Monday, October 27, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    ত্বহা হুসাইনের দিনগুলি

     নয়.

    জীবনের সমস্ত কিছুতে সে ছিল ব্যর্থ ও দূর্ভাগ্যপীড়িত। হেন কোনো কাজ নেই যাতে চেষ্টা করেনি। কিন্তু সে এমনই হতভাগ্য যে, কিছুতেই সফল হতে পারেনি। তার বাবা তাকে অসংখ্য কারুশিল্পীদের কাছে পাঠিয়েছেন তাদের কাজ শেখার জন্য। কিন্তু বরাবরের মত সে ব্যর্থই হয়েছে। এরপর তিনি তাকে এক চিনি কারখানায় অন্তত একজন শ্রমিক, প্রহরী বা নিতান্ত এক সেবক হিসেবেও কাজে লাগাতে চেয়েছেন-কিন্ত এসবের কোনটিতেই সে উত্তীর্ণ হতে পারেনি

    সুতরাং ঐ সময় থেকেই আমাদের শিক্ষকের সাথে বালকের শিক্ষাকার্যক্রম সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে এবং সে আরিফের তত্বাবধানে চলে আসে। এদিকে আরিফও আমাদের শিক্ষক থেকে কোনো অংশে কম অদ্ভুত ছিল না। সে ছিল সরু ও লম্বা। কয়লার মত কালো এক যুবক। তার বাবা ছিলে সুদানীয় আর মা মিশ্র বংশের।
    জীবনের সমস্ত কিছুতে সে ছিল ব্যর্থ ও দূর্ভাগ্যপীড়িত। হেন কোনো কাজ নেই যাতে চেষ্টা করেনি। কিন্তু সে এমনই হতভাগ্য যে, কিছুতেই সফল হতে পারেনি। তার বাবা তাকে অসংখ্য কারুশিল্পীদের কাছে পাঠিয়েছেন তাদের কাজ শেখার জন্য। কিন্তু বরাবরের মত সে ব্যর্থই হয়েছে। এরপর তিনি তাকে এক চিনি কারখানায় অন্তত একজন শ্রমিক, প্রহরী বা নিতান্ত এক সেবক হিসেবেও কাজে লাগাতে চেয়েছেন-কিন্ত এসবের কোনটিতেই সে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
    এরপর তার বাবা তার থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং তাকে যারপরনাই অবজ্ঞা ও ঘৃণা শুরু করেন। তখন প্রায়ই তিনি তার কাছে তার অন্য ভাইদের উদহারন টেনে খোটা দিতেন যে, কীভাবে তারা কাজ করে টাকা উপার্জন করছে।
    অবশ্য এই কৈশোরে সে নিয়মিত গ্রামের মকতবে যাওয়া আসার ফলে পড়তে ও লিখতে শিখেছিল। এমনকি কোরানের কিছু সূরাও মুখস্থ করেছিল; অতি শীঘ্রই যেসব ভুলে গিয়েছিল সে। ফলে জীবন যখন চারদিক থেকে তার ওপর সংকীর্ণ হয়ে আসে তখন আমাদের শিক্ষকের কাছে নিজের এই দুর্দশার অভিযোগ করে আরিফ। সব শুনে আমাদের শিক্ষক তাকে বলেন, ‘এখানে চলে এসো। তোমার দায়িত্ব হচ্ছে, বাচ্চাদের পড়া ও লেখা শেখানো। সর্বদা তাদের তদারকি করবে ও খেলাধুলা থেকে বিরত রাখবে। আর আমার অনুপস্থিতে আমার জায়গায় বসবে। অবশ্য আমিই তাদের কোরান শেখাব ও মুখস্থ করাব। তদুপরি তোমার আরও কিছু মূল কাজ হচ্ছে, রোজ সূর্য ওঠার আগে মকতব খুলবে এবং ছাত্ররা উপস্থিত হওয়ার আগে সবকিছু পরিচ্ছন্ন আছে কি-না খেয়াল রাখবে। তারপর সন্ধ্যায় মাগরিবের পর মকতব বন্ধ করে নিজের সঙ্গে চাবি নিয়ে যাবে। সর্বোপরি তোমার ওপর এসব ন্যস্ত করার মানে, এক কথায় তুমি আমার ডান হাত হবে। বিনিময়ে মকতবের আয়কৃত মুনাফা থেকে তোমার জন্য এক চতুর্থাংশ বরাদ্দ। তা তোমাকে প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে যথা সময়ে প্রদান করা হবে।’
    এভাবেই এই দুই ব্যক্তির মাঝে উপরোক্ত চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং উভয়েই সূরা ফাতেহা পাঠের মাধ্যমে তা পুরোপুরি কার্যকর করেন। এরপর থেকে আরিফও তার কাজ শুরু করে।
    এখন এই আরিফই আবার আমাদের শিক্ষককে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। যদিও উপরে উপরে সর্বদাই সে তার তোষামোদ করে চলে। অন্যদিকে ঠিক একইভাবে আমাদের শিক্ষকও আরিফকে যারপরনাই ঘৃণা করেন। কিন্তু সেও তা প্রকাশ করে না এবং সর্বদাই হাসিমুখে সন্তোষ প্রকাশ দেখায়।

    যদিও এই চুক্তিপত্র তিনদিনের বেশি টেকেনি। কেননা প্রথম দিনই বালক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় দিন আরিফ। আর তৃতীয় দিন তারা উভয়েই একে অপরের কাছে তাদের এই পারস্পরিক একঘেয়েমির কথা জানিয়ে দেয়। ফলে চতুর্থদিন তাদের এই চুক্তি হয় যে, বালক নিজেই আরিফের সামনে নির্ধারিত ওই ছয় পারা পাঠ করবে

    আরিফ আমাদের শিক্ষককে ঘৃণা করে; কারণ তিনি একজন চিহ্নিত ঠগ ও মিথ্যুক। প্রায়ই তিনি আরিফের কাছে আয়কৃত মুনাফার কিছু অংশ লুকোন এবং শিশুদের আনা খাবারদাবার একাই খান। তদুপরি আরিফ তাকে এ কারণেও ঘৃণা করে যে, তিনি ছিলেন অন্ধ; কিন্তু দেখার ভান করেন। এছাড়াও তার কণ্ঠ ছিল অসহ্য; কিন্তু এমনভাব করেন যেন সুমিষ্ট সুরের অধিকারী তিনি।
    অন্যদিকে আমাদের শিক্ষকও আরিফকে ঘৃণা করেন। কারণ সে ছিল এক নম্বরের ধূর্ত ও প্রবঁচক। প্রায় অধিকাংশ বিষয়ই সে তার থেকে লুকায়; যা তার বলা প্রয়োজন ছিল। তদুপরি সে হলো আস্ত একটা চোর। প্রায় দুপুরেই তাদের দুজনের জন্য যে খাবার আনা হয়; তা থেকে বিশেষ আইটেমগুলো নিজের জন্য আলাদা করে রাখে। এছাড়াও মকতবের বড় ছাত্রদের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত ফাঁদে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে খেলাধূলা করে। ফলে আসরের পর যখন মকতব বন্ধ করা হয়; তখন তাদের সঙ্গে সে ওই তুঁত গাছ, ব্রীজের নীচ অথবা চিনি কারখানায় গিয়ে বৈঠকে বসে।
    তবে অদ্ভুত বিষয়টি ছিল পরস্পর তাদের এমন ঘৃণা ও আক্রোশ থাকা সত্বেও বাহ্যত তারা যেন পুরোপুরি ঠিক। মূলত তারা একে অপরের সাহায্যে বাধ্য ছিল। একজন তার জীবন-জীবিকার জন্য। অপরজনের তার মকতব পরিচালনার জন্য কাউকে প্রয়োজন ছিল।
    সুতরাং আমাদের বালক বন্ধুটি যথারীতি আরিফের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় এবং প্রতিদিন তাকে ছয় পারা কোরান শোনায়। যদিও এই চুক্তিপত্র তিনদিনের বেশি টেকেনি। কেননা প্রথম দিনই বালক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় দিন আরিফ। আর তৃতীয় দিন তারা উভয়েই একে অপরের কাছে তাদের এই পারস্পরিক একঘেয়েমির কথা জানিয়ে দেয়। ফলে চতুর্থদিন তাদের এই চুক্তি হয় যে, বালক নিজেই আরিফের সামনে নির্ধারিত ওই ছয় পারা পাঠ করবে। তবে কোথাও যদি সে ভুলে যায় অথবা জড়িয়ে যায়-তখনই সে কেবল আরিফের কাছে জিজ্ঞেস করবে।
    সুতরাং চুক্তিমত রোজ ভোরেই বালক মকতবে চলে আসে। আরিফকে সালাম দিয়ে সামনে মাটিতে বসে এবং তার ঠোঁট নাড়ানো শুরু করে। এমনভাবে গুনগুন করতে থাকে যেন সে কোরান পড়ছে। এরমাঝে নিয়মমাফিক কখনও কখনও সে আরিফকে কোনো শব্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। ফলে আরিফ কখনও তাকে জবাব দেয় কখনও উপেক্ষা করে। এদিকে আমাদের শিক্ষক নিয়মিত যোহরের কিছু পূর্বে মকতবে আসতেন। তারপর সালাম দিয়ে বসার পর তার প্রথম কাজই ছিল বালককে ডাকা এবং জিজ্ঞেস করা, ‘পড়ছো তো?’
    ‘জ্বী’
    ‘কোথা থেকে কোথায়?’
    বালক জানায়, শনিবার ‘সূরা বাকারা’ থেকে ‘লাতাজিদ্দান্না’ পর্যন্ত। ‘লাতাজিদান্না’ থেকে ‘ওমা উবাররীয়ু’ পর্যন্ত রবিবার।’
    এভাবেই সে ফকীহদের সম্মতিসূচক পদ্ধতিতে কোরানকে ছয় ভাগে ভাগ করেছে। আর প্রতি পাঁচ দিন অন্তর একটি অংশ আলাদা করে রাখে; যেন শিক্ষক জিজ্ঞেস করলে তাকে ঠিকঠাক বলতে পারে।
    কিন্তু এই চুক্তিতেও আরিফ সন্তোষ ছিল না। যাতে তার ও বালকের জন্য অবিশ্রান্ত বিশ্রাম ছিল। ফলে সে আরও সুবিধার লোভে বারকয়েক আমাদের বালককে ভয় দেখায়, অচিরেই সে শিক্ষককে জানাবে যে, কিছু সূরা তার ভালোভাবে মুখস্থ হয়নি। যেমন, সূরা হুদ, সূরা আহযাব, সূরা আম্বিয়া ইত্যাদি। এদিকে বালকও যেহেতু মাসের পর মাস কোনোরূপ তেলাওয়াত না করার কারণে প্রায় সবই ভুলেছে এবং শিক্ষকের কাছে কোনোপ্রকার পরীক্ষা দিতেও নারাজ। তাই যেকোনো মূল্যেই সে আরিফের নিশ্চুপতা ক্রয় করতে বাধ্য হয়। সুতরাং কতবার যে সে আরিফকে পকেট ভর্তি রুটি, পেস্ট্রি ও শুকনো খেজুর দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! এছাড়াও সময়ে সময়ে বাবার দেয়া পিয়াস্টারগুলো (মিশরীয় মুদ্রার এক পাউন্ডের শতভাগ) কত যে দিতে হয়েছে-তারও হিসেব নেই। যেগুলো দিয়ে বহুদিনই সে একপ্রস্ত পুদিনা পাতার সুগন্ধি খরিদ করতে চেয়েছে!

    আকুলভাবে পুরো টুকরোটা কিবা তা থেকে কিছু অংশ হলেও তার খেতে ইচ্ছে করেছিল খুব। কিন্তু নির্লজ্জ আরিফ প্রতিবার তার হাত থেকে ওটা নিয়ে সামান্য পানি আনার নির্দেশ দিত

    এভাবে কতদিন মায়ের পিছু পিছু ঘুরে পুরু একটা পেস্ট্রির টুকরো নিয়েছে সে! কিন্তু মকতবে পৌঁছেই ওটা আরিফের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছে। যদিও আকুলভাবে পুরো টুকরোটা কিবা তা থেকে কিছু অংশ হলেও তার খেতে ইচ্ছে করেছিল খুব। কিন্তু নির্লজ্জ আরিফ প্রতিবার তার হাত থেকে ওটা নিয়ে সামান্য পানি আনার নির্দেশ দিত। পানি এলে চিনির পুরিয়াটি তাতে ডুবিয়ে দিত। এরপর পুরোপুরি মিশে গেলে প্রবল আনন্দে সে তা গলধকরণ করত। এমন বহুদিন গেছে যে উদগ্র ক্ষুধার পরও দুপুরে বাড়ি থেকে আনা খাবার সে খেতে পারেনি। আরিফকে দিয়ে দিতে হয়েছে। যেন আরিফ তা খায় আর বিনিময়ে শিক্ষককে এ কথা না বলে যে, ‘ভালোভাবে কোরান মুখস্থ করেনি সে।’
    তথাপি ধারাবাহিক এ আনুকূল্য দ্রুতই তাকে আরিফের অনুষঙ্গ অর্জন নিশ্চিত করে এবং আরিফ তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। ফলে প্রত্যহ দুপুরের খাবারের পর আরিফের সঙ্গে সে মসজিদে যোহরের নামাজ আদায় করতে যায়।
    এভাবে ধীরে ধীরে সে তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং তার ওপর আস্থা রাখে। এরপর এক সময় সে তার কাছে অনুরোধ করে যে, সে যেন তাকে অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে কোরান পাঠের অনুমতি দেয় এবং তাদের কাছ থেকে তা শোনার; যারা তা মুখস্থ করছে অথবা দ্বিতীয় বার পড়ছে।
    এখানে আমাদের বন্ধুটি ঠিক তাই করে যা আরিফ তার সঙ্গে করেছিল। অর্থাৎ ছাত্রদের সামনে বসে তাদের তেলাওয়াতের জন্য বলত এবং এরপরই সে তার বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্পে মশগুল হয়ে যেত। এভাবে দীর্ঘক্ষণ পর যখন তার গল্পগুজব শেষ হত; তখন সে পুনরায় ছাত্রদের দিকে মনোনিবেশ করত। এ-সময় তাদের মাঝে যদি কোনোপ্রকার খেলাধুলা, অলসতা বা বিশৃঙ্খলা উপলব্ধি হত; তাহলে প্রথমে সে তাদের সাবধান করে দিত। তারপর ধমকাত, মারত, অবশেষে আরিফের কাছে নালিশ করত।
    আসলে সত্যি বলতে তার ছাত্রদের চেয়ে ভালো হাফেজ ছিল না সে। কিন্তু আরিফ তার সাথে এই রীতি গ্রহণ করেছিল। তাই সে নিজেও একজন প্রকৃত আরিফ হতে বাধ্য। আর আরিফ যদি তাকে কোনোপ্রকার গালিগালাজ না করে থাকে, মার না দেয় অথবা তার সম্পর্কে শিক্ষকের কাছে কিছু না বলে থাকে-তাহলে তা এ কারণে যে, এসবের জন্য সে তাকে বেশ চড়া মূল্য দিয়েছিল।
    এদিকে অনতিকালমধ্যে ছাত্ররাও বিষয়টি বুঝে যায় এবং তারাও প্রতিনিয়ত তাকে নজরানা দেয়া শুরু করে। অতএব ইতিপূর্বে যা কিছু সে আরিফকে দিয়েছে, এখন তাদের থেকে তা পইপই উসুল করে নিচ্ছে। ওসব ঘুষ বা নজরানা ছিল নানা প্রকারের। যেসব সে তার ঘরেই পেত। তাই ঐ রুটি, খেজুর বা চিনির পেস্ট্রি তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। অথচ এদিকে আবার সে তাদের থেকে পয়সাকড়িও নিতে সক্ষম না। আর তা নিয়ে করবেটাই বা কী! যেহেতু সে তা একলা খরচ করতে পারবে না। কারণ সে ভেবে দেখে, যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে তা প্রকাশ পেয়ে যাবে এবং সে অপমানিত হবে। সুতরাং দ্রুতই সে একজন কড়া তত্বাবধায়ক হিসেবে রূপান্তরিত হয় এবং কার্যত সন্তোষ থাকা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে ছাত্ররাও কৌশলে তাকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে ওসব রুটি, চিনির পরিবর্তে সুগন্ধি পাতা, মিছরি, তরমুজের বিচি ইত্যাদি এনে দেয়। যেসবের বেশীরভাগই সে আরিফের কাছে পেশ করে।
    তবে এই সবকিছুর ভেতর বিশেষ এক প্রকার ঘুষ; তাকে বেশ তাজ্জব করেছিল। তার কাছে তা ভীষণ মনোজ্ঞও ঠেকেছিল। যার ফলে নিজের দায়িত্বকে চূড়ান্ত লজ্জাজনকভাবে অবহেলা করেছিল সে। তা ছিল বিভিন্ন গল্প, রূপকথা ও পুস্তকাদি। সুতরাং ছাত্রদের কেউ যদি তাকে একটি গল্প শোনাতে পারে অথবা গ্রামে ঘুরে বেড়ানো হকার থেকে একটি বই কিনে দিতে পারে কিংবা ‘আলজির সালেম ও আবু যায়েদ’ এর একটি গল্প শোনাতে পারে, তাহলে এর আনুকূল্য হিসেবে যা খুশি সে করতে পারে। এমনকি তার বন্ধুত্ব, সাহচর্য ও পক্ষপাতিত্বও লাভ করতে পারে।
    এই বিষয়ে তার ছাত্রদের মাঝে সবচেয়ে পারদর্শী ছিল নাফিসা নামের এক অন্ধ বালিকা। তার পরিবার তাকে কোরান মুখস্থ করার জন্য গ্রামের মকতবে পাঠিয়েছিল। সেও পারঙ্গমতার সাথে বেশ সন্তোষজনকভাবে কোরান মুখস্থ করেছিল। তখন আমাদের শিক্ষক তাকেও আরিফের তত্বাবধানে দিয়ে দেন আর আরিফ তাকে আমাদের বন্ধুর কাছে হাওলা করে। এদিকে আমাদের বন্ধু বালিকাটির সাথে ঠিক তাই করেছিল; আরিফ তার সঙ্গে যেমন করেছিল।
    মেয়েটির পরিবার ছিল যথেষ্ট ধনী। যে নিছকই এক নির্বোধ ব্যক্তি থেকে ধনবান ব্যবসায়ী হিসেবে উন্নতি লাভ করেন। যিনি তার পরিবারের জন্য অবাধে খরচ করতেন এবং জীবনের সমস্ত ভোগবিলাসই তাদের কাছে অর্পন করেছিলেন। ফলে নাফিসা কখনোই অর্থহীন ছিল না। ঘুষ প্রদানে শিশুদের মাঝে সেই সবচেয়ে সক্ষম ছিল।
    এছাড়াও সে ছিল সবার চেয়ে সেরা গল্পকার এবং সবচেয়ে সেরা উদ্ভাবক। যেমন, যেকোনো মুহুর্তে চাইলেই সে একটি দুরন্ত গল্প বানাতে পারত। সেইসাথে সে জানত অসংখ্য গীত। তার হৃদয়গ্রাহী গলায় ওসব গান ও বিলাপে সে ছিল সমান পারদর্শী। তবে সে ছিল কিছুটা ছিটগ্রস্ত ও অদ্ভুত স্বভাবের।
    ফলে আমাদের বন্ধুটি বেশীরভাগ সময়ই তার কথাবার্তা, গল্প ও শোকসংগীত শ্রবণে আচ্ছন্ন থাকত। সেইসাথে তার থেকে বিভিন্ন রকমের ঘুষও গ্রহণ করত। তাই যখন থেকে আমাদের বন্ধু এই ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার সাথে জড়ায় এবং একইসাথে প্রতারণা করে ও প্রতারিত হয়; তখন থেকেই ধীরে ধীরে কোরান তার হৃদয় থেকে, এক আয়াত দুই আয়াত, এক সূরা দুই সূরা করে মুছে যেতে শুরু করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত সেই ভয়ানক অশুভ দিন চলে আসে।… আহ কী সাংঘাতিক দিনই না ছিল সেটা!

     

    *আলজির সালেম : এটা মূলত ধারাবাহিক ঐতিহাসিক সিরিয়ান গল্প; যেখানে উকবা ইবনে রাবিয়ার বীরত্বগাঁথা চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে যিনি একজন কবি ও খ্যাতিমান অশ্বরোহী ছিলেন। সেইসাথে আলবাসুস যুদ্ধে তার অংশ্রগহনের ঘটনাকে ঘিরেই আলজির সালেমে তার গল্প আবর্তিত হয়েছে।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.