Saturday, September 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতির মুখোমুখি হওয়া এক জীবনব্যাপী সাধনা: লিনা খালাফ তুফাহা

    লিনা খালাফ তুফাহা একজন উদ্ভাবনী কবি, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ‘সামথিং অ্যাবাউট লিভিং’, অসম্ভব সব সংযোগে পূর্ণ; যা পাখি, ব্যাকরণ এবং স্থাপত্যের কাছে শরীর ও মনের এক অবিচল একাত্মতাকে তুলে ধরে। খালাফ তুফাহা তাঁর বুনো মন ও ভাষায় ডেকে আনেন মায়ুং মি কিম, জাকারিয়া মোহাম্মদ এবং মাহমুদ দারবিশের মতো প্রিয় কবিদের। বইটির শিরোনামটিও তাঁর ‘লেটার টু জুন জর্ডান ইন সেপ্টেম্বর’ কবিতা থেকে নেওয়া। বইটি একই সাথে কৌতুকপূর্ণ ও মর্মভেদী, যা ধ্বংসস্তূপকে তার বর্ণনার সাথে গুলিয়ে ফেলে না। লিট হাব’র সাথে তার কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরেছেন মেজবাহ উদদীন


    আপনার কাজের সূচনা এবং কেন্দ্রবিন্দু বহুবচনের প্রথম পুরুষে লেখা ‘অন দ্য থার্টিন ফ্রাইডে উই কনসিডার প্লুরালস’ কবিতায় আপনি লিখেছেন, ‘Let the plural be / a return of us’। এই প্রত্যাবর্তনের অধিকার ভাষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যার একটি অর্থ— বহুবচনকে হতে দাও, একতাকে হতে দাও, একটি জনগোষ্ঠীর বোধকে, ‘আমরা’কে— হতে দাও। আমরা ফিলিস্তিনি হতে পারি, হতে পারি শরণার্থীদের সন্তান। আবার বইটির প্রথম কবিতাটি কুড়িটি এক-লাইনের স্তবকে বিভক্ত; যার আটটির শুরু ‘স্নাইপাররা’ দিয়ে এবং তিনটির শুরু ‘বুলেটগুলো’ দিয়ে, কিন্তু এর সমাপ্তি ঘটে ‘আমরা’ দিয়ে লেখা দুটি বিবৃতিতে, ‘আমরা স্নাইপারদের ছাড়িয়ে ছুটে যাই। // আমরা মৃতদের বেড়ার পাশেই কবর দিই, তাদের শিকড় পৌঁছে যাক বাড়ির ওপারে।’ স্নাইপার ও তাদের বুলেট সেই মানুষদের হত্যা করেছে, যাদের শিকড়েরা বেঁচে থাকে, কিন্তু ‘আমরা’ চলতেই থাকে—যারা এখনো জীবিত, যারা ছুটে পালায়। কবিতা ও জীবনে ‘আমরা’র এই পরিবর্তনশীল ব্যবহারকে আপনি কীভাবে দেখেন— যেখানে সংখ্যায় কমে এলেও ‘আমরা’র শক্তি খর্ব হয় না?

    : যদিও বইয়ের কবিতাগুলো এই গণহত্যার বহু বছর আগে লেখা, আমি এখন কবিতাগুলোর ‘আমরা’কে বৃহত্তর পৃথিবীর সাথে এক সংযোগসূত্র হিসেবে বুঝতে শিখেছি— এমন এক পৃথিবী যেখানে ফিলিস্তিনের এবং প্রবাসের ফিলিস্তিনিরা দৃশ্যমান। এবং এটি এমন এক সামষ্টিকতার সাথে যোগসূত্র— যেখানে আছে বাবা-মা, দাদা-দাদি, পূর্বপুরুষ, জলপাই বাগান এবং পাহাড়ের ঢাল; যারা হয় টিকে থেকে ধ্বংস হয়েছে অথবা বেঁচে গেছে এবং তাদের স্মৃতি, প্রথা ও ভাষা আমার কাছে, আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

    গত সতেরো মাস ধরে আমি প্রায়ই ভাবি, এবং বলতেও শুরু করেছি, ‘আমার মনে হয় আমি যেন পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়েছি।’ এই গণহত্যা যখন চলছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পশ্চিমে— মার্কিন ইংরেজি ভাষার মধ্যে থাকার অনুভূতি কেমন, তা প্রকাশ করার জন্যই আমার এই চেষ্টা। এটি পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পুরো পৃথিবী নয়। এটি পৃথিবীর একটি অংশ মাত্র এবং এটি অন্যায়ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কীভাবে চলবে তা নির্ধারণ করে। আমার পরিচিত প্রত্যেক ফিলিস্তিনির মতো আমিও প্রতিদিনের ‘সবকিছু স্বাভাবিক’ দেখানোর সিদ্ধান্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাই, যখন একই সাথে মার্কিন অর্থায়নে এই সরাসরি সম্প্রচারিত গণহত্যা চলছে এবং আমেরিকার প্রতিটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানে এর জন্য সম্মতি তৈরি করা হচ্ছে। আমি যে ‘পৃথিবী’তে বাস করি এবং নিজের জীবন গড়তে বাধ্য হয়েছি, সেই পৃথিবীই আমার অস্তিত্বের দিকে অস্ত্র তাক করে আছে।

    আমি যে ‘পৃথিবী’তে বাস করি এবং নিজের জীবন গড়তে বাধ্য হয়েছি, সেই পৃথিবীই আমার অস্তিত্বের দিকে অস্ত্র তাক করে আছে

    ভাঙন বা খণ্ডিত রূপ আপনার কবিতার আরেকটি দিক: অক্ষর হোঁচট খায়, বাক্য ভেঙে যায়, বর্ণ ঝরে পড়ে, কান্না সবকিছু ভেদ করে, কবিতা লেখার চেষ্টায় হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়, আর গল্পগুলো ওলটপালট হয়ে যায় কিন্তু অটোকারেক্ট ‘ভালোবাসা’ তৈরি করে। যেকোনো পঙক্তি, যেকোনো কবিতা কেবল ভাঙা কাঁচের টুকরো আর বালুকণা দিয়েই তৈরি হতে পারে। লেখার এই ধরনের অস্থির বোঝাপড়া থেকে একটি কবিতায় দেখা যায়, ‘সমস্ত ভাষা’ যেন… ‘লাশে ভরা, ‘ইচ্ছা’, ‘কিংবদন্তি’, ‘ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ’। কোনো মীমাংসাকে অস্বীকার করে, কবিতা কীভাবে শব্দের সীমাবদ্ধতাকে প্রমাণ বা প্রতিকার করে?

    : শব্দের সীমাবদ্ধতাকে কবিতা প্রমাণ বা প্রতিকার করতে সফল হয় কি না— আমি জানি না; কিন্তু এই চ্যালেঞ্জটিই আমাকে টানে। আমার মনে হয়, হাতে থাকা ভাঙা টুকরো আর খণ্ডাংশগুলো দিয়ে কিছু গড়ার জন্য কবিতা এক সৎ পরিসর তৈরি করে। কবিতা আমার কাছে এমন এক অপরিহার্য মাধ্যম, যা অন্যান্য অনেক লেখার আঙ্গিক পূরণ করতে পারে না। এই আঙ্গিকটির প্রকৃতি— এর পৃষ্ঠাজুড়ে থাকা পঙক্তি এবং দীর্ঘ ও অগোছালো পঙক্তির মধ্যকার সম্ভাবনা ও টানাপোড়েন, পঙক্তি-ভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ গোপন বা জটিল ও স্তরান্বিত করার ক্ষমতা, বিভিন্ন আঙ্গিকের ধারণ করা ও ভেঙে ফেলার শক্তি, এবং এর সাথে শ্বাস-প্রশ্বাস, সমষ্টিগত প্রকাশ, আধ্যাত্মিক সাধনা ও আদিমতম সঙ্গীতের যে উত্তরাধিকার— এই সবকিছুকেই আমার কাছে অস্তিত্ব রক্ষা, ক্ষমতা এবং হারানোর মতো প্রশ্নগুলো মোকাবিলা করার জন্য উপযুক্ত স্থান ও উপকরণ বলে মনে হয়।

    আপনার ‘Erosion’ কবিতাটি ‘তোমার চেয়ে বেশি আপন এখানে কেউ নয়’ এই বাক্যটিকে ক্রমশ ধূসর করে ক্ষয় করে দেয়, যতক্ষণ না শুধু ‘No’ (না) শব্দটি অবশিষ্ট থাকে। অন্যদিকে, ‘Golden’ কবিতাটি ‘say’ শব্দটি দিয়ে শুরু হয় এবং বারবার একই শব্দ দিয়ে এগিয়ে চলে: ‘Say we don’t trend…Say we were unremarkable’। দুটি কবিতাই সাম্রাজ্যবাদী বিজ্ঞাপনের মূল সুর। আপনার কবিতাগুলো কীভাবে এই স্বৈরাচারী দৃষ্টির বিরুদ্ধে পুনরাবৃত্তি ব্যবহার করে?

    : বইটির কেন্দ্রে থাকা ‘Triptych’ কবিতাটি ‘তোমার চেয়ে বেশি আপন এখানে কেউ নয়’ পঙক্তিটিকে এক অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। আমি এই লাইনটি প্রথম দেখেছিলাম ১৯৯৮ সালে ‘কন্ডে নাস্ট’ পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনে। সেটি ছিল বহু পৃষ্ঠার এক চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপন, আমার যতদূর মনে পড়ে, সেখানে এক দম্পতির ছবি ছিল, যারা অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি উপত্যকার দিকে তাকিয়ে ছিল, যা আমার কাছে পরিচিত ঠেকেছিল। একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে এই দৃশ্য দেখে আমার কেমন লেগেছিল, ইসরায়েলি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমেরিকান ভোক্তাদের প্রতি এই আমন্ত্রণপত্রটি পড়ে আমার কী অনুভ‚তি হয়েছিল, তা নিয়ে আমি বছরের পর বছর ধরে লেখার চেষ্টা করেছি।

    আমি লেখার চেষ্টা করেছি যে, বিজ্ঞাপন নির্মাতারা কাদেরকে তাদের ভোক্তা হিসেবে কল্পনা করে এবং এটি তাদের নিজেদের সম্পর্কে কী ধারণা প্রকাশ করে। ফিলিস্তিনি এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অদৃশ্যতা নিয়েও লেখার চেষ্টা করেছি— যে সংস্কৃতিতে এমন আমন্ত্রণ জানানো হয়, তার সমস্ত অন্তর্নিহিত মিথ্যা ও সহিংসতা সত্ত্বেও, তা একেবারেই সাদামাটা ব্যাপার বলে গণ্য হয়। আমি আমার নিজের কবিতায় দেখেছি যে পুনরাবৃত্তি অনুপস্থিতিকে বিবেচনা করার জন্য একটি পরিসর তৈরি করতে পারে। যা অনুপস্থিত বা যাকে অনুপস্থিত করে দেওয়া হচ্ছে, সেদিকে এটি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। এটি একটি লিখিত পাঠ্যের মধ্যে একটি চাক্ষুষ উপস্থাপনা তৈরি করতে পারে। এটি পাঠকের দিকেই পালটা দৃষ্টিতে তাকাতে পারে।

    আমি মনে করি, সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যা কিছু প্রোথিত করে, তার মুখোমুখি হওয়া এক জীবনব্যাপী সাধনা। প্রথমত এবং সর্বাগ্রে, আমাদেরকে ভয় দিয়ে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়: অভাবের ভয়, বিচ্ছিন্নতার ভয়, সহিংসতার ভয়, হারানোর ভয়

    আপনার বই উদারনীতিবাদকে সংক্ষিপ্ত এবং কখনও কখনও হাস্যকর ভঙ্গিতে খারিজ করে দেয়, যেমন: ‘আপনার উচিত নিজ আশ্রয়ে থাকা / যখন প্রতিটি ভোটের মূল্য আছে।’ অযৌক্তিকতার এই সচেতন বোধের মধ্যে কি কোনো মুক্তি আছে?

    : আমার মনে হয়, এই স্পষ্টতা দিয়ে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমার প্রতিটি বই প্রকাশের সাথে সাথে পাঠকরা ফিলিস্তিনিদের কাছে কী চায়, সে বিষয়ে আমি ক্রমশই কম গুরুত্ব দিয়েছি। আমি এই স্বাধীনতাকে বজায় রাখতে এবং আরও গভীর করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। যে কবিতা,‘This Daily Our Daily Bread’ থেকে আপনার প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে, সেটি আমেরিকান নানা অভিব্যক্তি ও বাক্যাংশের সুতো দিয়ে বোনা, যেখানে বাস্তবতা এবং তা বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে বৈপরীত্যটি অযৌক্তিক হয়ে ওঠে। কবিতা হলো মনোযোগের সাধনা, গভীর শ্রবণের সাধনা, এবং আমি মনে করি অযৌক্তিকতাকে শুনতে পারা এবং তা কীভাবে বিকশিত হয় তা লক্ষ্য করা, এর অধীনস্থ থাকার যন্ত্রণা থেকে এক ধরনের মুক্তি দিতে পারে। এটি এর শ্বাসরোধী ফাঁস থেকে মুক্ত হওয়ার একটি উপায়ও বাতলে দিতে পারে।

    এই কবিতাগুলোতে আমি ভাষার সাথে নিজেকে যুক্ত করি পাঠককে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখিয়ে: এখান থেকে দেখুন, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে কেমন লাগে; এটা গ্রহণ করতে কেমন লাগে; যারা এই পৌরাণিক কাহিনীতে ডুবে নেই, তাদের কাছে এটা কেমন শোনায়; আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই সব অর্থহীন কথা বললে আমাকে কেমন দেখায়; এটা কীভাবে বিকৃত করে। এটা কী মুছে ফেলে, আমার শরীর থেকে তুলে নেওয়ার পর এটা কী ছাপ রেখে যায়, এর নিচে কী কবর দেওয়া হয়েছিল। আমি সমস্ত অপ্রয়োজনীয়, স্বাভাবিক করে তোলার ভঙ্গিগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করি এবং অবশিষ্ট প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হই।

    বিভিন্ন প্রকাশনা আপনার প্রকাশ্য শব্দভান্ডার থেকে ‘গণহত্যা’ শব্দটি মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে, যখন আপনাকে চাপ দিয়ে লোকদেখানো প্রদর্শনীতে বাধ্য করেছে। সেন্সরশিপের এই গুপ্তঘাতী রূপগুলো, এর পূর্বাভাস এবং পুনরাবৃত্তি, আপনার মন এবং তার বিদ্রুপগুলোকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

    : আমি মনে করি, সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যা কিছু প্রোথিত করে, তার মুখোমুখি হওয়া এক জীবনব্যাপী সাধনা। প্রথমত এবং সর্বাগ্রে, আমাদেরকে ভয় দিয়ে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়: অভাবের ভয়, বিচ্ছিন্নতার ভয়, সহিংসতার ভয়, হারানোর ভয়। এটি স্বীকার না করে এগিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু ভয়ের প্রতিষেধক হলো সম্মিলিত শক্তি—সেই ‘আমরা’। আমাদেরকে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে পড়ে থাকা মৃতদেহগুলোকে চুপচাপ এড়িয়ে যেতে বলা হয়। আমরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে আমরা তা করব না।

    সূত্র: লিট হাব

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.