Author Picture

আজাদুর রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

আজাদুর রহমান

সবুজ স্তন

প্রচুর নেশা হলে দেখবেন—
গাছগুলো বৃষ্টি,
পাতার বদলে বব চুল,
কী ফর্সা! তার বাহু,
উরু ব্যাঞ্জনা,
জলভারে নুয়ে আছে সবুজ স্তন।
নেশা এমনই এক সদগুন যে,
মাঝরাতে উড়ে উঠবে রাস্তাগুলো
আকাশে মুখ দিয়ে আপনি বলছেন—
আমাদের একটা পৃথিবী ছিল,
ঠিক চাঁদের মত গোল।
চুর পরিমাণ নেশা হলে,
আপনার পা থেকে
অহংকারী পাথর খসে যাবে;
শত্রুর দরজায় কড়া নেড়ে
আপনি বলবেন-চা’য়ের কথা।
প্রেমের বদলে ভালবাসা চাইবেন,
নারীকে বলবেন, বন্ধু।

 

মুখস্ত বিদ্যা

তুমি যাকে টেনে বেড়াচ্ছ
সেটা তুমি না,
তোমাকে না জানিয়েই
শরীর সরে গেছে,
পা চলে গেছে
অন্য কারও পায়ে,
মনের মধ্যে
তুমি মন খুঁজে পাচ্ছ না।
পথের পাশেই বন্ধু ছিল
নদীর পাড়ে ছিল চিলে মোকাম
আরও দূরে হারাবার হাতছানি,
সে সব ফেলে
ভয়ে ভয়ে মুখ বুজে
বুনে গেছ শুধু
সম্পর্কের জাল,
মুখস্ত বিদ্যার ফ্যাড়ে পড়ে
এখন তোমার আর কোন বন্ধু নেই
তুমি খালি হচ্ছো
সম্পুর্ণ একা হচ্ছো
একমাত্র একা

 

বর্জখ

সাধু হতে চাইলে তোমাকে
বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দুপুরের খড়তাপে না চাইলেও
সাধনা ভেংগে ভেংগে পড়বে।
যত তাপ কমবে তত সাধনা গাঢ় হবে
সব ইচ্ছে মরে গেলে
ধীর পায়ে গুরু এসে
তোমার ভিতরে একা
আসন পাতবে।
অন্যরা যা বলে বিশ্বাস করো না।
নিশানা করে এক মনে অপেক্ষা করো।

 

সহজাত

মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে
যে কোন দিন
যে কোন সন্ধ্যায়
তুমি কল্পনাও করতে পারবে না
এমন ঘোরতর বর্ষার দূপুরে
মানুষ তোমাকে অবহেলা করবে।
পথের পাশে ওত পেতে থাকা
শিকারির মত সন্তর্পনে উঠে আসা মানুষ
পায়ে পা ঘষে তোমাকে অবহেলা করবে।
কোথাও না কোথাও কোন এক বয়সে
কোনও না কোনও ভাবে মানুষ
তোমাকে অবহেলা করবে।

আরো পড়তে পারেন

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ৩)

শত্রু এক মাস আগে আমি সেখানে ছিলাম। এক বছর আগেও আমি সেখানে ছিলাম। সবসময় আমি সেখানে ছিলাম যেন আমি অন্য কোথাও ছিলাম না। এখন যা ঘটছে তা ১৯৮২ সালেও আমাদের সাথে ঘটেছিল। যে নরকের মুখোমুখি হয়েছিলাম তার বিরুদ্ধে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলাম আর যুদ্ধ করেছিলাম। হতাহতরা বা শহীদরা একজন আরেকজনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তাদের….

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

error: Content is protected !!