখি থেকে অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে। কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর, কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার। এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর, এই খানে পথে….

আজাদুর রহমানের তিনটি কবিতা

দূরত্ব একটা ধারণা আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। তুমি যেভাবেই থাকো, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে সামনে-পিছনে-ডাইনে-বায়ে তোমার যেভাবে মন চায় এমনকি পরস্পর গভীর আলিঙ্গনেও। তুমি যেখানেই থাকো ঢাকা বগুড়া চট্রগ্রাম আমেরিকা কোস্টারিকা কিংবা পৃথিবীর যে কোণাতেই, আমাদের মধ্যে এতটুকু দূরত্ব নেই। দূরত্ব বলে আসলে কিছুই নেই এই যে ছায়াপথের পর সুদূরে জ্বলছে যে তারা সেখানে কেউ কারও দূরে….

error: Content is protected !!