Author Picture

লুব্ধক মাহবুবের তিনটি কবিতা

লুব্ধক মাহবুব

নি:সজ্ঞ ভালবাসা

এখানে-সেখানে,
মেঘের বিশাল দ্বীপের
নীচে আকাশ অদৃশ্য হয়ে যায়,
তার কোল থেকে দীর্ঘ।
এবং দ্রুত উল্কা
কম্পন হবে জানি।
দূরের পাহাড়ে রহস্যময়
আগুন জ্বলছে।
ডাইনোসরের লাল চোখের মতো
যে ঘুমিয়ে পড়ে ও পলক ফেলে।
অন্ধকার ভেদ করে
পাহাড়ের দিকে দীর্ঘ
গর্জন শোনা যাচ্ছে।
সে অন্ধকার, নিষ্ঠুর সময়ের
স্মৃতিচিহ্ন মনে করে,
রাতের বেলা যখন
পাহাড়ের চূড়া থেকে
পাহাড়ের চূড়ায় ঘণ্টা
বেজে ওঠে।
আমার বুকের প্রেমের তরজ্ঞ
তখন শান্ত হতে থাকে।

কিন্তু এখন জীবন মসৃণ;
অযত্নে ঘুমায় দেশ!
প্রতিনিয়ত, একটি সারমেয়
একটি ছায়ার দিকে ঘেউ ঘেউ করে।
এবং একটি পুকুরে হাজার হাজার
ব্যাং দীর্ঘ কোরাস গানে,
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে স্বর্গীয় আলোর দিকে!

স্বর্গে সুখকর অলৌকিক ঘটনার
অভাব ছিল না।
মিষ্টি লিলির মসৃণতা,
শীতল বাতাস,
সাদা শাপলা চিরকালের
প্রস্ফুটিত হয়
তারা তাদের স্তন থেকে
অবিরাম সুবাস নিঃসৃত করেছে।
আলো নরম এবং
আমন্ত্রণকারী ফিসফিস ছিল.
না রাত দিনের পরে, না দিন রাতের পরে।
পাখিরা গাছে গাছ
গান গায়, পাখিরা
বাতাসে উড়ে গেলে,
স্বর্গে, পাতায় এবং
তরঙ্গে লেখে
বেদনার ছায়া এখানে
প্রবেশ করে না
সবুজ সুন্দর তীরে,
স্বচ্ছ নদীর ধারে
মৃদু, প্রেমময়,সুখী আত্মারা জাগে।

মহালোক স্বপ্নে ভেসে
এসে কথা কয়।
না, জীবনকে আমি
একটি ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত দিয়েছি।
তা ফুরিয়ে এলে,
অন্য সবকিছুর ভিতর
আমি সুখী ও চিরন্তন।

পৃথিবীর গন্ধ মনে
পড়বে না আর?
না, আমি স্বর্গের
শূন্যতা পছন্দ করি।
কীভাবে?
এসে তারপর,
অনন্তকাল ব্যথায় কাঁদব! –
বলে, শিশুটি কেঁদে ওঠে,
স্বস্তিহীন- আর তার উষ্ণ অশ্রু,
অশ্রুর গল্পে পরিণত হয়!

তারপর থেকে স্বর্গে
ফুলের অভাব নেই আর
তারপর থেকে
পৃথিবীতে নদীর অভাব
নেই আর…
দ্যাখো অরণ্যের ভিতর
চকচক করছে ম্যাপেল গাছগুলি!
এ এক তিক্ত, ভয়াবহ হিমঝড়!
নক্ষত্রগুলোকে হিমায়িত
মনে হয়, আকাশকে মনে হয় নিথর…

দূরে ঝকঝকে সমভূমিতে
স্ফটিক তুষার
দ্যাখো অনন্ত পায়ের তলায়
কাঁটার শিকল ছটফট করে…
ঝকঝকে বাতাসে সাদা…
ধোঁয়া উড়ছে।
মহিমান্বিত মন্দিরের লম্বা
সারির মতো ধোঁয়া,
তাদের মাথার উপর
পরিষ্কার আকাশের খিলান
এখানে চাঁদ তার রহস্যময়
আলোয় বাতিঘর আলোকিত করে।
এই দৃশ্যে ভেসে ওঠে
চমৎকার ছবি…
হাজার হাজার রূপোলি তারা
সীমাহীন মন্দিরে মশাল জ্বলে
প্রতিবেশীর মতো।

পাহাড় তার বেদী, অরণ্য-শব্দ অঙ্গ
সবকিছু স্থির, প্রাণহীন, কণ্ঠহীন;
বায়ুমণ্ডলে পেরিয়ে যাচ্ছে
কোনও দৈবযান,
নিম্নে তুষার- কোনো পদক্ষেপ নেই;
কিন্তু আমি কি দেখতে পাচ্ছি
চাঁদের মলিন জ্যোৎস্নায়
দ্রুতগামী ছায়াদের
আজ ছাড়াছাড়ি হয়েছে
প্রেমিকার সাথে,
আমি
নিঃসঙ্গ, বন্ধু- বান্ধবহীন,
আমি
সেই ব্যক্তি যে রাতের অন্ধকারে…
ঘুমাতো না, আমি
সংক্ষেপে, জগতখ্যাত দুঃখী,
আমি।
যদিও আমি মধ্যাহ্নে দাঁড়ানো,
তোমার বাহুবন্ধনে।
শক্ত করে রেখো রাতে আমাকে
যাতে ভোর ঊষায়
তোমার পাশে যুবক হয়ে
যেন পাই নিজেকে।
তোমার প্রেমের
মুখাগ্নী করবো বলেই।

সকলের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে
সে যেভাবেই হোক
হয় আগন্তুক নয়
বন্ধু দ্বারা
আগন্তুকে ভাঙলে
হৃদয় আক্ষেপ থাকে না মনে,
তাই বলে কি হৃদয় ভাঙবে
কোন এক আপনে?

যদিও হৃদয় আমার
বিচ্ছেদ বেদনায় ভর
বেদনামিশ্রিত সুখ আমাকে
আরো অসুখী করে তোলে।
প্রতিরাতে তোমার কথা
ভাবি ও বলি, হে কমরুনাময়
এখানে বিচ্ছেদ এবং ওখানে মিলন।

প্রতি রাতে, তোমার দুঃখে,
নতুন কষ্ট আমি দেখি।
আমার দৃষ্টিতে, ঘুমের বদলে,
অশ্রুজল আমি দেখি।
যখন, তোমার রাত হারানো
ঘুমের মতো,
যখন আমি ঘুমাতে যাই।
আমার একটি স্বপ্ন আছে,
তোমার চুলের চেয়েও অবিন্যস্ত।

দিব্যি কেটেছিলাম,
আর কখনো প্রেমে পড়বো না।
কিন্তু আমি কি করব?
আমি আবারো মায়ায়
জড়িয়ে গেছি
ঊষায় আমার দীর্ঘশ্বাস
ভোরের হাওয়া থামিয়ে দিবে।
যখন এক রাতে তোমার
গলিতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ব।
চির নিদ্রার সেই দীর্ঘশ্বাস!

 

মেঘের নেমে যাওয়া

দেখেছো?
সারারাত কালো নদীটায়
তার স্রোতে ভেসে যাওয়া?
দেখেছো ভোরবেলা?
রুপালি বাতাসে তার জেগে ওঠা?

বাহুতে যতটুকু ধরে
তা ভর্তি সাদা ফুল,
তার পাখার বাঁধনে ঝুঁকে
পড়তেই মহা তুলকালাম
রেশম আর লিনেনের মাঝে;
পাহাড়ের খাঁদ, তীর ঘিরে
কুরিঞ্চি ফুল,
কালো ঠোঁট দিয়ে
বাতাস কামড়ে ধরে?

তুমি কি শুনেছিলে?
বাঁশি আর শিসের মতো শব্দ?
কালো অন্ধকারের তীক্ষ্ণ গান—
গাছের গায়ে প্রবল
বৃষ্টির মতো সে সুর—
অন্ধকার কিনারায় ঝরনার
মতো তার ধারালো নেমে যাওয়া?
আর তুমি কি দেখেছো?
অবশেষে? মেঘের অল্প নিচে—
অন্ধকার কিনারায় ঝরনার
মতো তার ধারালো
নেমে যাওয়া?
আর তুমি কি দেখেছো? অবশেষে?
মেঘের
তীক্ষ্ণ গান—
গাছের গায়ে প্রবল বৃষ্টির
মতো সে সুর—
অন্ধকার কিনারায় ঝরনার
মতো তার ধারালো
নেমে যাওয়া?

 

ছেড়া স্মৃতি

আবার কান্না আমাকে
গ্রাস করেছে
আমি সেইসব হারানোদের
দেখি, শুনি
হাওয়া এসে প্রাচীন
গাছগুলোকে আদর
করে যায়।

কেউ আমাকে কিছুই
বলে না
সেই কুয়াশার কথা,
নৈঃশব্দ্যের কথা
সেই গভীর আঁধার,
দোর খুলে দূরে চলে যায়,
আমি সবসময় শুনি
সেই ঘুমপাড়ানি গান।

দেখো, কেমন পড়ে আছে
আমাদের বাড়ি, পুকুর
আর আকাশে হেলান
দিয়ে সেই হিজল গাছ …
জল ছোঁয়া মারমেডের মত।

কবে আমি সেইসব
দিনগুলোকে ফিরে পাব,
সেইসব হিজল, আর আগাছা গাছ,
বাড়ি, প্রজাপতি, মরালেরা..
সরে গেছে দূরে … কোথাও …
আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে যেন
দূর বহুদুরে।
তাই স্মৃতিকে আজকাল
এত ভয় পাই।

আরো পড়তে পারেন

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

সবুজ স্তন প্রচুর নেশা হলে দেখবেন— গাছগুলো বৃষ্টি, পাতার বদলে বব চুল, কী ফর্সা!তার বাহু, উরু ব্যাঞ্জনা, জলভারে নুয়ে আছে সবুজ স্তন। নেশা এমনই এক সদগুন যে, মাঝরাতে উড়ে উঠবে রাস্তাগুলো আকাশে মুখ দিয়ে আপনি বলছেন— আমাদের একটা পৃথিবী ছিল, ঠিক চাঁদের মত গোল। চুর পরিমান নেশা হলে, আপনার পা থেকে অহংকারী পাথর খসে যাবে;….

চৌধুরী রওশন ইসলাম-এর একগুচ্ছ কবিতা

দোটানা যার কথা বলা যায় তার কিছু গল্প, বুকের ভেতরে জমা আছে খুব অল্প। বলতে পারি না যার প্রমত্ত উচ্ছ্বাস, মনের ভেতরে সেই করে হাঁস-ফাঁস। নির্দয় নিষ্ঠুর এক নিয়তির দায়, কোন পাপে আজো কাঁধে বহিয়া বেড়াই ? যার চোখ ছুরি মারে বুকের ভেতর, নিয়তির কষাঘাতে সে আমার পর। নিয়মের বেড়াজালে যে হলো আপন, এতদিন হয়ে….

error: Content is protected !!