Author Picture

পাবলো নেরুদা’র কবিতা

আন্দালিব রাশদী

৫০তম মৃত্যুবর্ষিকীতে পাবলো নেরুদাকে স্মরণ

নেরুদার মিউজ মাতিলদে উরুটিয়া উঠে আসেন তার কবিতায়:

সারারাত আমি তোমার সঙ্গে ঘুমাব এই দ্বীপে সমুদ্রের কাছে
আনন্দ ও ঘুমের মাঝখানে
তুমি বুনো ও মিষ্টি
আগুন ও পানির মাঝখানে।

১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ জেনারেল অগাস্তো পিনোশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাদর আয়েন্দের সরকারকে উৎখাত করলেন। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে আগুন জ্বলল, চলল অবিরাম গুলিবর্ষণ। নেরুদার প্রিয় বন্ধু প্রিয় প্রেসিডেন্ট আয়েন্দে নিহত হলেন। শুরু হলো নির্বিচারে গণহত্যা। আয়েন্দের মৃত্যুসংবাদ নির্বাক করে দিল নেরুদাকে। তিনিও দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকলেন। অর্ধশত বর্ষ আগে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ নেরুদারও মৃত্যু ঘটল, নেরুদার ভক্তরা বললেন, মৃত্যু নয় হত্যাকাণ্ড। সে বিতর্ক চলতে থাকলো বছরের পর বছর ধরে।
নেরুদাকে সম্মান জানাতে তার কয়েকটি অনূদিত কবিতা/কবিতাংশ উপস্থাপন করা হলো।

ভূমিকা ও অনুবাদ: আন্দালিব রাশদী


 

আজ রাতে আমি সবচেয়ে করুণ পঙিক্তগুলো লিখতে পারি

আমি তাকে ভালোবাসতাম
কখনো কখনো সেও আমাকে ভালোবেসেছে
কীভাবে কখন এবং কোথা থেকে— এসব না জেনেই
আমি তোমাকে ভালোবেসেছি
কোনো সংকট কিংবা অহমিকা ছাড়াই
তোমাকে কেবলই ভালোবেসেছি
আমি এভাবেই ভালোবাসি, কারণ ভালোবাসার অন্য কোনো
পদ্ধতি আমার জানা নেই।

 

মোটের উপর মানুষ কত বছর বাঁচে?

মোটের উপর মানুষ কত বছর বাঁচে?
সহস্র দিন কি বাঁচে না মাত্র একদিন?
এক সপ্তাহ না অনেক শতাব্দী?
মরতে মানুষের কতোটা সময় লাগে?
‘চিরদিনের’ জন্য— এ কথাটার মানে কী?

এসব পূর্ব নির্ধারিত কাজে ডুবে থেকে
আমি অনেক কিছু ঠিকঠাক করে নিতে
নিজেকে প্রস্তুত করি

আমার নিজের দেশে মুর্দাফরাস আমাকে
মদ্যপানের মধ্যিখানে জানিয়ে দেয়
নিজের জন্য ভালো একজন খুঁজে নাও
আর বাজে যতোসব পরিত্যাগ করো।
আর কতোদিন?

ফেলিসিটা সালার আঁকা চন্দ্রালোকে বৃক্ষবেষ্টিত পাবলো ও তাার প্রণয়িনী মাতিলদে

চেরি বৃক্ষের সাথে বসন্ত যা করে

তুমি প্রতিদিন মহাবিশ্বের আলোর সাথে খেলা করো।
সূক্ষ্ম পরিব্রাজক তুমি, ফুলে অবতরণ করো আর পানিতে
সাদা যে মাথা আমি শক্ত করে ধরে আছি, এক গুচ্ছ ফলের মতো
তুমি তার চেয়েও বেশি, প্রতিদিন, আমার দু’হাতের মধ্যে
যেহেতু আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি অন্য কারো মতো নয়
তোমাকে হলুদ মালায় ছড়িয়ে দিতে দাও…
আকাশ এখন ছায়ার মতো মাছে পরিপূর্ণ একটি জাল
এখানে আগে হোক কি পরে সব বাতাস চলে যায়, সব
বৃষ্টি খুলে নেয় নারী তোমার পোশাক
পাখিরা পালিয়ে যায়।…
আমি তোমাকে ভালবাসি, আমার সুখ কামড়ায়, তোমার মুখে কুল
আমার সাথে খাপ খাওয়াতে তোমার অবশ্যই অনেক ভোগান্তি হয়েছে
আমার আরণ্যক নিঃসঙ্গ আত্মা; আমার নাম তাদের তাড়িয়ে দেয়
কতোবার আমরা সকালের তারকা জ্বলতে দেখেছি, আমাদের চোখে চুম্বন
আমাদের মাথার উপর ধুসর আলো ফ্যান চালু করতে থেমে যায়
আমার শব্দ তোমার উপর বর্ষণের মতো, তোমাকে ছুঁয়ে যায়
কতো দীর্ঘ সময় আমি তোমার দেহের রোদলাগা মাদার অব পার্ল
আমি ভালোবেসে এসেছি; আমি ততোদূর ভাবতে চাই যেন তুমি
মহা বিশ্বের মালিক, আমি পর্বতমালা থেকে তোমার জন্য এনে দেবো
সুখী ফুল ব্লু বেল, ঘন হ্যাজেল এবং ঝুড়িভর্তি গ্রাম্য চুম্বন
চেরি বৃক্ষের সাথে বসন্ত যা করে আমি তোমার তাই
করতে চাই।

 

প্রেম বড় সংক্ষিপ্ত

প্রেম বড় সংক্ষিপ্ত
ভুলে যাওয়া এত দীর্ঘ…
বসন্তকাল চেরি বৃক্ষকে নিয়ে যা করে
আমিও তোমাকে নিয়ে তা-ই করতে চাই।
তুমি সকল ফুল ছেঁটে ফেলতে পারো
কিন্তু বসন্তের আগমনকে তুমি
ঠেকাতে পারো না।
রংধনু কোথায় গিয়ে শেষ হয়
তোমার হৃদয়ে না দিগন্তে?
তাই আমি নিঃসঙ্গ বাড়ির মতো তোমার অপেক্ষায় থাকি
যতক্ষণ না তুমি ফিরে এসে আমার ভেতর
বসবাস শুরু করো

 

গতরাতে যখন আলো নিভে যায়

গতরাতে যখন আলো নিভে যায়
আমার মূল ঘুমিয়ে পড়েছিল
আর আমার চোখ
জড়িয়েছিল পাতার মধ্যে
শেষের দিকে ছায়া পড়লে
স্বপ্নের কাছে আমার একটি শাখা লুপ্ত হয়
এবং আমার কান্ড বেয়ে কাধ পর্যন্ত উঠে আসে
স্ফটিকীকৃত শীতল রাত
স্বপ্নে ইগুয়ানা যেমন করে উঠে।
আমি চোখ বুঝি আর আমার পাতারাও।

আরো পড়তে পারেন

আজাদুর রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

সবুজ স্তন প্রচুর নেশা হলে দেখবেন— গাছগুলো বৃষ্টি, পাতার বদলে বব চুল, কী ফর্সা! তার বাহু, উরু ব্যাঞ্জনা, জলভারে নুয়ে আছে সবুজ স্তন। নেশা এমনই এক সদগুন যে, মাঝরাতে উড়ে উঠবে রাস্তাগুলো আকাশে মুখ দিয়ে আপনি বলছেন— আমাদের একটা পৃথিবী ছিল, ঠিক চাঁদের মত গোল। চুর পরিমাণ নেশা হলে, আপনার পা থেকে অহংকারী পাথর খসে….

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

ক্লান্তির গল্প যারা উপনীত সন্ধ্যে বেলায় ফিরে দেখো দিন মলিন স্বপ্ন – ধূসর জীবন, প্রখর রোদের শায়ক ক্রীড়া প্রাচুর্যে আত্মহারা ছিলে স্বাধীন একদিন, পশ্চিম বেলা চেয়ে চেয়ে আজ শেষ করো ক্লান্তির গল্প।   ছড়ানো বিদ্রুপ সাপের চুমোতে কোথা বিষ হিংস্র নিশ্বাসে তোমার গরল বিশ্বাসে আমাকে পাবে জিয়ল সরল। রুক্ষতা ছেঁটে ফেল – চেহারা কমনীয় সব….

বিপিন বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা

শূন্যতায় বাজে প্রণবধ্বনি শূন্যতায় বাজে প্রণবধ্বনি আড়ালে যার মহাজাগতিক রশ্মির চারণভূমি প্রতিবন্ধকতাকে পাশকাটিয়ে নিমগ্ন বিশ্বের স্বরূপ দেখি ধ্যানের স্তরে। মায়ার কায়া ঝেড়ে ফেলে সত্যকে চিনি আপন করে জ্যোতির্ময় জেগে আছে দীপ্ত শিখার আপন জলে । মূল্যবোধের সলতে টাকে মারতে চাই না দিন-দুপুরে অন্ধকারে আলোক রেখা সদাই খোঁজি হৃদ মাঝারে।   জীবনের ধর্ম এই জীবন মা….

error: Content is protected !!