Monday, October 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    ত্বহা হুসাইনের দিনগুলি

    সাত

    আমাদের শিক্ষক তখন তার সামনে বসে তাকে বলেন, ‘আপনার ধারণা আপনার ছেলে কোরান ভুলে গেছে। আর এজন্য আপনি আমাকে যারপরনাই তিরস্কার করেছেন। কিন্তু এই এখন আপনার কাছে শপথ করে বলছি যে, সে কোরান ভোলেনি বরং কিছুটা ভয় পেয়েছিল শুধু। আর এ কারণে আপনি যেহেতু আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও হেয় করেছেন, তাই আজ নিজে আপনার কাছে এসেছি যে, আমার সামনে আপনি তার পরীক্ষা নেবেন। তাতে যদি এমন প্রমানিত হয় যে সে কোরান মুখস্থ করেনি। তাহলে এই শপথ করে বলছি, আমি আমার দাড়ি কামিয়ে ফেলব এবং শহরের সমস্ত ফুকাহাদের মাঝে হাসির পাত্রে পরিণত হব।’

    এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এরপর অতি অল্প সময়েই সে ভালোভাবে পুরো কোরান মুখস্থ করেছিল। তার মনে পড়ে একদিন সে আমাদের শিক্ষকের সঙ্গে মকতব থেকে ফিরেছিল। সেদিন মূলত শিক্ষকই তার সঙ্গে বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। অতএব যখন তারা বাড়িতে পৌঁছে আমাদের শিক্ষক তখন নীচু হয়ে দরজায় মৃদু ধাক্কা দেন। দরজা খোলা হলে তিনি তার চিরাচরিত অভ্যেস অনুযায়ী ‘ইয়া সাত্তার’ বলে ভেতরে প্রবেশ করেন। শায়খ মাত্রই আসরের নামাজ শেষ করে যথারীতি তার অতিথি রুমে বসে ছিলেন। আমাদের শিক্ষক তখন সামনে বসে তাকে বলেন, ‘আপনার ধারণা আপনার ছেলে কোরান ভুলে গেছে। আর এজন্য আপনি আমাকে যারপরনাই তিরস্কার করেছেন। কিন্তু এই এখন আপনার কাছে শপথ করে বলছি, সে কোরান ভোলেনি বরং কিছুটা ভয় পেয়েছিল শুধু। আর এ কারণে আপনি যেহেতু আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও হেয় করেছেন, তাই আজ নিজে আপনার কাছে এসেছি যে, আমার সামনে আপনি তার পরীক্ষা নেবেন। তাতে যদি এমন প্রমানিত হয় যে সে কোরান মুখস্থ করেনি। তাহলে এই শপথ করে বলছি, আমি আমার দাড়ি কামিয়ে ফেলব এবং শহরের সমস্ত ফুকাহাদের মাঝে হাসির পাত্রে পরিণত হব।’
    জবাবে শায়খ তখন শান্তস্বরে বলেন, ‘কিছু মনে করবেন না। এটা বলা কী উত্তম নয় যে, সত্যিই সে কোরান ভুলে গিয়েছিল। তারপর দ্বিতীয়বার আপনি আবার তাকে শিখিয়েছেন।’
    এই শুনে শিক্ষক তিন তিনবার শপথ করে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! না সে ভুলেছিল আর না আমি তাকে আবার পড়িয়েছি। কই আমি তো তার কাছ থেকে পুরো কোরানই শুনলাম। আমার কাছে তো সে পানির মত গড়গড় করে পড়ে গেছে। কোথাও থামেনি, কোথাও বাঁধেওনি।’
    আমাদের বন্ধুটি তখন নিশ্চুপ তাদের এই বচসা শুনছিল। যদিও সে ভালো করেই জানে যে, বাবা সত্যি বলছেন আর শিক্ষক মিথ্যা বলছেন। কিন্তু এ ব্যপারে সে কিছুই বলেনি। সে বরং তার পরীক্ষার অপেক্ষা করছিল।
    এদিনের পরীক্ষাটি সত্যিই অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু আমাদের বন্ধুটি আজ বেশ চপল ও ধীমান। যেকোনো প্রশ্নের উত্তরই সে বেশ নিশ্চিন্তে, দ্বিধাহীন দিচ্ছিল এবং খুব দ্রুত পড়ছিল। তখন বাবা তাকে বলেন, ‘অত দ্রুত পড়ো না। অমন হড়বড় করে কোরান পড়া পাপ।’
    এরপর অবশেষে যখন সে তার পড়া সমাপ্ত করে, তখন বাবা তাকে বলেন, ‘সাবাশ! যাও মা-কে গিয়ে বলো, সত্যিই এবার তুমি ভালোভাবে কোরান মুখস্থ করেছ।’
    তখন সে তার মায়ের কাছে যায় ঠিক; কিন্তু কিছুই বলে না। আর তিনিও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করেন না।
    সুতরাং সেদিন আমাদের শিক্ষক সাথে করে একটি উলের জুব্বা নিয়ে যান। শায়খ যেটা তাকে উপহার দিয়েছিলেন।

    * ফুকাহা : ফুকাহা শব্দটি ফকীহ শব্দের বহুবচন। ফকীহ শব্দটি আরবী এবং এর অর্থ হলো : ইসলামি ধর্মতত্ব বা আইনশাস্ত্রে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। কিন্ত মিশরে সাধারণত এই শব্দটি তার জন্য ব্যবহৃত হয়; যিনি কোরান পাঠে পারদর্শী। ফলে শব্দটি এখানে আমাদের শিক্ষকের জন্য নিশ্চয় একজন ধর্মীয় পন্ডিত বা আইনশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি অর্থে নয়।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.