সে উপদেষ্টার শহরে আমি থাকব না
যে শহরে শহীদ বেওয়ারিশ
সে উপদেষ্টার শহরে আমি থাকব না
বেদনার চাদরে শুয়ে আছে জুলাই শহীদ
খসে পড়ছে গুমজননীর ইটের গাঁথুনি
ধুলোয় অস্থির মন, ধোঁয়ায় নিরুপায় হৃদয়
অনশনে আবাবিল, বর্ষসেরা অন্ধকারে চাঁদ!
ঘুমহীন শীর্ণ মুখ, অনাদরে ছন্দপতন চুল
কাজ না পাওয়া বস্ত্রহীন নুরুলদীনের রংপুর।
বুকজুড়ে বুলেট— কেবল জীবন দিতে জানে
বোঝে না হিসাব। নিত্যসঙ্গী ঘাসফুলের কান্না!
ওঁদের বেচে দেয় শহুরে শাসক
ওরা বোঝে, না বোঝে না— তা অজানা।
প্রতিশ্রুতির আড়ালে অভুক্ত কৃষক বাবা
জুলাই জাগরণে বুকের ঝড় দেখায় মোয়াজ্জিন।
অসহায় আমি, আশ্রয়হীন দেশ
আজও মানুষের অধরা যমুনাজল
ভালো লাগে না প্রোটোকল— ছোটাছুটি!
যে শহরে শহীদ বেওয়ারিশ, সে উপদেষ্টার শহরে আমি থাকব না।
মুগ্ধ হবার ক্ষমতা বাড়িয়ে দাও
যে ছেলেটা স্বপ্ন সংকটে শেষ করে নিজেকে, তার মৃত্যুতে খুঁজি দল।
যে মেয়েটা ধর্ষণের বিচার না পেয়ে দড়ি দিয়ে মরে তাতেও—
বাঁচার অধিকার হারিয়ে বিষ পান করা পরিবারে চাই দেশপ্রেম।
যে কৃষক সেচের পানি না পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়, তাতেও রাজনীতি।
যৌতুকের কারণে যার বিয়ে হচ্ছে না, তার চোখে খুঁজি চেতনা।
চাকরির হতাশায়— শেষ হয়ে যাওয়া ছেলেটার মুখে কী দেখি!
বিষাদ ফতোয়ায় নাজুক পরিবারে খুঁজি বাংলার সংস্কৃতি,
হামলা-হত্যায় সাংবাদিক নিপীড়নে ভাসে বিচারব্যবস্থা।
গুম হওয়া বাবার সন্তানকে শোনাই স্বাধীনতার গল্প!
হে খোদা! আমায় ফ্যাসিবাদের মতো অন্ধ করে, দাও উন্নয়ন গ্রহণ করার ক্ষমতা।
মহামান্য— মাকে নিয়ে যাক, বাবাকে মারুক, ভাইকে গুম করে বোনকে ধর্ষণ করুক।
এই পৃথিবীর কারাগারে আমি যেমনই থাকি— কেবল মুগ্ধ হবার ক্ষমতা বাড়িয়ে দাও!
ফ্যাসিবাদের উত্তরাধিকার
শহরে প্রথম আসেন শতবর্ষী চাচা। যা দেখেন তাতে অবাক চোখ।
তাকিয়ে থাকেন, বেলা যায় আয়ুর মতো। ভিক্ষালব্ধ জীবন ক্লান্ত।
মায়ার দেশে ছায়া খোঁজেন ভাস্কর্যের নিচে দাঁড়িয়ে…
খুঁটে খুঁটে দেখেও চেনে না— একজন বলে ওঠে আরে তাকে চিনেন নি? তিনি তো দেশের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
ও তাই, বলতে বলতে মাথা নুয়ে সম্মান জানান। একজন কাছাকাছি এসে জানতে চাইলেন সম্মানের কারণ। ‘তার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা’ বললেন মকবুল। পথিক বলে, ‘আল্লাহ তার কল্যাণ করুক’।
তাকে আরেকবার বলুন— তার কন্যা থেকে মুক্তি দিতে, না হয় তার ‘ফ্যাসিবাদ’ থেকে রক্ষা করতে স্বদেশ
কোথাও রাখতে পারি না জমা
বন্য শহরে ঢুকে পড়েছে কথার কথারা
উপোস কথার গায়ে রোদ, মাথা ভরতি ধুলো—
দিগ্ভ্রান্ত নগরীর মোড়, আকুতি জলে ফেলানি চোখ—
উল্লাসে প্রতিবেশী— আফালের মাছ হয় মীর জাফর!
বিরহে ভাসে বিরান হাওয়া-
ঝরাপাতার হৃদয়, ভারাক্রান্ত মন।
পূর্বপুরুষের পক্ষপাত হতাশা,
রক্তভেজা প্রতিশ্রুতির উত্তরাধিকার আমি।
দাবদাহে স্থবির অনাবিল সিন্দাবাদ
প্রশংসার খবরে কবিরাও পদাক্রান্ত
লকডাউন, শুক্রবার- বন্ধ ব্যাংক, জাদুঘর
কোথাও রাখতে পারি না জমা আমায়!
কতটা নিষ্ঠুরতায় রাষ্ট্র হয় ইসরাইল
প্রাণহারা সবুজ দেশ। জবাবহীন শহরে বাস—
কেউ কাউকে প্রশ্ন করে না। হতাশ রাষ্ট্রে ক্ষমা পায় না কবি।
সাইরেন বাজলেও নড়ে না, ভাবায় না কৃতদাসের আঘাত।
যেন পোষমানা কুকুর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবিরে অঙ্গার- পরিত্যক্ত নগর।
নাম হৃদয়— পাথরের গরিমায় বাতাসে আড়াল হাসি!
নরক ঘুমে হারায় নরম বিকেল। বাশির সুর- ছুটির ঘণ্টা—
পাখির ডাকে দেয় না শরীর সাড়া- জাগে না ঘরে শিহরন
এভাবে অনুভূতি অনুভোঁতা হতে হতে সন্ধ্যার কোলে পরাজিত দুপুর।
সাদা মেঘ— করোটিতে রোদ— নদী খাচ্ছে সরকার
ঘন অন্ধকারে হারায় আলো— কতটা নিষ্ঠুরতায় রাষ্ট্র হয় ইসরাইল?
১ জুন ২০২৪




