
তিন
সে ছিল তার পিতার তের সন্তানের সপ্তম জন। অন্যভাবে বললে, পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর এগারো সন্তানের পঞ্চম জন। তার মনে হত, এই বিপুল সংখ্যক যুবা ও শিশুদের মাঝে, অন্যান্য ভাইবোনদের থেকে নিজের বিশেষ একটি স্থান আছে তার। এই অবস্থান ও স্বাতন্ত্র্যবোধ কি তাকে আনন্দ দিত না বিরক্ত করত? এ ব্যাপারে সত্য হলো: এ সম্বন্ধে না সে নিশ্চিতরূপে কিছু বলতে পারে, না সত্যাসত্য কোনো রায় দিতে পারে।
সে আরও বুঝতে পারে, তার জন্য যা নিষেধ; অন্য ভাইবোনদের ওসব করতে মায়ের অনুমতি আছে। বিষয়টি প্রথমে এক প্রকার অসন্তোষের উদ্রেক করেলও; পরে এই অনুভূতিটি রূপান্তরিত হয় এক নিঃসঙ্গ নীরবতায়। না! বরং এক হৃদয়গ্রাহী বেদনায়; যখন সে তার ভাইবোনদের এমন সব বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শোনে, যে বিষয়ে তার কোনো জ্ঞানই ছিল না। সুতরাং সে বুঝতে পারে, সে যা দেখেনি তারা তা দেখেছে
প্রকৃতপক্ষে মায়ের কাছ থেকে সে পেয়েছিল সীমাহীন আদর ও কোমল বিবেচনা। বাবার কাছ থেকে পেয়েছিল প্রশ্রয় ও উদারতা। আর ভাইদের আচরণে মনে হয়েছে, তার সাথে কথোপকথন ও মনোভাবে কোথাও কোথাও কিছুটা সংরক্ষিত ও সংযত ছিল তারা। কিন্তু মায়ের এই আদর-আহ্লাদের পাশাপাশি মাঝেসাঝে কিছু অবহেলা, অবজ্ঞাও পেয়েছিল সে। সেইসাথে বাবার প্রশ্রয় ও উদারতার পাশাপাশি সময়ে-সময়ে ছিল কঠোরতা ও নির্দয়তাও। এর মাঝে বিশেষত ভাইবোনদের ওই সংযত ভাবটিই তাকে কষ্ট দিত। কেননা এর ভেতর আকস্মিক পরিবর্তনের সাথে একটি বিকৃত ও দূষিত মনোভাব দেখতে পেত সে।
যাহোক, তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এসবের কারণ বুঝতে পেরেছিল সে। বুঝেছিল, তার তুলনায় অন্যান্যদের নিজস্ব কিছু সুবিধা আছে। তা এই যে, তার ভাইবোনেরা এমন কিছু করতে পারে যা সে করতে পারে না। এমন কিছুর সম্মুখীন হতে সক্ষম, যাতে সে অক্ষম। সে আরও বুঝতে পারে, তার জন্য যা নিষেধ; অন্য ভাইবোনদের ওসব করতে মায়ের অনুমতি আছে। বিষয়টি প্রথমে একপ্রকার অসন্তোষের উদ্রেক করেলও; পরে এই অনুভূতিটি রূপান্তরিত হয় এক নিঃসঙ্গ নীরবতায়। না! বরং এক হৃদয়াগ্রাহী বেদনায়; যখন সে তার ভাইবোনদের এমন সব বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শোনে, যে বিষয়ে তার কোনো জ্ঞানই ছিল না। সুতরাং সে বুঝতে পারে, সে যা দেখেনি তারা তা দেখেছে।