Wednesday, October 29, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    আকেল হায়দার-এর একগুচ্ছ কবিতা

    কেউ একজন

    মাঝে মাঝে অকারণ মন খারাপ হয়
    হুহু করে ওঠে বুকের নিভৃতপুর
    ভাবনাগুলো কী যেন পেতে চায়—
    স্বপ্নগুলো কী যেন খুঁজে বেড়ায়
    তখন ইচ্ছে জাগে ভীষণ!

    মনে হয় শূন্যতার অরণ্য জুড়ে
    হুট করে কেউ একজন আসুক—
    পরম মমতায় হাত দুটো ধরুক
    চোখের গহীনে চোখ দুটো রাখুক
    জমে যাওয়া কষ্টগুলো ছুঁয়ে দেখুক।

    স্নিগ্ধ হাওয়ায় মিছিল সাজিয়ে
    দিগন্তে উল্লাসের বার্তা ছড়িয়ে
    সাতরং মেঘের ভেলা ডিঙিয়ে
    দৃঢ় ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে
    খুব আপন কেউ একজন আসুক!

    যে হাত কখনো ভুল বর্ণ ছোঁবে না
    অন্য আকাশে ঘুড়ি হয়ে উড়বে না
    ঝড়-ঝঞ্ঝায় দূরে হারাবে না
    অথৈ প্লাবনে জলে ভাসবে না
    অগাধ আস্থায় ঋদ্ধ হবে সে হাত।

    যে হাতে সারারাত জোছনা ফুটবে
    লাবণ্য আবেশে মুখরিত থাকবে
    তিমির অন্ধকারে দীপশিখা হবে—
    কৈশোর অতিক্রান্ত শিশিরের মতো
    সারাক্ষণ জ্বলজ্বল করবে বিশ্বাস!

    মাঝে মাঝে এমনই মনে হয়—
    হুট করে কেউ একজন আসুক
    শরত বিকেলে পাশাপাশি বসুক
    নিবিড় মমতায় হাত দুটো ধরুক
    তারপর এমন মন খারাপ দিনে—
    খুব তোলপাড় করে ভালোবাসুক।

     

    বিবৃতি

    যতই বাদ সাধো
    যতই দূরে রাখো
    যতই তুচ্ছ করো
    যতই চুপ থাকো
    বিচ্ছেদের যত দেয়ালই তৈরি করো না কেন—
    ‘ভালোবাসি’ এই বিবৃতি থেকে
    এক পা’ও পিছু হটব না আমি!
    কেননা-আমার অস্তিত্বের সকল কার্যক্রমে
    অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হয়ে গেছো তুমি!

     

    জ্যামিতি

    অনেক বছর আগে এক বন্ধু বাজি দিয়েছিল
    একটা বৃত্ত আঁকতে বলেছিল—
    তবে শর্ত ছিল বৃত্তে কোন কেন্দ্র রাখা যাবেনা!
    বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম সেদিন—
    কেন্দ্র ছাড়া বৃত্ত আঁকা সে কি সম্ভব?
    সেদিন বৃত্ত আঁকা আর হয়নি আমার!

    আজ অনেক বছর পর—
    হৃদয় যখন তার কাছে লীন
    নতুন এক দীক্ষাপাঠ হলো;
    সময়ের ফোঁড়ে নাকি ভালোবাসা মৃত
    ভালোলাগা উড়ে গেছে কর্পূরের মতো!

    তাই দ্ব্যর্থ উচ্চারণ—
    পরস্পর যেন নিজেদের মতো থাকি
    ভালোবাসা তুলে নেই যে যার মতো।

    আজ ফের মনে পড়লো সে বৃত্ত অঙ্কনের কথা—
    সেদিন কিছুতে পারিনি কেন্দ্রহীন বৃত্ত আঁকতে
    এতোদিন পর আজ কিভাবে পারব—
    অন্তরাত্মা দিয়ে যাকে এতোটা ভালবেসেছি
    তার কাছ থেকে নিজকে দূরে সরিয়ে রাখতে
    এও কি সম্ভব!

     

    তোমাকে দেখার পর

    তোমাকে দেখার পর শরীরের গহিন থেকে জেগে উঠেছিলো এক আশ্চর্য রাতকানা রাত। অবিন্যস্ত দীর্ঘশ্বাসে কেঁপে কেঁপে উঠেছিলো হৃদয়ের প্রশান্ত নদী। তোমাকে দেখার পর দু’কূল ভেঙে উপচে পড়েছিলো উত্তুঙ্গ মাতাল ঢেউ। সোনালি পালকের বাহুডোরে জন্ম নেয়া কোজাগরী রাত বয়ে গেছে সমুদ্রে; লাবণ্যে নিরবধি। তোমাকে দেখার পর অপার বিস্ময়ে থমকে গিয়েছিলো পৃথিবীর সমস্ত ঘড়ি। নিঃসীম মহাকাশে ছড়িয়ে গিয়েছিলো এক অমিয় জোছনার দ্যুতি।

    তোমাকে দেখার পর থেকে চেনা পথে এলোমেলো হয়ে গেছে এক হতবিহ্বল পাখি। নক্ষত্র সুরভীতে ছেয়ে গেছে তার রাতের কার্নিশ। লাবণ্য ঋদ্ধ মুখ জুড়ে গেছে গোধূলির মতো বুকের নিজস্ব জানালায়। উষ্ণতার আবাহনে ফুলগুলো সুর বেঁধে গেছে পরিচিত বৃক্ষশাঁখায়। এভাবেই আকস্মিক একদিন বসন্ত হয়ে তুমি যুক্ত হয়ে গেলে তার জীবনধারায় আর ঋতুর সহযাত্রী হয়ে প্রতিনিয়ত প্রদক্ষিণ করতে থাকলে তার অসীম আকাশগঙ্গায়।

     

    এই শহরে

    একদিন এই শহরে একটা অতিথি বিকেল আসবে। দূর থেকে চোখ মিলিয়ে সন্তর্পনে নিকটস্থ হবে। ঈষৎ ইতস্ততায় পাশে এসে কাছাকাছি বসবে। দিনে দিনে অজস্র কথা জমে হিম তবু পাহাড়সম নীরবতা দুজনকে ঘিরে রাখবে।
    শীতার্ত সূর্যটা অন্তিম রেশ পৃথিবীর বুকে গচ্ছিত রেখে ধীরে ধীরে অস্তাচলে যাবে। সবুজ ডালপালার ফাঁকে সম্মোহনে দুই জোড়া চোখ মুখোমুখি হয়ে থাকবে। বিদ্যুতের ছলে দ্রুত সময় ক্ষেপণ হবে। ততক্ষণে এক ফালি চাঁদ রাজসাক্ষী হয়ে পাশে এসে দাড়াঁবে। উভয়ের মাঝ বরাবর যোগ বিয়োগে ভরা ভালোবাসার শীতল নদী বইবে। অজান্তে শান্ত স্নিগ্ধ ঢেউয়ের মিছিল উঠবে। কৃষ্ণপক্ষ শুক্লপক্ষের হিসাব লিপিবদ্ধ হবে। অনাগত দিনে অহরহ স্বপ্নের বীজতলা হাসবে! সেদিনের সন্ধ্যাতারার মতো তুমি হয়তো আকাশে ভেসে ভেসে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু মৃদু হাসবে অথবা মৃত নক্ষত্র হয়ে আমিই তোমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসবো। একদিন ফের এই শহরে একটা অতিথি বিকেল আসবে। তারপর মৃত ছায়া বুকে জড়িয়ে শিশির জলে চোখ ভিজিয়ে খুব করে কাঁদবে!

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.