Monday, October 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    ত্বহা হুসাইনের দিনগুলি

    বারো
    কিন্তু আলফিয়া!.. আলফিয়া সম্পর্কে কী জানো তুমি? মনে কর আমাদের শিক্ষক এই কিতাবের একটি শব্দও মুখস্থ করেননি। এও মনে কর, আরিফ এই পুস্তকের প্রথম স্তবকটিও ভালোভাবে পড়তে পারবে না। আলফিয়া হচ্ছে কাব্য। আর কোরানে তো কাব্য নেই।

     

    যদিও মাস অতিক্রান্ত হয়। আযহার থেকে ভাইও ফিরে আসে। কিন্ত তার অবস্থা যেমন ছিল তেমনই রয়। না সে কায়রো যেতে পারে, না তার আরাধ্যের জোব্বা, পাগড়ি পরিধান করতে পারে। কারণ এখনও সে এত ছোট যে, অতদূর কায়রোতে পাঠানো অসম্ভব। অধিকন্তু ভাইও তাকে সঙ্গে নিতে চায় না। তাই সে তাকে বোঝায়, তার বরং আরও এক বছর এখানে থাকা উচিত। সুতরাং সে থেকে যায় এবং কেউ জানতেও চায় না, সে খুশি না বেজার। অবশ্য এসময় তার জীবনের রীতি ও ব্যাপ্তিতে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কারণ তার আযহারে পড়ুয়া ভাই তাকে উপদেশ দিয়ে গেছে, আযহারে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এই এক বছর যেন পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। সে মতে ভাই তাকে বিশেষ দুটি (কিতাব) বইও দিয়ে গেছে। যার একটি তার সম্পূর্ণ মুখস্থ। অন্যটির বিশেষ কিছু অধ্যায় পাঠ করেছে সে।
    যে কিতাবটি সে পুরো মুখস্থ করেছে, তা হলো: ‘আলফিয়াতু ইবনে মালেক।’ আর অপরটি ছিল : ‘মাজমুউল মুতুন।’ সুতরাং আযহারি তার সফরের আগে আরও একবার তাকে ভালোভাবে অসিয়ত করে যায় যে, শীঘ্রই যেন সে আলফিয়া মুখস্থ করা শুরু করে। তারপর যখন তা চূড়ান্ত রূপে মুখস্থ করবে তখন অন্যান্য বইপুস্তক থেকেও কিছু নতুন, অপরিচিত বিষয়াদি পড়বে। ওগুলোর কিছু অংশের নামকরণ করা হয়েছে, ‘আল জাওহারা’ কিছু ‘আল খারিদাহ’ কিছু ‘আস সিরাজিয়াহ ও আর-রাহবিয়্যাহ’ আর কোনো অধ্যায়ের নাম ‘লাময়াতুল আফআল’ করে। এদিকে বিবিধ এ নামসমূহ বালকের হৃদয়ে এক আলাদা সম্ভ্রম ও অভূতপূর্ব বিস্ময় স্থান করে নেয়। কারণ ওসবের কোনো অর্থই বুঝতে পারেনি সে, অথবা ভেবে নিয়েছে ওগুলো শেখার প্রতি একটা ইঙ্গিত করা হয়েছে। তদুপরি এ কারণেও যে, সে জানে তার আযহারি ভাই ওগুলো পড়েছে, বুঝেছে ও ভালোভাবে মুখস্থ করেছে। তা পড়ার পর সে জ্ঞানী হয়েছে। অধিকন্তু সে তার বাবা-মা ভাই ও গ্রামের সবার কাছেই নিজের স্বতন্ত্র এক স্থান অর্জন করেছে। কেন তারা সবাই কি তার আগমনের একমাস আগ থেকেই তাকে নিয়ে কথাবার্তা শুরু করে না? এমনকি যখন সে আসে, তখন সকলেই তো দলবেঁধে তার কাছে ছুটে যায়। তার সবরকম যত্নআত্তিতে তাদের অস্থিরতা বেড়েই চলে সারাটা ক্ষণ। তাছাড়া বাবা কি তার প্রতিটা কথাই জলপানের মত গিলে ফেলে না? তারপর প্রবল বিস্ময় ও গর্বে মানুষের কাছে তা পুনরাবৃত্তি করে না! তাছাড়া গ্রামের বাসিন্দারাও কি তার কাছে (তাওহিদ) একত্ববাদ ও (ফিকহ) আইনশাস্ত্র বিষয়ক একটি বক্তৃতার জন্য সর্নিবন্ধ অনুরোধ জানায় না? আর তওহিদই বা কি এবং ফিকহই বা কি? এরপর পুনরায় কি বাবা তার কাছে মিনতি করে শুক্রবারে জনসম্মুখে জুমার খুতবা দেওয়ার অনুরোধ জানায় না? যা সে পূরণ করতে পারে আবার ইচ্ছে হলে নাও করতে পারে।
    তারপর সেই স্মরণীয় দিন তথা ঈদে মিলাদুন্নবিতে কী সম্মান, শ্রদ্ধা আর অবারিত প্রশংসাই না আযহারি পেয়েছিল! তারা তার জন্য নতুন কাফতান, জুব্বা, জুতো ও পাগড়ি খরিদ করে আনে। এবং এইদিন সম্পর্কে নিরবিচ্ছিন্ন আলাপ-আলোচনা করতে থাকে যে, কবে তা আসবে ও শেষ হবে। অবশেষে সেই দিন আসে এবং দিনের অর্ধেক গত হয়। পুরো পরিবার খাবারদাবার খেতে তাড়াহুড়ো করে এবং সামান্যই খায় তারা। আযহারি যুবা তার নতুন পোষাক পরিধান করে। তারপর নতুন সবুজ পাগড়িটি মাথায় চড়িয়ে কাশ্মিরি সাল কাঁধে জড়ায়। মা তখন দোয়াদরুদ পড়ে তার কপালে ফুঁক দেয়। আর বাবা আনন্দ ও উত্তেজনায় বারবার ঘরে বাইরে যায়। অতঃপর যুবক যখন তার বেশভূষা ঠিক করে পরিপাটি হয়ে বাইরে বেরোয়, দেখে দরজায় তার জন্য ঘোড়া অপেক্ষমান। অশ্বারোহী সসম্মানে তাকে ঘোড়ার পিঠে তুলে নেয়। চারদিকে অসংখ্য মানুষের ভীড় তার সাথে হেঁটে যায়। আকাশে গুলি বর্ষণ হয় আর চারপাশ থেকে নারীরা উলুধ্বনি করে।

    বাতাসে তখন ধূপের সুগন্ধি ছড়ানো। গানে গানে উচ্চকিত হয়ে উঠেছিল নবীর প্রশংসা। বিরাট জনতার এই ঢল খুব ধীরে চলছিল; এমন লাগছিল যেন, পুুরো পৃথিবী ও এর ওপর স্থাপিত সমস্ত বাড়িঘরও তাদের সাথে চলছে। আর এই সবকিছু এ কারণেই যে, আযহারি এই যুবককে আজ খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে অবশ্যই তারা তার সাথে বিশাল এ শোভাযাত্রা নিয়ে শহর হয়ে পুরো গ্রামের চারপাশে ঘুরবে। আর কেনইবা অন্যান্য যুবাদের ছেড়ে তাকে খলিফা নির্বাচন করা হলো? কারণ এই আযহারি যুবা পড়াশোনা শিখেছে। আলফিয়া, আল জাওয়াহিরা, আল খারিদা ইত্যাকার পুস্তকাদি মুখস্থ করেছে। যাহোক, তো শনিবার সকালে যখন দুহাতে জড়িয়ে আলফিয়ার একটি কপি নিয়ে সে মক্তবে যায়; তখন কী খুশিই না ছিল সে। যেন ওই পুস্তকটি তার মর্যাদা কয়েক স্তর উন্নীত করে দিয়েছে। যদিও তা ছিল বেশ পুরনো, ছেঁড়া আর দুর্বল বাঁধানো। তবু ওটার সমস্ত মলিনতা ও জীর্ণতা সত্ত্বেও তার কাছে তা সহপাঠীদের সামনে পঞ্চাশটি কোরানের সমতুল্য মনে হয়েছিল। কোরান! যার পুরোটাই সে মুখস্থ করেছিল। কিন্তু ওই মুখস্থ থেকে কোনো লাভই হয়নি তার। অধিকন্তু বহু যুবকই তা মুখস্থ করেছে। কিন্তু কেউ তাদের দিকে কোনো মনোযোগ দেয়নি। আর না তারা মিলাদুন্নবি দিবসে খলিফা নির্বাচিত হয়েছে।
    কিন্তু আলফিয়া!.. আলফিয়া সম্পর্কে কি জানো তুমি? মনে কর আমাদের শিক্ষক এই কিতাবের একটি শব্দও মুখস্থ করেননি। এও মনে কর, আরিফ এই পুস্তকের প্রথম স্তবকটিও ভালোভাবে পড়তে পারবে না। আলফিয়া হচ্ছে কাব্য। আর কোরানে তো কাব্য নেই। মূলত সেখানে এই স্তবকটি অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার হৃদয় আনন্দে ভরে তুলেছিল।
    ‘এইভাবে মুহাম্মদ বলেছিলেন, মালেকের ছেলে তিনি/ আমি আমার রব আল্লার প্রশংসা করি; সর্বেশ্রেষ্ট যিনি।’
    ….
    * আলফিয়াতু ইবন মালেক : তের শতকের আরবি
    ব্যাকরণবিদ, ভাষাতাত্ত্বিক, সাহিত্যিক ও বিখ্যাত পণ্ডিত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.