Sunday, October 26, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    ১০টি এয়া

    এয়া-১

    তখন একা একা হাঁটতুম, একা মানে একাই, যাওয়া থাকত না, দাঁড়ানো
    থাকত না, শোনা থাকত না, বলা থাকত না, ফেরা থাকত না, তোমাকে দেখা
    বা না দেখার ভয়ও থাকত না, শুধু রাত্রির কথা বলা থাকত।
    সে রাতের সংঘর্ষে থিয়া রক্তাক্ত হয়েছিল, রক্তগুলো কয়েক'শ আলোকবর্ষের
    বৃষ্টি, বৃষ্টিরা হাসছিল জোছনা, অথবা কাঁদছিল- ফ্যাকাসে বোবা কান্না। নীল
    রাঙা সবুজে জীবন ফুটছ, আর হাসছ অথবা কাঁদছ, আমি হাঁটতুম আর সেই
    কান্নাফুলের গন্ধে ডুবে যেতে থাকতুম, ডুবতে ডুবতে পৃথিবীর ওপর এক হাত
    রেখে দাঁড়াতুম
    আলোর কসম, আমি একা এবং একাই তোমার দিকে হাটঁছিলুম,
    পৃথিবীর সব ডাক তোমাকেই ডাকছিলুম।

     

    এয়া-২

    ধর,
    আমাদের মনেপড়াগুলো দূরে গেল। গেল ফুল ফুটতে, ফসল ফলতে
    বনে আগুনের প্রতিবাদে- জলে আগুন দিতে।
    কিংবা মানুষের সঙ্গে সবুজের দূরত্বের ইতিহাস লিখতে।
    আমাদের দেখাগুলো গেল দৃশ্যের সাথে ছায়ার সম্পর্ক বুঝতে
    দু’দিনের বাঁকা চাঁদের মতো তোমার অভিমান খুঁজতে,
    অথবা তোমার কপাল ছোঁয়া একটি বিশেষ নীলের খোঁজে

    পাহাড়ের তলদেশে…
    ধর,
    আমাদের মনেপড়াগুলো দূরে গেল, গেল ফুল ফুটতে, ফসল ফলতে।

     

    এয়া-৩

    চলো হাটে যাই, ফুলগুলো সাজাই
    চোখের ভালোবাসার জলের দোহাই
    ক’ফোঁটা আবেগ ছিটিয়ে নদীটি জাগাই
    যেতে যেতে সে রাতের গল্প করি।
    এখনও তোমার অভিমান
    রাতের মিনারে নীল নামে ফোটে
    চলো যাই-
    তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে
    পৃথিবীর হাতে মুখে ফসলের গন্ধ মাখাই।

     

    এয়া-৪

    ফুটলেই ঝরে যাও
    গন্ধরা ফুরায়
    তখন তুমি নেই পৃথিবীতে
    না থাকলে
    কারোরই হয় না কিছুই
    প্রতিদিন প্রতিক্ষণের

    মৃত্যু হয়, জন্ম হয়
    কেউ পায়
    কিছু নেই থেকে কেউ
    বারবার তোমাকে হারায়।

     

    এয়া-৫

    তুমি বরং ঘুমাও, এখনও অনেক রাত জমে আছে
    আমাদের চেনা-পরিচয়ের শরীরে
    এখানের সকাল-বিকেল, সন্ধে-রাত নিয়ে ভেবো না
    চাঁদ-সূর্যের আলোয় তোমাকে দেখাতেই শুধু বিশ্বাস রেখো না
    এইসব রেখে দাও, গোসল শেষের ভেজা কাপড়
    খাওয়া শেষের থালা-বাসন, রেখে দাও যত্নে ধুয়ে মুছে
    ব্যবহার্য সকল সম্পর্ক, সম্পর্কের উপাদানসহ রেখে দাও
    যা কিছু পৃথিবীতে জমা আছে, দরকারের জন্য আছে।
    আমার আসতে দেরি হলে-
    প্রকৃত ডাকের অপেক্ষায় মাথা রেখে ঘুমাও
    তুমি বরং ঘুমাও, আমি এলে সব জেনে নিও
    দেখে নিও, মানুষের আঘাতে বৃক্ষের শরীরের রক্ত
    এখনও নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে জীবনের অভিমান।

     

    এয়া-৬

    অনেক অচেনার কথা নিয়ে আমাকে বারবার আসতে হয়
    একবার ভুলের সাহস এসে হারিয়ে যায়; আমাকে হারায়!

    আমি এখন তোমার জাহাজে অচেনা যাত্রী
    এখানে সকল দরোজা তুমি, তোমার জানালা।
    তোমার আকাশ খুলে দাও, দাও ছাতা
    অনেক বৃষ্টি, অনেক অনেক মানুষের
    বৃষ্টি আমি নেবো না, আকাশ খুলে দাও।
    আমার পাখিগুলো ভিজে গেলে, ভীষণ শীত আসবে
    তখন ভাল লাগবে না আমার কচুরি ফুলের
    ভাল লাগবে না আমার কাশফুলের, হাস্নাহেনার
    একা হয়ে যাবে শিউলি-বকুল, পলাশ আর তোমার জুঁই
    তোমার আকাশ খুলে দাও, আমি একবার আমাকে ছুঁই।

     

    এয়া-৭

    ভেবেছিলাম একদিন কোনো এক রাস্তার চায়ের দোকানে
    তোমার পাশে বসব। আমাদের একপাশে বসবে নীরবতা
    অন্যপাশে সবুজ-প্রকৃতি, তোমার চোখ দু’টোতে নদী থাকবে
    ভালোবাসার জল থাকবে, ঢেউ থাকবে-
    আমার জোয়ার-ভাটায় তোমাকে ডানে বাঁয়ে টানবো
    কিন্তু তুমি তখনও আমার পাশেই থাকবে
    পায়ের বুড়ো আঙুলের নখে নরম মাটি খুঁড়বে,
    সামনের শূন্য পথের দিকে তাকিয়ে আরও বহু দূরে
    তোমাকে রেখে দিয়ে, আমার পাশেই বসে থাকবে।

     

    এয়া-৮

    তোমার মৃত্যু আসে, একান্ত চূড়োয়, পাহাড়ের ওপরে-
    যেখানে আগুন জ্বালো; পৃথিবী বেঁচে থাকে ফুলে-ফলে
    যেখানে তোমার কবিতায় আমার গল্প লেখা আছে
    যেখানে সাপেরা নীরবতা খেয়ে খেয়ে বাঁচে
    যেখানে তোমার ঘুমগুলো রাখা আছে।

     

    এয়া-৯

    শরীরে রাতজাগা লেগে আছে
    এখন আজানের আগমুহূর্ত
    তোমাকে ভাবতে যাই-
    চোখ কয়েক কদম এগিয়ে এসেছে
    আমি তার ছায়ার পিছনে-
    নিশ্চুপ শান্ত পুকুরের মৃত্যুর ডুব।
    এই প্লাবনে অনেক জল আছে-
    চোখ আমাকে কাঁদতে দেয় না
    চোখ অনেক সময় নেয়, অনেক দূর যায়!
    ভৌতিক বাগানের পরিত্যক্ত পুকুরে পাতা ঝরে-
    আমার কচুরিফুলে ঢেউ ভাঙে, সামান্য কম্পনে
    পৃথিবী জেগে ওঠে তুমিহীনতার সহিংসতায়।

     

    এয়া-১০

    দেখ, কেমন কাঁত হয়ে আরাম নিচ্ছে আমাদের ক্লান্তির সময়
    তোমার বিকেল বিছিয়ে বসে থাকার গাছ থেকে- সমুদ্র ঝরে ঝরে যায়

    তবু হাসি চেয়ে থাকে। জীবনের, তোমাকে খুব দরকার হয়।
    দেখ, কেমন টর্চের আলোয় ধরে রেখেছ পৃথিবীর হারানো সময়।
    তোমার ইচ্ছের মতো খাড়া হয়ে আছে- বিশ্বাসের সবুজ মিনার
    তোমার কিছু জানি না’র হলুদ গল্পে- গেঁথে আছে সহস্র ইতিহাস।
    এই তাকানোয় হেঁটে হেঁটে একদিন পৃথিবীতে আলো এসেছিল বলে-
    কাঁত হয়ে আরাম নিচ্ছে- আমাদের সেইসব ক্লান্তি, ক্লান্তির সময়।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.