Monday, October 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    দ্য পিয়ানিস্ট ইয়ানী

    পাঁচ তারকা হোটেলের সবচেয়ে ফাইন ডাইন রেস্টুরেন্টে অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য বসে আছি। বিশ্বের অন্যতম উন্নত, সবুজ শহরের প্রতিনিধি আমাদের আমন্ত্রণে আজ সকালে দেশে এসে পৌঁছেছেন, কাল আমাদের আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন, অনুষ্ঠানের পূর্ববর্তী সৌজন্য ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে আমার অফিসের শীর্ষ পদের ব্যক্তিবর্গ এবং একই কমিউনিটির বাংলাদেশের আরও কিছু ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হোস্ট হিসেবে আগে আসা ভীষণ কর্তব্যের ব্যাপার, সবার আগে এসে রেস্টুরেন্টের  আলো আঁধারির মায়ায় বসে থাকতে খারাপ লাগছে না।

    ওয়ার্ল্ড গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সেলিং এর চেয়ারম্যান, আর্কিটেক্ট তাই লী সিয়াং আর তার স্ত্রী ভ্যালেরি আং হাস্যোজ্জ্বল মুখে প্রবেশ করলেন। দুজনেই সিংগাপুরে থাকেন, জন্ম, বেড়ে উঠা, পড়াশোনা সেখানেই , কিন্তু ঘুরেছেন বহু দেশ, শহর। দীর্ঘাংগী এবং সুদর্শন লী সেমিনারের মূল বক্তা, তার সম্পর্কে জানাশোনা অনেক হয়েছে যেহেতু তাঁকে আমরাই আমন্ত্রণ জানিয়েছি আর মেইল আদান-প্রদানে কয়েকবার আলাপ হয়েছ, সশরীরে উপস্থিত হতেই ‘দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে’…। আমার আগ্রহ তার জীবন সংগী, কর্মের সংগী মিসেস  ভ্যালেরি আং কে ঘিরে… দু’জনে মিলে বই লিখেছেন –‘সিটিস অব লাভ- রোডম্যাপ ফর সাস্টেইনিং ফিউচার সিটিস’। তিনিও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিবেন আমাদের সেমিনারে বইয়ের বিষয়বস্তু ঘিরে। ক্ষীণকায় ছোটখাট এই মহিলা খুব মিষ্ট ভাষী, বিনয়ী ব্যক্তিত্বের। সোশাল ওয়ার্কার ভ্যালেরি আং নিজেকে চিত্রশিল্পী হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, কোন বিষয় তাঁকে ছবি আঁকায় অণুপ্রাণিত করেছে… তিনি আমাকে উত্তর দিলেন ‘ইয়ানী! ইয়ানীর পিয়ানো সুর আমাকে চিত্রকর্মে এবং সৃজনশীল হতে চেতনা দিয়েছে’।  ইয়ানী কে চিনেছি,  লম্বা কালো চুলের বেশ ধারালো চেহারার এক ব্যক্তির চেহারা মনে পরে গেলো… বিশ্ব সংগীত নিয়মিত শোনা হলেও তার পিয়ানো মিউজিক তখনও আমার শোনা হয় নি । সিডি ভিসিডির দোকানে গেলেই ‘বেস্ট অব ইয়ানী’ এই ধরণের টাইটেলে ইয়ানীর ছবি সহ এ্যালবাম কভার নিয়মিত চোখে পড়তো… চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বা কোন প্রোগামে হল রুমে, নাটকের শেষ ক্রেডিট টাইটেলে কেনিজি, প্রেম জসুয়া, আনন্দ শংকর শোনা হলেও ইয়ানীর মিউজিক কর্ণকুহরে তখনও পৌঁছায়নি। ভ্যালেরি আং এর দৃষ্টিতে সুদূর ইয়ানী শোনার আহবান। সেই থেকে ইয়ানী শোনা শুরু হলো… নাইটিংগেল, নস্টালজিয়া, রেইন মাসট ফল!…

    ইয়ানী’র সুর প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা প্রভাবিত। শুধু সুর শুনলেই হবে না, এই মানুষটা কে জানতে হবে… তাড়িত হলাম, যার সুর সবার সৃজনশীলতার উৎকর্ষ ঘটাচ্ছে, তাঁকে কী প্রভাবিত করে, সেটা জানার জন্য প্রবল আকর্ষণ অনুভব করলাম। নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার  ইয়ানীর আত্মজীবনী মূলক বই ‘ইয়ানী ইন ওয়ার্ডস’  বইটিতে ইয়ানীর বেড়ে উঠা, ঘাত-প্রতিঘাত, স্বপ্ন, অণুপ্রেরণা, সংগীত সৃষ্টি- এসব বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। ইয়া্নীর বেড়ে উঠা সাধারণই ছিল… তবে সাধারণ থাকা কী তাকে কখনো ভাবিয়েছে? এই ব্যাপারে বইটিতে তার অসাধারণ উক্তি,

    ‘আমরা যে সাধারণ ছিলাম, এই ব্যাপারে আমরা জানতামই না। আমাদের সম্পত্তি ছিল না, কিন্তু কখনও আমরা শীতার্ত, ক্ষুধার্ত বা ভালবাসাহীন ছিলাম না’

    ইয়ানীর মিউজিক শুনে পৃথিবীর প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষরা স্থিরতা পাচ্ছে, শান্তি পাচ্ছে, প্রণোদনা পাচ্ছে… কিন্ত ইয়ানী তার মিউজিকে লেবেলিং করার পক্ষপাতী নন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বার বার বলেছেন, ‘যা তাকে জাগিয়ে তোলে সেখান থেকেই সংগীত রচনার শুরু হয়। তার অন্তরাত্মার প্রতিধবনিই উচ্চারিত হয় সংগীত মূর্ছনায়।’

    ইয়ানীর সম্পূর্ণ নাম ইয়ানীস ক্রিসোমালিস। তিনি গ্রিসের  ক্যালামাটায় ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সেই পিয়ানো বাজানোয় দক্ষতায় সুরের প্রতি তাঁর আকর্ষণ প্রকাশ পায়। ইয়ানীর বাবা মা সবসময়ই যেটি ভাল লাগে, সে পথেই সাফল্য খুঁজে নিতে উৎসাহিত করতেন। সেই বয়স থেকেই রেডিওতে বিশ্ব সংগীত শোনা, সংগীতের ভাষা তো আত্মস্থ করা। বাবা মা মোজার্ট, বাচ, চপিন শুনতেন, ইয়ানীও সুরের জাদুকরদের জাদুতে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল, সক্রেটিস এর দার্শনিক মতবাদও তাকে করেছে প্রভাবিত। ১৪ বছর বয়সে আরেক প্রতিভার খোঁজ মেলে, কোনও প্রকার কোচ আর প্রশিক্ষণ ছাড়াই, জাতীয় সুইমিং প্রতিযোগিতায়  চ্যাম্পিয়ন বনে যান। ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পাঠাবেন বলে ইয়ানীর বাবা মা নিজেদের স্থায়ী বাড়ি বিক্রি করে ভাড়া বাসায় উঠেন। ভাষা প্রতিবন্ধকতা, সাংস্কৃতিক ধাক্কা সব কাটিয়ে ইয়ানী আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৭৬ সালে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন জীবনে তার চলার পথ হবে সুরের পথ। তখন পর্যন্ত তার সঙ্গীত সম্বন্ধে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না। ইউনিভার্সিটিতে পরার সময়ই তিনি চ্যামেলিয়ন নামক একটি গ্রুপে যোগ দেন। চ্যামেলিয়ন এর প্রধান ছিলেন চার্লি আডামস(ড্রামার)। সে সময় চ্যামেলিয়ন সুখ্যাতি লাভ করে বেশ কয়েকটি ট্যুর দিয়ে, বিশেষত মিনেসোটা, লোয়া, ইলিনয়েস, উইস্কন্সিন, সাউথ ডাকোটা প্রভৃতি স্টেটে। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই রক এন্ড রোল ধারায় তিনি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এবারে ইয়ানী সম্পূর্ণ মনোযোগ দেন যন্ত্রসঙ্গীতের উপর। চলে যান লস এঞ্জেলসে এবং চার্লি আডামস ও জন ট্রেশকে নিয়ে একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন।

    সুর-সংগীত মিলে ছিল মিশে ছিল তার দেহ মনে । ১৯৯০ সাল থেকেই তারকাখ্যাতির স্বাদ পেতে শুরু করেন। ১৯৯২ সালে বের হয় তার প্রথম গ্র্যামি মনোনীত অ্যালবাম “ডেয়ার টু ড্রীম”। হাই প্রোফাইল টিভি এবং ম্যাগাজিনে উপস্থিতি বিশেষ করে অপরাহ উইনফ্রে শো তে উপস্থিতি, পিপলস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার তার প্রতিভাকে মেলে ধরে। ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে ইয়ানীর সুর, সংগীতপ্রেমীদের অন্তর ছুঁয়ে অনুভবকে প্রভাবিত করে আসছে। কনসার্টে অর্কেস্ট্রা দলের সাথে তার বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা পুরো বিশ্বকেই জাগিয়ে তোলে। কনসার্টের জন্য তিনি আইকনিক স্থানগুলোকেই বেছে নেন। ভারতে তাজমহল, গ্রীসে এক্রোপলিস, চায়নায় ফরবিডেন সিটি, ব্রিটেনে রয়াল এ্যালবার্ট হলে আয়োজিত কনসার্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার তার জনপ্রিয়তায় অনন্য মাত্রা যোগ করে।

    বিশেষ করে ইয়ানীর সকল জনপ্রিয়তা অনন্য উচ্চতায় ওঠে ১৯৯৩ সালে স্বদেশে এক্রোপলিস কনসার্টে, সমুদ্রতীরে। নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া এই কনসার্টে অনেক অর্থ ব্যয় করে হোম ভিডিও তৈরি করেন ইয়ানী। ১৯৯৪ সালে রিলিজ পায় প্রথম লাইভ এ্যালবাম এবং কনসার্ট ফিল্ম ‘লাইভ এ্যাট এক্রোপলিস’। ভীষণ আবেগের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বিফলে যায় নি, এ্যালবাম মার্কেটে আসতেই সংগীত বোদ্ধা এবং সংগীত অনুরাগীদের নজর কেড়ে নেয়, বিলবোর্ড টপচার্টের ‘নিউ এজ’ মিউজিক বিভাগে শীর্ষস্থান দখল করে নেয় এটি আর নিয়মিত ক্যাটাগরিতে পাঁচ নম্বরে ছিল এর অবস্থান।

    Yanni in Words Hardcover by Yanni

    নিউ এজ মিউজিক ঘরানায় তুমুল জনপ্রিয়  ইয়ানীর কম্পোজিশন। উইকিপিডিয়া ঘেঁটে জানতে পারি আর্টিস্টিক ইন্সপারেশন,  রিলাক্সেশন এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে এই মিউজিক ব্যবহৃত হয়। আরেকটু ভেংগে বলতে গেলে… ইয়োগা, মেডিটেশনের সময় এই ধরণের সুরের মূর্ছনা ব্যবহৃত হয়। এক ধরণের প্রশান্তি বিরাজ করে দেহ মনে, নিউ এজ মিউজিক ঘরানা নিয়ে বিস্তারিত পড়তে পড়তে তিব্বেতিয়ান ভজন ‘ওম’ মানি পদ্মে হাম এর কথা মনে হলো আমার। নেপাল ভ্রমণের সময় সর্বপ্রথম শুনেছিলাম, এ্যালবাম কিনেছিলাম এই …২৪ মিনিট ধরে একটি বাক্যের জঁপ আর বিরতিতে মোহন বাঁশির সুর… এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে ওম মানি পদ্মে হাম এর সময়… সুরের মূর্ছনা শরীর-মনকে আশ্চর্য প্রশান্তি দেয়। ইয়ানীর পিয়ানোর সুরের মূর্ছনা ভীষণভাবে প্রকাশিত, বিকশিত। ইয়ানীর অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রামে তাঁর ‘ট্রুথ অব টাচ’ (‘Truth of touch’) গানের টিজারে লেখা আছে- ‘The energy of a simple touch “says” everything!’  ‘স্পর্শ খুব আলতো একটি ঘটনা, কিন্তু মনের সমস্ত অনুভূতি ঢেলে দিয়ে যে স্পর্শ সেটির গভীর অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে সকল কথা…’ ইয়ানী এই মিউজিক ভিডিওর নিচে হাজার হাজার ভক্তর উচ্ছ্বসিত মন্তব্য পড়ে মনে হয় সেই কবিগুরুর উদ্বেলিত অনুভূতি ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে…তাই দিয়ে মনে মনে রুচি মম ফাল্গুনী’ এই যে আনন্দ শিহরণ পুরোটাই ইয়ানী তার কম্পোজিশনে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন দেশে বড় বড় কনসার্টে অংশ নিয়েছেন সেটির জন্য তিনি তার কম্পোজিশন প্রতিবারেই রিমাস্টারিং করেছেন। লাইভ পারফরম্যান্সে বাজানোর ‘নাইটিংগেল’ বাজানোর সময় তিনি দর্শক শ্রোতাদের উদ্দ্যেশে বলেন- ‘নাইটিংগেল এর সুর রচনা করেছে একজন গ্রিক (ইয়ানী), অণুপ্রানিত ইতালিয়ান পাখির ডাক থেকে, যেখানে একজন ভেনেজুয়েলার বাঁশি বাদক চাইনিজ বাঁশি বাজিয়েছেন… আমরা সবাই এক’ চীনের ফরবিডেন সিটিতে আয়োজিত  কনসার্টে তার সাথে ভেনেজুয়েলার একজন বাজিয়েছেন চাইনিজ বাঁশি… আর নাইটিংগেল– ইটালিয়ান পাখির সুর থেকে অণুপ্রেরণা নিয়ে মিউজিক কম্পোজ করেছেন ইয়ানী।

    ইয়ানীর মিউজিক শুনে পৃথিবীর প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষরা স্থিরতা পাচ্ছে, শান্তি পাচ্ছে, প্রণোদনা পাচ্ছে… কিন্ত ইয়ানী তার মিউজিকে লেবেলিং করার পক্ষপাতী নন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বার বার বলেছেন, ‘যা তাকে জাগিয়ে তোলে সেখান থেকেই সংগীত রচনার শুরু হয়। তার অন্তরাত্মার প্রতিধবনিই উচ্চারিত হয় সংগীত মূর্ছনায়।’ সংগীত সব সময়ই উজ্জীবিত করে, কিন্ত সংগীতকে শ্রেণীবদ্ধ করে আলাদা লেবেল সেঁটে দেওয়ায় ঘোর আপত্তি। ইয়ানীর সোশাল মিডিয়া পেজে ভক্তদের উচ্ছ্বসিত মন্তব্য পড়লে সহজেই বোঝা যায়- ইয়ানীর সুরের মূর্ছনা দিনে কাজের অনুপ্রেরণা, রাতে শান্তির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। নিজের অন্তরাত্মার অনুরণন তার কম্পোজিশনে থাকে যদি মানুষের আত্নার সংযোগ সাধিত সেটা অবশ্যই ইয়ানী অর্জন বলে মনে করেন।

    এক্রোপলিসে কনসার্টে বাজিয়েছিলেন ‘নস্টালজিয়া’…হাজারো শ্রোতাদের ভিতরে ছিলেন তার বাবা মা’ও। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন ইভেন্টের আলোক সম্পাত ব্যবস্থাপনায় যারা ছিলেন তারা মা বাবার মুখের উপর আলোক সম্পাত করেন,  তিনি মঞ্চে বাজাচ্ছিলেন…এই অনুভূতি অবিস্মরণীয় তিনি উল্লেখ করেন। তিনি যেখানেই থাকেন না, জন্মভূমি তার সাথে থাকে…অবিচ্ছেদ্য অংশ।

    ইয়ানীর মেধা আর পরিশ্রম এনে দিয়েছে প্রচুর যশ, সুনাম…পাশাপাশি ছিল রোমান্টিক উপাখ্যান… হলিউডের সেলিব্রিটি লিন্ডা ইভান্সের সাথে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ইয়ানী, প্রায় দশ বছর পর উভয়ের সম্মতিতে সম্পর্কের অবসান ঘটে, তবে তিক্ততা নয়, সম্পর্কের পরিণতি গড়ায় বন্ধুত্বে… জানা গেছে একে অপরকে এখনও শ্রদ্ধা করেন।

    ‘সৃজনশীলতা সবচেয়ে উঁচু স্তরের সহজাত মানব গুণাবলীর ভিতর একটি। যখন আমরা কিছু সৃষ্টি করি, নিজেদের কিছু অংশ ছাপিয়ে তার বেশি কিছু হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে’।

    লিন্ডা ইভান্সের সাথে ছাড়াছাড়ির পর সংগীত জীবনের দুর্দান্ত সময়ে সব কিছু থেকে বিরতি নিলেন দু’বছরের, হয়তোবা গানস এন্ড রোজেস ব্যান্ডের নভেম্বর রেইন গানের সেই লাইনের প্রতিধবনি ধবনিত হয়েছিল –‘everybody needs some time on their own’ – সেই নিজস্ব একান্ত সময় কাটাতে বিদেশী কায়দায় যাকে বলে স্যাববেটিকেল লিভ নেন ইয়ানী। তবে সুর আর সংগীত মিশে আছে তার রক্তে, দু’বছর পর ঠিকই বের করলেন তার স্টুডিও এলবাম- ‘ইফ আই ক্যুড টেল ইউ’, দু’বছরের বিরতিতে এই এলবাম এর কম্পোজিশনে তার একান্ত ব্যক্তিগত এবং আত্মোলব্ধির পর বঃহিপ্রকাশ ঘটেছে, আগের এলবামের সাড়ম্বরপূর্ণ সংগীতায়োজন এখানে অনুপস্থিত। তাঁর ১৩তম এলবামে ইয়ানী নিয়ে আসলেন আবার সেই শক্তিশালী ঝংকা্র। একই বছরে বের হয় তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘ইয়ানী ইন ওয়ার্ডস’। গ্রিসে জন্ম নেয়া ইয়ানী ক্যারিয়ার গড়েছেন আমেরিকায়, বসবাস করেনও সেখানে কিন্তু ঘুরেছেন, কনসার্ট করেছেন নানান দেশে। সুরের ভিতরে তাঁর আনাগোনা ছিল সর্বত্র, নানান দেশের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে কম্পোজিশন হয়েছে মোহনীয়। ইয়ানী তার কনসার্টের সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রায় জুড়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের বাদ্যযন্ত্র দিদদারিজো, আর্মেনিয়া ডুডুক, সেল্টিক ভায়োলিন, ইন্ডিয়ান তবলা এসবের সুর জুড়ে দেন…

    ২০০৪ এর দিকে নর্থ আমেরিকান ট্যুর ব্যাপক সাফল্যের পর ‘ট্রিবিউট’ শিরোনামের কনসার্টে ১৫০ টির মতো শো’তে অংশ নিয়েছিলেন, ১ মিলিয়ন ভক্তরা সুযোগ পায় সরাসরি দেখার। সংগীত নিয়ে মজে থাকা ইয়ানী ইন্সট্রুমেন্টালের পাশাপাশি তাঁর সুরে কন্ঠ দেয়ার ব্যবস্থা করেন, ‘ইয়ানী ভয়েসেস’ শিরোনামে ২০০৯ এ লাইভ কনসার্টও পায় ব্যাপক সফলতা। ২০১০-এ বের হয় এই সংগীত তারকার ১৯তম রিলিজ ‘ট্রুথ অব টাচ’। ইয়ানীর ভাষ্যমতে এই এ্যালবামের গান রচনার পুরো সময়টি ছিলো দারুণ উপভোগ্য, সুর সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াটি ছিল অনায়াস লব্ধ, প্রবাহিত ফল্গুধারা… এ্যালবামের প্রতিটি কম্পোজিশনও সেই ধারায় প্রস্ফুটিত। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় এ্যালবাম ‘সেন্সুয়াস চিল’।

    প্রিয়দর্শন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ইয়ানী দারুণভাবে উপভোগ করতে জানেন জীবনকে…সঙ্গীত জীবনের উজ্জ্বলতা ছাপিয়ে ব্যক্তিগত জীবন কখনোই পাদ প্রদীপের আলোয় আনেননি। দারুণ জীবনীশক্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশে ট্যুর করে বেড়াচ্ছেন, সাথে আছে তার একমাত্র মেয়ে, যে বাবার সোশাল মিডিয়া এবং কনসার্টের যাবতীয় বিষয়গুলো দেখাশোনা করছে। সুইমিং ভালোবাসেন এখন এবং পারংগম আগের মতোই। ইয়ানী ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে উচ্ছ্বসিত ভক্তদের সাথে নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছেন। ইয়ানীর সৃজনশীলতার শিখর তার মনোজগতের শেকড় থেকে উৎসারিত-

    ইয়ানীর উদ্ধৃতি আমাদের হৃদয়ভূমিকে জাগ্রত করে –

    ‘সৃজনশীলতা সবচেয়ে উঁচু স্তরের সহজাত মানব গুণাবলীর ভিতর একটি। যখন আমরা কিছু সৃষ্টি করি, নিজেদের কিছু অংশ ছাপিয়ে তার বেশি কিছু হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে’।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.