Sunday, October 26, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    গার্দিওলা ‌‌‘দ্যা সুপার হিউম্যান’

    আমি সেই অর্থে প্রেমিক ছিলাম না। প্রেম আমার জমে ওঠেনি কোনো কালেই। কিছু প্রেম হবো হবো করছিল কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রেমিকারা বাউলি কেটে বেড়িয়ে গেছে পাকা সেন্টার ফরওয়ার্ডদের মত। তাই আমি আর যা-ই হই না কেন, প্রেমিক নই! এ কী রে খেলার খবর লিখতে বসে আমি কিনা শুরু করলাম প্রেমের গল্প বলা!

    আমি খেলা নিয়ে লিখবো, খেলা নিয়ে লিখতে হবে। আমার এক বন্ধুর কাছে থেকে শুনেছিলাম, মাধ্যমিকে থাকার সময় তাদের স্কুলের বাংলা শিক্ষক মন ভালো থাকলে মাঝে মাঝে আদিরসাত্মক গল্প বলতেন। গল্প বলতে গিয়ে নায়িকার দেহ সুষমা বর্ণনা করতে করতে মাঝে মাঝে বাতাবি লেবুর উদাহরণ দিতেন। সেদিন বিকেলে তারা বন্ধুরা মিলে ফুটবলটা খুব ভালো খেলতো, রাতে গভীর নিদ্রা আর স্বপ্নে ক্লিওপেট্রা! এ কী রে, আমি আবারও প্রেমের গল্পে ঢুকে পড়লাম!

    নাহ আজ মনে হচ্ছে শুধু খেলার খবর দিয়ে জমাতে পারব না। তার চেয়ে দেখি তো খেলার ভিতরে প্রেম অথবা প্রেমের ভিতরে খেলা ঢুকিয়ে দিতে পারি কিনা তাহলে হয়তো কিছু একটা দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে খেলাকে তবু প্রেম বলা যায়, প্রেমকে খেলা বললে মারতে আসবে দুনিয়ার যত প্রেমিক-প্রেমিকারা। তাই খেলার প্রেম নিয়েই বলা হোক। চলুন ফুটবল প্রেমিক গার্দিওলার উপরই ভর দেই।

    পুরো নাম জোসেপ “পেপ” গার্দিওলা সালা। ৫২ বছর বয়সি গার্দিওলা সাধারণত কোন ম্যাচের আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না, তার মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যদি তার শিষ্যরা তার শেখানো ট্যাকটিস মাঠে ঠিকমত কাজে লাগাতে না পারে? তার সেই চিন্তা ডাগআউটে দাঁড়িয়ে যেনো আরও বেড়ে যায় বলেই এটকার পর একটা পানির বোতল খালি করে চলেন, কখনো বা খালি বোতল ছুড়ে মারেন।

    গার্দিওলার পিতা ভ্যালেন্তি গার্দিওলা মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ করতেন, তার ছেলে পেপ গার্দিওলা কাতালুনিয়া থেকে বাবারিয়া, বাবারিয়া থেকে ম্যানচেস্টারে এসে নির্মাণ করেন তার ফুটবলারদের জগৎটা। খেলার ধরণ থেকে শুরু করে ফুটবলের দর্শনটাও। তাইতো দল যদি তার দর্শন অনুযায়ী না খেলে ম্যাচ জিতেও তবু তার মন ভরে না। তাকে তখন ঘিরে ধরে এক ধরণের চিরায়ত ভয়।

    গার্দিওলা জানেন যেকোনো কিছুকে ওপরে নিয়ে যেতে বা তার উন্নতি সাধন করতে সেই জিনিসের প্রতি প্রেম থাকা চাই। আর খেলাটার প্রতি প্রেম আছে বলেই বার্সেলোনাকে দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতিয়ে গার্দিওলা এবার সিটির হয়েও জিতলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দল হিসেবে জিতলেন ট্রেবল। এর আগে ১৯৯৯ সালে এই কীর্তি গড়েছিল স্যার আলেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এটা মাথায় রেখেই গার্দিওলাকে নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ডিফেন্ডার উডগেট বলেছেন, ‘এটা নিশ্চিত যে গার্দিওলা সর্বকালের সেরা। ফুটবলকে আমরা যেভাবে দেখতাম, তা সে বদলে দিয়েছে।’

    এ মৌসুমে গার্দিওলা একাধিকবার বলেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ছাড়া ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে তাঁর সাফল্যকে কেউ মনে রাখবে না। এর আগে বায়ার্ন মিউনিখের হয়েও একই চিত্র দেখতে হয়েছিল তাঁকে। লিগে সাফল্য পেলেও মেলেনি ইউরোপিয়ান ট্রফি। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের আগে বাজির দর থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। এমনকি ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’র সুপারকম্পিউটারও ৭৪.১ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে ছিল পেপ গার্দিওলার দলের পক্ষে। তবুও সেই একই পরিস্থিতি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দেখতে হয় কি না, সেই শঙ্কাও গার্দিওলা-ভক্তদের মনে হয়তো জেগেছিল। অবশেষে মনে রাখার মতো কাজটি করেই ফেললেন গার্দিওলা। ম্যান সিটিকে এনে দিয়েছেন বহুল আকাঙ্ক্ষার ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। দুর্দান্ত এই অর্জন গার্দিওলার সিটিকে অমরত্ব দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রিও ফার্ডিনান্ড। আর সাবেক ইংলিশ সেন্টার ব্যাক জোনাথন উডগেট বলেছেন গার্দিওলা ‘সর্বকালের সেরা’।

    খেলাটাকে ভালোবাসেন বলেই গার্দিওলা চান তার খেলোয়াররা সবাই তার দর্শন মেনে চলবে। তাই তো দর্শন মেনে শিষ্যরা যদি ম্যাচটা জিতে আসে তবে তিনি হন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। সেদিন তার ডিনারের লিস্টটা অনেক লম্বা হয়, রাতে হয় গভীর ঘুম

    ট্রেবল জেতা কত কঠিন সেটা সবচেয়ে ভালো জানেন পেপ। ২০০৮ সালে বার্সেলোনার মূল দলের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জিতেছিলেন। এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে প্রতিটি বছরই ছিলেন কোনো না কোনো বড় ক্লাবের ডাগআউটে। লিগ জিতেছেন, ঘরোয়া কাপ জিতেছেন, এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন। কিন্তু একসঙ্গে তিনটিই…? বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ আর ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবে থেকেও ২০০৯ সালের পর আর জিততে পারেননি।

    আর্সেনালকে পেছনে ফেলে প্রিমিয়ার লিগ জয়, এরপর এফএ কাপে সিটি পেছনে ফেলল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আর এবার ইন্টারকে হারিয়ে জিতে নিল চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। যেন গোটা মৌসুম সাজানো হয়েছে সিটির জন্য। সাফল্যের একের পর এক মুকুট ঘরে তুলেছে তারা। ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ ক্লাব হিসেবে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব জিতল সিটি। এর আগে ইউরোপিয়ান সাফল্য পাওয়া ইংলিশ দলগুলো অ্যাস্টন ভিলা, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও নটিংহাম ফরেস্ট। আর ইউরোপীয় ফুটবলে ট্রেবলের কীর্তি হাতে গোনা। সিটির আগে ট্রেবল জিতেছে ৭টি দল। এর মধ্যে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন জিতেছে দুবার করে।

    গার্দিওলার ক্যারিয়ারে এটি দ্বিতীয় ট্রেবল হলেও ম্যানচেস্টার সিটি ইতিহাসে প্রথম। শেষ বাঁশি বাজার পর ডাগ আউট থেকে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়েরা যখন এক ছুটে মাঠে ঢুকছেন, ক্যামেরা ধরল পেপ গার্দিওলাকে। ২০০৭-০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতল ম্যান সিটি।

    ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর গত বছরের আর্থিক হিসাব বলছে, সবচেয়ে বেশি ৭৩১ মিলিয়ন ইউরো আয় করা ক্লাবটি হলো ম্যানচেস্টার সিটি। ২০০৮ সালে আবুধাবি গ্রুপ মালিকানা নেওয়ার পর থেকে এই মুহূর্তটার জন্য ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করছে ম্যানসিটি। ২০২১ সালে ফাইনালে চেলসির কাছে ১-০ গোলে হেরে হতাশ হতে হয়েছিল সিটিকে। সেই হতাশাকে কবর দিয়ে দিয়েছে ইতিহাদের ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা রিয়াল মাদ্রিদ। লা লিগা, কোপা দেল রে’ শিরোপাও জিতেছে অনেকবার। অথচ রিয়াল মাদ্রিদের কোন মহাদেশীয় ট্রেবল জয়ের কীর্তি নেই। অথচ বার্সেলোনা সর্বোচ্চ দুইবার ট্রেবল জিতেছে। এর মধ্যে একবার পেপ গার্দিওয়ালা কাতালানদের ওই কীর্তি এনে দিয়েছেন।

    খেলোয়ার জীবনে গার্দিওলার মিডফিল্ডার রোল অনুকরণে জাবি-ইনিয়েস্তাদের মিডফিল্ড সামলানো শেখানো হতো। সেই সময় নিজের ছিপছিপে গরনের কারণে ভয়ে থাকতেন যদি তার কারণে দল হেরে যায়। একবার এসি মিলনের কাছে তার দল ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে তার সেই ভয় স্থায়ী হয়ে যায়।

    খেলাটাকে ভালোবাসেন বলেই গার্দিওলা চান তার খেলোয়াররা সবাই তার দর্শন মেনে চলবে। তাই তো দর্শন মেনে শিষ্যরা যদি ম্যাচটা জিতে আসে তবে তিনি হন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। সেদিন তার ডিনারের লিস্টটা অনেক লম্বা হয়, রাতে হয় গভীর ঘুম। আর কে যানে সেখানে হয়তো চলতে থাকে ১৫ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ৩৫টা টাইটেল অর্জনকে আরও বাড়িয়ে নেওয়ার নতুন কোনো ফর্মূলার খোঁজ।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.