Sunday, October 26, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    বুলেটবিদ্ধ কবিতারা

    গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি
    .
    আমি এক গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি।
    সমুহ ক্ষতির ভয়ে হাতপা নাড়াচ্ছি না-
    তুমি আমার খাদ্যে ঢেলে দিচ্ছ বিষ,
    অথচ বলে বেড়াচ্ছ আমাকে খাওয়াচ্ছ মাগনা।
    তুমি সব শিক্ষাদীক্ষা কেড়ে নিয়ে আমার
    সন্তানদের ডাকাত-দস্যু, চোর-লুটেরা-
    ছিনতাইকারী-ধর্ষক বানাচ্ছ, বলছ আমাকে শিক্ষা দিচ্ছ।
    তুমি তোমার কমিশনের জন্য আমার ঘরবাড়ি,
    চাষের জমি, মাছের নদী, লবনের মাঠ, বন
    তুলে দিচ্ছো বিদেশি বহুজাতিক বেনিয়াদের হাতে।
    আর এর গালভরা নাম দিয়েছ উন্নয়ন।
    থানাকে তুমি পরিণত করেছ জল্লাদখানায়,
    হাসপাতালগুলো ভরে গেছে কসাইয়ে
    ক্রসফায়ার আর গুমে দেশটাকে বানিয়েছ বধ্যভূমি।
    বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সন্তানদের শিক্ষার বদলে শেখাচ্ছ সন্ত্রাস।
    খাতা-কলম-কী বোর্ডের বদলে তুমি হলের
    আলমারিগুলোতে সাজিয়ে রেখেছ রাম দা আর পর্ণোগ্রাফি।
    আর কোটি কোটি জনগণকে তুমি
    দাঁড় করিয়ে দিয়েছো গৃহযুদ্ধের সামনে।
    আমার সন্তানদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছ আমার সন্তানদের।
    আমার ছেলেদের দিয়ে ধর্ষণ করাচ্ছ আমার মেয়েদের।
    তুমি এর নাম দিয়েছো প্রতিরোধ?
    ব্যাংক থেকে আমার হাজার কোটি টাকা
    লোপাট হয়ে যায়, তুমি চুপ।
    রিজার্ভ ব্যাংকের বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়,
    তুমি চুপ।
    শেয়ার বাজারের ক্ষুদ্র জামানতকারীদের
    কাগজগুলো খেয়ে ফেলে তোমার
    গৃহপালিত উইপোকা, তুমি চুপ।
    খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে ধুকছে জাতি
    অথচ দেশ ভরে যাচ্ছে চকচকে কসাইখানায়
    তুমি চুপ।
    একটি গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও
    আমিও চুপ হয়ে আছি, হাতপা নাড়াচ্ছি না-
    সমুহ ক্ষতির ভয়ে। অথচ ক্ষতি যা হবার তা হয়েই যাচ্ছে হরদম।
    তুমি চেপে ধরেছ আমার কণ্ঠনালী
    তুমি কেড়ে নিয়েছ আমার ব্যানার
    তুমি কেড়ে নিয়েছ আমার লিখার খাতা ও কলম।
    আমার অব্যক্ত কথাগুলো বলার জন্য
    তুমি আমাকে কোথাও দাঁড়াতেই দিচ্ছ না।
    আমার সমস্ত কথা বলার, প্রতিবাদ জানানোর ভাষাকে
    তুমি হত্যা করছ প্রতিদিন।
    আর এর নাম দিয়েছ তুমি বাক-স্বাধীনতা।
    আর ক্রমশ ঠেলতে ঠেলতে-
    আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছ গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি।

     

    লোকটি
    .
    নুয়ে আসে মাথা, বাকা মেরুদন্ড
    তবু হাটতে থাকে লোকটি
    ধুকে ধুকে সারাটি জীবন যেমন তেমনি
    পিঠে তার অদৃশ্য পৃথিবী চোখ তার সামনে,
    পথ কাটে পা, থামানোর তার কোনো উপায়ই নাই
    কেন না তার কাঁধে তার পিতার লাশ
    আর হাতে ধরা ইতিহাস…

     

    ইচ্ছা হত্যার নেপথ্যে
    .
    আমার সন্তানের চৌদ্দমাস বয়েস
    বাসার বাইরে যাবার জন্য সে পাগল
    সদর দরজা খুলে বাইরে নিয়ে গেলেই
    সে নেমে পড়ার জন্য যুদ্ধ শুরু করে।

    প্রথমে হাতপা ছড়াছড়ি, নেমে পড়তে চাওয়া,
    কান্নাকাটি এরপর কাজ না হলে দুহাতে
    খামচে ধরে পিতার অনমনীয় মুখ।

    অপহরণ আর শিশুহত্যার ভয়ে
    আমি তার ইচ্ছা প্রত্যহ এভাবে হত্যা করি।

     

    কতিপয় বন্ধুদের তেজস্ক্রিয় খাবার টেবিল
    .
    তোমাদের হাসির নিচে চাপা পড়ে
    আমার মৃত্যুসংবাদ
    টেবিলে রক্তের সোপ কাঁটা চামচে গাঁথা
    জীবন্ত শিশু আর নারীদের মাংশ
    তোমরা খাচ্ছো.. খাচ্ছো..
    তোমাদের প্রতি কামড়ে ভাঙ্গছে
    ইরাক-ফিলিস্তিন-আফগান

    গ্লাসে সমুদ্র তার ভেতর প্রজাতির ইতিহাস
    প্লেটে সবজি সসেজ

    তোমাদের জিহ্বায় লোল, কম্পিত কাটা
    মাংসের ভেতর আর্তনাদ
    খেয়ো চলো দেহ, রক্তাক্ত মাড়ি
    সালুনের ডেকসিতে সিদ্ধ হয় এমিবা হৃদয়

    তোমাদের হাসির নিচে চাপা পড়ে যায়
    আমার মৃত্যুসংবাদ।

     

    দুনিয়া নামের কবরখানা
    .
    সমাহিত হয়ে গেছি গণমানুষের সাথে
    এ বিশাল গোরস্তানে
    আবছা মনে পড়ে, পারমাণবিক ধুলার ভেতর
    বুকের দিকে ছুটে আসা সন্তান-
    ছাই হওয়া থেকে যাকে বাঁচাতে পারি নাই।

    প্রতিদিন গোরখোদকদের কোদাল
    বাড়িয়ে তোলে শ্রান্তি আমাদের চেতনার স্তর
    তবুও একটু একটু করে উপরের দিকে তুলি হাত
    নির্জীব, ক্ষুধার্ত, অসাড়
    তোমার কথা মনে পড়ে পরমাত্মীয়ের মত জেনি মার্কস

    ক্রমশ হেটে চলি শাদাকালো ও রঙ্গীন জোব্বা পরা
    বুদ্ধিজীবীদের হস্তমৈথুনের ভেতর
    তাদের শীৎকারে ভারি হয়ে ওঠে কবরখানার আকাশ
    খানিকটা কামতাড়িত হই, মনে পড়ে তোমারেও-

    পুঁজির পুথিগন্ধময় অজস্র ভালবাসার মিথ্যাচারেও
    যে তোমাকে ধরে রাখতে পারি নাই।

     

    শেষ মিছিলের যাত্রী
    .
    আর কেবলি তো তুমি বলতে
    মাত্র কয়েকটা দিন, কয়েকটা মাস
    নিদেনপক্ষে কয়েকটা বছর
    তারপর… তবুও

    একই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দিন কেটে যায়
    একই মহল্লায় বয়স বাড়তে থাকে
    একই ধুলোবালিতে পাক ধরে চুলে
    একই মসজিদে আজান শুনে শুনে

    ধর্মান্ধ উন্মাদনা আর দেশ-দানবের অন্ধকার

    হাসপাতাল, জেল, বেশ্যালয়, পানশালা?
    কোথায় নিয়ে যাবে তাদের তুমি
    যাদের ভার পড়েছে তোমার ওপর?

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.