Author Picture

ত্রিভুজ প্রেমের মামলা

খন্দকার রেজাউল করিম

বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট

 

সুজান এবং ডেভের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি। পুরানো বাড়িটার মালিকানা এখনো দুজনের নামে। ছোট্ট দুই কামরার সস্তা বাড়িটার জরাজীর্ণ দশা, কখন ভেঙে পড়া তার ঠিক নেই। ডেভ বাড়িটার মেরামতের কাজে হাত লাগায়, মর্টগেজের টাকা প্রতিমাসে পরিশোধ করে। এতে ডেভের আপত্তি নেই; বিবাহ বিচ্ছেদ হলে ছেলে এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্যে হয়তো আদালত তাকে আরো বেশি টাকা দিতে বাধ্য করতো।
সুজানের স্বামী ডেভকে ঘিরে কেভিনের মনে একটা তীব্র কৌতূহল ছিল। সুজান কেনই বা ডেভকে বিয়ে করেছিল, কেনই বা এখন আলাদা হয়ে বাস করছে, আর কেনই বা এমন চরিত্রহীন স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ঠুকছে না! সুজানের তো রূপ, যৌবন, স্বাস্থ্য, এবং পানিপ্রার্থী পুরুষ-ভক্তের কোনো অভাব নেই।
গাড়ির এয়ার কন্ডিশনের গোলযোগ ডেভের সাথে পরিচয় করার সুযোগটা করে দিলো। সকালবেলা কেভিন ডেভস অটোমোবিলের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলো। তখনি ক্যারোলের ফোন এলো, ‘হ্যালো মিস্টার এল এ, আমি মিসেস এল এ বলছি। তুমি কি আজ তোমার গাড়ি মেরামতের জন্যে ডেভের দোকানে যাচ্ছ? আমাকে সঙ্গে নিবে? পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, হাতে কোনো কাজ নেই, একেবারে বোর হয়ে গেছি।’
‘এই যে ডেভ, পরিচয় করিয়ে দিই’, দোকানে পৌঁছে ক্যারোল বললো, ‘আমাদের স্কুলের নতুন শিক্ষক কেভিন। উনার গাড়ির এসি কাজ করছে না। তাই এসেছি তোমার দোকানে।’
‘কোনো ব্যাপার নয়’, ডেভ জানালো, ‘আজ বিকালেই গাড়িটা ফেরত পাবে।’
ডেভকে দেখে কেভিন একেবারেই মনমরা হয়ে পড়লো। মোটাসোটা ভুঁড়িওয়ালা মধ্যবয়েসী এক লোক। অমার্জিত কথাবার্তা। বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছে। সুজানকে কোনোভাবেই এর সাথে মিলানো যায় না। সুজান সবসময় বই পড়ে, এই দোকানের টেবিলে কিছু সস্তা অশ্লীল ম্যাগাজিন পড়ে আছে। কেভিনের শরীরটা ঘিনঘিন করে উঠলো। বিউটি আন্ড দ্য বিস্ট। কি দেখে এর প্রেমে পড়েছিল সুজান?

মোটাসোটা ভুঁড়িওয়ালা মধ্যবয়েসী এক লোক। অমার্জিত কথাবার্তা। বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছে। সুজানকে কোনোভাবেই এর সাথে মিলানো যায় না। সুজান সবসময় বই পড়ে

সুজান এবং তার ছেলে জেসির সাথে কেভিনের প্রতিদিন বেসবল ক্যাম্পে দেখা হয়। খ্যাতনামা খেলোয়াড়দের লেখা বই এবং ছবি উপহার দিয়ে কেভিন ছেলেটির মন জয় করে ফেলেছে। এমনকি সুজানের পোষা কুকুরটা পর্যন্ত কেভিনের ভক্ত হয়ে পড়েছে। ছয় মাস কেটে গেল, কিন্তু সুজানের মন যেন ‘‘সহস্র বৎসরের সাধনার ধন।’’ তবে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, ছেলে সমেত কেভিনের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে সুজানের আর তেমন আপত্তি নেই। ইদানিং সুজান বেশ সেজেগুজে থাকে, পোশাক থেকে দামি পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসে। আগে সুজান ক্যারোলের দোহাই পাড়তো, তার মতো বিবাহিত মেয়ের পিছনে না ঘুরে ক্যারোলের পিছনে ঘোরার পরামর্শ দিতো। এখন সেদিন গেছে। ছেলেবেলার লক্ষী মেয়ে সুজান ছলনাময়ী এক নারীতে পরিণত হয়েছে। প্রেমের বড়শিতে আটকে গেছে কেভিন, ধীরে ধীরে সুতা ছেড়ে সুজান রুই মাছের মতো ওকে খেলাচ্ছে।
ক্যারোল তিন মাস হলো UCLA তে পড়তে লস এঞ্জেলস চলে গেছে। পড়াশুনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত, তবুও কেভিনের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়, ‘হ্যালো, মিস্টার এল এ, কেমন আছো? আমি মিসেস এল এ বলছি।’
‘এতদিনে একটা বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করেছো নিশ্চয়।’
‘পড়াশুনার চাপে স্নানাহার বন্ধ, শরীরে ধুলা উড়ছে। প্রেম করার সময় কোথায়? সেমিস্টার প্রায় শেষ হয়ে এলো। বাড়ি ফিরলে তোমার সাথে দেখা হবে, ভাবতেই ভালো লাগছে।’
প্রতি রবিবার সকালে ডেভ ছেলে জেসিকে নিয়ে যায়, রাত দশটায় ফেরত দিতে আসে। ডেভের সাথে ডেভের বর্তমান গার্লফ্রেন্ড জেনাও মাঝে মাঝে আসে। জেনা এবং নিজের পিতার কাছে জেসি তেমন সহজ হতে পারে না। ওকে খুশি করার জন্যে ডেভ যথেষ্ট পরিশ্রম করে, পার্কে যেয়ে ঘুড়ি আর বেলুন ওড়ায়, দোকানে দোকানে ঘুরে জেসির পছন্দের সবকিছু কিনে দেয়। কেভিনও এই দিনটির অপেক্ষায় বসে থাকে। সারাদিন সুজানের সাথে ঘোরার দিন, মনের কথা একটু একটু করে বলার দিন।

আরো পড়তে পারেন

কানু কাকা

আঁধার হারিয়ে গেলেও, সেভাবে ভোরের আলোর উপস্থিতি নেই, রোদ যেনো ফেরারি আসামি হয়ে পালিয়ে। মরুভূমির বালুকণা যেনো উড়ছে। কুয়াশা জানান দিচ্ছে, ক্ষমতাধর কোনো মন্ত্রীর মত। সাথে যুক্ত হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনির মত কোনো শীতের তীব্র উপস্থিতি। কিন্তু এসব কিছু উপেক্ষা করে বিদ্রোহী কবিতার শ্লোকের মত রওনা হয়েছে কানু কাকা। হেমন্তের হেলে পড়া সূর্যের মত, তার শরীর….

চারটি অণুগল্প

১. পৃথিবীর শেষ গাছটা হাতে নিয়ে ফিহান সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চিরকাল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা ফিহান সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, এই ছোট্ট চারাটা নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বে, নাকি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে দেবে?   ২. —আমার না প্রায়ই খুব মায়া হয় এদের জন্য —কেন?! —এই যে দেখো, সারারাত জেগে থাকার কথা আমাদের, আর জেগে থাকে ওরা।….

বিবশ

এক. আমাদের আব্বা বড্ড নিশ্চুপ। চুপচাপ-চাপা স্বভাবের। সারাদিনে তিনটা শব্দও তার মুখ দিয়ে বের হয় না। অন্যদিকে আম্মা কথার খই ফোটান। তার সংসার, সংগ্রাম, সীমাহীন দুঃখ এসব। এক রথে একাকী বয়ে চলা জীবনের ঘানি। বাপের বাড়ির রকমারি কেচ্ছা, ছোটবেলায় মা-খালাদের সাথে করা হরেক কাহিনির গপসপ। আমাদের মামারা কেউ বোনের খবর নেয় না। এরপরও সন্ধ্যা করে,….

error: Content is protected !!