Author Picture

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

আজাদুর রহমান

সবুজ স্তন

প্রচুর নেশা হলে দেখবেন—
গাছগুলো বৃষ্টি,
পাতার বদলে বব চুল,
কী ফর্সা!তার বাহু,
উরু ব্যাঞ্জনা,
জলভারে নুয়ে আছে সবুজ স্তন।
নেশা এমনই এক সদগুন যে,
মাঝরাতে উড়ে উঠবে রাস্তাগুলো
আকাশে মুখ দিয়ে আপনি বলছেন—
আমাদের একটা পৃথিবী ছিল,
ঠিক চাঁদের মত গোল।
চুর পরিমান নেশা হলে,
আপনার পা থেকে
অহংকারী পাথর খসে যাবে;
শত্রুর দরজায় কড়া নেড়ে
আপনি বলবেন-চা’য়ের কথা।
প্রেমের বদলে ভালবাসা চাইবেন,
নারীকে বলবেন, বন্ধু।

 

স্বপ্ন

আপনি হয়ত স্বপ্নের ভিতরে
জেগে আছেন, আর চারপাশে
যা কিছু ঘটছে তা সব আসলে
বানানো গল্প, আপনি বুঝতে পারছেন না,
কখনওবা ক্ষীণ সন্দেহে
স্বপ্নের ভিতরেই
আপনি গায়ে চিমটি কাটছেন,
ব্যাথাও পাচ্ছেন, নিশ্চিত হয়ে
ফের স্বপ্নের ভিতরেই দিব্যি
একটা জীবন পার করে দিচ্ছেন…।
…তারপর
একদিন আচমকা ঘুম ভেংগে গেলে
দেখবেন
আপনি কবরে শুয়ে আছেন!

 

বন্ধু

একদিন কোথাও যাব না
দরজা বন্ধ করে
শুধু তোর কথা ভাববো।

একদিন বুধবার ভেবে
পাতাদের মত শুধু শুধু
আলগোছে খসে পড়বো হাওয়ায়।

একদিন মৃত্যুকে বলে দেবো
বর্ষাকালে এসো
নাবিকের পোষাক পরে এসো।

 

নিঃসংগ একটা লাইন

বড় জোর একটা লাইন লিখে দিতে পারি,
কাটা পড়া ট্রেনের মত অকেজো,
ক্লান্ত
মর্মাহত একটা লাইন ।
তুমি হয়ত ব্যর্থ হয়েছ,
দুঃখ পেয়েছ,
বন্ধুরা কথা দিয়ে,
কথা রাখে নি,
খুব করে বকে দিয়েছে কেউ।
ভুল পৃথিবীতে এসে তুমি হয়ত বুঝে গেছো—
এখান থেকে পালাবার দরজা নেই,
অনেক কিছু ফেলতে ফেলতে একদিন তাই
ফেলে দিয়েছ পরশ পাথর।
হয়ত ভালবাসতে গিয়ে আর ভালবাসা হয় নি,
তোমার মন খারাপ,
নিজের সাথে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত তুমি,
বিষন্ন তোমার চোখ জোড়া।
বড় জোর একটা লাইন লিখতে পারি
তোমার কফিনের উপরে রাখা
রজনীগন্ধার মত নিঃসংগ একটা লাইন।

 

শোক সংবাদ

যখন দেখবেন অত্যাচারের মত
অনবরত কবিতা আসছে,
ভিতর থেকে বিড়ালের পায়ে
লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে
ওহির পর
আরেক ওহী!
সমানে লিখেও
আর
কূল পাচ্ছেন না!
তখন বুঝবেন,
আপনি আপনার কবিতার মধ্যে
নিহত হয়েছেন।
আর
যা আপনি লিখছেন, তা কবিতা নয়,
শোক সংবাদ।

আরো পড়তে পারেন

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ৩)

শত্রু এক মাস আগে আমি সেখানে ছিলাম। এক বছর আগেও আমি সেখানে ছিলাম। সবসময় আমি সেখানে ছিলাম যেন আমি অন্য কোথাও ছিলাম না। এখন যা ঘটছে তা ১৯৮২ সালেও আমাদের সাথে ঘটেছিল। যে নরকের মুখোমুখি হয়েছিলাম তার বিরুদ্ধে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলাম আর যুদ্ধ করেছিলাম। হতাহতরা বা শহীদরা একজন আরেকজনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তাদের….

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

error: Content is protected !!