Author Picture

ত্বহা হুসাইনের দিনগুলি

কাউসার মাহমুদ

সাত

আমাদের শিক্ষক তখন তার সামনে বসে তাকে বলেন, ‘আপনার ধারণা আপনার ছেলে কোরান ভুলে গেছে। আর এজন্য আপনি আমাকে যারপরনাই তিরস্কার করেছেন। কিন্তু এই এখন আপনার কাছে শপথ করে বলছি যে, সে কোরান ভোলেনি বরং কিছুটা ভয় পেয়েছিল শুধু। আর এ কারণে আপনি যেহেতু আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও হেয় করেছেন, তাই আজ নিজে আপনার কাছে এসেছি যে, আমার সামনে আপনি তার পরীক্ষা নেবেন। তাতে যদি এমন প্রমানিত হয় যে সে কোরান মুখস্থ করেনি। তাহলে এই শপথ করে বলছি, আমি আমার দাড়ি কামিয়ে ফেলব এবং শহরের সমস্ত ফুকাহাদের মাঝে হাসির পাত্রে পরিণত হব।’

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এরপর অতি অল্প সময়েই সে ভালোভাবে পুরো কোরান মুখস্থ করেছিল। তার মনে পড়ে একদিন সে আমাদের শিক্ষকের সঙ্গে মকতব থেকে ফিরেছিল। সেদিন মূলত শিক্ষকই তার সঙ্গে বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। অতএব যখন তারা বাড়িতে পৌঁছে আমাদের শিক্ষক তখন নীচু হয়ে দরজায় মৃদু ধাক্কা দেন। দরজা খোলা হলে তিনি তার চিরাচরিত অভ্যেস অনুযায়ী ‘ইয়া সাত্তার’ বলে ভেতরে প্রবেশ করেন। শায়খ মাত্রই আসরের নামাজ শেষ করে যথারীতি তার অতিথি রুমে বসে ছিলেন। আমাদের শিক্ষক তখন সামনে বসে তাকে বলেন, ‘আপনার ধারণা আপনার ছেলে কোরান ভুলে গেছে। আর এজন্য আপনি আমাকে যারপরনাই তিরস্কার করেছেন। কিন্তু এই এখন আপনার কাছে শপথ করে বলছি, সে কোরান ভোলেনি বরং কিছুটা ভয় পেয়েছিল শুধু। আর এ কারণে আপনি যেহেতু আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও হেয় করেছেন, তাই আজ নিজে আপনার কাছে এসেছি যে, আমার সামনে আপনি তার পরীক্ষা নেবেন। তাতে যদি এমন প্রমানিত হয় যে সে কোরান মুখস্থ করেনি। তাহলে এই শপথ করে বলছি, আমি আমার দাড়ি কামিয়ে ফেলব এবং শহরের সমস্ত ফুকাহাদের মাঝে হাসির পাত্রে পরিণত হব।’
জবাবে শায়খ তখন শান্তস্বরে বলেন, ‘কিছু মনে করবেন না। এটা বলা কী উত্তম নয় যে, সত্যিই সে কোরান ভুলে গিয়েছিল। তারপর দ্বিতীয়বার আপনি আবার তাকে শিখিয়েছেন।’
এই শুনে শিক্ষক তিন তিনবার শপথ করে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! না সে ভুলেছিল আর না আমি তাকে আবার পড়িয়েছি। কই আমি তো তার কাছ থেকে পুরো কোরানই শুনলাম। আমার কাছে তো সে পানির মত গড়গড় করে পড়ে গেছে। কোথাও থামেনি, কোথাও বাঁধেওনি।’
আমাদের বন্ধুটি তখন নিশ্চুপ তাদের এই বচসা শুনছিল। যদিও সে ভালো করেই জানে যে, বাবা সত্যি বলছেন আর শিক্ষক মিথ্যা বলছেন। কিন্তু এ ব্যপারে সে কিছুই বলেনি। সে বরং তার পরীক্ষার অপেক্ষা করছিল।
এদিনের পরীক্ষাটি সত্যিই অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু আমাদের বন্ধুটি আজ বেশ চপল ও ধীমান। যেকোনো প্রশ্নের উত্তরই সে বেশ নিশ্চিন্তে, দ্বিধাহীন দিচ্ছিল এবং খুব দ্রুত পড়ছিল। তখন বাবা তাকে বলেন, ‘অত দ্রুত পড়ো না। অমন হড়বড় করে কোরান পড়া পাপ।’
এরপর অবশেষে যখন সে তার পড়া সমাপ্ত করে, তখন বাবা তাকে বলেন, ‘সাবাশ! যাও মা-কে গিয়ে বলো, সত্যিই এবার তুমি ভালোভাবে কোরান মুখস্থ করেছ।’
তখন সে তার মায়ের কাছে যায় ঠিক; কিন্তু কিছুই বলে না। আর তিনিও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করেন না।
সুতরাং সেদিন আমাদের শিক্ষক সাথে করে একটি উলের জুব্বা নিয়ে যান। শায়খ যেটা তাকে উপহার দিয়েছিলেন।

* ফুকাহা : ফুকাহা শব্দটি ফকীহ শব্দের বহুবচন। ফকীহ শব্দটি আরবী এবং এর অর্থ হলো : ইসলামি ধর্মতত্ব বা আইনশাস্ত্রে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। কিন্ত মিশরে সাধারণত এই শব্দটি তার জন্য ব্যবহৃত হয়; যিনি কোরান পাঠে পারদর্শী। ফলে শব্দটি এখানে আমাদের শিক্ষকের জন্য নিশ্চয় একজন ধর্মীয় পন্ডিত বা আইনশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি অর্থে নয়।

আরো পড়তে পারেন

আওরঙ্গজেব ও শম্ভাজির মিথ বনাম ইতিহাস: প্রসঙ্গ ছাবা চলচ্চিত্র

বর্তমানে বিজেপির সংঘ পরিবার প্রায় তিন’শ বছর আগের ভারতের এমন এক সম্রাটের কবর মহারাষ্ট্রের খুলদাবাদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আন্দোলন করছেন- যিনি ইতিহাসে ভারতকে সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রের মানচিত্র ও সংহতি উপহার দিয়েছিলেন, যার আয়তন ছিল চল্লিশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার- যা ছিল বর্তমান ভারতের চেয়ে আট লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বড়, তাঁর অধীকৃত রাষ্ট্রটিই ভারত এখনো তারা….

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যা জানা গিয়েছে, যা জানা সম্ভব

এক মহান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের অপরিসীম আত্মত্যাগ। নানা সূত্র থেকে আমরা শুনে এসেছি ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা। অনেকেই আবার ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন প্রশ্ন ওঠার মূলে রয়েছে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে ৭১-পরবর্তী শাসকদের উদাসীনতা। তারা এত বছরেও শহীদের সংখ্যা….

জর্জ অরওয়েলের নৌকাডুবি

১৯৪৪ সালের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে হিটলার যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধে জয় পেতে। তার মরণকামড়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে নানা দেশের নানা শহর ও জনপদ। জার্মান বাহিনীর ভি-ওয়ান নামক উড়ন্ত যুদ্ধজাহাজগুলো মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ করেছে লন্ডন শহরে। বিমানবাহিনীর এমন দুর্দৈব তাণ্ডবে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজন সব আশ্রয় নিচ্ছে মাটির তলার বাঙ্কারে ও পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে। এমনই একদিন….

error: Content is protected !!