মাতাল শুভ্রতা
.
উনিশ বছরেই প্রথম প্রেমের মত
তুষারপাত দেখে মাতামামাতি করেছি।
সতীর্থদের সঙ্গে এখনকার ধূলিসাৎ
ডনবাসের, জাপোরোজিয়ার,
মেড ক্যাম্পাসে।
বাচ্চাদের মত।
আজ খুব অন্ধকার; বৃষ্টির কারণে।
পাহাড় দৃশ্যমান নয়।
কেবল বৃষ্টির শব্দ।
জীবন নিয়ে গেলো অন্তরালে।
এবং বৃষ্টির পাশাপাশি ঠান্ডা নেমে আসে।
আজ রাতে চাঁদ নেই, তারকা নেই।
চাঁটগার ঐতিহাসিক জব্বরের
ভেজা কাদার মধ্যে বলি খেলার
মত করে গড়াগড়ি করেছি
সেই সর্বপ্রথম তুষারপাতে।
তুষার যে এখনও আমার প্রেম!
মরা মাছের চোখের মত সেই প্রেম!
তুষারপাত হোক, ঘুম এসে যাক
যেহেতু মায়ের পীড়ায়
মৃত্যুর দিকে তার জীবন
এবং চায় নীরবতা।
প্রেইরীর খাদ এখন তুষারাবৃত
যেন সুন্দরী প্রেমিকা মুখ ঢেকেছে
সফেদ ওড়না দিয়ে। কিন্তু এই
মরা চোখ আজ উইলো গাছের
তুষার ঘেরা, মরে যাওয়া
ম্যাপেল পাতা খোঁজে, তার হারিয়ে
যাওয়া কুড়ি কুড়ি বছরের সাথীর।
হায়, এই কি সেই নক্ষত্রের রাত।
মাতাল করা সেই রহস্যের
সোডিয়াম আলোর মতই অচেনা!
আজ চলে এসেছি কুড়ি কুড়ি
বছরের পার।
শীত দেখে কেমন জানি
পালাতে ইচ্ছে করে।
প্রেমিকার বয়স যে অনেক হল।
এখন আর নিডিল পাইনের
গায়ে তুষাররাশি মনকে
আন্দোলিত করে না।
হাইওয়েতে বরফ ঢাকা খাড়িতে
গাড়ি চালিয়ে চক চকে
জোৎস্না ঢাকা জ্বলন্ত ড্রাগনের
চোখকে কেন জানি ভয় লাগে।
দপ করে গাড়ির ক্রুজ কন্ট্রোল থেকে,
পায়ের পাতা ব্রেকে নেমে আসে
উইলো গাছের জ্বলন্ত ঝোপকে
এখন মনে হয় ডাইনোসরের চোখ।
আমার ভালবাসা তুষারের দিন
কি হারিয়ে গেল?
সমুদ্রের দিন
.
শুধুমাত্র একটি
বিষই বাসনা করি-
কবিতার তীব্র মদ
চুমুকে পান করা!
আমার হৃদয়
লুট করেছো
যে তুমি,
যে আমাকে
নগ্ন করেছো
সর্বস্ব থেকে,
যে আমার
আত্মাকে
এতটাই
পীড়ন করেছো
যেন জ্বরগ্রস্ত
আমি,
হে প্রিয়তমা,
তবে গ্রহণ করো
এই উপহার—
কিছু কথা,
কিছু মান
কিছু অভিমান,
কিছু মুহূর্ত,
কিছু ক্ষন,
কিছু প্রাপ্তি,
প্রিয় মুখ।
কিছু বাস্তব,
বা পরাবাস্তব
কিছু স্বপ্ন,
কিছু অনুরাগ
কিছু কষ্ট
মিলেমিশে যাক
এই না মিলের
অন্তমিলে!
আবেগের
মূর্ছনা সংগীত হয়ে।
তোমার অস্থির
চেহারা দেখা গেল;
তোমার জ্বলন্ত চোখ
নিবদ্ধ গালিচায়
যেন বা কোনো
নতুন বিয়ালি
হাতসাফাই করে নিয়েছে
ইহুদি জায়নের কোন চোখ
ঝলসানো রাণী।
হারিয়ে যাক
ঐ সমুদ্র রাশির
ফেনার মাঝে।
ফিরে আশার
প্রত্যয় নিয়ে…
এই দিনটিকে আঁকো
এক উজ্জ্বল
ছুটির দিন হিসেবে।
ক্রুশবিদ্ধ
করার মতো যাদু করো
তোমার সৃজনী কর্ম।
যেমনটা তুমি
দ্যাখো—
শব্দের নখ
আমাকে
আটকে দেয়
কাগজের
স্তপের সাথে।
আমি নিজেই
শক্ত করে
বেঁধেছি হতাশার
ফাঁস।
আমার কান্না ও হাসি
ফুল ও ঘাসেরা,
সূর্যালোকে স্বর্ণালী হও!
বসন্তের যৌবনে
উজ্জীবিত হও,
সমস্ত পদার্থের
হে জীবনশাঁস!
কোনদিন,
আর কখনোই
হয়তো নয়,
আমি অন্য কিছুর
কথা ভাবব না।
শুধু তুমিই হবে
তুমিময়।
আমার জন্মদিন
.
আজ নাকি আমার
জন্মদিন।
মানে বাংলাদেশে
ঈদ এর চাঁদ
যেমন আগে দেখা যায়
আমার ১৮ তারিখ, ডিসেম্বরের
তেমনি আর কি?
এখানে এই
নর্থ আমেরিকায়
তো জন্মদিনও
পিছিয়েই থাকে।
জোতিষ শাস্ত্রে আমি
ধনু রাশির জাতক।
নর্থ আমেরিকায় এই
১৮ তারিখ আসতে
আরও ঘন্টাকয়েক বাকি।
পিতা মাতার
একমাত্র পুত্র হওয়াতে
বাবা, মায়ের হিসেবে
কোন ভুল হবার কথাও না।
তবুও বরিশালের
জ্যোতিষ বাবাজী
যেখানে আমি হয়েছি।
বলেছেন আমার রাশি কন্যা
তাই আজীবনই ঐ
কন্যা ও ধনুর মাঝেই
ঝুলে আছি।
ভালোবাসাসহ
আমাকে এই মরণ গুহাতে
ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
কোনো আগন্তুক
সত্যের চেয়ে বেশি গল্প
যেমন করে বলে…
ভালোবাসা ছাড়া
আমি নেহাতই
দূরে সরি
একেবারে বাতিল
সেকেলে এক
মানব।
আরে, আমার জন্মদিনে
আমার কবর তো
আমিই দেখতে পাচ্ছি।
এপিটাফে লুব্ধক মাহবুব লেখা।
কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না।
তাই ভাবছি…
জন্মদিন থমকে থাকুক।
যখন তাকাবে কেউ
তখনই নয় সেঁদে যাব
ঐ অন্ধকার এপিটাফ
লাগানো গুহার ভেতর।
ধনু আর কন্যার
মাঝামাঝি, আড়াআড়ি হয়েই।