শালবন বসন্তে
তোমাকে খুঁজেছি প্রিয়, আমি বাউল মেঘরাতে
শতচ্ছিন্ন ঝরাপাতার বনে স্বর্ণনীল পাখি হয়ে
মুক্তেশ্বরী, শালদহ, ইরামতি, লোনা, মহানন্দা
আমি খুঁজেছি তোমায় জালিয়া ছড়া, সোনাই
প্রসন্নবোধে ভালোবাসার আগুন জ্যোৎস্নায়
শিল্প দর্শনের জোয়ারের মতো জলে ভিজে
লুব্ধক, নেপচুন, নীহারিকা, সপ্তর্ষীমণ্ডল-
মেঘের রামধনু রঙ- সবাই চেনে দুঃখবাড়ি
আকাশও ঢেলে দেয় স্বযত্নে বৃষ্টির জলশিল্প
জেনেছি তুমি মেঘেবোনা অন্য একটি দেশ
সময় চলে গিয়েছে সূর্যচিত্রে ক্ষত নিয়ে বুকে
এখনও মনে পড়ে কাঁচা শালপাতার চিঠিঘর
কাঁচালঙ্কা পুদিনা পাকা কুলে সর্ষেমাখা ঘ্রাণ
বনঝাউয়ের জঙ্গলে, হরিতকী, শাল অর্জুনে
আমাদের পায়ের চিহ্ন আজও পড়ে আছে
প্রিয় তুমি আজ কোথায়, কোন দ্বৈত-অদ্বৈতে
আমি খুঁজেছি বরফের দেশ থেকে চন্দ্রদ্বীপ,
বঙ্গ, রাঢ়, গৌড়, হরিকেল,বরেন্দ্র, সমতটে
বাসারি, শাখারি,মনিকার, স্বর্ণকার, কৃষিশিল্পে
খুঁজেছি শালবন বসন্তে, কাঁচা শালপাতার আগুনে…
নীলাভ জগত
আমার ঘর নেই, স্বপ্নভাঙার কাহিনি নেই
বুকের গভীরে সূর্যরঙ, শিশির হয়ে গিয়েছে
জলনিধি ফুলে অন্তর্লীন যেন যুগের মোহগন্ধ
আমার ডানায় ঝরে পড়ে বুনোমেঘ আকাশ
আকাশ তুমি কি জানো মোম জলশিল্পে
কর্ণঝরা, লহর নদী থেকে দুঃখ গাঁয়ের বাড়ি
শস্যপ্রজ্ঞায় রূপবন্ধের অধ্যাত্ম অরণ্য মর্মর
জানো কি বিষণ্ণ আলোয় চাঁদ কোথায় যায়
সূর্য,তারা,পৃথিবীতে ঈশ্বরের কোন স্মৃতিচিহ্ন
জীব-জড়ের অন্তঃস্থলে কেন বিধুর সুরধ্বনি
আমার নীরবতার পাশে কার নীরবতার বৃষ্টি
জন্মভূমিতে চিরদিন কুয়াশানীল পাখিবিষাদ
আমি জানি ছায়াপথে শূন্যতার নীলনগর
মাটির পললে মিশে থাকে গন্ধবিধুর নক্ষত্র
অচেনা অরণ্যের পাতায় লিখি আমার বেদনা
বাতাসের কোলাজে জমে অব্যক্ত সব গল্প
এভাবেই নীরবতার চিরন্তন আলোছায়াপাত
নীলাভ জগতে নির্জন অচেনা দুঃখ ইতিহাসে
পথের ধুলো পাতা শিশির সবাই আজ সাক্ষী
আমি হেমন্তের বিষাদ নীলে পাখি হতে চাই
পাঞ্চালী, গাঁথা, গীতি, পোটো নাচের পাখি
নদী, আকাশ, বৃষ্টির মতো স্বাধীন এক পাখি
যেখানে সময় অনিঃশেষ, ভালোবাসা অনন্ত স্বপ্ন,
সুর আর গান আমাকে ডাকে পাখি হতে
উপকূলীয় নারীরা
তোমাদের খুঁজেছি প্রিয়নীল বাউল মেঘরাতে,
শতচ্ছিন্ন ঝরাপাতার বনে, স্বর্ণনীল পাখি হয়ে
জলঢাকা আত্রাই ইরামতি লোনা মহানন্দা—
সব নদীই তোমাদের নাম জানে রূপকথা নারী
সব ঢেউয়ে ভিজেছে তট তোমাদের পদচিহ্নে।
পৃথিবী খুঁজেছে তবু তোমাদের জালিয়া ছড়া, কাঁচমতি, ধানসিড়ি,পঞ্চবেণী,প্রাণসায়র নাফে
কখনও প্রসন্নবোধে ভালোবাসার আগুন রঙে
শিল্প দর্শনের যেন অনাবিল জোয়ারের মতো,
আমি জানি তোমাদের জীবন জলে ভিজেছে
ঊষা রোহিণী অশ্বিনী কৃত্তিকা স্বাতী শুকতারা
মেঘের রামধনুতে সবাই চেনে তোমাদের দুঃখবাড়ি-
আকাশের অঝোর বৃষ্টির শিল্পে
নারী তুমি উপকূলীয় ব্যথা- নির্জন নীরবতা
তোমাদের শৈল্পিক ধৈর্য ও সংগ্রাম মেঘেবোনা
সূর্যচিত্রে ক্ষত নিয়ে বুকে চিরদিন তুমি নিশ্চুপ
মনে পড়ে আজও কাঁচা শালপাতার চিঠিঘর,
কাঁচালঙ্কা, পুদিনা, পাকা কুলে সর্ষেমাখা ঘ্রাণ,
বনঝাউয়ের জঙ্গলে- হরিতকী, শাল, অর্জুনে,
তোমাদের পায়ের চিহ্ন আজও প্রিয় হৈচৈ।
নারী তুমি বিস্মিত নকশিকাঁথা, দ্বৈত-অদ্বৈতে!
শ্রমজীবী বীজ বুনেছো বরফের দেশ থেকে চন্দ্রদ্বীপে,
বঙ্গ, রাঢ়, গৌড়, হরিকেল, বরেন্দ্র, সমতটে।
বাসারি, শাখারি, মনিকার, স্বর্ণকার, তাঁত কৃষিশিল্পে—
আজও আছো মিশে একাকার
তোমাদের শ্রম, প্রেম, দৃঢ়তা শিলালিপির চিত্র।
উপকূলীয় নারীরা, তোমরা শত জনমের নদী,
তোমাদের জীবনের ঢেউয়ে ভেসেছে সাগর
মালঞ্চের সব ফুল, ধূপগন্ধী উড়নি বাতাস
তোমাদের হাত শিল্প,তোমাদের পদচিহ্ন সুর
সভ্যতার দার্শনিক ইতিহাসের যুগ যুগান্তর।
শালবন বসন্তে, কাঁচা শালপাতার আগুনে,
চিরকাল জ্বলবে বাংলার উপকূলীয় মাটি,
যেখানে নদী, সমুদ্র ও মানুষ এক অনন্য স্বর বয়ে চলেছে—
নিঃশব্দে, অমর, চিরন্তন…
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল! আটলান্টিক থেকে প্যাসিফিক
তোমার সবুজ বুকে আজ কেন এতো তুষার বৃষ্টি!
অন্টারিও উত্তরে অবারিত ঝর্ণা হাডসন চঞ্চল,
ভিজে গেছে শিশিরের তুষার বালিতে ব্রহ্মকমল।
পাহাড়ি নদীর পথ, জলে বাজে বাঁশি অর্ফিয়ুসের –
আমার স্বপ্নগুলো মেঘলা আকাশে সোনার কাগজে,
ম্যাপলের ঝরে পড়া হলুদ গোলাপি বেদনা রঙে,
সাগর যেখানে নীল অপরাজিতার কাছে চিঠি লিখে।
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল! তোমার দেশের বিরহ প্রপাত,
টরকুওয়েন্সি হ্রদ, জলের নূপুর সব জলে আলো।
সব জল ছুঁয়ে আছে ডেইজি, লুপিন, ব্লুবেরি আবেশে।
লুইসির জল দেশে সবুজ পানিতে পাহাড় ঘুমায়।
চর্যাশ্রাবণ চোখে তুমি আমি তারা চিত্রকলায়।
বিপ্রতীপের জলে ভিজেছিল, যুগ, জীবন -বিশ্ব।
ভিজেছিল আমাদের অসাম্যতার পৃথিবী আকাশ।
সার্বভৌম সত্তা বেঁচে থাকে তবু ভুলের বিবরে-
সুরের পূরবী ভরা বুকে কাঁদে, আজো প্রিয় বাংলাদেশ।
এখানে রৌদ্রধান কথা বলে ভোরে শিশিরের টুপটাপ ঘাসে
নদীতে এসে চুমু খায় নীল আকাশভরা অরুণ সূর্যোদয়
পলিমাটির ঘ্রাণে প্রকৃতি নিজের রঙে ভিজে হয় সবুজ
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল! আমি ফিরে যাবো এই আষাঢ়েই।




