Sunday, October 26, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

    নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ
    (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১)

    মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ “ওয়েভস অ্যান্ড রকস”, আর এর পরপরই তিনি মস্কোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এর মাঝে তাঁর বিবাহ হয়। কিন্তু কবি নিকোলাই রুবৎসভ মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। সাংসারিক জীবনের টানাটানি, কর্জ – এসব কিছু মিলিয়ে তিনি সাইবেরিয়াতে পাড়ি জমান৷ ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় “দ্য স্টার অভ ফিল্ডস।” এ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে উঠতি নারী কবি লুদমিলা দারবিনার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের দিনই নব বধূ লুদমিলা দারবিনা তাঁকে হত্যা করে। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেই তিনি যেন ভবিষ্যৎ বাণী করে লিখেছেন, “I will die in Epiphany Frosts. I will die when the birches crack.”
    তাঁর মৃত্যুর পরে বিশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সারাবিশ্বে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মূলত তাঁর মৃত্যুর পরে। অসম্ভব সুন্দর আর ছন্দময় কবিতার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

    ভূমিকা ও অনুবাদ: শামসুদ্দোহা তৌহীদ


     

    বিদায়ের গান

    এই পুরাতন গাঁ ছেড়ে চলে যাব আমি
    শিগগিরই বরফে ঢেকে যাবে নদী
    দরজায় চিড় ধরে এইসব রাতে
    আর উঠোন ভরে যাবে পলিতে।

    তুমি এলে এই বিদায় বেলায়
    ধূসর জমিতে নামে মলিন শরৎ ও।
    বার্চের দোলনায় এই রাত দোলায়
    তুমি কেঁদে গেলে এই রাত কত!
    দুষছিলে নাকি আমায়, ওগো প্রিয়?

    কেন তবে নত হয় তোমার আঁখি?
    নিরালা জলার কাছে কোন সুখে
    ক্রানবেরি তুলে দিলে আমার মুখে
    যেন আমি এক আদুরে পাখি!

    শুনতে কি পাও বাতাসের শিস গোলাঘরের কাছে?
    মেয়ে তোমার হেসে ওঠে কোন স্বপনে?
    হয়তোবা খেলছে পরীদের সাথে
    তাদের সাথে উড়ে যায় স্বর্গের পানে।

    কেঁদো না প্রিয়, এই জাহাজঘাটায়
    বসন্তে আর চেয়ে থেকো না ষ্টীমারের জন্য,
    চলো আজি পান করি এই বিচ্ছেদ-বেদনায়
    আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু প্রেমের জন্য।

    তুমি আর আমি হলাম ভিন্ন ডেরার পাখি
    তবে কেন অপেক্ষা পরস্পরের প্রতি?
    হয়তো ফিরব কোন একদিন
    হয়তোবা কখনও ফিরব না আমি।

    তুমি জানো না গো প্রিয়
    যেখানেই আমি যাই
    শুনি আমার পিছুপিছু অপয়ার পায়ের আওয়াজ
    এমনকি বিকারেও।

    এই বেদনাবিধুর গাঁয়ে তোমার প্রেমের পরশ
    আর বেরি ফলের দিনগুলোর কথা
    যেদিন আমার পড়বে মনে
    আমি পাঠাবো পরীর মতোন পুতুল
    যেন আমার বলা শেষ রূপকথা।

    আর তোমার মেয়ে যখন খেলবে পুতুল
    কেটে যাবে দিন পুতুলের সাথে,
    আর বলবে,‘আম্মু, আম্মু, কত্ত সুন্দর পুতুল!
    কিন্তু শুধু কাঁদে আর কাঁদে।’

     

    মাঠ-জ্বলা তারা

    নদী আজ ধুধু বরফের মাঠ
    কোথাও এক চিলতে বরফহীন শূন্য কোটর,
    তারি মাঝে উঁকি দেয় তারা,
    ঠিক যেন আকাশের পারা।

    বাজে রাত্তির বারোটা
    গাঁয়ের লোকেদের চোখে লেগে আছে নিদ্রা।

    আমি থমকে দাঁড়াই
    আমার মাঠ-জ্বলা তারা!
    স্মৃতির তোড়ে ডুবে যাই।

    পাহাড়ের কোলে যে ছিল শান্ত সমাহিত
    শরতে পুড়ে খাক
    এই শীতে পুড়ে সাদা হয়ে যাক!
    আমার মাঠ-জ্বলা তারা
    তুমি নিভে যেয়ো না।
    তুমি জ্বলো
    সংসার-শঙ্কিতের দুয়ারে জ্বলো
    তুমি জ্বলো!
    তাদের চিত্ত করো প্রসারিত!

    কিন্তু বহুদূরে আমার অজো পাড়াগাঁয়ে
    এই শীত আর কুয়াশায়
    তুমি এত পূর্ণ!
    এত আলো!
    আমার মাঠ-জ্বলা তারা
    এই শ্বেতশুভ্র চরাচরে
    তোমায় বাসি ভালো।
    তুমি জ্বলো!
    জ্বলো!

     

    ভালুক

    গুলি ছোঁড়ে শিকারী ভালুকের গায়ে,
    ভয়ে জড়োসড়ো মস্ত ভালুক পাইনের ছায়ায়।
    তার লোমশ শরীরে গুলি বিঁধে
    ভালুকের চোখে জল মনের খেদে।
    কেন তারা করতে চায় খুন?
    তার ছিল না তো কোনো ভুল!
    ভালুকটির মনে বড়ো দুখ!
    বাড়ি ফেরে নীরবে
    আজ কেঁদে ভাসাবে বুক।

     

    এইসব স্বর্ণালি সন্ধ্যায়

    ব্রীজ পেরিয়ে রাস্তাটা খাড়াই
    চলে গেছে পাহাড়ের দিকে,
    কাছে এক গীর্জা, আজ ছাই,
    সাবেকি রাশিয়া লাগে বড়ো ফিকে।

    আমার সাবেকি রাশিয়া!
    তোমার স্তন্যে বেড়ে উঠেছিল আজকের দিন,
    স্বাধীনতার স্বপ্ন এনেছে সুদিন।

    জীবনের যে সুর বাজতো!
    আজ আর নেই
    কিন্তু আমি শুনতে পাই
    কী ছিল সেইসব দিন!

    ছেলেরা আজও রেকাবের কাজ করে,
    হাসি খেলায় আর জীবনের দায়ভারে,
    এইসব সন্ধ্যা বড়ো উষ্ণ লাগে,
    পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে!

     

    অদ্ভুতুড়ে শৈশব

    মনে পড়ে
    কালো জলের ধারা
    কবেকার কথা!
    মনে পড়ে
    ভীতিকর জেটি
    মনে পড়ে
    ভীতিকর রাত্রি
    মনে পড়ে
    বড়ো পাখি
    চোখে ছিল যার শ্যেনদৃষ্টি।
    মনে পড়ে
    ভূত-প্রেত-শাঁকচুন্নি
    সেইসব গল্প আজও ভুলিনি।

    ভীতি আর ভীতি
    মনে পড়লে লাগে বড়ো তৃপ্তি।

     

    অক্ষয় স্মৃতি

    নিস্তরঙ্গ জল যেন কাঁচের অধিক
    আলো মিটমিট জলের গহীন
    বর্শার মতো ঘাই মারে পাইক
    জলের এই দৃশ্য বড্ড রঙিন!

    বার্চবন
    পাহাড়ের কোলে ছোট্ট কুটির
    আকাশের শত কোটি তারা
    জলের গায়ে আঁকে স্বপ্ন।
    ঈশ্বরের গড়া স্বর্গ মন্দির
    ভেসে যায় জলের মিনার!
    রাশিয়া! তুমি বড়ো বাজিকর!

    তোমার আকাশে জ্বলে মুঠো মুঠো তারা
    কেটে যাক কয়েক শতাব্দী এমন চুপে
    এই আদিম রূপ দেখেছে যারা
    এই দৃশ্য অক্ষয়- তাদের হৃদয়ে রবে।

     

    প্রস্থান

    ভেজা পথ।
    পাতাহীন
    পপলার।

    শুনি ডাক।
    পাখিদের
    কূজন।

    ওরা দক্ষিণে উড়ে যায়
    আমি নেমে আসি দুয়ারে।
    শরতের দিন আজ সোনারঙ মাঠে।

    মাঠের পরে জেটি
    বেজে ওঠে ইস্টিমারের সিটি।
    পরদেশ ডাকে,
    বিদায়ের সুর বাজে!
    এখনও নেই আমার দুঃখবিলাস।

    এই সন্ধ্যায় বিবর্ণ চারিদিক
    নিভু নিভু জ্বলে সিগারেট
    সিঁড়ি নামে ইস্টিমার ঘাট
    আমাদের তাড়া দেয় নাবিক।

    মাঠ বয়ে আসে মিষ্টি বাতাস
    মনে পড়ে প্রণয়ের দিন অভিসার
    যত দূরে যাই ফিরে তাকাই না আর
    আঁধারে মলিন হয়ে আসে আমার তারুণ্যের পাড়।

     

    ইনসমনিয়া

    আবছা আলোয় জ্বলে বাতায়ন,
    রাতের বুকে নামে ঝড়
    শন শন, শন শন।
    শ্রান্তি ভর করে চোখের পাতায়
    আজ বড়ো একাকী এই ঘর!

    আমি এক হারানো অতীত
    এই ঘর আজ জাহাজের কেবিন
    জলডুবি রাত আর জলডুবি দিন
    ঈশ্বর জানে এই মিথ!

    এই ঘর আর বাতায়ন উধাও
    চারপাশে জমেছে পাঁক
    দৃশ্যেরা করে কিলবিল
    তুমি অনাহুত!
    দূর হয়ে যাও।
    ঘুম! আমাকে তোমার বাহুডোরে নাও।

    ভাবনায় ডুবে যাই
    ধরা দেয় সবকিছু যা ছিল তুচ্ছ!
    আনন্দের বদলে ভয়
    বিশ্রামের বদলে পীড়ন!

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.