Author Picture

আলোকচিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড (চার)

সুদীপ্ত সালাম

হেনরিক রস ছিলেন একজন ইহুদি আলোকচিত্রী। তার জন্ম পোল্যান্ডে—১৯১০ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রস পরিসংখ্যান বিভাগের আলোকচিত্রী ছিলেন। পরিসংখ্যান বিভাগটি ছিল নাৎসি বাহিনীর নির্দেশে গঠিত জিউস কাউন্সিলের আওতাধীন। পরিচয় নথিভুক্ত এবং বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করতে রসকে স্টুডিওতে মানুষের ছবি তুলতে হতো। যদিও যুদ্ধের আগে তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকার খেলাধুলার আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করতেন।

মাটি থেকে তোলা হচ্ছে হেনরিক রসের নেগেটিভভর্তি বাক্স।

পোল্যান্ড দখলের পর নাৎসিরা দেশটিতে লজ নামের ইহুদি পাড়া তৈরি করে। সেসময়ে এটি ছিল ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইহুদিপাড়া। রসকে এই মহল্লার লোকেদের ছবি তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়। বাধ্য হয়েই তিনি কাজটি শুরু করেন। কিন্তু তার মন শুরু থেকেই এই কাজের বিরুদ্ধে ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন নাৎসিদের কাজের পাশাপাশি লুকিয়ে এই ইহুদিপাড়ার বাস্তবচিত্রটাও ক্যামেরাবন্দি করবেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি নাৎসি বাহিনীর অপকর্ম এবং ইহুদি নির্যাতনের দৃশ্যের ছবিও তুলতে লাগলেন। কোটের নিচে ক্যামেরা লুকিয়ে রেখে তিনি ছবি তুলতেন।
রস নেগেটিভগুলো বাঁচাতে ১৯৪৪-এর দিকে সেগুলো বাক্সে ভরে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন।
পোল্যান্ড রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসার পর—১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে মাটি খুঁড়ে সেই বাক্স তোলা হয়। মাটির নিচে থাকার কারণে প্রায় ৬ হাজার নেগেটিভের মধ্যে আনুমানিক ৩ হাজার নেগেটিভ নষ্ট হয়ে যায়। রসের এই আর্কাইভ ১৯৬১ সালের অ্যাডলফ আইচম্যানের যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পরে আইচম্যানের ফাঁসি হয়েছিল।
রসের ক্যামেরায় ধরা পড়া সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

হেনরিক রস নিজের এবং বিশ্বের জন্য তখন যে ছবিগুলো তুলেছিলেন সেগুলো অবিস্মরণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যাবে রসের ছবিগুলো ছাড়া। তার ছবিতে একদিকে যেমন ধরা পড়েছে সংখ্যালঘু মানুষের অসহায়ত্ব এবং নাৎসিদের নির্মমতা, অন্যদিকে ফুটে উঠেছে অসহায় মানুষগুলোর টুকরো টুকরো আনন্দের মুহূর্তও।
১৯৯১ সালে রস শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিজের কাজ সম্পর্কে রসের মন্তব্য, ‘আমি চেয়েছিলাম আমাদের আত্মত্যাগের একটি ঐতিহাসিক দলিল রেখে যেতে।’

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!