Sunday, October 26, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

    তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয়

    সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে,
    ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে
    এসো চা খেয়ে যাও
    ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো
    সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে।
    দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’
    আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না ।
    আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি,
    বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি,
    গাছেদের নুয়ে পড়া সোজা হওয়া দেখছি
    কাক আর শালিক ভিজে যওায়া দেখছি,
    দেখছি উড়ে যাওয়া ধবল বক।
    তোমার কাছে গেলে শুধু তোমাকেই দেখব।
    অথচ জানো? আমি এখান থেকেও তোমাকে দেখছি
    যদিও আমাদের মাঝে কঠিন প্রাচীর রয়েছে
    তারপরও আমি তোমাকে দেখছি।
    বিশ্বাস হয় না বুঝি? তাহলে বাজি ধরো
    তুমি ঠিক আসমানী রঙ্গের শাড়ি পরেছো
    কপালে কোনো টিপ নেই, চোখে কাজল নেই।
    ঠোঁট গুলো অতি স্বাভাবিক।
    ঠিক বলিনি?”
    ‘শতভাগ।’
    আমি এখান থেকেও তোমাকে দেখছি,
    তোমাকে ভাবছি আর তোমাকে নিয়ে লিখছি ।
    বৃষ্টির কবিতা, প্রেমের কবিতা,
    তোমাকে নিয়ে সৃষ্টির কবিতা,
    আমি তোমাকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলেছি,
    তোমাকে রচনা করছি,
    আমার দিব্যদৃষ্টি দিয়ে ।
    তোমাকে দেখতে যাওয়া মোটেও জরুরী কিছু নয়।
    দেখতে গেলেই আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো
    প্রতিক্ষণ, প্রতিদিন আমি তোমাকে দেখছি
    তুমি যে আমার বিমূর্ত প্রতিমা।

     

    ঈর্ষা

    ঈর্ষা কোনো রোগ না কি অন্য কিছু?
    তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কি বেড়েই চলেছে?
    ঈর্ষা কি ভালোবাসারই অন্য নাম?
    সেদিন দেখলাম এক লোক তোমাকে ফুল দিচ্ছে
    বড়ই সুন্দর দৃশ্য,
    তুমি আর ফুল-ফুল আর তুমি
    মিলে মিশে এক সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে
    কিন্তু অমন সুন্দর দৃশ্য আমার মাথা গরম করে দেয়,
    করোটিতে রক্ত উঠে যায়
    আমি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ি,
    ইচ্ছে হয়, লোকটির হাত মুচড়ে দিই
    কিংবা কামড়িয়ে রক্তাক্ত করে ফেলি
    আমার হাত না কি ঐ লোকটারই
    আমার হাত থেকে তোমার হাত ফুল নিচ্ছে না
    অন্য কোনো হাত তোমাকে ফুল দেবে কেনো?
    তোমাকে ফুল দেয়ার অধিকার শুধু আমার হাতেই আছে
    শুধু আমার হাতেরই আছে।

     

    আমি মেঘেদের সাথে হেঁটে হেঁটে যাই

    আমি মেঘেদের সাথে হেঁটে হেঁটে যাই
    রোদ্দুর আমাকে বিভ্রান্ত করে
    তাই আমি রোদ্দুরে থেমে পড়ি,
    আমি তোমার পথে হেঁটে হেঁটে যাই।
    মেঘ আমাকে তোমার পথে নিয়ে যায়
    আমি রোদ্দুরে থেমে পড়ি
    আমি তোমার খোঁজে মেঘেদের সাথে হেঁটে হেঁটে যাই
    মেঘেরা আমাকে পথটি দেখায়
    আমি মেঘেদের সাথে কথা বলি
    মেঘেরা তোমার বার্তা গোপনে
    আমার কানে কানে বলে যায়
    আমি মেঘেদের সাথে পরামর্শ করে
    মেঘেরা আমাকে যে পথে যেতে বলে
    আমি তাদের দেখানো পথে হেঁটে হেঁটে যাই
    আমি শুধু তোমার পথেই চলি
    শুধু তোমাকে পাওয়ার আশায়।

     

    এক টুকরো বোশেখ চাই

    এবারেরটাও কেটে গেল গেছে বছরের মতই
    রোদেলা, নিস্ফলা।
    একটা ঝড়ের প্রত্যাশায় ছিলাম
    ঈশান কোণে মেঘেরাও সঞ্চরণশীল ছিল
    আমার হৃদয় উন্মুখ ছিল
    ফলবতী বৃষ্টির প্রার্থনায়,
    কর্ষণ ইচ্ছুক কৃষকের কামনার মতই
    সবুজ স্বপ্ন জনা কৃষাণীর মতই
    নিস্ফলা কবির হাহাকারের মতই।
    ‘এবারও হবে না’ আমার
    কানে কানে কে যেন বলে গেল
    সঞ্চরণশীল মেঘমালা সরে গেল
    কোথায় কে জানে! দূর হিমালয়ে
    ধ্যানী কোন এক প্রেমিকের কাছে?
    আমার প্রার্থনায় জোর কই
    সংগীতে সুর আর কাব্যের ছন্দ!
    অর্ঘের থালাটাও প্রায় খালি
    সেখানে রয়েছে শুন্যতা
    শুধু এক কবি হৃদয়।
    কোনো এক বৃষ্টীয় বনানী ডেকেছিল
    ‘স্নাত হও কবি আমার নবধারায়
    আর নদীও, পাললিক জলাভুমি হতে লাল পদ্ম
    কৌমের বহর ছাড়া সাপিনী বালিকা
    অবিমৃষ্য নাবালেক আমি
    তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিইনি।
    এখন আমি চৈত্রের চৌচির উঠানের হয়ে
    ঘুরে বেড়াই একটুকরা বোশেখের খোঁজে
    একটু বোশেখ দেবে কেউ, এক টুকরো ঝড়?

     

    গালিবের সমাধিতে

    সবকিছু কেমন স্তব্ধতার চাদরে মুড়ে আছে
    সবকিছু ছায়াময়,জীবনের ভোজবাজি
    সব থেমে গেছে।
    সময় হয়ে
    আছে স্থির,হয়তো বধির,
    মাঝে মাঝে উদ্ভ্রান্ত হাওয়ায় ভেসে আসে কারো শ্বাস,
    দুএকটা পাতা কিংবা ফুল পড়ে ঝরে, অশ্রুর আকারে
    অতি এক সাধারণ গরীবি কবরে।
    এইখানে নেই কোন মানুষের ভিড়,
    নেই কোন মর্মর সমাধি
    আতর লোবান নেই।
    অথচ এখানেই শুয়ে আছে রাজা এক মুকুটবিহীন
    মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব।
    এখনো রয়েছেন বেঁচে হাজারো হৃদয়ে
    এখনো কান পেতে শোনা যাবে কোন এক দূরন্ত গজল
    হাওয়ায় আসছে ভেসে পাতার মর্মরে।
    বিল্লিমারানের সেই সরু এদোগলি, ভগ্ন পাথরের স্তুপ
    যদিও বা হয়ে আছে মরনের মতোই নিশ্চুপ,
    যদিও বা নাই কোনো কবির মাহফিল কিংবা মোশায়েরা
    যদিও বাজে না সুর কিন্নরী গলায়
    তারপরও যেনো মনে হয়, এই ভগ্ন কবরে
    গজলেরা প্রতিদিন গজলের মতোই গজায়!

     

    আজ আমি কোথাও যাবো না

    আজ আমি কোথাও যাবো না
    বসে থাকবো বট বৃক্ষ হয়ে কায়াহীন ছায়া নিয়ে
    যদি নামে নামুক ঝুরি অযুতে-নিযুতে
    মাথায় গজাক সব জট-জটা জটাধারী হব
    মগজটা হয়ে যাক শকুন উকুন আর শুয়া পোকাদের
    পক্ষীরা ফেলুক বিষ্টা আর হরিত রাঙ্গা বট খুলির উপরে
    তবুও আজ আমি কোথাও যাবো না।
    নুহের প্লাবনেও যদি ভেসে যায় সব
    কেনানের দুর্মতি নিয়ে বৌদ্ধ হয়ে ধ্যানি রব
    নির্মোহ নিরব, আমার কানের কাছে পৌছিবে না
    কোকিলারা, কিন্নরি হয়েও যদি করে শত স্তব
    তবু আমি কোথাও যাবো না।
    আমি কোথাও যাবো না, সখা কোথাও যাবো না।
    আমার করোটি মাঝে কী জানি কী হয়ে গেছে
    ছিঁড়ে গেছে বিবেকের তার আর অন্যরাও
    যারা তার সারিবার ছিলো কারিগর
    তাদেরও তার ছেঁড়া হয়ে গেছে, কলের ভেতর
    আছে শুধু ছেঁড়া তার, যন্ত্রর মন্ত্রর।
    অহল্যা দ্রৌপদি কিংবা মেনকা উর্বশী
    আমাকে টানে না বন্ধু, আমাকে টানে না
    আজ আমি কোথাও যাবো না।
    গাছেদের সাথে আজ হয়ে আছে বাক্যের বিরোধ
    কোনো কথা নেই ইশারা ইংগিত কিংবা আত্মর সঙ্গীতে
    সব কিছু হুলিয়ার মাঝে পড়ে স্তব্দ হয়ে গেছে
    কবি আর কবিতারাও অবসরে কিংবা নির্বাসনে
    কোনো কোনো কবি আজ কবিরাজ কিংবা রাজ কবি
    বন্দি হয়ে আছে আজ তারা আত্মর শেকলে
    উদ্যানেরা ভরে গেছে ভাগারের শেয়াল শকুনে
    আমার বদনখানি নীল হয়ে আছে পাপের খোরাকে
    তুই কিংবা তোদের মতই আজ আমি এক হন্তারক
    হয়ে আছি বজ্রাপাতে শিকল বাকল হীন নিথর বুরবক
    তাই আজ আমি কোথাও যাবো না বন্ধু কোথাও যাবো না।

     

    সূচিতা ও আমার ভালোবাসা
    (রোহিঙ্গাদের জন্য নিবেদিত)

    তোমাকে আমার সকল ভালো দিতে চেয়েছিলাম
    দিয়েছিও-হয়তো জানো না।
    তোমার পূজার বেদিমূলে অবনত হয়েছিল সহস্র হৃদয়।
    কি ছিল তোমার চোখে? প্রেম, মায়া, ঘৃণা?
    হ্যা, ঘৃণাও ছিল, প্রবল ঘৃণা।
    তোমার খোঁপায় ছিল গোলাপ, প্রেমের প্রতীক।
    আর প্রায় সমতল বক্ষপুটে?
    নিন্দুকেরা বলতো ওখানে কিছুই নেই।
    আমরা ভাবতাম ওখানে লুকিয়ে আছে ফল্গুধারা
    অমিয় সূধা আমরা ওখানেই পাব।
    ঠারেটুরে বললে আমার সব আছে, তোমাদেরই জন্য।
    অন্ধদের জন্য আলো,মূকদের জন্য ভাষা,
    বধিরদের শ্রবণ,পাখিদের কন্ঠে গানও তুলে দেব।
    আমরা ভাবলাম,আহা! বড়ই বিপ্লবী নারি, সত্যের পূজারী।
    অতপর তোমার স্থান হলো অন্ধ প্রকোষ্টে।
    কণক কিংকিনীর জায়গা দখল করলো হাতবেড়ী।
    ফুল শয্যার বদলে ভুমিশয্যা তবু মাথা নোয়াওনি।
    তারপর একদিন পরাজিত হলো ভালোবাসার কাছে
    বুট আর জলপাইওয়ালারা।
    জেল থেকে ছাড়া পেয়েই বললে- বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি
    মহামতি বুদ্ধের অষ্টকলাই তোমার জপমালা,
    তোমার মাথায় পরিয়ে দেয়া হলো শান্তির তাজ
    ধ্বনিত হলো সাবাস! ওটা ওর মাথায়ই শোভনীয়।
    আহা কী ভ্রান্তি! আমরা ভ্রান্তি বিলাসীদের!
    আসলে ওটা ছির তোমার শীত নিদ্রা
    বসন্তের বাতাস গায়ে লাগতেই ছলম ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছো পানৌখী
    উদ্ধত ফনা তুলে হিস হিস করে
    ছুবলে ছুবলে ঢেলে দিচ্ছ তীব্র হলাহল, ম্যানচিনেলা।
    তোমার সমতল ভিসুভিয়াসে কে জানে এমন হলাহল ছিল!
    তোমার জলন্ত অগ্নিকুন্ডে জীবন্ত আদমই আগুনের খোরাক।
    কুতকুতে চোখে এত ঘৃণা পোষা ছিল ভেবে অবাক হই।
    তুমি আজ ছিন্নমন্ডা, ছামুন্ডা হয়ে গেছ নারী,
    গলায় নরমুন্ডের মালা, দাপিয়ে বেড়াও বিরান শ্মশান।
    তোমার রঙিন ঠোঁট ফাতিমা কিংবা আমিনাদের রক্তে রঞ্চিত
    খোঁপার ফুল? ছোট্ট আয়েশাদের ছিন্ন হৃদযন্ত্র ওটা।
    চোখের অঞ্জন? করিম কিংবা রহিমের ছাইভস্ম।
    হে চামুন্ডা, তোমার গৈরিক পোষাকে মানবতা ধর্ষনের রক্ত।
    অসনাক্ত গলিত সব লাশের দুগর্ন্ধ তোমার দুহাতে
    ঢাকতে চাও? তা হবে না।
    পৃথিবীর সমস্ত আতর লোবান, ফোটা না ফোটা গোলাপ
    হে হত্যার কুশলী নায়িকা
    তোমার হাতের দুগর্ন্ধ ঢাকতে পারবে না।
    আমি তোমাকে ভালবেসে ছিলাম,
    আমার ভালোবাসার গোলাপ সব ঝরে গেল।
    আমি তোমাকে ঘৃণা করি, প্রবল ঘৃণা!
    আমার ঘৃনার আগুন তোমাকে আর তোমার উদরে জন্ম নেয়া
    একপাল দুর্গন্ধ শিশুকে পুড়িয়ে মারবেই,
    আমি জানি, আমার সাথে আছে শান্তিকামী সকল মানুষের ঘৃণা!

     

    তোমাকেই খুঁজে ফিরি প্রিয়তমা

    অনন্ত নক্ষত্র রাতে ঝাউয়ের ফাঁক গলিয়ে ছুয়ে যাওয়া মায়াবী আলোয়
    আমি ভেবেছিলাম স্বাতী নক্ষত্র হতে তুমি নেমে আসবে
    সুনীল সমুদ্র হতে যেমন নেমে আসে প্রেমিকা ভেনাস
    আমি তোমার প্রতীক্ষায় আছি অনন্ত সময়।
    কাক জোৎনায় আমি দেখতে পাই তোমার সুগোল ফর্সা উরু
    তুমি স্নাত, বৃষ্টির মল্লার তোমাকে ঘিরে,
    একে একে খসে পড়ছে তোমার আভরণ,
    পানৌকীর মতো পিচ্ছিল শরীর হতে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা
    দুয়েকটি আসন গেড়েছে তোমার নক্ষত্র শিখড়ে, রাজাধিরাজের মতোই।
    আমার ইর্ষা হয়,ইচ্ছা হয় দ্বৈরতে ডাকি তাদের,
    পরাজিত হবো জেনেও।
    আমি দক্ষিণ সাগর পাড়ি দিই তোমার খোঁজে
    ম্যানলি সৈকত আমি চষে বেড়াই তোমার জন্যই
    না, ওখানে তুমি নেই,দাপুটে মেনকা রম্বা আর যতসব উর্বশী
    বল্কল পরিহিত সন্তুদের চেয়েও নির্মোহ আভরণ তাদের
    আমি আমার দৃষ্টিকে সংযত রাখি তোমার সম্মানেই।
    অতপর আমার গন্তব্য বন্ডাই সৈকত,
    তুমি ওখানেও যেতে পার,
    জলকেলি তোমার পছন্দের কলা
    শত গোপিনীর মাঝে আমার দৃষ্টি ঘুরে বেড়ায়
    তাদের শিল্পীত শরীর হতে পিছলে পড়া
    আলোর আহবান আমি উপেক্ষা করি
    আমি তোমাকেই চাই, একমাত্র তোমাকেই।
    আমি গ্রেট ওসেন রোড ধরে বিস্তর হাঁটাহাঁটি করি
    বার আউলিয়ার আস্তনা তন্ন তন্ন করে খুঁজি,
    লন্ডন আর্চের নীচে অভিযান চালাই সুদক্ষ নাবিকের মত
    ফিলিপ দ্বীপের পেক্সগুদের আস্তানায়ও হানা দিই
    জেনুলিন গুহার প্রতিটি কন্দরে আমার কান্না প্রতিধ্বনিত হয়
    তবু তোমার কোনো সাড়া নেই।
    এখন আমার গন্তব্য ওয়াটসন বে‘র হনন শিখরে
    কী চমৎকার কারুকার্যময় আত্মহনন মঞ্চটি
    দক্ষিণ সাগর দুবাহু বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে
    মৃন্ময়ী সাড়া দাও, নয় তো সাগরই হবে আমার শেষ শয্যা।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.