Monday, October 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    মৎস্যকুমারী ও অন্যান্য কবিতা

    মৎস্যকুমারী

    সে আসবে
    যখন সময় হবে—
    হয়তো তার ভেজা শরীরে লেগে থাকবে স্রোতের কারুকাজ
    পিছল শরীর থেকে লোনা জল ঝরে পড়বে মুক্তোর মতো
    রূপসী শরীরে লেগে থাকা কয়েকটি বালুকণা হীরের দ্যুতি ছড়াবে ;
    ঘাই মেরে চলে যায় সে এক ঢেউ থেকে আর এক ঢেউয়ে
    চতুর ধীবরও পারেনা তাকে আটকাতে
    জালের জটিল ফাঁদে সহসা সে দেয় না ধরা—
    তবু সে আসে
    যখন সময় হয় ;
    জানে না কেউ—
    কবে কখন কীভাবে কোন ধীবরের জালে আটকাবে সে —
    তার আঁষটে শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়বে কতিবার সুঘ্রাণ,
    ধীবর-কবির জাল ছিন্ন করে এক সময় মূর্ত হয়ে উঠবে সেই মৎস্যকুমারী !

     

    শব্দ-দক্ষিণা

    এক একটি শব্দের ভেতর লুকিয়ে থাকে এক একটি আখ্যান
    অঙ্কুরোদগমের বেদনা-ভার বুকে নিয়ে,
    কিছু কিছু শব্দে মুখ বুজে বসে থাকে গল্প তার ডালপালা নিয়ে
    অকস্মাৎ মাথা চাড়া দিয়ে জেগে উঠবার তাড়নায়,
    কোনো কোনো শব্দে দুএকটি অঙ্গহীন এক একটি কবিতা অপেক্ষা করে
    লাবণ্যময় পরিপূর্ণতা পাবার আশায় ;
    আমি যখন সমুদ্র-ভ্রমণে যাই — দেখি সৈকতে শব্দের বেচাকেনা —
    অসংখ্য শব্দের পশরা সাজিয়ে বসে থাকে দোকানিরা,
    তাদের চোখের ভাষায় ‘শব্দ নেবে গো, শব্দ নেবে’ আকুলতা
    সমুদ্র-বাতাসে যুগল-বন্দি হয়ে মনকে নিয়ে যায় এক অপার আনন্দের দেশে ;
    না—শব্দ কেনে না কেউ
    সবাই কানাকড়িহীন শূন্য দুহাত মেলে ধরে শব্দ-দক্ষিণা পাবার আশায়,
    দোকানিরাও বিনামূল্যে শব্দ-রত্নে ভরে দেয় কখনও কখনও
    কারো কারো দুহাত।

     

    ঝোল ঝাল ঝাঁজের গল্প

    হাতা-খুন্তি পড়ে আছে উননের পাশে দুই যমজ বোনের মতো
    কিছু হলুদ-গুঁড়ো উননের গায়ে লেপটে আছে
    একটি পাত্রে চাল-ধোওয়া জল সামুদ্রিক ঘোলা জলের মতো
    আর একটি পাত্রে আনাজপাতি-উত্তপ্ত লাল মরিচের
    পাশে সুবজের স্নিগ্ধতা
    এসব মামুলি কখনের কোনো প্রয়োজন ছিলো না
    যদি না বাজাতো বাঁশি কবিতা-কানাই মন- স্রোতস্বিনীর কূলে,
    রাধার রান্না এলোমেলো হয়ে যেত
    আমার হয় না
    ঝোল ঝাল ঝাঁজের হিসেব মেলানোর দায়
    আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে আমাকে —
    মুক্তি নেই ;
    তবু বাঁশি বাজে
    উননে কড়াই চাপে
    ঝোল ঝাল ঝাঁজের সুস্বাদু গন্ধে ভরে যায় ঘর
    হৃদয় ভরে না ;
    কে বাজায় বাঁশি গোঠ— গোকুলে !
    কে রাঁধে ব্যঞ্জন এই নির্মল সকালে !
    নটে গাছটিতো মুড়োয় না
    শেষতো হয় না ঝোল ঝাল ঝাঁজের গল্প !

     

    একটি তারা খসে পড়ে যেতে দেখে

    একদিন মধ্যরাতে একটি তারা খসে পড়ে যেতে দেখেছিলাম —
    তখন মনে হয়নি এর কোনো অর্থ আছে,
    ওপরে তারায় তারায় আলোকিত নির্মেঘ আকাশ
    নিচে মানুষের হাতে গড়া আলোয় আলোয় উজ্জ্বল উচ্ছল নগরীগুলো
    আনন্দে হাসছে —
    তবে আপাত সরল এই হাসির আড়ালে কে জানে জমে আছে কতোটা গরল !
    আকাশের একটি তারা খসে পড়ে গেলে
    মাটির মানুষের কিছুই যায় আসে না—
    যেমন এই যে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর মিছিলে হাঁটছি সবাই
    অথচ যার কোনো অর্থ নেই কোনো অভিধানে,
    আর সেখানে একটি তারা খসে পড়ে যাওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে !
    তবু এসব ঘটনা ঘটে—
    কারো বেদনাবোধ প্রাণোচ্ছল নগরীকে স্পর্শ করে না,
    কেউ কেউ ভুলে যাবার ভান করে বেদনা আত্মসাৎ করে,
    তবু মানুষকে বহন করতে হয় মানুষের অপ্রত্যাশিত নির্মম মৃত্যুর যন্ত্রণা-ভার,
    তবু একটি তারা মধ্যরাতে খসে পড়ে মানুষকে ভাবায় ।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.