Author Picture

সলমন খানের পরিবার

বিনোদ ঘোষাল

অনেক রাত। ক’টা বাজে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। জানার উপায়ও নেই ওদের চারজনের। চারজন মানে সলমন খান, হ্যাঁ ফিল্মস্টার সলমন খান। যাকে আসমুদ্র হিমাচল একনামে চেনে। সল্লুভাই। বলিউডের ঝক্কাস নায়ক, ইয়া বডি যার। ম্যায়নে পেয়ার কিয়া থেকে চুলবুল পান্ডে বিলকুল হিট। সেই সলমন, চনা, পাখি আর একবছর তিন মাস বয়সের ওদের ছেলে। চনা এবং পাখির পরিচয় অবশ্য শুধু চনা আর পাখি। কারণ এর বেশি কিছু বলার নেই। ও হ্যাঁ, আরেকটু অ্যাড করা যেতে পারে। ওরা দু’জনই মানুষ। চনা ছেলে আর পাখি মেয়ে। বয়স … এই কুড়ি থেকে তিরিশের মধ্যে যা খুশি একটা ধরে নিলেই হল। আর ওদের দেড় হাত সাইজের ছেলেটা যেহেতু ওদেরই তাই সেটাও মানুষের পর্যায়েই পড়ে। ব্যাস।

তো যে সিনটা দিয়ে গল্পটা শুরু করা গেছিল আবার ফেরা যাক। ওরা চারজন শুয়েছিল। ওদের থেকে এই ফুট দুয়েক দূরে কালুয়া নামের একটা ঘসটানো কুকুর। কুকরটা বয়সের দিক থেকেও ঘসটে চলার মাল আর সত্যি সত্যিই ঘসটে চলে। মানে ওটার পেছনের পা দুটো পুরো অকেজো। কালুয়া যখন সামনের দুই পায়ে ভর দিয়ে কোনোমতে হাঁটে তখন কোমরের পর থেকে পুরো মালটা মাটিতে ঘসটায়। এমনটা ছিল না। বছরখানেক আগে এই সামনের রাস্তাটা পোরোতে গিয়েই একটা ট্যাক্সি ওর পেছনের পা দুটোকে লেবড়ে দিয়ে গেছিল। মরেই যেত কুকুরটা। কয়েকদিন সারাক্ষণ ধরে তীব্র কেঁউকেঁউ চিৎকারে চনা পাখি আর পথচলতি মানুষগুলোর মনে হতো কুকুরটা মরে গেলেই ভালো হয়। এত্ত কষ্ট! কিন্তু কেউ ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়নি। চনা একবার ন্যাকড়ার ফালি দিয়ে ওর ভাঙা পা দুটো বাঁধতে চেষ্টা করেছিল, কালুয়া ছুঁতেও দেয়নি। ঘ্যাক করে উঠেছিল। দুটো খিস্তি দিয়ে সরে গেছিল চনা। আর কাছে যায়নি। তবে পাখি কিন্তু রোজ দু’বেলা কুকুরটাকে নিজেদের ভাত থেকে একটুখানি হলেও দিত। ওই কাঁউকাঁউ যন্ত্রণা নিয়েও সেই ভাত এটেপুটে খেত কুকুরটা। আর যে অলৌকিক কারণে ফুটপাতের প্রাণীরা বেঁচে যায়, বেঁচে থেকে সেভাবেই বুড়ো কালুয়া আবার সুস্থ হয়ে ওঠে একদিন। তবে সোজাভাবে দাঁড়াতে পারল না আর। পোঁদ ঘসটে ঘসটে চলাটাও অভ্যাস হয়ে উঠল এক সময়। কালুয়া নামটা চনাই দিয়েছিল। আর চনার নাম দিয়েছিল ওর বাবা ভোলা। ভোলার অবশ্য বিয়ে করা বউ ছিল।

তার নাম ছিল টুকু। তারই ছেলে চনা। চনার বাপও চনার মতোই ভ্যান টানত বড়বাজারে। তবে ফুটপাতে শুত না। পোস্তায় একটা সরষের তেলের গোডাউনে একফালি মাথা ঢাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছিল। বিনিময়ে রাতে সেই গোডাউন পাহারা আর বিনি পয়সায় ওই গোডাউনের মাল টানা। তিন দিক লোহার রেইলিংয়ে ঘেরা তিন চাকার ভ্যান। তার মধ্যে হরেকরকম মাল নিয়ে গোটা বড়বাজার চষত ভোলা। চনা একটু সাইজে আসার পর ও ওর বাবার সঙ্গে হাত লাগাত। আর ভাবত বড়বাজারটা পৃথিবীর থেকেও বড়। এত গলি! গলির ভেতর গলি, ঘরের ভেতর ঘর, টেবিল চেয়ার গদি সব্বাই ব্যবসা করছে। আর বাবা সব চেনে। হাতে কাগজটা পাওয়ামাত্রই ভ্যানে মাল চাপিয়ে ছুটতে শুরু করত ভিড় কাটিয়ে মুখে হো হই হই খবরদার। সেই চেল্লানিতে সরে দাঁড়াত পথচারীরা নিজেদের বাঁচাতে। বাবা শিখিয়ে দিয়েছিল অনেক কিছু। বড়বাজারের গলিঘুচি থেকে কীভাবে এই ভিড়ের মধ্যে ভ্যান কাটিয়ে মাল টাইমের মধ্যে পৌঁছে দিয়েই আবার চটপট নতুন খদ্দের ধরা। কোন পার্টি কেমন কীভাবে মাল পিঠে চাপাতে হয় সব সবকিছু। চনা শিখেও নিচ্ছিল গপগপ করে।

তারপর ওর যখন তেরো বছর বয়স তখন বাবা একদিন পেছনে লাথ মেরে ওকে বাড়ির বাইরে বার করে দিল। ততদিনে আরেকটা বোন এসে গেছিল মায়ের কালে। চনাকে খুব সামান্য কারণেই ঘর থেকে দূর করে দিয়েছিল বাবা। বিষয়টা ফালতু অজুহাত আসল কারণটা ছিল একতা পেট কামানো। ভোলার বও মানে চনার মা-অ তাতে খুব একটা আপত্তি কেরেনি। পেটে দু’বেলা কিলমারা মানুষদের যে সমাজটা হয় সেটা ঠিক চলতি মানুষদের সমাজ নয় বরং সেখানেও যে বাঘ সিঙ্গিদের মতোই নিয়ম চলে। সেটা খুব তাড়াতিাড়ি বুঝে গেছিল চনা। আর বোঝামাত্রই একটা চায়ের দোকানে লেগে গিছিল দিন দুয়েকের মধ্যে। গদিতে গদিতে চায়ের গ্লাস নিয়ে যাওয়া খাতায় লেখানো কত গ্লাস ধার হল আর কিছুক্ষণ পর গিয়ে আবার গেলাস ফেরত নিয়ে আসা। মাসের টাকা তোলা আরও কিছু ফাইফরমাশ। বদলে দুই বেলা খাওয়া। দোকানের ভেতর চারজন মিলে গাদাগাদি করে শোয়া আর মাস গেলে হাতে কিছু টাকা পাওয়া। এ ভাবে বছর গড়াতে গড়াতে চনা একদিন সতেরো। কিছু টাকা জমেছিল হাতে। দোকান ছেড়ে বেরিয়ে এসে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ভ্যান কিনে ফেলল, ঝপ করে তারপর সেই বড় বাজারেই কাজ শুরু করল। শুরুর দিকে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছে। এসব ভ্যান টানা কুলি কামিনদের মধ্যে অনেক রকমের পলিটিক্স চলে। নতুন যারা কাজ শুরু করেছে তাদের যদি কোনো চেনাশোনা না থাকে তাহলে কাজ পেতে কল কেলিয়ে যায়। কেউ মালে হাতই দিতে দেবে না। আর চনা যেহেতু অনেক দিন লাইনের বাইরে ছিল তাই ওকে ভুলেও গেছিল অনেকে। আবার নতুন করে নিজের জোরে পুরনো লাইন ধরতে হয়েছিল ওকে। সারা দিন খেটেখুটে গঙ্গা লাগোয়া স্ট্রান্ড রোডের ফুটপাত লাগোয়া একটা হোটেলে পেটপুরে ভাত খেয়ে ওই ফুটপাতের ওপরেই ভ্যানটাকে তুলে তার ওরপর কুঁকড়ে শুয়ে থাকত রাতভর।

ফুটপাতের জগৎটা ভারি অদ্ভুদ। পাশাপাশি রাতের পর রাত শুয়েও কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না কেউ কাউকে চেনে না। এখানে তুমি একমাত্র তোমার নিজের। তুমি মরে গেলেও পাশের লোকটা তোমার দিকে একবার ফিরেও দেখবে না। উঁচু উঁচু বাড়ির পাখির খোপে যে মানুষরা থাকে কিছুটা তাদের মতোই।
তারপর একদিন পাখি এলো। কোনো ঘটা করা নয় ওসব ভরাট কাহিনী ফুটপাতের লোকজনদের হয় না। একদিন অনেক রাতে চনা শুয়েছিল। তখন শীতকাল চলছে। শীতকালে নিজের ভ্যানের ওপর একটা প্লাস্টিকের ছাউনি বানিয়ে নেয় চনা। তারপর ভ্যানের পাটায় পাটের চট দিয়ে বানানো মোটা বিছানা ফেলে গায়ে মারয়ারি বাবুদের দান করা কম্বল গায়ে দিয়ে আরামে ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ শুনল কে যেন খুন খুন করে কাঁদছে। মুখ বাড়িয়ে মধ্য রাতের স্ট্রিট লাইটে দেখল ওর ভ্যানের সামনেই একটা জ্যান্ত ভরাট মেয়ে। শীতের মধ্যে ফুটপাতে বসে ঠক ঠক করে কাঁপছে। দৃশ্যটা দেখে আবার কম্বলে মুখ ঢাকছিল চনা। মেয়েটাও তাকিয়েছিল চনার দিকে।

তুমি মরে গেলেও পাশের লোকটা তোমার দিকে একবার ফিরেও দেখবে না। উঁচু উঁচু বাড়ির পাখির খোপে যে মানুষরা থাকে কিছুটা তাদের মতোই

তখনই চনার মনে হয়েছিল এই শীতে একটা মেয়েছেলে পাশে পেলে মন্দ হয় না। আবার কম্বল থেকে মুখ বার করে মেয়েটাকে ইশারায় ডেকেছিল। ভেবেছিল আসবে না। আর একটা ভয় ছিল যদি পাগল হয়। না পাগল নয়, তবে ডাকামাত্র উঠে এসেছিল চনার সামনে। চনা মেয়েটাকে মাঝরাতের আলোয় ভালো করে মেপেছিল। বেশ লাগছিল দেখতে ওই অদ্ভুত আলোতে। সাহসে ভর করে মেয়েটাকে ডেকে নিয়েছিল নিজের ভ্যানের ভেতর। মেয়েটাও একটুও দেরি না করে সুরসুর করে ঢুকে গেছিল ভেতরে। তারপর ভোর বেলার দিকে মেয়েটাকে গভির ঘুম থেকে ঠেলে তুলে দিয়েছিল ও। এবার কাজে বেরোতে হবে। মেয়েটাও কম্বলের ওম থেকে বেরিয়ে এসেছিল অনিচ্ছায়। তখন ভালো করে পরস্পর মুখ দেখেছিল দু’জনের। কারও কোনো এক্সপ্রেশন বোঝা যায়নি। তবে চনা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভেবেছিল মেয়েটা নিশ্চয়ই চলে যাবে। যেতেই পারে।

সন্ধের পর নিজের জায়গায় ফিরে দেখল না যায়নি, সেখানেই ঠায় বসে রয়েছে। অঝোরে গঙ্গাজল ঝরানো রাস্তার কলে অন্যান্য কুলিদের সঙ্গে সারা দিনের পরিশ্রমের ময়লা আর ক্লান্তি ধুয়ে স্নান করতে করতে চনা আবার ভেবেছিল মেয়েটা কী চায়? স্নানটা কুলি মুটেরা অনেক্ষণ ধরে করে। ভালো করে গায়ে মাথায় জামাকাপড়ে সাবান ঘসে বেশ আয়েস করে। এটা একটা মস্ত এন্টারটেনমেন্ট। চনাও সেদিন ভালো করে স্নান করতে করতে অনেকক্ষণ ভেবেছিল তারপর নিজের ডেরায় ফিরে মেয়েটাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করেছিল কিছু খাবে কি না?
ওই ইশারা দেখেই ফিক করে হেসেছিল মেয়েটা তারপর হলদেটে দাঁত বার করে বলেছিল শালা আমি বোবা না তুমি বোবা?
হেসে দিয়েছিল চনাও। তারপর দু’জনেই একসঙ্গে খেতে গেছিল রাস্তার সেই হোটেলে। চনার সঙ্গে মেয়েটা কে তাই নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি। দু-একবার দু-একজন তাকিয়েছিল মাত্র। অনেকে সেই পরিশ্রমটুকুও করেনি। আসলে এ পৃথিবীটায় কেউ কারও প্রতি বিন্দুমাত্র উৎসাহী নয়। জগৎ চুলোয় যাক, আমার পেটটুকু যেন ভরে। ব্যাস আর কিচ্ছু চাই না।

থেকেই গেল পাখি চনার সঙ্গে। মাঝেমাঝেই তুমুল অশান্তি হতো। মারামারি। পাখিকে কখনও লাথ মেরে দূর করে দিত চনা। আবার কখনও পাখি নিজেও চনাকে কামড়ে আঁচড়ে ছিঁড়ে নিজেই রাগ করে চলে যেত। আবার ফিরেও আসত এক সময়। মনের টানে নয়, পেটের টানে। দু’বেলা ভাত রুটি জোগানোর ক্ষমতা রাখে যে চনা। তো এই চনাই একদিন পাখি আসার পর বড়বাজার থেকে প্লাস্টিক, পলিথিন দড়ি ইত্যাদি সব জোগাড় করে নিয়ে এসে ফুটপাতের ওপরেই দিব্বি একটা তাঁবু টাইপ ঝুপড়ি বানিয়ে ফেলল। ঝুপড়ি গঙ্গার দিকটায় উঁচু পাঁচিল, সেই পাঁচিলটাই ঘরের একমাত্র পাকা দেয়াল। ওখান থেকে সটান ডাল বেয়ে একেবারে ফুটপাতের মাটি পর্যন্ত নামানো পলিথিনের ছাদ। ষেখানেই শুরু হল ওদের দু’জনের আরেকটা জীবন। ধীরে ধীরে একটা কড়াই একটা হাঁড়ি দুটো থালা বাটি বালতি… উনুন সবই হয়ে গেল তবে বাচ্চা কাচ্চা হল না। তা সে পাখি বাঁজা না কি চনার বিষের ঝাঁজ নেই তা নিয়ে কোনো গেবেষণা হয়নি দু’জনের। বরং বেঁচে গেছে দু’জনেই। কোনো ঝামেলা নেই চ্যাঁ ভ্যাঁয়ের। বছর দুই আড়াই দিব্বি চলে গেল তারপরেই শুরু হল গণ্ডেগোলটা।

ঝুপড়ির ভেতর যে প্লাটিকের চাদরটা পেতে ওরা অনেকদিন ধরে শুচ্ছিল সেটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে একেবারেই ফালাফালা। তাই একদিন চনা সন্ধেবেলা খেটেখুটে ফেরার সময় হাতে নিয়ে ফিরল পুরনো কোনা ছেঁড়া একটা ফ্লেক্স। পুরনোটা ফেলে দিয়ে ওটাকে পাতল যত্ন করে।
পাতার পর ওরা দু’জনেই এক ঝলক দেখল ওদের পলিথিনের ছাদওলা ঝুপড়িতে নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট আর খালি গায়ে টান টান চিৎ হয়ে সলমন খান শুয়ে রয়েছে। চনা সলমন খানকে চিনত। অনেকদিন আগে সলমনের দু-একটা বইও দেখেছিল। কিন্তু পাখি চিনত না কাউকে। ও জীবনে কোনোদিন সিনেমাই দেখেনি। চনা ফ্লেক্সতার দিকে আঙুল তুলে বলেছিল চিনিস একে।
না।
এর নাম হল সলমন খান। হিরো। বই করে। হেব্বি নাম। পোচুর টাকা।
পাখি হাঁ করে তাকিয়েছিল ছবিটার দিকে। চোখ ধাঁধানো চেহারা বটে একটা। রক্ত মাংসের চেহারা তো নয় পাথর দিয়ে বানানো যেন। হেই চওড়া হাত বুক বাপ রে বাপ। আর চকচক করছে। যাদের অনেক টাকা থাকে তাদের চামড়া এমন চকচকেই হয়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা ঘোর লেগে যাচ্ছিল যেন পাখির। একেবারে ঠাকুরের মতো দেখতে ছবিটা। দু’চোখে পুরো সেঁটে গেল খালি গা নীল প্যান্ট পরা রাজপুত্তুরের মতো দেখতে ছেলেটা।
সেই শুরু। তারপর খুব দ্রুত টাল খেয়ে গেল পাখি সেই ছবির দিকে। দিন নেই রাত নেই শুধুই সল্লুভাইয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকা। সাত পাঁচ ভাবা। সেই ভাবনায় নিজেও একেক সময়ে তল পায় না পাখি। ভাওনা চলতেই থাকে চলতেই থাকে। চনা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর সারা দিন একা সময়টা আগে কীভাবে কাটাবে ভেবে পেত না পাখি। ওদের ঝুপড়ির ফুট কয়েক দূরেই একতা হাফপাগলা ভিকিরি সারা দিন শুয়ে বসে থাকে। আগে ভিকিরিটার সঙ্গেও দু-একবার কথা বলত, কিন্তু আর ভালো লাগে না। আসলে এখানে পর পর যতগুলো ঝুপড়ি রয়েছে সবাই পরস্পরের ভয়ংকর অচেনা। কেউ কারও কোনো খোঁজই রাখে না। কেউ যন্ত্রণায় কাতরালেও কিংবা কেউ মরে পড়ে থাকলেও অন্য কেউ ফিরেও তাকাবে না। খানের জিবনটা একটু অন্য রকম। লড়াইটা অন্য রকম বলেই। খুব শিগগিরই সলমন খান বড্ড কাছের হয়ে উঠল পাখির। চনা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পরই সলমনের সঙ্গে ওর কথা শুরু হয়। প্রথম প্রথম ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মনে মনেই কথা বলত পাখি। তারপর একদিন সাহস করে মুখ দিয়েই বলে ফেলল। অনেক অনেক কথা বলেছে আখি সল্লুকে। নিজের ছোটবেলার কথা। যা আর কেউ জানে না। চনাও নয়। বাড়ি ছিল ইলামবাজারে। বাপ মায়ের সাতটা ছেলেমেয়ে। বাবা চালকলে কাজ করত। যা রোজগার করত তাতে নটা পেট দু’বেলা ভরানো স্বপ্ন। ভরানোর চেষ্টাও করত না বাবা।

বাপ মায়ের সাতটা ছেলেমেয়ে। বাবা চালকলে কাজ করত। যা রোজগার করত তাতে নটা পেট দু’বেলা ভরানো স্বপ্ন। ভরানোর চেষ্টাও করত না বাবা

শুধু নিজের মাল খাওয়ার পয়সাটুকু রোজগার করেই খুশি। মা কাজ করত বাড়ি বাড়ি। ধান সিদ্ধ করা, মুড়ি বানানো। বিনিময়ে এ বাড়ি ও ঘর থেকে চালটা-আলুটা পেত। পাখি ছিল মেজো। ওর দাদা ওর থেকে দু’বছরের বড়। পাখির দায়িত্বে থাকত ওর থেকে ছোট ভাই বোনেরা। তারপর একদিন বাবা কলকাতায় এক দালালের কাছে বেচে দিল পাখিকে। তখন পাখি বারো। মাগিপাড়া। কী যন্ত্রণায় যে সেখানে কেটেছিল কয়েকটা মাস। তারপরও একদিন অনেক রাতে অনেক পুলিশ এলো। পাখি আর ওর বয়েসী অনেককে সেই পাড়া থেকে তুলে নিয়ে গেল ভ্যানে করে। সেখান থেকে হোমে। সেখানেও ভালো লাগত না একটুও। উড়ে পালাতে ইচ্ছে করত। তবু দাঁত কামড়ে থাকতে হয়েছিল বেশ কয়েকটা বছর। একদিন লেগে গেল সুযোগ। পালাল পাখি। কিন্তু পালানোর সময় নিজের পেটটাকে নিয়েও পালাতে হয়েছিল বলে পেটও সঙ্গে গেল ওর। আর আগের মতোই দু’বেলা ক্ষিদে পেতে থাকল। পেটে দানা না থাকলে ওড়া যায় না। কী করবে ভেবে পেল না। কাজের ধান্দা করল। কিন্তু চালচুলো নেই কে বিশ্বাস করে কাজ দেবে। থাকার মধ্যে ছিল শরীরটা। হোমের তেল জল পেয়ে তখন মেয়ে শরীরটা মোটের ওপর মন্দ নয়। সুতরাং পুরনো অভিজ্ঞতাকে আবার কাজে লাগাতে হল। কিন্তু ভালো লাগছিল না এভাবে। মাথার ওপর একটা ছাদ আর একটা সব সময় থাকা ব্যাটাছেলের খুব দরকার বুঝতে পারছিল। কিন্তু কোনো শালা একবেলার বেশি রাখতেই চাইত না। খিদে পেটে গেলেই কুকুরের মতো দূর করে দিত ওকে। ব্যাটাছেলেদের যেমন স্বভাব আর কী। তেমনই একদিন একটা ছেলের সঙ্গে বিকেলে গেছিল পাখি। শিবপুরে। রাত্রে বাবুঘাটে নামিয়ে দিয়ে ফিরে গেছিল ছেলেটা। খুব ঠাণ্ডা ছিল সেদিন। অত রাত্রে কোথায় যাবে ভেবে না পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ স্ট্রান্ড রোডের ফুটপাতে পাইচারি করে একসময় বসে পড়েছিল ক্লান্ত হয়ে। আর সেদিনই রাত্রে ওকে দেখতে পেয়ে কাছে ডেকেছিল চনা।

আরো পড়তে পারেন

স্বর্ণবোয়াল

মোবারক তার কন্যার পাতে তরকারি তুলে দেয় আর বলে, আইজ কয় পদের মাছ খাইতেছ সেইটা খাবা আর বলবা মা! দেখি তুমি কেমুন মাছ চিনো! ময়না তার গোলগাল তামাটে মুখে একটা মধুর হাসি ফুটিয়ে উল্লসিত হয়ে ওঠে এই প্রতিযোগিতায় নামার জন্য। যদিও পুরষ্কার ফুরষ্কারের কোন তোয়াক্কা নাই। খাবার সময় বাপবেটির এইসব ফুড়ুৎ-ফাড়ুৎ খেলা আজকাল নিয়মিত কারবার।….

প্রতিদান

‘আমাকে আপনার মনে নেই। থাকার কথাও নয়। সে জন্য দোষও দেব না। এত ব্যস্ত মানুষ আপনি, আমার মত কত জনের সঙ্গেই হঠাৎ চেনা-জানা। কেনইবা মনে রাখবেন তাদের সবাইকে?’ বেশ শান্ত গলায় বললেন মিসেস অঙ্কিতা। টেবিল থেকে কি যেন একটা নিলেন তিনি। পিটপিট করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সাফরাব। একটা ইনজেকশন, একটা ছোট টেস্টটিউবের মতো ভায়াল,….

লিলিথ

শাওয়ার বন্ধ করে দিতেই পানির হালকা ঝিরঝিরে শব্দটা বন্ধ হয়ে যায়। প্রযুক্তির কল্যাণে ঝরনার শব্দ আজকাল বাসাতেই শোনা যাচ্ছে। আর এ শব্দটা অদ্ভুত সুন্দর। কেমন যেন মোলায়েম। সাদা তুলতুলে মেঘের মতো। অনেক দূর থেকে ভেসে ভেসে এসে জড়িয়ে ধরে। চোখের পাতাগুলোয় ঠান্ডা আমেজ ছড়িয়ে ঘাড় বেয়ে নামতে থাকে। আরামে চোখ বুজে আসে আমার। রিলাক্স হতে….

error: Content is protected !!