![](https://srijonbd.com/wp-content/uploads/2020/08/12-final.jpg)
একটি দুমড়ানো-মুচড়ানো গাড়ির ছাদে যেন ঘুমিয়ে আছেন এক তরুণী। তার পায়ের ওপর পা তোলা, সাদা দস্তানাপরা বাঁহাত বুকের ওপর। পোশাকও পরিপাটি। দেখে বুঝার উপায় নেই এই তরুণী আসলে নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ৮৬ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সের এই তরুণীর নাম অ্যাভেলিন ম্যাকহেল।
১৯৪৭ সালের মে মাসের ঘটনা। অ্যাভেলিনের ওই অবস্থার ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রের শিক্ষার্থী রবার্ট ওয়াইলস। আর তার সেই ছবিটি বড় করে ছাপায় তখনকার প্রভাবশালী পত্রিকা ‘লাইফ’ ম্যাগাজিন। ছাপা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সাড়া পড়ে যায়। সাত দশকেরও বেশি সময় পরেও ছবিটি জ্বলজ্বলে। এটিকে ‘সবচেয়ে সুন্দর আত্মহত্যা’ হিসেবে অবিহিত করা হয়। আর মনে করা হয়—এটিই আত্মহত্যার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিকৃতি।
![](https://srijonbd.com/wp-content/uploads/2020/08/iner.jpg)
অ্যাভেলিন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। তার জন্ম ১৯২৩ সালে—ক্যালিফোর্নিয়ায়। তারা নয় ভাই-বোন। মা হেলেন ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন। আর এজন্যই বাবা-মার বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অ্যাভেলিন এবং তার ভাই-বোনেরা থাকতেন বাবার সঙ্গে। অ্যাভেলিন একটি বইয়ের দোকানে বুককিপার হিসেবে কাজ করতেন। তার সঙ্গে কলেজ শিক্ষার্থী বারি রোডসের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ৩০ এপ্রিল অ্যাভিলিন ট্রেনে করে পেনসিলভানিয়ায় যান রোডসের সঙ্গে দেখা করতে। পরদিন রোডসের বাসা থেকে তিনি সোজা চলে আসেন এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিয়ের ৮৬ তলায়। এই তলা থেকেই দর্শনার্থীরা ভবনের চারদিক পর্যবেক্ষণ করে। এখান থেকেই অ্যাভেলিন লাফিয়ে পড়েন নিচের পার্কিং লটে। তার মৃত্যুর আগে তিনি তার কোটটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দেয়ালে রেখে গিয়েছিলেন। সেই কোটের পকেটেই পাওয়া যায় একটি সুসাইড নোট। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি চাই না আমার পরিবারের বা বাইরের—কেউ আমাকে দেখতে পাক। আমার মরদেহ পুড়িয়ে শেষ করে দেয়া যায়? আমার আকুল আবেদন, আমার জন্য যেন কোনো স্মরণসভা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না হয়। বারি রোডস আমাকে জুনে বিয়ে করতে চায়। আমার মনে হয় না আমি কারো ভালো স্ত্রী হতে পারবো। আমাকে ছাড়াই সে ভালো আছে। আমার বাবাকে বলবেন, আমি আমার মার স্বভাবের বেশিরভাগটাই পেয়েছি।’
স্ট্রিট ফটোগ্রাফির শিক্ষার্থী রবার্ট ওয়াইলস ভাগ্যক্রমে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গাটিতে ছিলেন। তিনি কিছু একটা পড়ার বিকট শব্দ শুনে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন গাড়ির ছাদে পড়ে আছে একটি নারীদেহ। ঝটপট ছবি তুলে ফেলেন তিনি। অ্যাভেলনের উপর থেকে পড়া এবং ছবি তোলার মধ্যে মাত্র চার মিনেটের ব্যবধান। ১২ মে ছবিটি লাইফে ছাপা হওয়ার পর ছড়িয়ে পরে পৃথিবীর সবখানে। ছবিটি বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পীদেরও ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। তাদেরই একজন শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহোল। তিনি তার বিখ্যাত ‘সুসাইড (ফলেন বডি)’ শিরোনামের চিত্রকর্মে ছবিটি ব্যবহার করেন।