Author Picture

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম ২৩ জুন, ১৯৩৬)। প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক। দীর্ঘকাল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি মার্কসবাদী চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং নতুন দিগন্ত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৯৮০-এর দশকে “গাছপাথর” ছদ্মনামে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।‌

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকেই এগোতে হবে

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, বহু ত্যাগ ও আত্মত্যাগে। তবে হ্যাঁ, রাষ্ট্র বদল হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে যে রাষ্ট্রের অধীনে আমরা বসবাস করতাম তা ছিল অনেক বড়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রের আয়তনকে আমরা ছোট করলাম। বাংলাদেশ এক সময়ের পদকায়নের তুলনায় আরও ক্ষুদ্রাকার একটি রাষ্ট্র বটে। এ রাষ্ট্র নতুন; কিন্তু কতটা নতুন? বড় সমস্যাটা….

মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর

‘মুক্তিযুদ্ধ ব্যক্তিস্বার্থের হাতিয়ার ছিল না’ নামে একেএম শামসুদ্দিনের এই প্রবন্ধ সঙ্কলনটির কেন্দ্রস্থলে যে মুক্তিযুদ্ধ রয়েছে সে-সংবাদটি বইয়ের নামকরণেরই উপস্থিত। লেখক নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। তাঁর আপন দুই ভাই যুদ্ধে গেছেন, ভগ্নিপতি প্রাণ হারিয়েছেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে। যুদ্ধের সময়ে তাঁর বয়স ছিল অল্প, মাত্র ছয়-সাত বছর, নাহলে তিনিও যুদ্ধে যেতেন; সে-মনোভাব সঙ্কলনের প্রতিটি রচনায় প্রতিফলিত। যুদ্ধের সময় তিনি অনেক….

দায়িত্ব হবে সমাজে চাঞ্চল্য ও আশাবাদ ফিরিয়ে আনা

বাঙালিকে বলা হয় অতিরিক্ত রাজনীতি-সচেতন। এটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা রাষ্ট্র ও রাজনীতি বাঙালির জীবনকে দীর্ঘকাল ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। পরাধীনতার একটি বিরাট যুগ আমরা তো পার হয়ে এসেছি। কিন্তু সাতচল্লিশ সালের স্বাধীনতা, এমনকি একাত্তরের স্বাধীনতাও বাঙালিকে মুক্ত করেনি। সেজন্য রাজনীতির গুরুত্বটা রয়েই গেছে। একথা বলা যাবে যে, মানুষ সমাজেই বাস করে। সেজন্য সমাজ রাষ্ট্রের চেয়ে….

মনে হতো বাইরে গেলে হারিয়ে যাব অথবা বাইরে থেকে এলে দরজাটা বন্ধ পাব

শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রাবন্ধিক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তার কথাসাহিত্য সম্পর্কে সাধারণ পাঠকের খুব বেশি জানা আছে বলে মনে হয়না। মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারক এই মহান লেখক অভিনব ভঙ্গি ও চিন্তার প্রাতিস্বিক বৈশিষ্ট্যের গুণে অগণিত পাঠকের মনে স্থায়ী আসন তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তার বৈচিত্র্যধর্মী সৃষ্টিকর্মের মধ্যে….

ভাষাভিত্তিক স্বাধীনতার স্বরূপ

স্বাধীনতা কতটা এসেছে, এবং কী পরিমাণে তাৎপর্য হয়েছে তা নির্ণয় করবার অনেকগুলো নিরিখ আছে। প্রধান নিরিখ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি। আরেকটি জরুরি নিরিখ হচ্ছে মাতৃভাষা ব্যবহারের অধিকার। প্রশ্নটা প্রতি বছরেই নতুন করে ওঠে, এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বরঞ্চ আগের চেয়ে বেশি করেই উঠেছে- সেটা হলো এতসব সংগ্রাম ও অগ্রগতির পরেও জীবনের সর্বস্তরে ও পর্যায়ে বাংলা ভাষার প্রচলনটা….

আশ্রয় ও অবলম্বন হিসেবে মাতৃভাষার বিকল্প নেই

আমাদের বাংলা ভাষা ভাবের ব্যাপারে বেশ চিন্তিত মনে হয়, যে জন্য অভিধানে ভাবের একাধিক অর্থ রয়েছে। একটা অর্থ তো ভাবনা-চিন্তা। ভাবের অন্য একটি অর্থ একেবারে ভিন্ন ধরনের। সেটা হচ্ছে- ভান করা। যেমন, আমরা বলি- বন্ধুর ভাব করে এসেছে বটে, কিন্তু লোকটা আসলে বন্ধু নয়; শত্র। ভাবের অপর একটি অর্থও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে ভাবের অর্থ হচ্ছে….

জাতি ও শ্রেণি প্রশ্নে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা: উপমহাদেশে, বাংলাদেশে (সব পর্ব)

গত ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জাতি ও শ্রেণি প্রশ্নে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা উপমহাদেশে, বাংলাদেশে’ শীর্ষক আলোচনাসভা। অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচিতি পাঠ করেন ঢাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল….

জাতি ও শ্রেণি প্রশ্নে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা: উপমহাদেশে, বাংলাদেশে (শেষ পর্ব)

শ্রেণী প্রশ্নের মীমাংসাটাই সর্বাধিক জরুরী, কিন্তু তার জন্য জাতি প্রশ্নেরও মীমাংসা চাই, কেননা জাতিগত ভেদাভেদটাকে জিইয়ে রেখে শাসক শ্রেণী চেষ্টা করে শ্রেণীচেতনাকে ভোতা করে দিতে। পাকিস্তানের যেটুকু এখনও টিকে আছে, তাকেও জাতি সমস্যার মীমাংসা করতে হবে, নইলে পাকিস্তান হয়তো টিকবেই না। একই কাজ ভারতকেও করতে হবে, নইলে জাতিগত সংঘর্ষ বাড়বে; এবং বিরোধটাকে হিন্দু ধর্ম, হিন্দী….

জাতি ও শ্রেণি প্রশ্নে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা: উপমহাদেশে, বাংলাদেশে (পর্ব-৬)

এখান থেকে আমরা জাতি ও শ্রেণী প্রশ্নে সমাজতন্ত্রীদের ভূমিকাটাকে আরও একটু কাছে গিয়ে দেখতে চেষ্টা করবো। তাঁদের ভূমিকাই প্রধান হতে পারতো, এবং তেমনটা ঘটলে উপমহাদেশের ইতিহাস ভিন্ন ভাবে লেখা হতো। সেটা ঘটে নি। কারণ অনেক। যেমন ভেতরের তেমনি বাইরের। বাইরে থেকে তাদের ওপর সরকার ও সরকারবিরোধী উভয় পক্ষের ছিল সমান ক্রোধ, কারণ তারা ব্যক্তিমালিকানায় নয়….

জাতি ও শ্রেণি প্রশ্নে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা: উপমহাদেশে, বাংলাদেশে (পর্ব-৫)

পেটি বুর্জোয়াদের প্রসঙ্গটা বার বার আসছে। আসাটা স্বাভাবিক। কারণ তাদের প্রভাব রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুবিস্তৃত। আগেও ছিল, এখনও আছে। সাহিত্যে তাদের উপস্থিতি ব্যাপক এবং সেটা তদানীন্তন সমাজবাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি। দেখা যাবে একপ্রান্তে আছেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অপর প্রান্তে সমর সেন। সুধীন্দ্রনাথ কেবল নরকই অবলোকন করেন নি, জনতাকে দেখে উক্তিও করেছেন, ‘সহে না সহে না প্রাণে/ জনতার….

error: Content is protected !!