Saturday, September 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    নিঃসঙ্গ বন্ধুর বৃষ্টিভেজা ছবি

    পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সমাজবিমুখ, বিদ্রোহী, নিঃসঙ্গ ও অন্তর্মুখী তরুণদের আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন মার্কিন অভিনেতা জেমস ডিন। পুরো নাম জেমস বায়রন ডিন। যখন তিনি অনুসরণীয় হয়ে উঠেছিলেন তখন অবশ্য তিনি বেঁচে নেই। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৯৫৫ সনে তার মৃত্যু হয়। গাড়ির রেস ও রেসিং কার ছিল তার দুর্বলতা, তীব্র গতি ছিল তার নেশা। সেই গতিই কেড়ে নেয় তার প্রাণ। দ্রুত গতিতেই শেষ হয়ে যায় একটি দুর্দান্ত ও প্রাণবন্ত জীবন। ডিন এবং তার গাড়ির ম্যাককানিক রল্ফ ওয়েদারিক একটি গাড়ি-দৌড় প্রতিযেগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। গাড়ির গতি ছিল অনেক। পথেই অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে তাদের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ওয়েদারিক বেঁচে গেলেও মারা যান ডিন। অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, ডিনের অনিয়ন্ত্রিত গতিই ছিল দুর্ঘটনার কারণ। পরে ১৯৮১ সনে অন্য সড়ক দুর্ঘটনায় ওয়েদারিক মৃত্যবরণ করেন।

    নিউইয়র্কে এই কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে পরিচয় হয় ফটোসাংবাদিক ও প্রতিবেদক ডেনিস স্টকের, ১৯৫৫ সনের গোড়ার দিকে। দুজনেই তরুণ। স্টক তখন ম্যাগনাম ফটোস-এর পূর্ণ সদস্য। কাজ করেন বিখ্যাত লাইফ ম্যাগাজিনের হয়ে। ডিন তখনো অনেক বিখ্যাত কেউ নন। ডিন অভিনীত ‘ইস্ট অব ইডেন’ সিনেমাটি দেখেই স্টক বুঝতে পেরেছিলেন ডিনের মধ্যে তেজ আছে। তিনি ডিনের সঙ্গে সময় কাটাতে থাকেন এবং লাইফ ম্যাগাজিন সম্পাদকের অনাগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তার ওপর ফটো-স্টোরি করা শুরু করেন। ছবি তোলার আগে ডিন শর্ত দেন তার ছবি যেন লাইফ ম্যাগাজিনের কভার হয়। শর্ত শুনে স্টক ভড়কে যান, ডিনকে তিনি বললেন, এই নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারবেন না, তবে ডিনেন শর্ত তিনি ম্যাগাজিন সম্পাদককে জানাতে পারবেন। ডিন রাজি হয়ে যান। লাইফ-এর ১৯৫৫ সনের ৭ মার্চ সংখ্যায় ডিনকে নিয়ে সেই ফটো-স্টোরি ছাপা হয়, শিরোনাম ছিল, ‘মুডি নিউ স্টার’। ১১টি ছবি দিয়ে করা ফটো-স্টোরিতে প্রাধান্য পায় ডিনের গাম্ভীর্য ও প্রতিশ্রুতিশীলতা।

    এই ফটো-স্টোরির শেষ ছবিটির শিরোনাম, ‘ওয়াকিং ইন রেইন’। ছবিটি নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে তোলা। পুরো পাতাজুড়ে ছাপা হওয়া ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘ডিন নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের মধ্য দিয়ে বেগানার মতো ঘুরে বেড়ান। তিনি বলেন, ম্যানহাটনের ওয়েস্ট সাইডে তার উপরের তলার কক্ষটিকে ঘর মনে হয় না, ইন্ডিয়ানার খামারের চেয়ে তা বেশি কিছু নয়। কিন্তু তিনি মনে করেন, তিনি কোথা থেকে এসেছেন প্রতিনিয়ত তা অনুসন্ধান করার চেষ্টাই একজন অভিনেতা হিসেবে তার শক্তির উৎস।’

    ‘ওয়াকিং ইন রেইন’ শিরোনামের সেই বিশ্বখ্যাত ছবি

    ছবিটিতে দেখা যায়, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে তরুণ চিত্রনায়ক ডিন টাইম স্কয়ারের সড়ক ধরে হাঁটছেন। তার গায়ে লম্বা কোট, ঠোঁটে সিগারেট, হাত দুটি কোটের পকেটে। ছবিটি এমনভাবে তোলা—যেন ডিন জানেনই না তার ছবি তোলা হচ্ছে। যদিও স্টকই ডিনকে তার দিকে হেঁটে আসতে বলেছিলেন। হুট করে দেখলে মনে হবে খুবই সাদামাটা ছবি। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে বুঝা যায়, এই সাদাকালো ছবিতে জেমস ডিনের ধারালো ব্যক্তিত্ব তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে। নির্ঘুম, একাকী, অতৃপ্ত ও বেপরোয়া ডিনের পুরোটাই যেন ছবিতে মূর্ত হয়েছে। টাইম স্কয়ার একটি জনবহুল এলাকা, কিন্তু ছবিটি যখন তোলা হয় গোটা এলাকা প্রায় জনশূন্য (সম্ভবত বৃষ্টির কারণে), সেই জনশূন্য সড়কে আপনমনে হাঁটছেন ‘মুডি নিউ স্টার’। সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডিনের বিমূর্ত প্রতিবিম্ব—যা ডিনের মতোই অস্পষ্ট, রহস্যময়। তার বাঁপাশের দীর্ঘ ধাতব বেষ্টনী দর্শকের দৃষ্টিকে পথ দেখিয়ে ডিনের ওপর নিয়ে যায়।

    ফটোসাংবাদিক ডেনিস স্টক

    স্টক লাইফ ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন ডিনের ওপর ফটো-স্টোরি করতে দুদিন লাগবে। কিন্তু লেগেছিল প্রায় দুমাস। কিন্তু স্টক দুদিনের পারিশ্রমিকই পেয়েছিলেন। বন্ধুত্বের কারণেই হোক বা নিজের ভালো লাগা থেকেই হোক—ফটোসাংবাদিক ডেনিস স্টক মন দিয়ে কাজটি করেছিলেন। আর সে কারণেই আজো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত পোরট্রেটগুলোর একটি ডিনের ‘ওয়াকিং ইন রেইন’। স্টক তার এবং ডিনের সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন, ‘জেমস ডিন : ফিফটি ইয়ার্স এগো’ (২০০৫)। স্টকের স্মৃতিকথা দিয়ে আরেকটি বই করেছেন লিউ ব্র্যাকার, বইটির শিরোনাম ‘মি এন্ড জিমি’। স্টক জেমস ডিনকে ‘জিমি’ বলে ডাকতেন। কোলন ক্যান্সারে ভুগে ডেনিস স্টক ২০১০ সনের ১১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দুজনের অসাধারণ বন্ধুত্বকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে ‘লাইফ’ শিরোনামে একটি অসামান্য সিনেমা তৈরি করেন ডাচ আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আন্তন করবিন। সে সিনেমায় ডিনের চরিত্রে ডেইন ডিহান এবং স্টকের চরিত্রে রবার্ট প্যাটিসন অভিনয় করেছেন।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.