Author Picture

নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ১)

অনুপ মোস্তফা

১. 

— হ্যালো নীলু বলছো??

— হুম..

— কে ময়ী??

ফোনের ঐপাশে এক মুহুর্ত নিরবতা। মনে হল একটু আশ্চর্য হয়েছে।

—হুম। চিনে ফেল্লে?? একবার গলা শুনেই চিনে ফেললে। অনেক বছর তো হলো। বিশ বছরের বেশি হবে। আর তোমার সাথে ফোনে কোনদিনই কথা হয়নি।

— হ্যাঁ, তা হবে। মাঝখানে একবার তোমার ভাই ফোন করেছিল। তোমার মায়ের ট্রোক্যান্টারিক ফ্রাকচার হয়েছিল পড়ে গিয়ে। অপারেশনের ব্যপারে জানতে। আমাকে দিয়ে করায়নি। তখন তো সবেমাত্র স্পেশালিষ্ট হয়েছি। ভরসা পায়নি।

— হুম, আমিই বলেছিলাম। আমি তখন ইউকে তে ছিলাম। তুমি খুব সহজ ভাবে কথা বলছ। মনে হচ্ছে না মাঝে দেড় যুগের বেশি কেটে গেছে। এমন ভাবে কথা বলছ, আর আমাকে একবারেই চিনে ফেল্লে, মনে হচ্ছে আমাদের প্রতিদিনই কথা হয়।

— ময়ী, আমি গত বিশ বছর তোমার এই ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে।

— নীলু আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। সামনা সামনি বসে কথা বলতে চাই।

— বিশ বছর আগে আমি একবার সামনা সামনি বসতে চেয়েছিলাম। কথা বলতে চেয়েছিলাম। তুমি বসোনি। এই এত বছর পর কি মনে করে বসতে চাচ্ছ? আমি অবশ্য জানতাম তুমি একবার হলেও ফিরবে। একবার হলেও মুখোমুখি বসতে চাইবে। এই জন্যেই এতদিন অপেক্ষা করে আছি।

— তুমি সেই আগের মতই আছ, জেদী শান্ত গভীর। শান্ত গভীর নদীর মতো।

— নদীর সাথে তো মেয়েদের তুলনা হয় ময়ী। ছেলেদের তুলনা হয় পাহাড়ের সাথে কিংবা ঝড়ের সাথে। আচ্ছা ময়ী এই সপ্তাহে হবে না। আমার অ্যাপয়েনম্যন্ট বুকে স্পেস নেই। সার্জারী এবং ওপিডি বুকড। আমি সময় বের করতে পারব না।

— একটু আগেই বললে বিশ বছর অপেক্ষা করছো। একটু সময় বের করতে পারবে না?

— দুটো ভিন্ন বিষয়। কেন অপেক্ষা করেছি, আর কেন সময় বের করতে পারব না। দুটোকে মিলিও না ময়ী। আমি আগামি সপ্তাহে পারব। তুমি আছ দেশে?

— হুম আছি। ফিরে এসেছি। আর যাব না ভাবছি। খোঁজ নিয়ে জানলাম তুমি বিজি Doc.। এত কথা বলছ কি করে। গলায় শ্লেষ।

— তুমিও আগের মতোই আছ ময়ী। তোমার যা চাই তা তোমার মতো করে মেনে নিতে হবে। খরস্রোতা নদীর মতো। ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কারো কথা শুনতে চায় না। কিন্তু সময় বদলেছে ময়ী। তুমি চাইলেই এই সপ্তাহে হচ্ছে না। আর কথা বলছি, তুমি ভাল সময়ে ফোন করেছ। এখন দুপুর তিনটা বাজে। এই সময় আমি বিশ্রাম করি। কিছু টুকিটাকি কাজ থাকলে করি। তারপর ও.টি. শুরু করি। এই সময়টা ফোন ধরি না সাধারণত, পরিচিত নম্বর ছাড়া। আজকে ধরলাম। নিয়তি চাইছিল হয়ত তোমার সাথে আমার কথা হোক, দেখা হোক। অনেক বছরের অপেক্ষার তো একটা মূল্য আছে। স্রষ্ঠা একেবারে অবিবেচক নয় বলেই মানি। আচ্ছা ছাড়ছি এখন। কিছু কাজ আছে। আর ও.টি. শুরু করবো। তোমার সাথে কোথায় এবং কবে দেখা করবো আমি জানিয়ে দিব। ভালো থেকো ।

— আচ্ছা তুমি সব অ্যারেঞ্জ করে জানিও। রাখছি।

ফোনটা রেখে নীলু চুপ করে বসে রইল খানিকক্ষণ। একটু মিথ্যে বলল। আজ ও.টি. চারটার সময় একটা। আরো পৌনে এক ঘন্টার মত সময় আছে। নীলু একটু বিশ্রাম করবে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবে। হাসপাতাল থেকে এই সময়ে আর বাসায় যায় না নীলু। বাসায় কেউ নেইও। বাবুর্চি আর ম্যানেজার। নারী-বর্জিত তিন হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট। মাঝে মাঝে সৃজা আসে। থাকে দুই তিন দিন। তখন দুপুরে বাসায় ফেরে। একসাথে খায়।

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে জানালার সামনে দাড়ালো নীলু। নয় তলার ওপর ও.টি. কমপ্লেক্স। ও.টি. রুমের পাশেই তার জন্য আলাদা রুম। এই সময় কেউ আসে না। একা একা জানালায় দাঁড়িয়ে ঝকঝকে নীল আকাশ দেখছে নীলু। রোদে পুড়ছে সব। নীলুর পোড়ার মত করে।

বিশ বছর আগে আমি একবার সামনা সামনি বসতে চেয়েছিলাম। কথা বলতে চেয়েছিলাম। তুমি বসোনি। এই এত বছর পর কি মনে করে বসতে চাচ্ছ? আমি অবশ্য জানতাম তুমি একবার হলেও ফিরবে। একবার হলেও মুখোমুখি বসতে চাইবে

নীলুর মন আজ শান্ত। খুব শান্ত। অপেক্ষার শেষ হলো। অনেক বছরের অপেক্ষা। সেই বিষণ্ণ বিকেল, সন্ধ্যা আর রাত্রি প্রতিদিন ফিরে আসে। কোনভাবেই মন থেকে তাড়াতে পারে না। অসহ্য যন্ত্রণা হয়। শুধু রোগী আর সার্জারীতে ডুবে থাকলে ভুলে থাকা যায়। তাও পিছু ছাড়ে না। বিশ বছর আগের কথা এখনো চোখের সামনে ভাসে। মনে হয় এইতো সেদিন সব ঘটলো। নীলু মনে করতে চাইল সেদিন আসলে ঠিক কি হয়েছিল?

 

২.

সেদিন বিকেলটা হলুদ রঙের আভায় মাখামাখি হয়েছিল। ময়ীর আসবার কথা ছিল। ময়ী এলো। তারপর ভালোবাসাটাকে  ছুঁড়ে ফেলে পায়ে দলে ময়ী চলে গেল। মনে হলো একটা গোলাপ মাটিতে আছড়ে ফেলে দারুণ ক্রোধে পায়ে পিষে গট গট করে চলে গেলো। একবারও পিছন ফিরে তাকালো না। নীলু ফ্যল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কি ঘটলো বোঝার আগেই ময়ী গেট থেকে বাইরে। নীলুর  চেতনা ফিরে আসতে সময় লাগছে। ঘোরের মধ্যে আছে মনে হচ্ছে। সে একটা চেয়ারে বসলো। তারপর আবার উঠে টেবিলের কাছে গিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেলো। একটু মনে হলো নিজের মধ্যে ফিরে এলো। পায়ে পায়ে চৌকির কাছে ফিরে এসে শুয়ে পরলো। চৌকির ওপর পাতলা পাতলা তোষক।

কেন এরকম হলো? নীলু তো অমন কিছু করে নাই। ময়ীর এরকম রেগে যাওয়ার কারণ কি? যাই হোক এখন ভেবে বিশেষ লাভ হবে না। কাল ক্লাসে গিয়ে কথা বলতে হবে।

নীলু আর ময়ী ফিফথ ইয়ারে পড়ে। সামনে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা। বাকি নেই বেশি দিন। পরদিন ক্লাসে একটু আগেই গেলো। সকাল সাতটার ক্লাস। নীলু রেগুলার স্টুডেনট। এখন পর্যন্ত রেজাল্ট ভালো। যেটা বেশি ভালো সেটা হলো নীলু ক্লিনিক্যালি খুব শার্প। গ্যালারিতে ৬.৫০ গিয়ে সামনে বসলো। গত এক বছর যে সিটে পাশাপাশি বসেছে সেই সিটেই বসলো। সাতটার ক্লাসে সবারই একটু দেরি হয়। সময় গড়াচ্ছে। ক্লাস শুরু হলো। সার্জারী লেকচার, স্যার ভাল পড়াচ্ছে। স্যার খুব ভাল পড়ায়। আজ কন্সেন্ট্রেট করা যাচ্ছে না। বারবার তাল কেটে যাচ্ছে। ক্লাস শেষ হলো। নীলুর পাশের সিট আজ খালিই রইলো। একে একে সব ক্লাস শেষ হলো। দুপুর দুটো পার হয়েছে। হোস্টেলে ফিরে খেয়ে শুয়ে পরলো। অস্থিরতা পেয়ে বসেছে।

ময়ীর সাথে কথা বলা দরকার। নীলু এরকম অস্থিরতায় পরেনি কখনো। ফার্স্ট ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ার পর্যন্ত ভালোই নিস্তরঙ্গ জীবন ছিল। একরকম ভাল ছিল ওই জীবন। পড়া ক্লাস ঘুম টিউশনি।

একবছর আগে একদিন ময়ী এসে বলল, ‘আমার একজন রিডিং পার্টনার লাগবে। আমি একা পড়তে পারি না।’

— আমার লাগবে না। আমি একা পড়তে পারি। ইন ফ্যক্ট আমার একা পড়তেই ভালো লাগে। আর তোমার তো পার্টনার আছে। রায়হানের সাথে তো তুমি পড়ো। ওর সাথে সেই সেকেন্ড ইয়ার থেকেই পড়ছো। এখন কি হলো?

— কিছু হয়নি। ওর সাথে আমি ঠিক কোপ-আপ করতে পারছি না। ও একটু স্লো। আমার পড়ায় দেরি হয়। পরীক্ষার আগে সব রিভিশন দিয়ে যেতে পারি না। রেজাল্ট ভালো হচ্ছে না।

— আমার সাথে পারবে তার কি গ্যারান্টি। দেখবে আমি হয়ত বেশি ফার্স্ট বা আরো স্লো।

— নীলু, আমার ধারণা তুমি আমার টাইপ। একই রকম পেইস। ক্লিক না করলে পড়ব না।

— আচ্ছা ভেবে দেখি। তবে আমি পড়লেও দুই এক ঘন্টার বেশি না। সারাদিন মানে ক্লাসের পর বেশির ভাগ সময় পারবো না। আমার টিউশনি আছে। তারপর আমার নিজের পড়তে হয়। তোমার যদি এতে প্রব্লেম না থাকে তাহলে কয়েকদিন পড়ে দেখা যেতে পারে ।

— বাব্বাহ …. খুব পার্ট নিচ্ছ?

— পার্ট বলছ কেন.? রিয়েলিটিটা বললাম। ক্লিয়ার করে নিলাম। আমি প্র্যাক্টিক্যাল। নীডি ফ্যামিলির ছেলে। প্র্যক্টিক্যাল না হলে এই শহর গিলে খেয়ে নিবে।

— তুমি বেশি সিরিয়াস, এবং ভাবছো বেশি।

— ঠিক আছে। তুমি ভেবে দেখো। আমিও ভাবি।

— ময়ী একটা পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করবো। ইচ্ছে হলে উত্তর দিও। রায়হান তো শুধু তোমার রিডিং পার্টনারই না। অ্যাফেয়ারও আছে। কি এমন হলো?

ময়ী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। একটু উদ্ভ্রান্ত। চোখ ঘোলা। আংগুলের ডগায় দ্বিধা কাজ করছে মনে হল। অস্থিরতার তরঙ্গ প্রাণপন শান্ত থাকার অভিনয়কে ছাপিয়ে উঠছে বারবার। একসময় আস্তে করে বলল, ‘রায়হান আমার শুধুই রিডিং পার্টনার ছিল।’…

প্রেম নয়, খুব ভাল বন্ধু নয়, তবুও নীলুর অনেক ভালো লাগার কথা, ভালবাসার কথা দুপুরের রোদ আর সন্ধ্যার নরম অন্ধকারে হারিয়ে যেত। ময়ীর মনের কথা তখনো জানেনি। নীজের চারপাশ একটা মাতাল করা সুগন্ধি দিয়ে রেখা টেনে দূরত্বের জানান দিয়ে রেখেছিল। মনে হচ্ছিল সীমানা টানা। সেই সীমানা অতিক্রম নিষেধ। সে সুগন্ধির নাম নীলু জানে না

বলেই অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিল ময়ী। নীলুর অস্বস্তি হচ্ছে কথাটা জিজ্ঞেস করে ।

ময়ী ইজি হওয়ার জন্য বলল, ‘চল ফুচকা খাই।’

— হোস্টেলে গিয়ে ভাত খাব।

— একদিন ভাত না খেলে কিছু হয় না। তুমি এইখানে কখনো ফুচকা খাও নাই?

—নাহ।

— তুমি কি? আশেপাশের মানুষ, গাছাপালা, কিছু দেখো না?

— ব্যাপারটা সেরকম না। ক্লাস। ক্লাসের পর রুমে ফিরে ঘুম। তারপর টিউশনি। একটা একঘেয়ে রুটিনের মত হয়ে গিয়েছিলো। আর কেউ তো এসে সেই রুটিন বদলে দেয়নি। বা বদলে দিতে চায়নি।

— বাব্বা কথা তো মন্দ বলো না।

— রুটিন বদলাবে কে? কিভাবে? এরকম গম্ভীর ভাব ধরে থাকলে কেউ এগিয়ে আসে?

ফুচকা খাওয়ার সাত দিনের মাথায় লাইব্রেরিতে নীলু আর ময়ীর বসার জায়গা হয়েছিল। ময়ী আগে থেকেই  বসত। শুধু রায়হানের জায়গাটাতে নীলু বসা শুরু করলো। নীলুর খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। তীব্র অপরাধবোধ কাজ করছিল। যদিও ময়ী বলেছে ওদের মধ্যে কিছু নেই, শুধুই রিডিং পার্টনার ছিল ওরা। কিন্তু সবাই একরকম জানে ওদের অ্যাফেয়ার আছে। ওদের পাশাপাশি বাড়ি। ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে। ফ্যামিলি থেকে বিয়েও ঠিক। অবশ্য  রায়হানকে দেখলে মনে হয় না ওর চেনা একান্ত আপন পৃথিবীর কোন বড় পরিবর্তন হয়েছে। তার মূল্যবান কিছু হারিয়েছে। বরং মনে হয় সাদাকালো ভুবন হঠাৎ রঙিন আলোয় আলোকিত হয়েছে।

নীলু আর ময়ী যখন পড়া শুরু করেছিল তখন ফোর্থ ইয়ার এর শেষের দিক। সেকেন্ড প্রফের মাস তিনেক বাকি। দুজনের পড়া আগানোই ছিল। শুধু দুপুরের দিকে দুই-তিন ঘন্টা পড়া। নীলুর রুটিনের পরিবর্তন হয়েছিল। সে দুপুরে ঘুমাত। এখন ঘুমানো যাচ্ছে না। ক্লাস শেষ করে গোসল করে সুবোধ বালকের মত লাইব্ররি। তারপর সন্ধ্যায় টিউশনি। ফিরে আবার পড়া। ক্লান্ত লাগে। কিন্তু পড়াটা ভালোই হচ্ছে। আরো একটা ইম্প্রুভমেন্ট হচ্ছে। আগে ভাইবাতে বলতে প্রব্লেম হত। এখন বলার প্র‍্যাক্টিস হচ্ছে। এইবার ভাইবা দিলে বোঝা যাবে। ভালই হবে হয়তো।

আস্তে আস্তে নীলুর দুপুরের রোদে তেতে থাকা লাইব্রেরিটা ভালো লাগতে শুরু করলো। প্রথম দিকের আড়ষ্টতা কেটে গিয়ে একটা সহজ সম্পর্ক হলো ময়ীর সাথে। সেই সম্পর্ক প্রেমের নয়। নিরেট বন্ধুত্বেরও নয়। দুজনে একসাথে পড়ার সম্পর্ক। প্রফেশনাল সম্পর্ক। কিন্তু শুধুই পড়ার এই দুই-তিন ঘন্টা ময়ীর চারপাশ মিষ্টি গন্ধে ছেয়ে থাকে। খুব দ্রুত কেটে যায় এই সময়টা। এক এক দিন মনে হয়— সন্ধ্যা আজ না নামুক। অথবা আজ টিউশনিতে না যাই। এক একদিন মনে হয় ময়ী বলুক— আজ যেও না, থাকো রাত অব্দি। লাইব্রেরি দশটায় বন্ধ হয়। আজ না হয় একটু বেশিই পড়ি। ময়ী কোনদিন বলেনি। নীলুও বলেনি সাহস করে।

প্রেম নয়, খুব ভাল বন্ধু নয়, তবুও নীলুর অনেক ভালো লাগার কথা, ভালবাসার কথা দুপুরের রোদ আর সন্ধ্যার নরম অন্ধকারে হারিয়ে যেত। ময়ীর মনের কথা তখনো জানেনি। নীজের চারপাশ একটা মাতাল করা সুগন্ধি দিয়ে রেখা টেনে দূরত্বের জানান দিয়ে রেখেছিল। মনে হচ্ছিল সীমানা টানা। সেই সীমানা অতিক্রম নিষেধ। সে সুগন্ধির নাম নীলু জানে না। তার ভিতরে ঢোকার অধিকার বা সাহস কোনোটাই নেই। ময়ীর চশমার আড়ালে চোখ প্রেমের কথা বলে না। নির্লিপ্ত। দারুণ নির্লিপ্ত সেই চোখ। সেই চোখে প্রশ্রয় নেই। বন্ধুর মতো কোমলতা নেই। কিন্তু তার তাকানো কঠিনও নয়।

এক একদিন খোলা চুলে আসে। যেদিন চুল বেধে আসে, সেদিন গাল চিবুক আর ঠোঁটের কোণায় জানালা দিয়ে শেষ বিকেলের রোদ এসে পড়ে। নীলুর মনে হয় অপুর্ব ঐশ্বর্য, তীব্র ভালোলাগার অপ্রাপ্তি মনের মধ্যে কাটার মত বিধে। মনে হয় এই ঐশ্বর্য তার নয়। কোনদিন দেখেনি চেয়ে চারিদিক। আজ যখন দেখছে তখন বুঝে গিয়েছে এই পথে হেটে এসে বড় ভুল করেছে। এই ভুল শুধরাবার নয়। জীবন দিয়ে শুধতে হবে এর দায়। জীবন বড় রকম পরীক্ষায় ফেলবে তাকে।

— কি ব্যাপার নীলু ইদানীং তুমি একটু অমনোযোগী হচ্ছ। আর চেহাড়ায় কেমন একটা নরম ভাব এসেছে। আগের সেই অহংকারী কঠিন চেহারা আড়াল হয়েছে। কি প্রেমে পরেছ নাকি কারো?

— না, এম্নি। তোমার মনে হচ্ছে হয়ত। একসাথে পড়ছি অনেকদিন তাই। কেন প্রেমে পরলে তুমি আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে?

ময়ী আর কথা বাড়ায়নি। নীলু আর ময়ীর সময় গড়িয়ে যাচ্ছিলো, বইয়ের পাতায়। দুপুর বিকাল আর সন্ধায়। পরীক্ষায়। রিটেন ভাইবা আর প্র‍্যাক্টিক্যালে সেকেন্ড প্রফ হয়ে গেল।

 

পড়ুন— নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ২)

আরো পড়তে পারেন

নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (শেষ পর্ব)

পড়ুন— নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ৩) ৫. — ময়ী, দোষ আমারও ছিল। আমি একটু সাহসী হতে পারতাম। কি হতো? কত দিন আর আটকে রাখতো? আমিও তো সাহস করে তোমাকে বলতে পারতাম চলো পালিয়ে যাই। ময়ী হো হো করে হেসে উঠলো। ‘তা পারতে। কিন্তু তা হলে এতো নামি সার্জন হতে পারতে?’ — না হতাম। কি….

নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ৩)

পড়ুন— নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ২) ৪. আজ বিশ বছর পর দেখা হলো। অনেক অভিমান, অনেক কথা জমে জমে পাহাড় হয়েছে। নিভৃতচারী নীলুর সব কথা অনেক অপেক্ষার পর ক্লান্ত। কথা বলতে পারবে কিনা জানে না। যা জানার ইচ্ছা ছিল তা এখন আর জানতে ইচ্ছা করছে না। একবার মনে হচ্ছে দেখা না হলেই ভাল হতো।….

নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ২)

পড়ুন— নীলুর প্রেমের দিন রাত্রি (পর্ব: ১) ৩. — নীলু পরীক্ষা তো শেষ, বাড়ি যাবা নাকি? — যাব। কিছুদিন সৃজাকে পড়াতে হবে। পরীক্ষার জন্য অনেক দিন পড়ানো হয়নি। একটানা কিছুদিন পড়াব। তুমি কোথাও যাবা ঘুরতে? — ঠিক নেই। দেখি, যেতেও পারি। নীলুর মনে হলো এই প্রথম ময়ীর চশমার পিছনের চোখে মায়া। নিলুর জন্য মায়া। কিছু….

error: Content is protected !!