Author Picture

চৌধুরী রওশন ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

চৌধুরী রওশন ইসলাম

আমি তো আছি
.
এমন কঠোর রোদ দেখে তোর ভয় কি বালা ?
আমি তো আছি ছায়া বিলিয়ে
স্নিগ্ধ সবুজ বৃক্ষ হয়ে।

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলে পালাস কেন ?
আমি তো আছি ছাতার মতন
বুকে করে আগলে রাখার।

কষ্ট পেলে লুকাস কেন ?
আমি তো আছি সুখের মতন;
হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারিস।

গোপন ব্যথায় কাঁদিস কেন ?
আমি তো আছি সখার মতন;
ইচ্ছে হলেই ভুলতে পারিস।


শিকড়ের ব্যথা
.
এ-গাঁয়ের সখা দূর-গাঁয়ে গেছে চলে;
মনে তার এ-গাঁয়ের স্মৃতিটুকু দোলে।

নব-গাঁয়ে গিয়ে হারিয়েছে নিজ নাম,
হারিয়েছে ছোট জীবনের বড় দাম,
হারিয়েছে চেনা নর-নারী, পথ-ঘাট,
চেনা খাল, চেনা নদী-পাশে চেনা মাঠ,
হারিয়েছে কিশোরী ইলার চেনা-মুখ,
হারিয়েছে চোরা-চাহনির তীব্র সুখ।

একই চাঁদ ওঠে একই সে-আকাশে;
তবু ফেলে-আসা গাঁও মনে তার ভাসে।
বান-ডাকা সে-বৃষ্টির অঝোর ধারায়
স্মৃতির গেঁয়ো-মাঠে আজও সে হারায়।
আযান আর কাঁসর-ঘণ্টা-বাজা সাঁঝে
রোজ তার বুকে শিকড়ের ব্যথা বাজে।


মহাজন
.
রাত জেগে কার সাথে এত কথা বলো;
এক চাবি দিয়ে তুমি কত তালা খোলো ?

তারগুলো সব ছিঁড়ে গেছে, সুর ওঠে না আর;
আঙুলগুলো বৃথাই কাঁদে, কান্নাটুকুই সার।

তোরে ভুলেই গেছি, কিচ্ছু নেই আর মনে;
ভাল্লাগে না অশ্রুর অপচয় সঙ্গোপনে।

মহাজন, অনেক ভারী ব্যথার পাথর
লুকিয়ে আছে অন্ধকারে বুকের ভিতর।
কেউ দেখে না, না গো, পাথরখানির রঙ;
ভেবেছিলে ওটা বুঝি চিরকালের ঢঙ।


প্রেম মানে
.
— প্রেম মানে যুদ্ধে নামা;
এক মানুষের লক্ষ হাতের হাটুরে কিল হজম করা।
— প্রেম মানে শান্তি-চুক্তি;
দুই মানুষের একটি স্বপ্নে বিভোর হওয়া।

— প্রেম মানেই চোরাবালির চোরা-খেলা খেলতে খেলতে
নিজের ভারেই ধীরে ধীরে ডুবতে থাকা।
— প্রেম মানে ডুবন্ত এক অসহায়ের সহায় পাওয়া;
ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠার মন্ত্র শেখা।

— প্রেম মানেই হিরোশিমা-নাগাসাকি;
সাজানো শহর এক নিমেষে ধ্বংস হওয়া।
— প্রেম মানে মরু্দ্যান।
বুক-ফাটা জলতেষ্টায় নয়ন-মোহন ঝর্ণা-ধারা।
— প্রেম মানে আমার প্রতি একটি মানুষ কপট হওয়া।
— প্রেম মানে তোমার প্রতি একটি মানুষ সুহৃদ হওয়া।

— প্রেম মানে নিজের গায়ে নিজের হাতে আগুন জ্বালা;
হৃদয়-পোড়া গন্ধ শুঁকে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া।
— প্রেম মানে অগ্নিকুণ্ডে পুড়তে পুড়তে ফিনিক্স হয়ে উড়তে শেখা;
শুষ্ক এবং পোড়া-হৃদয় অমৃত ঢেলে অমর করা।


বৃষ্টি
.
বৃষ্টি রে, আল্লার দোহাই লাগে— আর ঝরিস না;
বুকটা কেমন ঝাঝরা হয়ে যায়।
স্মৃতির কৈ মাছগুলো কানে হেঁটে হেঁটে ডাঙায় উঠে আসে।
বৃষ্টি রে, আল্লার দোহাই লাগে— আর ঝরিস না।


জয়-পরাজয়
.
তুমি জিতে গেলে আমি ঠকে যাই— আমার পরাজয় এত তুচ্ছ নয়।
চিরকাল তোমাকে জিতিয়ে ঠকানোতেই আমার জয়।
তুমি জিতবে— আর তাতেই পরাজয়ের গ্লানি-সুধা আকণ্ঠ পান করে
বুঝে নেবে, রাতের আকাশে একটি তারা অকালে গেছে ঝরে।

কত কিছু বোঝ, মোহিনী— শুধু বোঝ না,
অহঙ্কারের আকাশে সুখ পাখি ওড়ে না।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!