Saturday, November 8, 2025
spot_img
More

    সর্বশেষ

    টিপু সুলতান-এর একগুচ্ছ কবিতা

    একটি আয়নাটি

    মেরিল রোড—সাবানের বীর্যপাত গন্ধ অবিরাম এক ইরিক্ষেতের ডানায় উড়ে আসছে। পাখিদের সেলাই
    করা সন্ধ্যায়— খসে পড়া অর্ধেকের চাঁদ। এই ছায়াপথ
    মুনিয়ার জন্মান্ধ পোশাকের সাক্ষী হয়েছিল। কেননা—
    আমাদের ঘুমোতে দেয়নি সেসব বন্দির পায়চারি।

    কেবল রোদ লেগেছিল সয়ে যাওয়া এক রেলস্টেশনে
    নিঃসঙ্গ শুভ্র বালক কুড়োচ্ছিল সেই পৃথিবীর চোখ
    বৃষ্টি— আঙুলের বেফাঁস গল্প, ঘড়ির শ্লোক সম্রাট—
    ডাঁসা নাশপাতির দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে চূর্ণ হামাগুড়ি
    মায়া হরিণীর সারা গায়ে— নদী, নৌকা আঁকানো দেয়াল
    দীর্ঘতম এক উৎসবের নূপুর হাসছিল। অথচ এই
    খসড়ার নিষিদ্ধ ব্যাকরণে একটি স্নায়ুপাখি—
    মানুষের নিকট পৌছুতে দো-নলা বন্ধুকের ঘোষণা এল
    নির্জন পেয়ালার হাততালি— রাজার পাখি, দীর্ঘ দেশ।
    নরম পালকে, আমরা আয়নার ভেতরে ঘুমিয়ে পড়লাম!

     

    লুকোনো ছায়া

    পৃথিবীর দিকে তাকায়া দেখি— একটা ছায়া
    বিগত রাত্রি জ্যোৎস্নার তলে— সেই তুমি
    ডানা খুলে হাওয়ার জলসায় চঞ্চল ইশারা
    ছড়ায়ে যায় চুলের ঘ্রাণ ফিসফিস সিম্ফনি

    দূরের মেঘ ঢেকে দেয় মুখ, ঘোমটা অচেনা
    হাস্নাহেনা বন— চুড়িনীর ধ্রুবতারা— দুটি
    ভুট্টার খই, জোনাকিপোকা সে তো মন্দ না
    এ শহরের জানালা, চামচিকা করে খুনসুটি

    নেচে ওঠা পাখি ছেঁড়া পালকের পাণ্ডুলিপি
    এইখানে লেখে মুখস্ত কবিতার চিরকুট যত
    ফুলের চারায় মিরিন্ডা ঢেউ লুকোনো সম্মতি
    পৃথিবীর কাছাকাছি জেগে থাকা সম্ভবত

    বাদামি জ্বর দুলতুল পালকে ছেয়ে যায় শরীর
    তাতে লেগে আছে থুতনির ছায়া— চল্লিশটির!

     

    মৃত্যুর আগে

    কোথা থেকে এনেছি এই নির্জন মাথার ভেতরে
    পৃথিবীর সব মধ্যরাত্রি টেনে হারাই নিজেরে
    ঘুম আসে না, দীর্ঘঘুম; মস্করা মৃত্যুদণ্ড গুছিয়ে নিই
    ভাঙা জানালার ওধারে হিজলগাছের গড়াগড়ি
    সব পাখি নেমে এল কী পাতা ঝুলে জ্যোস্না-ময়ূরে

    ডানা বিছিয়ে বিস্ময় কবিতা ওড়ায়— শরীর খুলে
    —ঈশানে। কোথাও মানুষ নেই মানুষের পিঠাপিঠি
    তারাফুল শিশুরা ঘুমিয়ে জানতাম স্বপ্নে মার্বেল
    খেলে, পেন্সিলে আঁকা বিসর্গঠোঁট কেটে লেখে
    কাঠপিঁপড়ে বিস্কুটের গুড়ো নিয়ে ছোটে
    নিরুপায় বিপৎসীমা পেরিয়ে, অই যে, অতঃপর…
    নেই হচ্ছে। দৃষ্টির বাইরে, রাত্রিবোঝাই সিএনজি—
    সব পথ ভাড়া মারে, মানুষের ঘরে, গুঞ্জন ছড়িয়ে;
    আমার ঘুম পড়া উচিত মৃত্যুর আগে— আসন্ন জীবন
    এসো গল্প করি, ডাসদের ঘোড়ায় চড়ে দীর্ঘ বছর!

     

    অনুমান

    এমন অন্ধকার! বৃক্ষছায়ার নিচে জড়ো হয়
    বাচ্চাদের মতো; লুকোচাপা খেলে
    পুরোনা অভয়ারণ্য, স্টেশন পেরোলে বাজার
    অনেক রাত্রি, বৈচিত্র্য দেখতে রাস্তার ধূলো—
    অদৃশ্য মৃত্যুনাচের ভেতরে বিস্ময় চোখ
    ঝুড়িভর্তি আলো হোস্টেলের রূপশাদা সাবান
    রটিয়ে দিচ্ছে সেসব অনুমান…

    হয়তো, এ পথে কারোর আগমন ঘটেছিল
    এ্যাকোরিয়ামে মাছ ঘুরে বেড়ানো— জলঘাট
    মেঘ থেকে বৃষ্টি নিছক শাদা পাখির মতো;
    আগের প্রস্তুতি সেরে আসা— শৌখিন রোদ
    এই পরম যত্ন গড়াতে থাকে ভাঙা জানালায়!

     

    চশমার মুখোমুখি

    এই বিকেল সাক্ষী হয়ে কটা বয়স জমা রেখেছিল
    দেবদারু সমান, চশমার মুখোমুখি-
    সবুজ পলেস্তারা ধানমুখো বাতাস বন-কুয়াশার
    পুরোনো শৈশব ফিরে আসে
    ঘাই খাওয়া হরিণের পিঠ ছুঁয়ে পথের বলিরেখায়
    লুকিয়ে ফেলছে ডাঁসা জীবন ও বয়সের গাঢ় নক্সা-

    কেউ কেউ রাত্রি জেগে শিরীষ গাছ হয়ে ওঠে। রোদ
    শেষে, পোষা বেড়ালের ঘুমন্ত শিয়রে জঙ্গল ভেঙে
    এক কাশ্মীরি টিলা চাঁদ মরে গিয়ে বাঁচে। রহস্যময়…

    ভেবেছি প্রেমে তোমাকে পাব। যত্ন শেষে মারা যাব।
    তারপর ক্যালেন্ডারের শেষ তারিখের খালি পায়ে
    একদিন বেড়াতে এসে সফর করবে
    প্রীতিসিক্ত হাড়ে এই আমার শেষ বয়স চুরি করে
    তোমার সন্ধ্যা ডুমুর বারান্দা-ভাঁটফুল ঘ্রাণ আর
    জোনাকিপোকার মিউজিক্যালি আলোর ফুঁ হাসবে।

     

    অগ্রন্থিত গান

    প্রতি সন্ধ্যা পার হলে আশঙ্কার রাত এসে তাতে
    দিনগুলো ছেঁটে অভিজাত মোম— দৃষ্টি জ্বলায়—
    বিপর্যস্ত পিতলের ঘন্টায় বেঁধে রাখা দলছুট
    পাহাড়ের মতো স্কেচ করা সেই ডাস ঘোড়াদের
    কুচকাওয়াজ, ঘাসের আসন থেকে তুলে আনে
    তুমুল নৃত্য,বুক ভার পৃথিবী। শোভাযাত্রা ছড়ায়
    –পেখমধরা নদী, সমতলের দিকে মেলে দেয়
    আঙুল দুটির শ্বাসকষ্ট—শরীর…

    সবুজ ব্যথায় একদল সেচজমি খসে পড়ে—
    বুকে-ঘরে। আটাকল মেশিনের গমফুল,
    পাখি ক্রমশ মানুষের সমান ভূমিরেখা চেহারার
    মতো গর্জন ফলানো— অগ্রন্থিত গান, সকল মাটি
    মোটাসোটা রূপসী প্রেম, মধুপিপাসা, একদিন
    এখানে জন্মেছিল বিখ্যাত সম্মেলন। জানি—
    সেই দিনগুলোয় বেড়াতে আসত দূরের মানুষ।
    কামনার বন। ধূলোয় জমানো বারান্দা রাত— দিন
    পুরুষের সংসার, লাউপাতার তলে সবুজ সাপ।

     

    ঘোড়া

    একটা মাকড়শা মাতাল ঘরে ঘুরে বেড়ায়
    ওঠা-নামা করে সারা দুপুর— দূরের রোদ
    জঙ্গলের আড়াল হতে তিরতির জীবনগান
    শুনছিল আলমারি থেকে শাদা কাপড়
    তাতে জমেছিল নীল নির্জনের গত শতাব্দী।
    পাতার গায়ে লেগে যাচ্ছিল ফুল, আযান—
    জেব্রাসারি নারকেল বাগানের পথ-শুক্রবার

    কলপাড়ের শব্দ নিলামে ওঠে, জলের রেণু—
    ছোট বাচ্চাদের হাতে ঘাই খেতে থাকে
    দূর বসন্ত ঠিক চলে যাবার আগে বুঝে নেয়
    শীতের বালিহাঁস এখানে ঘোড়া হয়েছিল!

     

    জ্বর জ্যোৎস্না

    একটা আলজিভ বিকেল। নুডলসের মতো
    —চিকন। ভেজা শরীর, উর্বর বুক দেখা যায়।
    সে দৌড় দিতে ভুলে গেছে। রেশমগুটি থেকে
    সুতো হাসে। শাদা কবুতর— তিলগ্রন্থ ওড়ায়-
    চুম্বন আর উরুতে বেড়ে ওঠে রুটিকারখানা

    মৌনসন্ধ্যা। সেরকম গাঢ়, ভেতরে গোপন জ্বর
    জ্যোৎস্না নেই। হারিকেনের বিষণ্ণ রঙ, উপল
    পাতার তল ভেসে আসে। তাতে জেলেবাড়ি
    পার হওয়া যায়। শানবাঁধানো— পুকুর। পাখিরা
    গোসলে সাঁতরায়, পৃথিবীর সব আনন্দ তাদের।
    রবারগাছ মূর্ছাঘুমে— মনে হয় নৃত্য করা হলুদ
    পাতা টের পেলে প্রবেশের পথ খুঁজে বেড়াবে।
    দূরের ধানকল ঘাসের আত্মহত্যা থামিয়ে
    সিল্ক রোদের মাঠ শুয়ে পড়ে। নতুন পুনর্পাঠে…

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    সর্বাধিক পঠিত

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.